তাহলে কি সততা শ্রেষ্ঠ পন্থা নয় -ঘুষের প্রতাপ বনাম সততার জ্বালা

উপকথা বলে, কলিযুগে ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য ঘুচে যাবে, সত্যের ওপর রাজত্ব করবে মিথ্যা। কলিকাল কবে এল বা গেল তা বলা না গেলেও বর্তমান বাংলাদেশে সত্য আর মিথ্যার ফারাক প্রায় ঘুচেই যাচ্ছে! নইলে ঘুষ নেওয়ার প্রতিবাদ করায় মৌলভীবাজারের এক বনপ্রহরীকে বরখাস্ত হতে হতো না, তাঁর দায়িত্বশীলতার সাহসকে বলা হতো না ‘দুর্ব্যবহার’! সততা একদা চরিত্রের সম্পদ বলে গণ্য হতো। অরক্ষিত সম্পদ যেমন ভোগায়, তেমনি অরক্ষিত সততাও জ্বালা-যন্ত্রণার কারণ হয়। কী মর্মান্তিক, সততা তাহলে আর শ্রেষ্ঠ পন্থা নয়!
কাঠচোরদের ঘুষ নেওয়ার প্রতিবাদ করায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বনপ্রহরী ইউসুফ আহমদ চৌধুরীর বরখাস্ত হওয়া সার্বিক অবক্ষয়েরই আলামত। ঘুষ নিলে তিনি ‘সুখেই’ থাকতেন; না নেওয়ায় তিনি শাস্তি পেলেন। সুতরাং দুর্নীতিই হলো ‘নীতি’, আর সততা মানে ‘অযোগ্যতা’। প্রকৃতির মতো সমাজেও ‘যোগ্যতমের জয়’-নীতির জয়জয়কার যখন, তখন সত্ মানুষকে কে বাঁচাবে? ইউসুফের পরাজয় তাই তাঁর ব্যক্তিগত পরাজয় নয়, সততার পরাজয়, সত্ মানুষের পরাজয়।
ভালো আমের সঙ্গে পচা আম থাকলে ভালো আমও পচে যায়। একইভাবে দুর্নীতিগ্রস্তরা সত্ মানুষকে হয় কলুষিত করছে, কিংবা তাঁদের পরাস্ত করছে। এ রকম প্রতিকূলতার মধ্যে সত্ ও সাহসীদের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। কারণ, অসততা নিজের স্বার্থেই সততাকে কোণঠাসা ও ধ্বংস করে। মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজেরা এভাবেই গোটা সমাজকে জিম্মি করে রসাতলে টানে। এদের জন্যই দেশ বারবার দুর্নীতির শীর্ষে স্থান পায় আর তার গ্লানি বইতে হয় দেশবাসীকে!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন যে জগতে যোগ্য মানুষ আছে, কিন্তু তাঁকে দেখানোর যোগ্য মঞ্চ নেই। ইউসুফকে তাই রক্ষা করা দরকার ন্যায়ের স্বার্থে, সুনীতির স্বার্থে। ইউসুফরা একা নন, অজস্র সত্ ও নিষ্ঠাবান মানুষ দেশে আছেন। তাঁদের সততাকে তিরস্কারের বদলে পুরস্কৃত করার পরিবেশ সৃষ্টি হলে তাঁরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সবার কাজ হলো, তাঁদের টিকে থাকার যোগ্য পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করা।

No comments

Powered by Blogger.