হেমন্ত বাতাসে বইয়ের মেলা -চারদিক by খান মাহবুব
বর্ণমালার
হাত ধরেই সভ্যতার যাত্রা। এ বর্ণমালা বইয়ের পাতায় স্থান নিয়ে সভ্যতাকে
রক্ষাকবচের মতো আগলে রেখেছে। বাংলা বর্ণমালায় সজ্জিত বাংলা ভাষাকে
বায়ান্নতে রক্ত দিয়ে রক্ষা করতে হয়েছে আমাদের। বায়ান্নর আন্দোলন আমাদের
ভাষার ক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ এক অধ্যায়। ভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের
পর থেকে এ অঞ্চলের প্রকাশনার যাত্রা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে শুরু
করে, যা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আরও বেগবান হয়। এর ক্রমধারায় আশির দশকের
মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকার শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে বইপাড়ার যাত্রা শুরু হয়।
শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সৃজনশীল প্রকাশকেরা বরাবরই পরিমার্জিত ও পরিশীলিত রুচির পরিচয় দিয়ে আসছেন। তবে পুঁজির স্বল্পতা আমাদের যাত্রাপথকে বন্ধুর করেছে, অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এর ওপর গত দু-তিন বছরে আজিজ সুপার মার্কেটে তৈরি পোশাক ও কাপড়ের ব্যবসার ক্রমসম্প্রসারণের ফলে এখানকার প্রকাশনা ব্যবসা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বড় পুঁজির ধর্মই ছোট পুঁজিকে খেয়ে ফেলা। তাই কাপড় ব্যবসায়ীদের পুঁজির কাছে এখানকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ২০০৮ সালের সূচনা থেকে এ ধারা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এখানকার প্রকাশকেরা ব্যবসায়িক বিস্তৃতি, সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য প্রকাশনাশিল্পের এই দুষ্কালে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করে।
লেখক-পাঠকদের জন্য আরও ব্যাপকভাবে তারা বইমেলা আয়োজনের তাগিদ অনুভব করে। এ ধারায় গত বছর শাহবাগের ১৩টি প্রকাশনা সংস্থা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হলে ৬ থেকে ১৫ নভেম্বর ১০ দিনের ‘হেমন্তের বইমেলা ১৪১৫’ শীর্ষক মেলার আয়োজন করে। ১০ দিনব্যাপী এই মেলার অভূতপূর্ব সাফল্য সবার মধ্যে দৃঢ়প্রত্যয় সৃষ্টি করে।
২০০৮ সালের মেলার সাফল্যের সামাগ্রিক কারণ গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সহযোগিতা, গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা, মেলার সেমিনার, লেখক-প্রকাশক মিলনমেলা ও মেলার শৃঙ্খলা। মেলায় বই বিক্রি ছিল আশাতীত। মেলার উদ্বোধন পর্বে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ উদ্যোগকে উপমার যোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।
গত বছরের মেলার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা কাঁধে নিয়ে এ বছর ৪ থেকে ১৯ নভেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি উন্মুক্ত চত্বরে বর্ধিত কলেবরে ১৫টি প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে দ্বিতীয় ‘হেমন্তের বইমেলা ১৪১৬’। এই মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রকাশনী সংস্থা পাঠক সমাবেশ, জাগৃতি, ঘাস ফুল নদী, সন্দেশ, জনান্তিক, পলল, ম্যাগনাম ওপাস, উত্স, মুক্তচিন্তা, জ্যোতিপ্রকাশ, শুদ্ধস্বর, ভাষাচিত্র, কথাপ্রকাশ, স্বরাজ, বাংলার মুখ, বনপাংশুল।
এ বছরের মেলা গত বছরের মেলার নির্ধারিত হলরুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে উন্মুক্ত চত্বরে। আজিজ সুপার মার্কেটকেন্দ্রিক প্রকাশকদের পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, বিশ্বাস, একযোগে কাজ করার মানসিকতা এ মেলাকে একদিন অমর একুশের বইমেলা ও ঢাকা আর্ন্তজাতিক বইমেলার পাশে নিয়ে দাঁড় করাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমরা পর্যায়ক্রমে হেমন্তের মতো প্রতিটি ঋতুতে একটি করে মেলা করার ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা করতে পারি। প্রকাশনাকে একটি শিল্পের সম্মান দিতে এর সাংগঠনিক ভিত শক্ত হওয়া প্রয়োজন মনে করে মেলা-পরবর্তী সময়ে ‘কীভাবে একটি ভালো বই লেখা যাবে’ এবং ‘কীভাবে ভালো প্রকাশক হওয়া যাবে’—এই দুটো বিষয়ের ওপর কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমান সময়ে বিশ্বায়নের হাওয়া পৃথিবীর দুই মেরু