বার্লিন দেয়াল: পতনের ২০ বছর পর -খোলা চোখে by হাসান ফেরদৌস
৯ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়ালের পতন ঘটে। সে দেয়ালের পতনের ভেতর দিয়ে সোভিয়েত কমুনিজম নামের কফিনের ওপর প্রথম বড় পেরেকটি ঠোকা হয়। দুই বছর পর, ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের রাষ্ট্রের পতনের মধ্য দিয়ে তার শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেওয়া হয়।
বার্লিন দেয়াল পতনের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গত সপ্তাহে ইউরোপের মানুষ যখন সোভিয়েত লৌহ যবনিকার অবসান উদযাপন করছে, তখন ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসে বিতর্ক হচ্ছে এক নতুন স্বাস্থ্য বীমা আইন নিয়ে। এই আইন পাস হলে তাতে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে সাধারণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যবস্থা চালু হবে। ক্যাপিটাল হিলের কংগ্রেস ভবনে এই নিয়ে যখন তুমুল তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, ঠিক সেই সময় হাজার দশেক লোক বাইরে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে: গেল, গেল, আমেরিকা কমিউনিস্টদের দখলে চলে গেল।
বার্লিন দেয়ালের ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ভেতর অনেকেই ধনতন্ত্রের বিজয় পতাকা দেখে হাততালি দিয়েছিলেন। এখন, সে ঘটনার ২০ বছর পর, সমাজতন্ত্রের চেতনার মৃত্যু হয়েছে, সে কথা বলতে অনেকেই দ্বিধান্বিত। বারাক ওবামার আমেরিকায় যা ঘটছে, তাকে সমাজতন্ত্রের পুনরুত্থান ভাবা অযৌক্তিক, কিন্তু গত এক বছরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে চলেছে, তাতে অনেকেই মাথা চুলকে ভাবছেন, এই গাড্ডা থেকে বেরোনোর পথ কী। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে মিলমিশ করে একটা মিশ্র ব্যবস্থা সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে, এমন কথা কেউ কেউ মুখ ফুটে বলেও ফেলেছেন। অবশ্য সমাজতন্ত্র শব্দটি কেউ ভুলেও মুখে আনছেন না।
ইউরোপের দেশগুলো মোটামুটিভাবে মেনে নিয়েছে, বল্গাহীন ধনতন্ত্রের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে একসময় আমও যাবে, বস্তাও যাবে। এই লাগাম টেনে ধরার কাজটা সরকার তথা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আগ বাড়িয়ে করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবীর ছোট-বড় অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তাই টিকে থাকার জন্য সে কাজটা করতে হবে যৌথভাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও প্রধান অর্থনীতি আমেরিকা। নিজেদের স্বার্থে তাকেও সে কাজে হাত লাগাতে হবে বৈকি। কিন্তু আমেরিকায় সরকারের ভূমিকা প্রশ্নে বাম ও ডানের লড়াই কমার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার সমস্যার সমাধান নয়, সেই সব সমস্যার কারণ, এ কথা আমেরিকার মানুষ কয়েক দশক ধরে শুনে আসছে সকাল-সন্ধ্যা। শুধু রোনাল্ড রিগ্যান নয়, উদারবাদী বলে পরিচিত বিল ক্লিনটনের সময়ও সেই একই কথা বলা হয়েছে। ‘বৃহত্ সরকারের কাল শেষ হয়েছে’ ক্লিনটন টেবিল ঠুকে ঘোষণা করেছিলেন। প্রথমে রিগ্যান, তারপর বিল ক্লিনটনের নেতৃত্বে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি নজরদারি ক্রমেই কমিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তার ফল যে কী ভয়াবহ হতে পারে, সে কথা আমেরিকার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। গত এক বছরে ১৫০ ব্যাংকে লালবাতি জ্বলেছে। তার মধ্যে গণ্ডারসদৃশ বড় বড় ব্যাংক রয়েছে। জেনারেল মোটরস ও ফোর্ড কোম্পানির মতো ধনতন্ত্রের প্রতীক এখন