বিশ্লেষণ: বায়ুদূষণের ভয়াবহতা বনাম আমাদের অপারগতা by খলিলউল্লাহ্
বায়ুমানের স্কোর ৩০০ পার হলে সেটাকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ ধরা হয়। কিন্তু ৫ জানুয়ারি সকালে ঢাকার স্কোর ৪৯৩ পর্যন্ত উঠেছিল। হরহামেশাই এখন ঢাকায় বায়ুর মানের স্কোর ৩০০ পার হচ্ছে। সারা বিশ্বের মধ্যে বায়ুদূষণে আমরা ঘুরেফিরেই শীর্ষে উঠে আসছি। বিগত ৯ বছরের ডিসেম্বর মাসগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ডিসেম্বর ছিল ঢাকায় সবচেয়ে দূষিত মাস। তা ছাড়া ২০১৬-২৪ সময়ের মধ্যে গত বছর ছিল সবচেয়ে দূষিত বছর।
বায়ুদূষণের ভয়াবহতা
বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বলছে, কতটা ভয়ানক হুমকির মুখে আমরা রয়েছি। এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। আবহাওয়ার ধরনের কারণে স্ট্রোক, হৃদ্রোগ ও ফুসফুসের রোগের সঙ্গে ক্যানসারজনিত মৃত্যু ১৪ শতাংশ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়।
অন্যদিকে স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার তাদের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বব্যাপী শুধু ২০২১ সালেই ৮০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। আর বাংলাদেশে এই মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ ৩৫ হাজার। অথচ করোনার মতো অতিমারিতেও বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৯। একটা দেশের এত বিপুল মানুষের মৃত্যু যদি হয় বায়ুদূষণের কারণে, তাহলে এটাকে জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করে আশু পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না?
সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো, বায়ুদূষণে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। পৃথিবীতে কেবল ২০২১ সালেই বায়ুদূষণে ৫ বছরের কম বয়সী ৭ লাখ শিশু মারা গেছে। মানবশিশুর জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান হলো মায়ের গর্ভ। কিন্তু শিশুদের জন্য বায়ুদূষণ এতটাই ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে যে মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেও তারা আক্রান্ত হচ্ছে, যার প্রভাব সারা জীবন এসব শিশুকে বয়ে বেড়াতে হতে পারে।
তা ছাড়া সাধারণত শিশুরা বড়দের চেয়ে বেশি দূষণের শিকার হয়। কারণ, তাদের শরীর, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক যখন গঠিত হতে থাকে, তখন তাদের বড়দের চেয়ে বেশি বায়ু গ্রহণ করতে হয়। ফলে বায়ু যদি দূষিত হয়, তাহলে দূষিত উপাদানও তারা বেশি গ্রহণ করে; অর্থাৎ আমরা শুরুতেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামর্থ্য নষ্ট করে দিচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অবস্থা এতটাই নাজুক যে এ কারণে মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৬ দশমিক ৯ বছর। অথচ তামাকদ্রব্যের কারণে আয়ু কমেছে এর চেয়েও কম, ১ দশমিক ৬ বছর। বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২ দশমিক ৫ আয়তনে মানুষের চুলের চেয়ে ৩০ গুণ ছোট। তাই সহজেই এগুলো মানুষের ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর এটাই ভয়াবহতার অন্যতম কারণ।
বায়ুদূষণ কি নতুন
এটা ঠিক যে বায়ুদূষণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রাচীন মিসর, পেরু ও গ্রেট ব্রিটেনে মানবদেহের মমি থেকে দূষণে কালো হয়ে যাওয়া টিস্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাচীন রোমের বাসিন্দারা বায়ুদূষণের শিকার হয়েছিলেন বলে ধারণা করা যায়। তৎকালীন রোমের বিচারক অ্যারিস্টো এক রায়ে চিজের দোকানের ধোঁয়া ভবনের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন।
মধ্যযুগে বায়ুদূষণের মূল উৎস ছিল ধাতু গলিয়ে অস্ত্র ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি। কিন্তু সব রেকর্ড ভেঙে শিল্পবিপ্লবের পর দূষণের নতুন যুগে প্রবেশ করে পৃথিবী, বিশেষ করে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ কার্ল পোলানি ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত দ্য গ্রেট ট্রান্সফরমেশন: দ্য পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক অরিজিনস অব আওয়ার টাইম গ্রন্থে দেখিয়েছেন, শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট বাজার অর্থনীতি কীভাবে আমাদের সমাজ ও পরিবেশ—দুটিরই অস্বাভাবিক ধ্বংস করেছে। এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের জীবনসহ অমূল্য সব বনজঙ্গল, উদ্ভিদ, প্রাণী ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের সবকিছুকে পণ্যে রূপান্তর করা হয়। মুনাফার লক্ষ্যে চলে এসবের যথেচ্ছ ব্যবহার। আর এটিই হলো আমাদের সময়ের সামাজিক ও পরিবেশগত দুর্যোগের মূল কারণ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া হিসেবে বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের মাত্রা অতিক্রম করে গেছে। উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক আছে, সন্দেহ নেই। আর তাই এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আগে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের মতো ধারণা এসেছে। ভুটানের মতো দেশ তো প্রবৃদ্ধির ধারণা থেকেই বের হয়ে এসেছে।
তা ছাড়া জিডিপির ধারণার বাইরে মানব উন্নয়ন সূচক ব্যবহারের পক্ষেও মতো জোরালো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সামগ্রিক কল্যাণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে পরিবেশগত মূল্যায়ন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায়সারাভাবে করা হয়। জিডিপির বিকল্প ভাবনাগুলো নিয়েও জোরালো কোনো আলাপ নেই।
দূষণের উৎস বন্ধে অগ্রগতি নেই
ঢাকার বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশের জন্য দায়ী শহরের আশপাশের ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানালেও বহু ইটাভাটা অনুমোদনবিহীনভাবে চলছে। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব ইটের ব্যবহার নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা হলেও এর প্রচলন নেই বললেই চলে। অথচ সরকার চাইলে সরকারি প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারে। দেশে নির্মাণকাজের বেশির ভাগই সরকারি প্রকল্প। নির্মাণকাজে বায়ুদূষণের সরকারি হিস্যাও তাই বেশি। পরিবেশবান্ধব ইট যদি সরকারি প্রকল্পে ব্যবহার শুরু হতো, তাহলে বেসরকারিভাবেও এর প্রচলন বাড়ত।
২০১৫ সালে গৃহীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইট তৈরিতে মাটির ব্যবহার ২০২০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ বছর পার হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ে না। ইটভাটায় মাটির উপরিভাগ কেটে পোড়ানো হচ্ছে। মাটির পুষ্টি উপাদানের কারণেই ফসল উৎপাদন হয়। আর পুষ্টি থাকে এই উপরিভাগেই, যা গঠনে হাজার বছর সময়ও লাগতে পারে। অথচ কি অবলীলায় নিমেষেই আমরা মাটির উপরিভাগ নষ্ট করছি ইটভাটার চুল্লিতে পুড়িয়ে! জাতিসংঘের হিসাবমতে, বর্তমান হারে মাটির উপরিভাগ ধ্বংস হতে থাকলে আর ৪৫ থেকে ৬০ বছর পর তা শেষ হয়ে যাবে; অর্থাৎ আমরা আর ফসল ফলাতে পারব না।
অথচ বালু-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ব্লক ইটের বিস্তার ঘটাতে পারলে কৃষিজমি যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি বায়ুদূষণও কমবে। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে নদী থেকে বালু তুলে এসব ইট বানালে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও উত্তোলিত বালু ব্যবহার করা যাবে। এই পদ্ধতির প্রচলন ঘটাতে পারলে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ড্রেজার ব্যবহার করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাবে। অবৈধ বালু উত্তোলনে বর্তমানে নদীর প্রতিবেশ নষ্ট হয়ে জলজ প্রাণীরা যেমন হুমকির মুখে, তেমনি নদীভাঙনের শিকার হয়ে অসংখ্য মানুষ হচ্ছে বাস্তুহারা।
অন্যদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া শহরে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। শহর এলাকার বায়ুদূষণ রোধে মেক্সিকো আর চীনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে যানবাহনের লাইসেন্সের নম্বর অনুযায়ী এক দিন পরপর এগুলোকে রাস্তায় নামার অনুমতি দিয়ে বায়ুদূষণ কমানো হয়। এর অর্থনৈতিক ক্ষতি আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু মানুষের জীবনের চেয়ে তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।
