আজ হোক স্পেনে সিয়েস্তা-ফিয়েস্তার দিন
ইংরেজিতে বলে, ‘অল গুড থিংস কাম টু অ্যান এন্ড’। বিশ্বকাপও শেষ হয়ে গেল। আর শোনা যাবে না অক্লান্ত ঝিঁঝি পোকার কায়দায় ভুভুজেলার মাথা ধরানো প্যাঁ-পোঁ শব্দ। প্রতিটি ম্যাচের শুরুতে বলস্ট্যান্ড থেকে বলটি নিয়ে রেফারির মাঠে প্রবেশের দৃশ্যটি আবার চার বছরের জন্য স্মৃতি হয়ে যাবে। আবার আমাদের চোখ ফিরে আসবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর। বিশ্বকাপ ফুটবলের ঘোর কাটিয়ে এখন হয়তো আস্তে আস্তে জাগ্রত হচ্ছি আরেকটি বিস্ময়কর অনুধাবনের দিকে, আরে তাই তো, বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে দিয়েছে যে! গ্রেট! বিশ্বকাপের ডামাডোলে ক্রিকেটে বাংলাদেশের এ কীর্তিও আমরা নিশ্চয়ই অনেকে খেয়াল করছিলাম না। অথচ আমাদের এ অর্জন স্পেনের (সম্ভাব্য) বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে কম কিসে?
হ্যামলেট বলেছিলেন না, উপলক্ষ বড় না ছোট, তা কোনো ব্যাপার নয়, ব্যাপার হলো, যেখানে আত্মমর্যাদার প্রশ্ন জড়িত থাকে সেখানে লড়াই করাটাই হলো মহত্বের লক্ষণ। গতকাল তাই বাংলাদেশের জেতার মধ্যে যেমন মহত্বের ছায়া ছিল, তেমনই ছিল উরুগুয়ের বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়ার মধ্যেও। বিশ্বাস করুন, একেবারে মন চায়নি যে উরুগুয়ে জার্মানির কাছে হারুক। এত দিন ডিয়েগো ফোরলানের খেলায় দেশপ্রেমের ছোঁয়া আমাকেও উজ্জীবিত রেখেছিল।
হঠাৎ মনে পড়ছে, যে ঘটনাটির কারণে আমি বিশ্ব ফুটবলের দিকে আগ্রহী হয়ে পড়ি, সেটা ঘটেছিল ১৯৮০ সালে।
উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী প্রতিযোগিতা। তখন বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রোববার। প্রতি রোববার বিটিভি ঠিক বেলা ১১টায় ওই প্রতিযোগিতার রেকর্ড করা এক একটি খেলা দেখাত। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। কেন জানি না, চ্যাপম্যানের অনুবাদের মাধ্যমে গ্রিক মহাকবি হোমারকে জানতে পেরে কবি কিটসের মধ্যে যে শিহরণ জেগেছিল, আমার মনে ওই ঘটনা যেন সে রকমই অনুভূতি জাগিয়েছিল। ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’!
সেই থেকে উরুগুয়ে আমার একটি প্রিয় দল।
ফোরলানের শেষ মিনিটের ফ্রি-কিকটি যদি গোলবারে না লেগে ঢুকে যেত! কিন্তু বিধি বাম। জার্মানির বিজয়ের কারণে একটা অতৃপ্তির কাঁটা খচখচ করছে। মুলার ছেলেটি এসে ঠিকই একটা গোল করে ফেলল। জায়গা করে নিল গোল্ডেন বুট কাড়ার প্রতিযোগিতায়—ফোরলান, ভিয়া আর স্নাইডারের সঙ্গে। মুলারের উপস্থিতি যদি জার্মানিকে জিতিয়ে দেয়, তা হলে এ অনুমান কি করতে হবে যে সেদিন মুলার থাকলে স্পেন জিততে পারত না? জানি না। কী হলে কী হতো এর উত্তর জীবনে যেমন মেলে না, খেলায়ও না। অবশ্য ক্লোসা, পোডলস্কি আর লামকে ছাড়াও জার্মানি যে ম্যাচটা বের করে নিয়েছে, তাতে তাদের শক্তিটা বোঝা যায়।
আবার তাদের নিয়ে খেলেও যে স্পেনের সঙ্গে পারেনি, তাতে স্পেনের শক্তিও নিশ্চয়ই বোঝা যায়।