বরাবর চলমান। কেউ না চাইলেও বিশ্বায়নের সঙ্গে কমবেশি সম্পৃক্ত হতে হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির উত্কর্ষের এ যুগে আজ আর তৃতীয় বিশ্বকে উন্নত বিশ্বের পরিত্যক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এখন মুদ্রণের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এবং সেবার ক্ষেত্রেই তৃতীয় ও উন্নত বিশ্ব একই মান নিশ্চিত করতে তত্পর। এ ধারায় কাগজের বইয়ের চাহিদা কিছুটা হয়তো হ্রাস পেতে পারে, তবে তা আশঙ্কাজনক নয় বলেই মনে হয়। তার পরও অনলাইন পাবলিশিংকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। যদিও এখানো কাগজের বইয়ের প্রকাশনার উত্কর্ষসাধনে প্রকাশকদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনলাইন পাবলিশিংয়ের ওপর কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন মেলার এই আয়োজকেরা।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের সরকারের সামর্থ্য কম। এ ছাড়া প্রকাশনা সত্যিকারের শিল্প হিসেবে গড়ে না উঠে ধীরগতির শিল্প হিসেবে বাংলাদেশে বিকাশ লাভ করেছে। কাজেই জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় প্রতিযোগিতার দৌড়ে পেছনে থাকায় সরকার প্রকাশনাশিল্পকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারে না। আর যতটুকু বরাদ্দ থাকে, তা সুষ্ঠু নীতিমালা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেকাংশে বেহাত হয়। কাজেই সামর্থ্যের কমতি থাকলেও প্রকাশকদের প্রকাশনাকে গণমুখী করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করা জরুরি। আমরা মনে করি, এ খাতের সমস্যা, সমস্যার উত্স ও সমাধানের পথ খুঁজতে প্রকাশকেরাই প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারণ, এ ব্যবসা করতে গিয়ে এর সুখ-সুবিধার সঙ্গে নিত্যদিন বসবাসের ফলে এক ধরনের আত্তীকরণ ঘটেছে প্রকাশকদের।
তবে গুটি কয়েক মানুষের উদ্যোগকে বিস্তৃত করার জন্য ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। যদি সরকার ও সামর্থবান মহল এ মেলাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তবে হেমন্তের বইমেলা অবশ্যই একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। শিশু যখন হাঁটতে চেষ্টা করে, তখনই পরিবারের সদস্যরা তাকে সাহায্য করে হাঁটতে শেখায়। এই মেলা যাত্রা শুরু করেছে—এখন প্রয়োজন তার চলার পথে সহায়ক হিসেবে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা।
‘হেমন্তের বইমেলা’ চলবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। আপনারা আমন্ত্রিত।
শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সৃজনশীল প্রকাশকেরা বরাবরই পরিমার্জিত ও পরিশীলিত রুচির পরিচয় দিয়ে আসছেন। তবে পুঁজির স্বল্পতা আমাদের যাত্রাপথকে বন্ধুর করেছে, অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এর ওপর গত দু-তিন বছরে আজিজ সুপার মার্কেটে তৈরি পোশাক ও কাপড়ের ব্যবসার ক্রমসম্প্রসারণের ফলে এখানকার প্রকাশনা ব্যবসা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বড় পুঁজির ধর্মই ছোট পুঁজিকে খেয়ে ফেলা। তাই কাপড় ব্যবসায়ীদের পুঁজির কাছে এখানকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ২০০৮ সালের সূচনা থেকে এ ধারা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এখানকার প্রকাশকেরা ব্যবসায়িক বিস্তৃতি, সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য প্রকাশনাশিল্পের এই দুষ্কালে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করে।
লেখক-পাঠকদের জন্য আরও ব্যাপকভাবে তারা বইমেলা আয়োজনের তাগিদ অনুভব করে। এ ধারায় গত বছর শাহবাগের ১৩টি প্রকাশনা সংস্থা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হলে ৬ থেকে ১৫ নভেম্বর ১০ দিনের ‘হেমন্তের বইমেলা ১৪১৫’ শীর্ষক মেলার আয়োজন করে। ১০ দিনব্যাপী এই মেলার অভূতপূর্ব সাফল্য সবার মধ্যে দৃঢ়প্রত্যয় সৃষ্টি করে।
২০০৮ সালের মেলার সাফল্যের সামাগ্রিক কারণ গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সহযোগিতা, গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা, মেলার সেমিনার, লেখক-প্রকাশক মিলনমেলা ও মেলার শৃঙ্খলা। মেলায় বই বিক্রি ছিল আশাতীত। মেলার উদ্বোধন পর্বে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ উদ্যোগকে উপমার যোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।
