ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়ানোর শিক্ষা -আপিল বিভাগের রায় by আকবর আলি খান
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে ১৯৭৫ সালের পরে আইনগত দিক থেকে যে অনাচার রয়েছে তার একটা সুদীর্ঘ বয়ান রয়েছে। এটা সবার পড়া উচিত এবং আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা দেখেছি এবং এই রায় থেকেও বোঝা যাচ্ছে, অতীতে শুধু সরকারের নির্বাহী বিভাগ বা রাজনীতিকেরাই ভুল করেননি, শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বাড়াবাড়ি করেছেন, আইন ভঙ্গ করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোও সংবিধান সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেনি। গোটা জাতিই সেই ভুল করেছে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতিও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তৎকালীন সামরিক শাসনের অধীনে প্রধান সামরিক প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিচার বিভাগের কোনো কোনো সদস্যের এভাবে জড়িয়ে পড়া দুর্ভাগ্যজনক এবং এর থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। এই রায়ের বিশদ বিবরণ থেকে কীভাবে ভবিষ্যতে আমরা এ ধরনের বিপর্যয় এড়িয়ে যেতে পারি, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।
তবে উচ্চ আদালত এর আগে এ বিষয়ে যে রায় দিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে তার কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনকর্মের ফলে সেনা শাসন কর্তৃক গৃহীত অনেকগুলো আইনগত ব্যবস্থা বহাল রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় পূর্ণাঙ্গরূপে টিকে থাকলে সেই সময়ের সমস্ত অসাংবিধানিক নির্দেশ ও ফরমানই বাতিল হয়ে যেত। আপিল বিভাগ এই অংশটি সংশোধন করে দিয়েছে। এর ফলে সংবিধানের নিরিখে আগের অবস্থা থেকে খুব বড় আকারের পরিবর্তন ঘটবে না। হাইকোর্টের রায় সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে আগের সব অন্যায়ই বাতিল হতো। তবে ’৭৫-’৭৯ পর্যন্ত যেসব ফরমান জারি হয়েছে তার কতকগুলো সুপ্রিম কোর্ট বৈধতা দিয়ে বিজ্ঞোচিত কাজ করেছেন। নইলে পুরো দেশের জন্য সমস্যা হতো। সবকিছু রাতারাতি ওলটপালট করার ফল ইতিবাচক নাও হতে পারত।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ উচ্চ আদালতের রায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে চতুর্থ তফসিলের যেসব পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের যে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, তার তাৎপর্য হলো, যেসব ঘোষণা সংবিধানের পরিপন্থী ছিল, সেগুলো আপিল বিভাগ রেখে দিয়েছেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট উভয়ই চতুর্থ সংশোধনীতে যেসব বিধান রাখা হয়েছিল, সেগুলোর বিষয়ে কিছু বলেননি। ফলে সামরিক আইনের যেসব আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা তার কিছু কিছু রয়ে গেল। এর অর্থ তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন, ওই সব সংশোধনী সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী ছিল না।
তবে এই রায়ের ফলে সাংবিধানিক চেতনার একটা বড় পরিবর্তন ঘটেছে। আগে সংবিধান সমর্থন করে না এমন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন বা ডকট্রিন অব নেসেসিটির কথা বলা হতো। আগে নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজনের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারত, পরে যা আদালত কর্তৃক বৈধতা দেওয়া হতো বা সে রকমটাই ব্যাখ্যা করা হতো। এ রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় নীতি হিসেবে তাঁরা জনস্বার্থের বিবেচনার কথা বলতেন। এবং জনস্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে এগুলোকে স্বীকার করে নেওয়া হতো। তবে এখন সে রকম কিছু করা হলে আদালত সেটা মাফ করতে পারেন কিন্তু বৈধতা দিতে পারবেন না। এককথায় বললে, অতীতে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’কে মেনে নেওয়া হয়েছিল; এখন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বলছেন, কোনো জরুরি প্রয়োজনেও সেটা মেনে নেওয়া যাবে না। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বা প্রয়োজনের বিধানের জায়গায় এল ‘ডকট্রিন অব কনডোনেশন’ বা ক্ষমার বিধান।
আমি মনে করি, অতীতের সামরিক শাসকদের বিচার করা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে আইনের শাসন সম্পর্কেও সবার সজাগ থাকা উচিত। আইন মানার সংস্কৃতি যদি আমরা গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এ ধরনের রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো লাভ হবে না। সেই সংস্কৃতি বিকশিত না হলে সামরিক শাসনের মতো অনাচার বারবার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকবে। তবে এ কথাও বলা দরকার যে আইন দিয়ে সামরিক শাসন দূর করা যায় না। সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে সামরিক শাসন তথা বেআইনি শাসনবিরোধী চেতনা প্রবল হলে সামরিক শাসন কখনো কায়েম থাকতে পারে না। যেমন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী বা বিভিন্ন পদাধিকারী ব্যক্তি যদি রাজি না হন, তাহলে সামরিক শাসকদের পক্ষে তাঁদের ব্যবহার করা সম্ভব হতো না। এ দিকটি আগে নিশ্চিত করতে হবে।
