বিলেতে উচ্চশিক্ষা -স্বপ্ন আর বাস্তবতা! by তানভীর আহমেদ
ব্রিটেনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত ১০ বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ হয়েছে বলে খবর ছেপেছে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ (২৪ সেপ্টেম্বর)। পত্রিকাটি বলেছে, এ সংখ্যা বাড়ার কারণ ইউরোপের বাইরের দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ। ৪১ হাজার শিক্ষার্থী এসেছেন শুধু চীন থেকে, বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরে শিক্ষার্থী এসেছেন ৩৫ হাজারের মতো। ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ অ্যাডমিশন সার্ভিস (ইউকাস) তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের চাপে চলতি বছর ৫০ হাজার ব্রিটিশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হারাচ্ছেন।
তাহলে কথা হলো, খোদ ব্রিটিশ শিক্ষার্থীরা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না, সেখানে কেন ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের এভাবে অধিক সংখ্যায় ভিসা দেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরও টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের কাছ থেকে হোম স্টুডেন্টদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ টিউশন ফি আদায় করছে, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ পাউন্ড নিচ্ছে।
যেসব শিক্ষার্থী প্রকৃত অর্থে ব্রিটেনে পড়তে আসেন না, তাঁদের কেউ কেউ এমন ধারণা পোষণ করেন যে এখানে আসতে পারলে বস্তা ভরে পাউন্ড কামানো যাবে। ঢাকা শহরে যেমন শপিং সেন্টারের মধ্যে এক-দুই কক্ষবিশিষ্ট কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আছে, লন্ডনে বাঙালিদের মালিকানাধীন এ ধরনের অসংখ্য কলেজ আছে, কলেজগুলোকে বলা হয় ভিসা কলেজ। এসব কলেজ থেকে নেওয়া সনদ বস্তুত কোনো কাজেই আসে না। দেশজুড়ে কিছু এজেন্ট রয়েছে, যারা শিক্ষার্থীদের ব্রিটেন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে বলে উল্লেখ করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে আসা অনেক শিক্ষার্থী। ব্রিটেনে এসে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন বলে ধারণা দিয়েছে এসব কলেজের এজেন্টরা।
একজন শিক্ষার্থীর ব্রিটেনে প্রতিমাসে থাকা-খাওয়া বাবদ ন্যূনতম ৪০০-৫০০ পাউন্ড খরচ হবে। কম মূল্যের কলেজের টিউশন ফি বাবদ বছরে কম করে হলেও গুনতে হবে তিন হাজার পাউন্ড। তাহলে প্রতি মাসে একজন ছাত্রের প্রয়োজন ৭০০-৮০০ পাউন্ড। যদি কোনো ভাগ্যবান ছাত্র সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার কাজ পেয়েই যান, তবে তাঁর মাসিক আয় ৫০০ পাউন্ড। এখন কথা হলো, থাকা-খাওয়ার খরচ না হয় জুটে গেল, বাকি খরচ আসবে কোথা থেকে? মন্দা অর্থনীতির কারণে শিক্ষার্থীরা এখন ২০ ঘণ্টার কাজও পাচ্ছেন না। আসদা, টেসকো সেইন্সবারির মতো রিটেইল শপগুলো সেলফ চেক আউট পদ্ধতি চালু করে কর্মী সংখ্যা ৫০ ভাগ কমিয়ে ফেলেছে। আর কর্মী ছাঁটাইয়ের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ৭ অক্টোবর এক হাজার ৭০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
যেসব শিক্ষার্থী গাঁটের পয়সা খরচ করে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসছেন, তাঁদের জন্য কোনো পরামর্শ নেই, তাঁরা জেনে-বুঝেই পড়তে আসছেন। কারণ তাঁদের আর্থিক সংগতি রয়েছে। আর সঠিক পরামর্শের জন্য সবার ইউকে বর্ডার এজেন্সির ওয়েবসাইট দেখা উচিত।
(http://www.bia.homeoffice.gov.uk/news-and-updates/?area=Studying)
আর যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করবেন, কিংবা অর্থ উপার্জন করে টিউশন ফি জোগাড় করবেন বলে ভাবছেন অথবা টিউশন ফি জোগাড় করে পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা দেশে পাঠাবেন কিংবা সঞ্চয় করবেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ—আপাতত স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। কারণ, ভাবনার জগত্ আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ভাবনার জগতের ধারণা নিয়ে ব্রিটেনে এসে তিন থেকে ছয় মাস কর্মহীন রয়েছেন অনেকেই। অর্থকষ্টে কেউ কেউ মসজিদে রাত যাপন করছেন। তাঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ফিরে গেছেন বাংলাদেশে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ ব্রিটেন অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া ২০১০ সালে নির্বাচনের আগে হয়তো লেবার সরকার ভোটের হিসাব-নিকাশের জন্য অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন করতে পারে। সেই সঙ্গে ২০১২ সালের অলিম্পিককে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের শেষের দিকে কিছু কাজের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাই ২০১০ সালের শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্রিটেনে আসা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
এ পরিস্থিতিতে সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে, স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যাঁরা ব্রিটেনে আসতে চান তাঁদের কোনো তৃতীয় পক্ষ মিথ্যা পরামর্শ দিচ্ছে কি না অথবা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন কি না। কোনো অনিয়ম হলে এজেন্সিগুলোকেও একটা নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে ব্রিটেন সম্বন্ধে উঁচু ধারণা পেয়েছেন। ব্রিটেনে যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে কাজ না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন, না খেয়ে পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন, বাংলাদেশ সেন্টার ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় তাঁদের সাময়িকভাবে সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবতে পারে সরকার।