আজকে স্পেনের লাল জার্সির সঙ্গে হল্যান্ডের কমলা জার্সির লড়াই। জার্মান জ্যোতিষী অক্টোপাস পল স্পেনের পক্ষে রায় দিলেও সিঙ্গাপুরের টিয়াপাখিটা ঠোঁট দিয়ে যে খামটি তুলেছে, তার ভেতরে আছে হল্যান্ডের নাম। অতিলৌকিক জগৎ থেকে একটা সংঘর্ষের পূর্বাভাসই পাচ্ছি। সেটাই তো সবাই চায় ফাইনাল ম্যাচে। মাঠের ভাষায় বললে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করা যায়। তবে রোবেনকে আটকাতে গিয়ে স্পেন যেন ব্রাজিলের ভুলটা করে না বসে। ব্রাজিল রোবেনকে নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে অন্য ডাচ খেলোয়াড়েরা অনেকটা ফাঁকা মাঠ পেয়ে যান।
আজকেও রোবেন সে কৌশলটা নেবেন মনে হয়। প্রতিটি ট্যাকলের সময় ছলচাতুরী করে মাটিতে ঝাঁপ দেবেন আর ইংলিশ রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েব সেটি বুঝতে না পারলে ফাউলও আদায় করে নেবেন।
ইংরেজ এই সাবেক পুলিশ অফিসার রেফারিকে নিয়ে স্পেন একটু ভয়ে আছে বলে খবর এসেছে। ২০০৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার সময় তিনি অস্ট্রিয়া-পোল্যান্ডের খেলায় অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি দিয়ে পোলিশ সমর্থকদের কাছ থেকে মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছিলেন।
পরে তাঁর ওপর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয় কিল দ্য রেফারি নামে। ওই ছবি সম্পর্কে ওয়েবের মন্তব্য হলো, ‘আমরা রেফারিরা ছুরির ফলার ওপরে বাস করি।’ এর মধ্যে ফুটবল গুরু ইয়োহান ক্রুইফ খবর দিয়েছেন, যদিও তিনি একজন ডাচ কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকবে স্পেনের কাছে। কারণ স্পেন আজকে যে অবিরাম বলকে অধিকারে রাখার শিল্পে মেতেছে, সেটি তিনিই বার্সেলোনা ক্লাবে খেলার সময় প্রবর্তন করেছিলেন।
আর আমার কেন স্পেনের ফিয়েস্তা বা উৎসবে যোগ দিতে ইচ্ছা, তারও একটা কারণ আছে।
নিজের ছোট ভাইয়ের বউ স্প্যানিশ, কাজেই তারা তালুইয়ের দেশ। সেই সূত্রে একবার স্পেনে গিয়ে দেখি, তারা আমাদের মতোই হাত নেড়ে নেড়ে জোরে জোরে কথা বলে, যখন-তখন খেতে ভালোবাসে, আর নিয়ম করে দিবানিদ্রা দেয়, যার নাম হলো সিয়েস্তা।
হ্যামলেট বলেছিলেন না, উপলক্ষ বড় না ছোট, তা কোনো ব্যাপার নয়, ব্যাপার হলো, যেখানে আত্মমর্যাদার প্রশ্ন জড়িত থাকে সেখানে লড়াই করাটাই হলো মহত্বের লক্ষণ। গতকাল তাই বাংলাদেশের জেতার মধ্যে যেমন মহত্বের ছায়া ছিল, তেমনই ছিল উরুগুয়ের বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়ার মধ্যেও। বিশ্বাস করুন, একেবারে মন চায়নি যে উরুগুয়ে জার্মানির কাছে হারুক। এত দিন ডিয়েগো ফোরলানের খেলায় দেশপ্রেমের ছোঁয়া আমাকেও উজ্জীবিত রেখেছিল।
হঠাৎ মনে পড়ছে, যে ঘটনাটির কারণে আমি বিশ্ব ফুটবলের দিকে আগ্রহী হয়ে পড়ি, সেটা ঘটেছিল ১৯৮০ সালে।
উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী প্রতিযোগিতা। তখন বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রোববার। প্রতি রোববার বিটিভি ঠিক বেলা ১১টায় ওই প্রতিযোগিতার রেকর্ড করা এক একটি খেলা দেখাত। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। কেন জানি না, চ্যাপম্যানের অনুবাদের মাধ্যমে গ্রিক মহাকবি হোমারকে জানতে পেরে কবি কিটসের মধ্যে যে শিহরণ জেগেছিল, আমার মনে ওই ঘটনা যেন সে রকমই অনুভূতি জাগিয়েছিল। ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’!