সরকারের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে টিমটিমে বাতি জ্বালিয়ে টিকে আছে, সে দেওটিও যখন তখন নিভে যেতে পারে। শেয়ারবাজারে ধস নামায় মাঝারি আয়ের অসংখ্য মানুষ পথে বসেছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মর্টগেজ বাজারের। লাখ লাখ মানুষ দেউলিয়া হয়ে নিজেদের বাড়িঘরের মালিকানা হারিয়েছে। এক ক্যালিফোর্নিয়াতেই পাঁচ লাখ লোক নিজেদের বসতবাড়ি খুইয়েছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে বেড়েছে বেকারত্ব। এ মুহূর্তে আমেরিকার প্রতি ১০ জনের একজন কর্মহীন। স্বাস্থ্যবীমা নেই এমন মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি।
ইউরোপের ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর অবস্থা যে এর চেয়ে খুব ভালো, তা নয়। সেখানে কোনো কোনো দেশে বেকারত্বের হার আরও বেশি। ইতালি, স্পেন ও গ্রিসে বেকার ও অভাবী মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। দাঙ্গা ঠেকাতে ফ্রান্সেও কয়েক দফা পুলিশ নামাতে হয়েছে। আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ঋণ না পেলে ফিনল্যান্ডের মতো দেশকে সরকারিভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হতো।
পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক সভ্যতার এমন এক জটিল সময়ে বার্লিন দেয়াল পতনের ২০ বছর উদ্যাপন করতে গিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার মানুষকে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলতে হচ্ছে, এমন তো কথা ছিল না। মদ, মধু ও রুটির যে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার হলো কী?
কয়েক মাস ধরে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিস্তর সময়, ঘাম ও বিদ্যুতের আলো ব্যয় করেছে। এ বছরের গোড়ার দিকে প্যারিসে বসেছিল বৃহত্ শক্তিগুলোর সম্মেলন, তার স্লোগান ছিল ‘নতুন বিশ্ব, নতুন পুঁজিবাদ।’ তার কয়েক মাস পরে লন্ডনে বসে তথাকথিত জি-২০ (গ্রুপ অব টোয়েন্টি, বা বৃহত্ ২০টি দেশের সম্মিলিত গ্রুপ) শীর্ষ বৈঠক। আর সবশেষে এই সেপ্টেম্বরে পিটসবার্গে হয়ে গেল আমেরিকার পৌরহিত্যে জি-২০ দলের আরেক শীর্ষ বৈঠক। সবখানে একই কথা: ধনতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে তাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অর্থব্যবস্থা—বিশেষত ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে সুষম বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্মাণ করতে হবে, দুই হাত খুলে খরচের ফলে যেভাবে ঋণের পাহাড় জমেছে, তাতে রাশ টেনে ধরতে হবে, গরিব দেশগুলোর ঋণ কমানোর পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত সাহায্যের কথাও ভাবতে হবে। মোদ্দা বক্তব্য হলো, খোলাবাজারের নামে পুরোনো কায়দায় বোম্বেটেপনা করলে চলবে না। টিকে থাকতে হলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমেরিকা বা চীন, যে যত বড় অর্থনীতিই হোক না কেন, সাধারণ নীতিমালার ভিত্তিতে না এগোলে নির্ঘাত মরণ। সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থাপনায় নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিতে যে ব্রেটন উডস-ভিত্তিক পুরোনো ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত চালু আছে, তা দিয়ে কাজ হবে না। ব্রেটন উডস সম্মেলন হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। তখন চীন, ভারত বা ব্রাজিলের মতো দেশকে হিসাবের খাতায় আনা হতো না। এখন হিসাবের খাতায় তারাই প্রধান খদ্দের। ফলে তাদের নিয়ে এক সম্প্রসারিত আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিষদ গড়ে তুলতে হবে।