এই রায়ে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা তো বিধান করে কায়েম করা যাবে না। বাংলাদেশে তো কেউ-ই ধর্মনিরপেক্ষ না। সবাই মুখে মুখে এটা বলে। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তো বলা রয়েছে, কোরআন ও সুন্নাবিরোধী কোনো আইন তারা করবে না। এটাও তো ধর্ম নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি। কাজেই ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করতে হলে আগে এর সংজ্ঞা যথাযথভাবে ঠিক করতে হবে। এবং এটা কার্যকর করতে হলে সংসদে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবিধানে শুধু নীতিমালা দেওয়া রয়েছে। আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে সংবিধানে এক জায়গায় বলা হয়েছে যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনতা পাবে, তারা আইনসম্মতভাবেই কাজ করতে পারবে। সংবিধানের বর্তমান নীতি অনুযায়ী ব্যক্তির ধর্মাচরণ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তথা মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডাগুলোর ধর্মপালনের স্বাধীনতা থাকবে। যেটা কেউ পারবে না, তা হলো ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার। এখন এর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। আমাদের সংবিধানে ইসলামকে যে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে এই নীতিমালার সংগতিবিধান করতে হবে। এই রায়ে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নির্দেশ রয়েছে, কিন্তু পরের সামরিক শাসনের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন করতে হবে, তা নিয়ে এখন আমাদের নতুন করে বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে। আর এ কাজ সংসদীয় কমিটিই করতে পারে।
তবে আশঙ্কা রয়েছে যে সবাই এই রায়কে নিজ নিজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর এর গভীর প্রভাব পড়বে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে আইন না করা পর্যন্ত জামায়াত বা ধর্মীয় দলগুলোর তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
এই রায় এবং সংবিধান সংশোধন এখন নানাভাবেই জড়িত বিষয় হয়ে গেছে। সরকার সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদীয় কমিটিও গঠন করে দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির কাজ হবে সবাইকে ডেকে ডেকে বক্তব্য শোনা। এ জন্য গণশুনানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের ডেকে প্রশ্ন করে তাঁদের অভিমত জানার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে কমিটিতে বিশেষজ্ঞ না থাকার কুফল এড়ানো যাবে। যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংসদকেই নিতে হবে, সেহেতু আমি সংসদীয় কমিটির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতে চাই না।
আকবর আলি খান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তবে উচ্চ আদালত এর আগে এ বিষয়ে যে রায় দিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে তার কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনকর্মের ফলে সেনা শাসন কর্তৃক গৃহীত অনেকগুলো আইনগত ব্যবস্থা বহাল রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় পূর্ণাঙ্গরূপে টিকে থাকলে সেই সময়ের সমস্ত অসাংবিধানিক নির্দেশ ও ফরমানই বাতিল হয়ে যেত। আপিল বিভাগ এই অংশটি সংশোধন করে দিয়েছে। এর ফলে সংবিধানের নিরিখে আগের অবস্থা থেকে খুব বড় আকারের পরিবর্তন ঘটবে না। হাইকোর্টের রায় সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে আগের সব অন্যায়ই বাতিল হতো। তবে ’৭৫-’৭৯ পর্যন্ত যেসব ফরমান জারি হয়েছে তার কতকগুলো সুপ্রিম কোর্ট বৈধতা দিয়ে বিজ্ঞোচিত কাজ করেছেন। নইলে পুরো দেশের জন্য সমস্যা হতো। সবকিছু রাতারাতি ওলটপালট করার ফল ইতিবাচক নাও হতে পারত।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ উচ্চ আদালতের রায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে চতুর্থ তফসিলের যেসব পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের যে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, তার তাৎপর্য হলো, যেসব ঘোষণা সংবিধানের পরিপন্থী ছিল, সেগুলো আপিল বিভাগ রেখে দিয়েছেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট উভয়ই চতুর্থ সংশোধনীতে যেসব বিধান রাখা হয়েছিল, সেগুলোর বিষয়ে কিছু বলেননি। ফলে সামরিক আইনের যেসব আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা তার কিছু কিছু রয়ে গেল। এর অর্থ তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন, ওই সব সংশোধনী সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী ছিল না।