তানভীর আহমেদ: প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি।
তাহলে কথা হলো, খোদ ব্রিটিশ শিক্ষার্থীরা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না, সেখানে কেন ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের এভাবে অধিক সংখ্যায় ভিসা দেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরও টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের কাছ থেকে হোম স্টুডেন্টদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ টিউশন ফি আদায় করছে, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ পাউন্ড নিচ্ছে।
যেসব শিক্ষার্থী প্রকৃত অর্থে ব্রিটেনে পড়তে আসেন না, তাঁদের কেউ কেউ এমন ধারণা পোষণ করেন যে এখানে আসতে পারলে বস্তা ভরে পাউন্ড কামানো যাবে। ঢাকা শহরে যেমন শপিং সেন্টারের মধ্যে এক-দুই কক্ষবিশিষ্ট কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আছে, লন্ডনে বাঙালিদের মালিকানাধীন এ ধরনের অসংখ্য কলেজ আছে, কলেজগুলোকে বলা হয় ভিসা কলেজ। এসব কলেজ থেকে নেওয়া সনদ বস্তুত কোনো কাজেই আসে না। দেশজুড়ে কিছু এজেন্ট রয়েছে, যারা শিক্ষার্থীদের ব্রিটেন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে বলে উল্লেখ করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে আসা অনেক শিক্ষার্থী। ব্রিটেনে এসে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন বলে ধারণা দিয়েছে এসব কলেজের এজেন্টরা।
একজন শিক্ষার্থীর ব্রিটেনে প্রতিমাসে থাকা-খাওয়া বাবদ ন্যূনতম ৪০০-৫০০ পাউন্ড খরচ হবে। কম মূল্যের কলেজের টিউশন ফি বাবদ বছরে কম করে হলেও গুনতে হবে তিন হাজার পাউন্ড। তাহলে প্রতি মাসে একজন ছাত্রের প্রয়োজন ৭০০-৮০০ পাউন্ড। যদি কোনো ভাগ্যবান ছাত্র সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার কাজ পেয়েই যান, তবে তাঁর মাসিক আয় ৫০০ পাউন্ড। এখন কথা হলো, থাকা-খাওয়ার খরচ না হয় জুটে গেল, বাকি খরচ আসবে কোথা থেকে? মন্দা অর্থনীতির কারণে শিক্ষার্থীরা এখন ২০ ঘণ্টার কাজও পাচ্ছেন না। আসদা, টেসকো সেইন্সবারির মতো রিটেইল শপগুলো সেলফ চেক আউট পদ্ধতি চালু করে কর্মী সংখ্যা ৫০ ভাগ কমিয়ে ফেলেছে। আর কর্মী ছাঁটাইয়ের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ৭ অক্টোবর এক হাজার ৭০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
যেসব শিক্ষার্থী গাঁটের পয়সা খরচ করে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসছেন, তাঁদের জন্য কোনো পরামর্শ নেই, তাঁরা জেনে-বুঝেই পড়তে আসছেন। কারণ তাঁদের আর্থিক সংগতি রয়েছে। আর সঠিক পরামর্শের জন্য সবার ইউকে বর্ডার এজেন্সির ওয়েবসাইট দেখা উচিত।
(http://www.bia.homeoffice.gov.uk/news-and-updates/?area=Studying)
আর যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করবেন, কিংবা অর্থ উপার্জন করে টিউশন ফি জোগাড় করবেন বলে ভাবছেন অথবা টিউশন ফি জোগাড় করে পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা দেশে পাঠাবেন কিংবা সঞ্চয় করবেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ—আপাতত স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। কারণ, ভাবনার জগত্ আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ভাবনার জগতের ধারণা নিয়ে ব্রিটেনে এসে তিন থেকে ছয় মাস কর্মহীন রয়েছেন অনেকেই। অর্থকষ্টে কেউ কেউ মসজিদে রাত যাপন করছেন। তাঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ফিরে গেছেন বাংলাদেশে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ ব্রিটেন অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া ২০১০ সালে নির্বাচনের আগে হয়তো লেবার সরকার ভোটের হিসাব-নিকাশের জন্য অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন করতে পারে। সেই সঙ্গে ২০১২ সালের অলিম্পিককে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের শেষের দিকে কিছু কাজের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাই ২০১০ সালের শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্রিটেনে আসা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
এ পরিস্থিতিতে সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে, স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যাঁরা ব্রিটেনে আসতে চান তাঁদের কোনো তৃতীয় পক্ষ মিথ্যা পরামর্শ দিচ্ছে কি না অথবা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন কি না। কোনো অনিয়ম হলে এজেন্সিগুলোকেও একটা নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে ব্রিটেন সম্বন্ধে উঁচু ধারণা পেয়েছেন। ব্রিটেনে যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে কাজ না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন, না খেয়ে পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন, বাংলাদেশ সেন্টার ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় তাঁদের সাময়িকভাবে সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবতে পারে সরকার।
তানভীর আহমেদ: প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি।
No comments