সম্প্রতি ধনতন্ত্রের সংকট নিয়ে খোলাচোখে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন নিউইয়র্ক রিভিউ অব বুকসে ‘ক্যাপিটালিজম বিয়ন্ড দ্য ক্রাইসিস’ নামের এক দীর্ঘ আলোচনায়। অধ্যাপক সেন মন্তব্য করেছেন, ধনতন্ত্রকে তার খোলনলচে বদলে ফেলার যে কথা বলা হচ্ছে, তা কিছুটা বাগাড়ম্বর-সর্বস্ব। যাঁরা অবাধ বাজারব্যবস্থার ভিত্তিতে বল্গাহীন ধনতন্ত্রের কথা বলেন, তাঁরা হয়তো লক্ষ করেননি নির্ভেজাল, অবাধ ধনতন্ত্র বলে কিছু নেই। ছোট-বড় সব ধরনের ধনতান্ত্রিক দেশেই সরকার তথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিস্তর খাত থাকে। নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন ব্যবস্থাপনা থেকে যোগাযোগ, পরিবহন ও ডাকব্যবস্থার বড় অংশই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে। অধিকাংশ ধনতান্ত্রিক দেশেই, এমনকি আমেরিকায়ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্কুলপর্যায়ে শিক্ষা, জরুরি চিকিত্সা পরিচর্যা এবং কোনো না কোনো ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা জাল (যেমন, পেনশন) চালু রয়েছে। ধনতন্ত্র যে বর্তমানে সংকটের মধ্যে পড়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু অধ্যাপক সেন মনে করেন না সে সংকটের সমাধান হবে নতুন আরেক ধরনের ধনতন্ত্রের সূচনার মাধ্যমে, যা দরকার তা হলো ধনতন্ত্রের চলতি ‘মনোলিথিক’ ব্যবস্থার বদলে বাস্তবসম্মত একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সমর্থনে ও অংশগ্রহণে কর্মক্ষম ও নীতিসম্মত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অ্যাডাম স্মিথ থেকে কেইনস সে কথাই বলে গেছেন। যেমন, অ্যাডাম স্মিথ মনে করতেন, বাজার ও পুঁজি যার যার নিজের ক্ষেত্রে কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন। তিনি মুনাফার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু মুনাফার বাইরেও কিছু কিছু মূল্যবোধ আছে, তিনি সেসবের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। বল্গাহীন মুনাফাখোরি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি ‘সুচিন্তিত আর্থিক নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ’-এর কথা বলেছিলেন। সমাজে যারা দুর্বল ও দরিদ্র, তাদের রক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকার কথাও তিনি উপেক্ষা করেননি। অন্য কথায়, পুঁজিবাদের যে অসুখ নিয়ে আমরা এখন চুল ছিঁড়ছি, তার লক্ষণ ও উত্তরণের পথ সোয়া দুই শ বছর আগেই সেই অ্যাডাম স্মিথই নির্দেশ করে গেছেন।
সোভিয়েত ধাঁচের সমাজতন্ত্রের তুলনায় ধনতন্ত্র অধিক সফল ও তুলনামূলকভাবে অধিক টেকসই হয়েছে, তা নিয়ে তর্ক নেই। সোভিয়েত-ব্যবস্থা যে শেষ পর্যন্ত টেসে গেল, তার একটা বড় কারণ পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নিজেকে সে বদলে নিতে পারেনি। পেরেস্ক্রোইকা ও গ্লাসনস্ত দিয়ে গর্বাচেভ শেষ সময়ে একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু সে পরিবর্তন ছিল পুরোটাই ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া। তার কোনো অরগানিক বিকাশ ছিল না। অন্য দিকে ধনতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি নিজেকে সময়মতো পরিবর্তিত হতে দেওয়া, পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। ধনতন্ত্রের টিকে থাকার বড় কারণই হলো, অধ্যাপক সেনের ব্যাখ্যা ধার করে বলা যায়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আইন ও নীতিমালার প্রয়োগ।
ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত মালিকানা নির্ধারণের জন্য আইন ও নীতিমালা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ধনতন্ত্র ঠিকমতো বিকশিত হতে পারেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন বদলেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনকানুনও তৈরি হয়েছে। সোজা কথায়, এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম ও মূল্যবোধ ধনতন্ত্রকে পেছন থেকে উত্সাহ ও সমর্থন জুগিয়েছে। এ কাজে খবরদারির কাজটি করেছে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার। পুঁজিবাদ যত বিকশিত হয়েছে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর রাষ্ট্রীয় খবরদারির প্রয়োজনও সেই পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমেরিকায় ঘটেছে এর উল্টোটা। পুঁজিবাদ যত জেঁকে বসেছে, এখানে আইনের খবরদারিও সেই পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কী সর্বনাশ হয়েছে সে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
সরকারের ভূমিকা প্রশ্নে ইউরোপে বিতর্ক মোটামুটি শেষ। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের মোদ্দা আদর্শগুলো কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই ধনতন্ত্রের একটি মানবিক চেহারা তৈরি করে নিয়েছে। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে, বিশেষত স্ক্যান্ডেনেভিয়ায়—গণকল্যাণমুখী যে রাষ্ট্রব্যবস্থা মোটের ওপর তৈরি হয়েছে, চেতনায় ও আদর্শে তারা মার্ক্স ও এঙ্গেলসের সাম্যবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে খুব দূরে নয়। তারিক আলী তাঁর সাম্প্রতিক বই, দি আইডিয়া অব কম্যুনিজম-এ মন্তব্য করেছেন, কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে যে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, তার কেন্দ্রে একদিকে রয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা, অন্যদিকে সমাজের সামষ্টিক দায়দায়িত্ব। সোভিয়েত-ব্যবস্থার পতনের প্রধান কারণ এই দুই মূল নীতি থেকে সরে আসা। ধনতন্ত্র আজ সংকটের মুখে পড়েছে। তার কারণ প্রথম আদর্শের কথা মাথায় রাখলেও দ্বিতীয় আদর্শ সে ভুলতে বসেছে।
বার্লিন দেয়াল ধ্বংসের দুই দশক পরে যখন ধনতন্ত্রের বিজয়কেতন ওড়ানোর কথা, আমরা তখন ধনতন্ত্রের সম্ভাব্য মৃত্যু নিয়ে কথা বলছি। ইতিহাসের আলাদা কোনো দেবতা আছে কি না আমার জানা নেই। থেকে থাকলে তিনি নির্ঘাত এই মুহূর্তে হো হো করে হাসছেন।
৯ নভেম্বর ২০০৯, নিউইয়র্ক
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক। কলাম লেখক।
বার্লিন দেয়াল পতনের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গত সপ্তাহে ইউরোপের মানুষ যখন সোভিয়েত লৌহ যবনিকার অবসান উদযাপন করছে, তখন ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসে বিতর্ক হচ্ছে এক নতুন স্বাস্থ্য বীমা আইন নিয়ে। এই আইন পাস হলে তাতে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে সাধারণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যবস্থা চালু হবে। ক্যাপিটাল হিলের কংগ্রেস ভবনে এই নিয়ে যখন তুমুল তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, ঠিক সেই সময় হাজার দশেক লোক বাইরে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে: গেল, গেল, আমেরিকা কমিউনিস্টদের দখলে চলে গেল।
বার্লিন দেয়ালের ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ভেতর অনেকেই ধনতন্ত্রের বিজয় পতাকা দেখে হাততালি দিয়েছিলেন। এখন, সে ঘটনার ২০ বছর পর, সমাজতন্ত্রের চেতনার মৃত্যু হয়েছে, সে কথা বলতে অনেকেই দ্বিধান্বিত। বারাক ওবামার আমেরিকায় যা ঘটছে, তাকে সমাজতন্ত্রের পুনরুত্থান ভাবা অযৌক্তিক, কিন্তু গত এক বছরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে চলেছে, তাতে অনেকেই মাথা চুলকে ভাবছেন, এই গাড্ডা থেকে বেরোনোর পথ কী। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে মিলমিশ করে একটা মিশ্র ব্যবস্থা সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে, এমন কথা কেউ কেউ মুখ ফুটে বলেও ফেলেছেন। অবশ্য সমাজতন্ত্র শব্দটি কেউ ভুলেও মুখে আনছেন না।
