ব্যক্তিতে ও সমাজে মনেরও চাই যত্ন ও পরিচর্যা -মানসিক স্বাস্থ্য দিবস by মো. গোলাম রব্বানী
২০০৯ সালের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় মানসিক স্বাস্থ্য: চিকিত্সা সম্প্রসারণ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন’। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসম্পন্ন। গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার আগে দেখা যাক বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার বর্তমান হাল। বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রাপ্ত হিসাব। আর মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই শিশু-কিশোর। তাদের মধ্যে মানসিক রোগসংক্রান্ত সমীক্ষা এখনো প্রক্রিয়াধীন। এই বিপুলসংখ্যক মানসিক রোগীর বিপরীতে দেশে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা মাত্র ১২০ জন—অর্থাত্ প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার জন্য শূন্য দশমিক ০৭ জন অর্থাত্ প্রায় ১৫ লাখ মানুষের জন্য গড়ে একজনেরও কম, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এর পাশাপাশি সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ও সাইকিয়াট্রিক নার্সের সংখ্যাও অতি নগণ্য। সারা দেশে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্তর্বিভাগে মোট শয্যাসংখ্যা মাত্র ৮১৩টি; অর্থাত্ প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার জন্য শূন্য দশমিক ৫৮টি শয্যা। অন্যভাবে বলা যায়, এক লাখ ৭২ হাজার ৪১৪ জন মানুষের জন্য সাইকিয়াট্রিক শয্যা রয়েছে মাত্র একটি।
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা দরকার। সরকারি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মানসিক রোগ বিষয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, তার অবসানকল্পে এবং মানসিক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে বৈরী সামাজিক আচরণ করা হয়, তার সংশোধনের জন্য জনমত গঠন এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে এ সম্পর্কে পাঠক্রম চালু করা দরকার।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিত্সক, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ফার্মাসিস্ট, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিত্সক ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় এর অন্তর্ভুক্তি সফল ও বাস্তবানুগ হতে পারে।
আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মাঠপর্যায়ের কর্মীরা সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকেন। এসব কাজের পাশাপাশি তাঁদের মানসিক রোগ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তাঁরা অন্যকে সচেতন করতে পারেন এবং সমন্বিত স্বাস্থ্যব্যবস্থার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেন।
বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বর্তমানে ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে, পাবনায় একটি মানসিক হাসপাতালে, ঢাকায় একটি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে এবং মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তার ওপর সব মেডিকেল কলেজে নেই অন্তর্বিভাগে ভর্তির সুবিধা এবং কোনো কোনোটিতে নেই প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ও জনবল। এ ছাড়া দেশের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ মানসিক রোগীর একটি বিরাট অংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় অথবা সামাজিক সংস্কারের কারণে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিত্সা নিতে আগ্রহী নন। এ অবস্থা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তির অন্যতম অন্তরায়। এ সমস্যা নিরসনে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি দক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক তৈরি ও তাঁদের পদায়ন এবং সব জেলা হাসপাতালে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
মানসিক রোগের চিকিত্সায় ব্যবহূত ওষুধগুলো সরকারের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং তা রোগীদের কাছে সহজলভ্য করার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে এসব ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত না হলে মানসিক রোগের চিকিত্সা থেকে যাবে অসম্পূর্ণ।
মনে রাখতে হবে, কেবল একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং সময় সময় দেশের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে এই কার্যক্রমকে যুগোপযোগী ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের নীতিমালা পর্যালোচনা করে তার আলোকে বাংলাদেশের উপযোগী করে নিজস্ব সংস্কৃতিভিত্তিক সুসংগঠিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।
মানসিক রোগের চিকিত্সার সম্প্রসারণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আর্থিক বরাদ্দ। ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রদান করা হয়েছিল মানসিক স্বাস্থ্য খাতে, অথচ মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের মানসিক সহায়তা প্রয়োজন। তাই জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশে মানসিক রোগ, রোগী এমনকি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের ছিল কিছু ভ্রান্ত ধারণা। মানসিক রোগের চিকিত্সায় মানুষ এখনো দ্বারস্থ হচ্ছে বিভিন্ন প্রতারক ও অপচিকিত্সকদের কাছে। কিন্তু আশার কথা, এই যে বিগত দশকের তুলনায় এ অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে, বেড়েছে মানুষের সচেতনতা, বাড়ছে সুচিকিত্সার সুযোগ। পাশাপাশি আগের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী তরুণ চিকিত্সকেরা আকৃষ্ট হচ্ছেন মানসিক রোগ বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা ও গবেষণায়। দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম হয়তো এক দিন সম্পূর্ণভাবে ‘ই-হেলথ’-এর আওতায় চলে আসবে। তখন কেবল মানুষের দোরগোড়ায় নয়, মানুষের হাতের মুঠোয় স্বাস্থ্যসেবাকে পৌঁছে দেওয়ার যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখে, সেই স্বপ্নের পুরোভাগে থাকতে চায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব চিকিত্সক ও সংশ্লিষ্ট কর্মী।