তবে এই রায়ের ফলে সাংবিধানিক চেতনার একটা বড় পরিবর্তন ঘটেছে। আগে সংবিধান সমর্থন করে না এমন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন বা ডকট্রিন অব নেসেসিটির কথা বলা হতো। আগে নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজনের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারত, পরে যা আদালত কর্তৃক বৈধতা দেওয়া হতো বা সে রকমটাই ব্যাখ্যা করা হতো। এ রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় নীতি হিসেবে তাঁরা জনস্বার্থের বিবেচনার কথা বলতেন। এবং জনস্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে এগুলোকে স্বীকার করে নেওয়া হতো। তবে এখন সে রকম কিছু করা হলে আদালত সেটা মাফ করতে পারেন কিন্তু বৈধতা দিতে পারবেন না। এককথায় বললে, অতীতে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’কে মেনে নেওয়া হয়েছিল; এখন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বলছেন, কোনো জরুরি প্রয়োজনেও সেটা মেনে নেওয়া যাবে না। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বা প্রয়োজনের বিধানের জায়গায় এল ‘ডকট্রিন অব কনডোনেশন’ বা ক্ষমার বিধান।
আমি মনে করি, অতীতের সামরিক শাসকদের বিচার করা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে আইনের শাসন সম্পর্কেও সবার সজাগ থাকা উচিত। আইন মানার সংস্কৃতি যদি আমরা গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এ ধরনের রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো লাভ হবে না। সেই সংস্কৃতি বিকশিত না হলে সামরিক শাসনের মতো অনাচার বারবার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকবে। তবে এ কথাও বলা দরকার যে আইন দিয়ে সামরিক শাসন দূর করা যায় না। সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে সামরিক শাসন তথা বেআইনি শাসনবিরোধী চেতনা প্রবল হলে সামরিক শাসন কখনো কায়েম থাকতে পারে না। যেমন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী বা বিভিন্ন পদাধিকারী ব্যক্তি যদি রাজি না হন, তাহলে সামরিক শাসকদের পক্ষে তাঁদের ব্যবহার করা সম্ভব হতো না। এ দিকটি আগে নিশ্চিত করতে হবে।
এই রায়ে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা তো বিধান করে কায়েম করা যাবে না। বাংলাদেশে তো কেউ-ই ধর্মনিরপেক্ষ না। সবাই মুখে মুখে এটা বলে। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তো বলা রয়েছে, কোরআন ও সুন্নাবিরোধী কোনো আইন তারা করবে না। এটাও তো ধর্ম নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি। কাজেই ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করতে হলে আগে এর সংজ্ঞা যথাযথভাবে ঠিক করতে হবে। এবং এটা কার্যকর করতে হলে সংসদে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবিধানে শুধু নীতিমালা দেওয়া রয়েছে। আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে সংবিধানে এক জায়গায় বলা হয়েছে যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনতা পাবে, তারা আইনসম্মতভাবেই কাজ করতে পারবে। সংবিধানের বর্তমান নীতি অনুযায়ী ব্যক্তির ধর্মাচরণ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তথা মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডাগুলোর ধর্মপালনের স্বাধীনতা থাকবে। যেটা কেউ পারবে না, তা হলো ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার। এখন এর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। আমাদের সংবিধানে ইসলামকে যে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে এই নীতিমালার সংগতিবিধান করতে হবে। এই রায়ে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নির্দেশ রয়েছে, কিন্তু পরের সামরিক শাসনের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন করতে হবে, তা নিয়ে এখন আমাদের নতুন করে বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে। আর এ কাজ সংসদীয় কমিটিই করতে পারে।
তবে আশঙ্কা রয়েছে যে সবাই এই রায়কে নিজ নিজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর এর গভীর প্রভাব পড়বে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে আইন না করা পর্যন্ত জামায়াত বা ধর্মীয় দলগুলোর তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
এই রায় এবং সংবিধান সংশোধন এখন নানাভাবেই জড়িত বিষয় হয়ে গেছে। সরকার সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদীয় কমিটিও গঠন করে দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির কাজ হবে সবাইকে ডেকে ডেকে বক্তব্য শোনা। এ জন্য গণশুনানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের ডেকে প্রশ্ন করে তাঁদের অভিমত জানার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে কমিটিতে বিশেষজ্ঞ না থাকার কুফল এড়ানো যাবে। যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংসদকেই নিতে হবে, সেহেতু আমি সংসদীয় কমিটির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতে চাই না।
আকবর আলি খান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
No comments