ইউরোপের দেশগুলো মোটামুটিভাবে মেনে নিয়েছে, বল্গাহীন ধনতন্ত্রের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে একসময় আমও যাবে, বস্তাও যাবে। এই লাগাম টেনে ধরার কাজটা সরকার তথা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আগ বাড়িয়ে করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবীর ছোট-বড় অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তাই টিকে থাকার জন্য সে কাজটা করতে হবে যৌথভাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও প্রধান অর্থনীতি আমেরিকা। নিজেদের স্বার্থে তাকেও সে কাজে হাত লাগাতে হবে বৈকি। কিন্তু আমেরিকায় সরকারের ভূমিকা প্রশ্নে বাম ও ডানের লড়াই কমার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার সমস্যার সমাধান নয়, সেই সব সমস্যার কারণ, এ কথা আমেরিকার মানুষ কয়েক দশক ধরে শুনে আসছে সকাল-সন্ধ্যা। শুধু রোনাল্ড রিগ্যান নয়, উদারবাদী বলে পরিচিত বিল ক্লিনটনের সময়ও সেই একই কথা বলা হয়েছে। ‘বৃহত্ সরকারের কাল শেষ হয়েছে’ ক্লিনটন টেবিল ঠুকে ঘোষণা করেছিলেন। প্রথমে রিগ্যান, তারপর বিল ক্লিনটনের নেতৃত্বে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি নজরদারি ক্রমেই কমিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তার ফল যে কী ভয়াবহ হতে পারে, সে কথা আমেরিকার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। গত এক বছরে ১৫০ ব্যাংকে লালবাতি জ্বলেছে। তার মধ্যে গণ্ডারসদৃশ বড় বড় ব্যাংক রয়েছে। জেনারেল মোটরস ও ফোর্ড কোম্পানির মতো ধনতন্ত্রের প্রতীক এখন সরকারের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে টিমটিমে বাতি জ্বালিয়ে টিকে আছে, সে দেওটিও যখন তখন নিভে যেতে পারে। শেয়ারবাজারে ধস নামায় মাঝারি আয়ের অসংখ্য মানুষ পথে বসেছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মর্টগেজ বাজারের। লাখ লাখ মানুষ দেউলিয়া হয়ে নিজেদের বাড়িঘরের মালিকানা হারিয়েছে। এক ক্যালিফোর্নিয়াতেই পাঁচ লাখ লোক নিজেদের বসতবাড়ি খুইয়েছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে বেড়েছে বেকারত্ব। এ মুহূর্তে আমেরিকার প্রতি ১০ জনের একজন কর্মহীন। স্বাস্থ্যবীমা নেই এমন মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি।
ইউরোপের ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর অবস্থা যে এর চেয়ে খুব ভালো, তা নয়। সেখানে কোনো কোনো দেশে বেকারত্বের হার আরও বেশি। ইতালি, স্পেন ও গ্রিসে বেকার ও অভাবী মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। দাঙ্গা ঠেকাতে ফ্রান্সেও কয়েক দফা পুলিশ নামাতে হয়েছে। আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ঋণ না পেলে ফিনল্যান্ডের মতো দেশকে সরকারিভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হতো।
পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক সভ্যতার এমন এক জটিল সময়ে বার্লিন দেয়াল পতনের ২০ বছর উদ্যাপন করতে গিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার মানুষকে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলতে হচ্ছে, এমন তো কথা ছিল না। মদ, মধু ও রুটির যে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার হলো কী?
