ওবামা কি পারবেন প্রত্যাশা পূরণ করতে?

ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর পরই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। বলেছিলেন, মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু নয়। তাঁর প্রশাসনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। আরও বলেছিলেন, একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে নিয়ে একটা কার্যকর আলোচনায়ও বসবেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় তিনি সবার সঙ্গে বসে একটা সুরাহায় পৌঁছার কথাও বলেছিলেন। সবচেয়ে চমক লাগানো ঘোষণাটা দিলেন এর পরই। বললেন, একটি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এ জন্য তিনি যথাসাধ্য তা করার চেষ্টা করবেন। ওবামার আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে এমন সাহসী উচ্চারণ খুব একটা শোনা যায়নি।
দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরও হয়নি। ওবামা ইতিমধ্যে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটা শুরু করেছেন। প্রথমেই কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবির বন্ধের ঘোষণা দিলেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা কমানোর কথা বললেন। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ‘চিরবৈরী’ রাশিয়ার সঙ্গেও তিনি গাঁটছড়া বেঁধেছেন। এসব উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবেই শুক্রবার নোবেল কমিটি ওবামাকেই এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যোগ্য মনে করেছে।
যে লক্ষ্যে ওবামাকে নোবেল দেওয়া হলো, তিনি কি পারবেন সেই স্বপ্নের বন্দরে নোঙর করতে? কারণ, ওবামার সদিচ্ছা থাকলেও বাকি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কি নিজেদের স্বার্থ বাদ দিয়ে একজন ওবামার ডাকে সাড়া দেবে? এমন নানা প্রশ্ন এখন বিশ্লেষকদের মনে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পরমাণু অস্ত্র কমিয়ে একটি সুন্দর বাসযোগ্য বিশ্ব গড়ার চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনা শুরু করেছেন। ওবামা ইতিমধ্যে ইরাক যুদ্ধের ইতি টানার দিকে যাচ্ছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি পাকিস্তান ও সোমালিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করছেন। বুশ-প্রশাসনের ব্যর্থ অভিযানের পর আফগানিস্তানে ফের দ্বিতীয় দফার যুদ্ধ শুরু করেছেন। যদিও আফগান যুদ্ধে ন্যাটো জোটের মিত্ররা এখন আর আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা চান। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি এই দুপক্ষ থেকে খুব কমই সাড়া পাচ্ছেন। ওবামা-প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পুরোনো শত্রু’ ইরান, উত্তর কোরিয়া ও কিউবার সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ পদক্ষেপ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো ফল আসেনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় ওবামা অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বোধহয় কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে পারছে না। কারণ, এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া এখনো কংগ্রেসে ঝুলে আছে।
তাই নোবেল জয়ে আনন্দিত হওয়ার চেয়ে এখন এটি ‘দায়িত্বের গুরুভার’ হয়েই দাঁড়িয়েছে ওবামার জন্য। কারণ, বৈশ্বিক এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শান্তিময় বিশ্ব গড়ার পথে তাঁকে যে দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে, ওই পথ কি তিনি পাড়ি দিতে পারবেন? উত্তরের জন্য বিশ্ববাসীকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.