সঠিক ব্যবস্থাপনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ -বৈদেশিক মুদ্রার বড় রিজার্ভ

এটা একটি ভালো খবর যে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক। রিজার্ভের এই অবস্থা অর্থনীতির শক্তিমত্তার একটি সূচক হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, বিশেষ করে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ইতিবাচক অবস্থা ধরে রাখার ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব যে, বাংলাদেশ বিদেশি দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে। রিজার্ভের এ অবস্থা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতেও সহায়ক হবে। তারা এটিকে একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবেই দেখবে। আর তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রটিও আগের তুলনায় প্রশস্ত হবে।
তবে রিজার্ভের এই শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার ও এর ব্যবস্থাপনা করা এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রথমত, প্রবাসী-আয়ের উচ্চ প্রবাহ রিজার্ভ বাড়ানোয় ভূমিকা রেখেছে। আবার এই প্রবাসী-আয়ই দেশে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করছে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়তে হয়। সুতরাং, এই মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানি ব্যয় কমে যাওয়াও রিজার্ভ বাড়ার অন্যতম কারণ। এখন দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় কমেছে। বিশেষ করে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোনোই গতি সঞ্চার করতে পারছে না। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও তেমন গতি নেই। ফলে ব্যাংকগুলোতেও অলস অর্থের পাহাড় জমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ যেন বেগবান হয়, সেদিকে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তৃতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মানে বিদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্তি যেন নিরাপদ ও ভালো হয়, সেদিকে নজর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। গতানুগতিকভাবে শুধু আমেরিকার ট্রেজারি বন্ডই কেনা হবে, নাকি আরও কিছু উত্স খোঁজা হবে, সেটা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রিজার্ভ থেকে কিছু অংশ বিনিয়োগ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি উদ্ভাবনীমূলক হলেও সতর্ক থাকা দরকার।
বস্তুত, বড় অঙ্কের রিজার্ভ বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর জন্য মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিরাট স্বস্তিদায়ক। তবে এই স্বস্তি নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, এর থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়ার পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকেই নিতে হবে। রিজার্ভ ধরে রেখে আরও বাড়ানোর চেষ্টা যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনি অর্থনীতি যেন গতিশীল হয়ে ওঠে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.