কয়েক মাস ধরে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিস্তর সময়, ঘাম ও বিদ্যুতের আলো ব্যয় করেছে। এ বছরের গোড়ার দিকে প্যারিসে বসেছিল বৃহত্ শক্তিগুলোর সম্মেলন, তার স্লোগান ছিল ‘নতুন বিশ্ব, নতুন পুঁজিবাদ।’ তার কয়েক মাস পরে লন্ডনে বসে তথাকথিত জি-২০ (গ্রুপ অব টোয়েন্টি, বা বৃহত্ ২০টি দেশের সম্মিলিত গ্রুপ) শীর্ষ বৈঠক। আর সবশেষে এই সেপ্টেম্বরে পিটসবার্গে হয়ে গেল আমেরিকার পৌরহিত্যে জি-২০ দলের আরেক শীর্ষ বৈঠক। সবখানে একই কথা: ধনতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে তাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অর্থব্যবস্থা—বিশেষত ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে সুষম বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্মাণ করতে হবে, দুই হাত খুলে খরচের ফলে যেভাবে ঋণের পাহাড় জমেছে, তাতে রাশ টেনে ধরতে হবে, গরিব দেশগুলোর ঋণ কমানোর পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত সাহায্যের কথাও ভাবতে হবে। মোদ্দা বক্তব্য হলো, খোলাবাজারের নামে পুরোনো কায়দায় বোম্বেটেপনা করলে চলবে না। টিকে থাকতে হলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমেরিকা বা চীন, যে যত বড় অর্থনীতিই হোক না কেন, সাধারণ নীতিমালার ভিত্তিতে না এগোলে নির্ঘাত মরণ। সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থাপনায় নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিতে যে ব্রেটন উডস-ভিত্তিক পুরোনো ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত চালু আছে, তা দিয়ে কাজ হবে না। ব্রেটন উডস সম্মেলন হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। তখন চীন, ভারত বা ব্রাজিলের মতো দেশকে হিসাবের খাতায় আনা হতো না। এখন হিসাবের খাতায় তারাই প্রধান খদ্দের। ফলে তাদের নিয়ে এক সম্প্রসারিত আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিষদ গড়ে তুলতে হবে।
সম্প্রতি ধনতন্ত্রের সংকট নিয়ে খোলাচোখে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন নিউইয়র্ক রিভিউ অব বুকসে ‘ক্যাপিটালিজম বিয়ন্ড দ্য ক্রাইসিস’ নামের এক দীর্ঘ আলোচনায়। অধ্যাপক সেন মন্তব্য করেছেন, ধনতন্ত্রকে তার খোলনলচে বদলে ফেলার যে কথা বলা হচ্ছে, তা কিছুটা বাগাড়ম্বর-সর্বস্ব। যাঁরা অবাধ বাজারব্যবস্থার ভিত্তিতে বল্গাহীন ধনতন্ত্রের কথা বলেন, তাঁরা হয়তো লক্ষ করেননি নির্ভেজাল, অবাধ ধনতন্ত্র বলে কিছু নেই। ছোট-বড় সব ধরনের ধনতান্ত্রিক দেশেই সরকার তথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিস্তর খাত থাকে। নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন ব্যবস্থাপনা থেকে যোগাযোগ, পরিবহন ও ডাকব্যবস্থার বড় অংশই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে। অধিকাংশ ধনতান্ত্রিক দেশেই, এমনকি আমেরিকায়ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্কুলপর্যায়ে শিক্ষা, জরুরি চিকিত্সা পরিচর্যা এবং কোনো না কোনো ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা জাল (যেমন, পেনশন) চালু রয়েছে। ধনতন্ত্র যে বর্তমানে সংকটের মধ্যে পড়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু অধ্যাপক সেন মনে করেন না সে সংকটের সমাধান হবে নতুন আরেক ধরনের ধনতন্ত্রের সূচনার মাধ্যমে, যা দরকার তা হলো ধনতন্ত্রের চলতি ‘মনোলিথিক’ ব্যবস্থার বদলে বাস্তবসম্মত একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সমর্থনে ও অংশগ্রহণে কর্মক্ষম ও নীতিসম্মত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অ্যাডাম স্মিথ থেকে কেইনস সে কথাই বলে গেছেন। যেমন, অ্যাডাম স্মিথ মনে করতেন, বাজার ও পুঁজি যার যার নিজের ক্ষেত্রে কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন। তিনি মুনাফার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু মুনাফার বাইরেও কিছু কিছু মূল্যবোধ আছে, তিনি সেসবের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। বল্গাহীন মুনাফাখোরি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি ‘সুচিন্তিত আর্থিক নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ’-এর কথা বলেছিলেন। সমাজে যারা দুর্বল ও দরিদ্র, তাদের রক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকার কথাও তিনি উপেক্ষা করেননি। অন্য কথায়, পুঁজিবাদের যে অসুখ নিয়ে আমরা এখন চুল ছিঁড়ছি, তার লক্ষণ ও উত্তরণের পথ সোয়া দুই শ বছর আগেই সেই অ্যাডাম স্মিথই নির্দেশ করে গেছেন।