২০০৯ সালের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ৫০ শয্যার অত্যাধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ইউনিট এবং একই দিনে মানসিক স্বাস্থ্যের গবেষণার উন্নতিকল্পে এই হাসপাতালেই চালু হচ্ছে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লাইব্রেরি। ভবিষ্যতে এই ইনস্টিটিউটের সব সেবাকার্যক্রম ও প্রশাসনকে আধুনিকায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ করে ‘ই-মেন্টাল হেলথ’ পরিষেবা চালু করার স্বপ্ন দেখি আমরা। এ বছরের মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য, সময়োপযোগী, জনবান্ধব ও বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তোলা এবং সে লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যার যার সাধ্য অনুযায়ী মেধা-মনন ও শ্রমের বিনিয়োগ করা। এর জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানী: পরিচালক ও অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা দরকার। সরকারি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মানসিক রোগ বিষয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, তার অবসানকল্পে এবং মানসিক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে বৈরী সামাজিক আচরণ করা হয়, তার সংশোধনের জন্য জনমত গঠন এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে এ সম্পর্কে পাঠক্রম চালু করা দরকার।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিত্সক, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ফার্মাসিস্ট, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিত্সক ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় এর অন্তর্ভুক্তি সফল ও বাস্তবানুগ হতে পারে।
আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মাঠপর্যায়ের কর্মীরা সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকেন। এসব কাজের পাশাপাশি তাঁদের মানসিক রোগ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তাঁরা অন্যকে সচেতন করতে পারেন এবং সমন্বিত স্বাস্থ্যব্যবস্থার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেন।
বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বর্তমানে ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে, পাবনায় একটি মানসিক হাসপাতালে, ঢাকায় একটি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে এবং মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তার ওপর সব মেডিকেল কলেজে নেই অন্তর্বিভাগে ভর্তির সুবিধা এবং কোনো কোনোটিতে নেই প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ও জনবল। এ ছাড়া দেশের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ মানসিক রোগীর একটি বিরাট অংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় অথবা সামাজিক সংস্কারের কারণে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিত্সা নিতে আগ্রহী নন। এ অবস্থা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তির অন্যতম অন্তরায়। এ সমস্যা নিরসনে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি দক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক তৈরি ও তাঁদের পদায়ন এবং সব জেলা হাসপাতালে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
মানসিক রোগের চিকিত্সায় ব্যবহূত ওষুধগুলো সরকারের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং তা রোগীদের কাছে সহজলভ্য করার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে এসব ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত না হলে মানসিক রোগের চিকিত্সা থেকে যাবে অসম্পূর্ণ।
মনে রাখতে হবে, কেবল একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং সময় সময় দেশের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে এই কার্যক্রমকে যুগোপযোগী ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের নীতিমালা পর্যালোচনা করে তার আলোকে বাংলাদেশের উপযোগী করে নিজস্ব সংস্কৃতিভিত্তিক সুসংগঠিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।
মানসিক রোগের চিকিত্সার সম্প্রসারণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আর্থিক বরাদ্দ। ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রদান করা হয়েছিল মানসিক স্বাস্থ্য খাতে, অথচ মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের মানসিক সহায়তা প্রয়োজন। তাই জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশে মানসিক রোগ, রোগী এমনকি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের ছিল কিছু ভ্রান্ত ধারণা। মানসিক রোগের চিকিত্সায় মানুষ এখনো দ্বারস্থ হচ্ছে বিভিন্ন প্রতারক ও অপচিকিত্সকদের কাছে। কিন্তু আশার কথা, এই যে বিগত দশকের তুলনায় এ অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে, বেড়েছে মানুষের সচেতনতা, বাড়ছে সুচিকিত্সার সুযোগ। পাশাপাশি আগের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী তরুণ চিকিত্সকেরা আকৃষ্ট হচ্ছেন মানসিক রোগ বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা ও গবেষণায়। দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম হয়তো এক দিন সম্পূর্ণভাবে ‘ই-হেলথ’-এর আওতায় চলে আসবে। তখন কেবল মানুষের দোরগোড়ায় নয়, মানুষের হাতের মুঠোয় স্বাস্থ্যসেবাকে পৌঁছে দেওয়ার যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখে, সেই স্বপ্নের পুরোভাগে থাকতে চায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব চিকিত্সক ও সংশ্লিষ্ট কর্মী।
২০০৯ সালের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ৫০ শয্যার অত্যাধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ইউনিট এবং একই দিনে মানসিক স্বাস্থ্যের গবেষণার উন্নতিকল্পে এই হাসপাতালেই চালু হচ্ছে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লাইব্রেরি। ভবিষ্যতে এই ইনস্টিটিউটের সব সেবাকার্যক্রম ও প্রশাসনকে আধুনিকায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ করে ‘ই-মেন্টাল হেলথ’ পরিষেবা চালু করার স্বপ্ন দেখি আমরা। এ বছরের মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য, সময়োপযোগী, জনবান্ধব ও বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তোলা এবং সে লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যার যার সাধ্য অনুযায়ী মেধা-মনন ও শ্রমের বিনিয়োগ করা। এর জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানী: পরিচালক ও অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
No comments