সেই থেকে উরুগুয়ে আমার একটি প্রিয় দল।
ফোরলানের শেষ মিনিটের ফ্রি-কিকটি যদি গোলবারে না লেগে ঢুকে যেত! কিন্তু বিধি বাম। জার্মানির বিজয়ের কারণে একটা অতৃপ্তির কাঁটা খচখচ করছে। মুলার ছেলেটি এসে ঠিকই একটা গোল করে ফেলল। জায়গা করে নিল গোল্ডেন বুট কাড়ার প্রতিযোগিতায়—ফোরলান, ভিয়া আর স্নাইডারের সঙ্গে। মুলারের উপস্থিতি যদি জার্মানিকে জিতিয়ে দেয়, তা হলে এ অনুমান কি করতে হবে যে সেদিন মুলার থাকলে স্পেন জিততে পারত না? জানি না। কী হলে কী হতো এর উত্তর জীবনে যেমন মেলে না, খেলায়ও না। অবশ্য ক্লোসা, পোডলস্কি আর লামকে ছাড়াও জার্মানি যে ম্যাচটা বের করে নিয়েছে, তাতে তাদের শক্তিটা বোঝা যায়।
আবার তাদের নিয়ে খেলেও যে স্পেনের সঙ্গে পারেনি, তাতে স্পেনের শক্তিও নিশ্চয়ই বোঝা যায়।
আজকে স্পেনের লাল জার্সির সঙ্গে হল্যান্ডের কমলা জার্সির লড়াই। জার্মান জ্যোতিষী অক্টোপাস পল স্পেনের পক্ষে রায় দিলেও সিঙ্গাপুরের টিয়াপাখিটা ঠোঁট দিয়ে যে খামটি তুলেছে, তার ভেতরে আছে হল্যান্ডের নাম। অতিলৌকিক জগৎ থেকে একটা সংঘর্ষের পূর্বাভাসই পাচ্ছি। সেটাই তো সবাই চায় ফাইনাল ম্যাচে। মাঠের ভাষায় বললে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করা যায়। তবে রোবেনকে আটকাতে গিয়ে স্পেন যেন ব্রাজিলের ভুলটা করে না বসে। ব্রাজিল রোবেনকে নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে অন্য ডাচ খেলোয়াড়েরা অনেকটা ফাঁকা মাঠ পেয়ে যান।
আজকেও রোবেন সে কৌশলটা নেবেন মনে হয়। প্রতিটি ট্যাকলের সময় ছলচাতুরী করে মাটিতে ঝাঁপ দেবেন আর ইংলিশ রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েব সেটি বুঝতে না পারলে ফাউলও আদায় করে নেবেন।
ইংরেজ এই সাবেক পুলিশ অফিসার রেফারিকে নিয়ে স্পেন একটু ভয়ে আছে বলে খবর এসেছে। ২০০৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার সময় তিনি অস্ট্রিয়া-পোল্যান্ডের খেলায় অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি দিয়ে পোলিশ সমর্থকদের কাছ থেকে মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছিলেন।
পরে তাঁর ওপর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয় কিল দ্য রেফারি নামে। ওই ছবি সম্পর্কে ওয়েবের মন্তব্য হলো, ‘আমরা রেফারিরা ছুরির ফলার ওপরে বাস করি।’ এর মধ্যে ফুটবল গুরু ইয়োহান ক্রুইফ খবর দিয়েছেন, যদিও তিনি একজন ডাচ কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকবে স্পেনের কাছে। কারণ স্পেন আজকে যে অবিরাম বলকে অধিকারে রাখার শিল্পে মেতেছে, সেটি তিনিই বার্সেলোনা ক্লাবে খেলার সময় প্রবর্তন করেছিলেন।
আর আমার কেন স্পেনের ফিয়েস্তা বা উৎসবে যোগ দিতে ইচ্ছা, তারও একটা কারণ আছে।
নিজের ছোট ভাইয়ের বউ স্প্যানিশ, কাজেই তারা তালুইয়ের দেশ। সেই সূত্রে একবার স্পেনে গিয়ে দেখি, তারা আমাদের মতোই হাত নেড়ে নেড়ে জোরে জোরে কথা বলে, যখন-তখন খেতে ভালোবাসে, আর নিয়ম করে দিবানিদ্রা দেয়, যার নাম হলো সিয়েস্তা।
No comments