গত বছরের মেলার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা কাঁধে নিয়ে এ বছর ৪ থেকে ১৯ নভেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি উন্মুক্ত চত্বরে বর্ধিত কলেবরে ১৫টি প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে দ্বিতীয় ‘হেমন্তের বইমেলা ১৪১৬’। এই মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রকাশনী সংস্থা পাঠক সমাবেশ, জাগৃতি, ঘাস ফুল নদী, সন্দেশ, জনান্তিক, পলল, ম্যাগনাম ওপাস, উত্স, মুক্তচিন্তা, জ্যোতিপ্রকাশ, শুদ্ধস্বর, ভাষাচিত্র, কথাপ্রকাশ, স্বরাজ, বাংলার মুখ, বনপাংশুল।
এ বছরের মেলা গত বছরের মেলার নির্ধারিত হলরুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে উন্মুক্ত চত্বরে। আজিজ সুপার মার্কেটকেন্দ্রিক প্রকাশকদের পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, বিশ্বাস, একযোগে কাজ করার মানসিকতা এ মেলাকে একদিন অমর একুশের বইমেলা ও ঢাকা আর্ন্তজাতিক বইমেলার পাশে নিয়ে দাঁড় করাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমরা পর্যায়ক্রমে হেমন্তের মতো প্রতিটি ঋতুতে একটি করে মেলা করার ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা করতে পারি। প্রকাশনাকে একটি শিল্পের সম্মান দিতে এর সাংগঠনিক ভিত শক্ত হওয়া প্রয়োজন মনে করে মেলা-পরবর্তী সময়ে ‘কীভাবে একটি ভালো বই লেখা যাবে’ এবং ‘কীভাবে ভালো প্রকাশক হওয়া যাবে’—এই দুটো বিষয়ের ওপর কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমান সময়ে বিশ্বায়নের হাওয়া পৃথিবীর দুই মেরু বরাবর চলমান। কেউ না চাইলেও বিশ্বায়নের সঙ্গে কমবেশি সম্পৃক্ত হতে হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির উত্কর্ষের এ যুগে আজ আর তৃতীয় বিশ্বকে উন্নত বিশ্বের পরিত্যক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এখন মুদ্রণের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এবং সেবার ক্ষেত্রেই তৃতীয় ও উন্নত বিশ্ব একই মান নিশ্চিত করতে তত্পর। এ ধারায় কাগজের বইয়ের চাহিদা কিছুটা হয়তো হ্রাস পেতে পারে, তবে তা আশঙ্কাজনক নয় বলেই মনে হয়। তার পরও অনলাইন পাবলিশিংকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। যদিও এখানো কাগজের বইয়ের প্রকাশনার উত্কর্ষসাধনে প্রকাশকদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনলাইন পাবলিশিংয়ের ওপর কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন মেলার এই আয়োজকেরা।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের সরকারের সামর্থ্য কম। এ ছাড়া প্রকাশনা সত্যিকারের শিল্প হিসেবে গড়ে না উঠে ধীরগতির শিল্প হিসেবে বাংলাদেশে বিকাশ লাভ করেছে। কাজেই জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় প্রতিযোগিতার দৌড়ে পেছনে থাকায় সরকার প্রকাশনাশিল্পকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারে না। আর যতটুকু বরাদ্দ থাকে, তা সুষ্ঠু নীতিমালা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেকাংশে বেহাত হয়। কাজেই সামর্থ্যের কমতি থাকলেও প্রকাশকদের প্রকাশনাকে গণমুখী করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করা জরুরি। আমরা মনে করি, এ খাতের সমস্যা, সমস্যার উত্স ও সমাধানের পথ খুঁজতে প্রকাশকেরাই প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারণ, এ ব্যবসা করতে গিয়ে এর সুখ-সুবিধার সঙ্গে নিত্যদিন বসবাসের ফলে এক ধরনের আত্তীকরণ ঘটেছে প্রকাশকদের।
তবে গুটি কয়েক মানুষের উদ্যোগকে বিস্তৃত করার জন্য ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। যদি সরকার ও সামর্থবান মহল এ মেলাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তবে হেমন্তের বইমেলা অবশ্যই একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। শিশু যখন হাঁটতে চেষ্টা করে, তখনই পরিবারের সদস্যরা তাকে সাহায্য করে হাঁটতে শেখায়। এই মেলা যাত্রা শুরু করেছে—এখন প্রয়োজন তার চলার পথে সহায়ক হিসেবে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা।
‘হেমন্তের বইমেলা’ চলবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। আপনারা আমন্ত্রিত।
No comments