সোভিয়েত ধাঁচের সমাজতন্ত্রের তুলনায় ধনতন্ত্র অধিক সফল ও তুলনামূলকভাবে অধিক টেকসই হয়েছে, তা নিয়ে তর্ক নেই। সোভিয়েত-ব্যবস্থা যে শেষ পর্যন্ত টেসে গেল, তার একটা বড় কারণ পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নিজেকে সে বদলে নিতে পারেনি। পেরেস্ক্রোইকা ও গ্লাসনস্ত দিয়ে গর্বাচেভ শেষ সময়ে একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু সে পরিবর্তন ছিল পুরোটাই ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া। তার কোনো অরগানিক বিকাশ ছিল না। অন্য দিকে ধনতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি নিজেকে সময়মতো পরিবর্তিত হতে দেওয়া, পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। ধনতন্ত্রের টিকে থাকার বড় কারণই হলো, অধ্যাপক সেনের ব্যাখ্যা ধার করে বলা যায়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আইন ও নীতিমালার প্রয়োগ।
ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত মালিকানা নির্ধারণের জন্য আইন ও নীতিমালা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ধনতন্ত্র ঠিকমতো বিকশিত হতে পারেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন বদলেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনকানুনও তৈরি হয়েছে। সোজা কথায়, এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম ও মূল্যবোধ ধনতন্ত্রকে পেছন থেকে উত্সাহ ও সমর্থন জুগিয়েছে। এ কাজে খবরদারির কাজটি করেছে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার। পুঁজিবাদ যত বিকশিত হয়েছে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর রাষ্ট্রীয় খবরদারির প্রয়োজনও সেই পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমেরিকায় ঘটেছে এর উল্টোটা। পুঁজিবাদ যত জেঁকে বসেছে, এখানে আইনের খবরদারিও সেই পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কী সর্বনাশ হয়েছে সে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
সরকারের ভূমিকা প্রশ্নে ইউরোপে বিতর্ক মোটামুটি শেষ। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের মোদ্দা আদর্শগুলো কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই ধনতন্ত্রের একটি মানবিক চেহারা তৈরি করে নিয়েছে। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে, বিশেষত স্ক্যান্ডেনেভিয়ায়—গণকল্যাণমুখী যে রাষ্ট্রব্যবস্থা মোটের ওপর তৈরি হয়েছে, চেতনায় ও আদর্শে তারা মার্ক্স ও এঙ্গেলসের সাম্যবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে খুব দূরে নয়। তারিক আলী তাঁর সাম্প্রতিক বই, দি আইডিয়া অব কম্যুনিজম-এ মন্তব্য করেছেন, কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে যে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, তার কেন্দ্রে একদিকে রয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা, অন্যদিকে সমাজের সামষ্টিক দায়দায়িত্ব। সোভিয়েত-ব্যবস্থার পতনের প্রধান কারণ এই দুই মূল নীতি থেকে সরে আসা। ধনতন্ত্র আজ সংকটের মুখে পড়েছে। তার কারণ প্রথম আদর্শের কথা মাথায় রাখলেও দ্বিতীয় আদর্শ সে ভুলতে বসেছে।
বার্লিন দেয়াল ধ্বংসের দুই দশক পরে যখন ধনতন্ত্রের বিজয়কেতন ওড়ানোর কথা, আমরা তখন ধনতন্ত্রের সম্ভাব্য মৃত্যু নিয়ে কথা বলছি। ইতিহাসের আলাদা কোনো দেবতা আছে কি না আমার জানা নেই। থেকে থাকলে তিনি নির্ঘাত এই মুহূর্তে হো হো করে হাসছেন।
৯ নভেম্বর ২০০৯, নিউইয়র্ক
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক। কলাম লেখক।
No comments