প্রতিদিন চলতে-ফিরতে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পড়ে আছে নির্মাণকাজের ইট-বালু-সুরকির স্তূপ। সেগুলো গড়িয়ে পড়ছে রাস্তার ওপর। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও স্তূপ করে রাখা মাটিও বায়ুদূষণের বড় উৎস। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর ইত্যাদি সরকারি সংস্থাগুলো যদি সমন্বয় করে কাজ করত, তাহলে শহরের রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগ যেমন কমত, তেমনি এসব উৎস থেকে দূষণ কমানোও সম্ভব হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব ক্ষেত্রে কাউকেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতে দেখা যায় না। আইন প্রয়োগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগ পর্যন্ত নেওয়া হয় না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল দূষণের উৎসগুলো বন্ধ করে বায়ুমানের উন্নতির পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা। বায়ুদূষণ রোধে একটি সমন্বিত টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস গত হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। এদিকে বায়ুদূষণজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশনের মতো সংস্থা, যারা বায়ুদূষণের উৎসগুলো ঠেকানোর দায়িত্বে রয়েছে, তারা বিভিন্ন সময় বলেছে যে তাদের যথেষ্ট জনবল নেই। এত বড় একটা জনস্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান যদি জনবলের ঘাটতির কারণে আটকে থাকে, তাহলে জনবল কেন বাড়ানো হচ্ছে না? প্রয়োজনে বছরের যে মাসগুলোয় বায়ুদূষণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে, সে সময়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েও এর সমাধান করা যায়।
আইন-আদালতের দুর্বলতা
পরিবেশ রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনসহ অন্য যেসব আইন ও বিধিমালা রয়েছে, সেগুলো আবার জাতীয় স্বার্থে ‘বরখেলাপ’ করা যায়। যেমন পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট বা রাস্তা বানাতে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়ে থাকে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আইনে দেওয়া হয়নি। ফলে গোড়াতেই একটা গলদ রয়ে গেছে। তা ছাড়া যা-ও আইন আছে, তা প্রয়োগের ঘাটতি তো রয়েছেই। জাতিসংঘের পরিবেশ–সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনইপির হিসাব (২০১৯) অনুযায়ী, পরিবেশ বিষয়ে অনেক আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই যেসব দেশে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম।
পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ অনুযায়ী, প্রতিটি জেলা সদরে পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাইরে পরিবেশ আদালত নেই। তা ছাড়া এই আইনের সীমাবদ্ধতা হলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি এই আইনে মামলা করতে পারেন না, পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে করতে হয়। আবার এসব আদালতে পরিবেশ–সংক্রান্ত মামলার চেয়ে অন্যান্য মামলাই বেশি।
২০২১ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, ঢাকার পরিবেশ আদালতে মোট মামলার মাত্র ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায়। চট্টগ্রামে এই হার কিছুটা বেশি, ১৩ শতাংশ। এর ব্যাখ্যায় দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বলে থাকেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। তাই পরিবেশ আদালতে মামলা কম যায়।
২০২১ সালের ১৩ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, পরিবেশ আদালত এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত—দুটিতেই অপরাধীদের কারাদণ্ডের চেয়ে অর্থদণ্ড বেশি দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর সেই অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১০ বছরে নিষ্পন্ন হওয়া ২০০ মামলার মধ্যে ১৪৭টি মামলায় পরিবেশ আদালত অর্থদণ্ড দিয়েছেন। আর পরিবেশ অধিদপ্তর পাঁচ বছরে ৪ হাজার ৪৪০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাত্র ১৬৬ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আপিল করে ছাড়াও পেয়ে যান। বাংলাদেশ আইন কমিশনের একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৯৮ শতাংশ মামলার রায় আপিল আদালতে বাতিল হয়ে যায়।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির সৃষ্টি না হলে পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ড থামবে না। প্রায় দুই হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রশ্ন রেখেছিলেন, শহরের কতজন ছিঁচকে চোর ধর্ম বা নৈতিকতার ভয়ে চুরি থেকে বিরত থাকে আর কতজন রাষ্ট্রের ডান্ডাবাড়ি খাওয়ার ভয়ে বিরত থাকে?
আমাদের মতো দেশের আরেকটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দেশে আইন-বিচার-রাষ্ট্রকাঠামোর দুর্বলতা যেমন আছে, তেমনি অপরাধের বিরুদ্ধে একধরনের সামাজিক প্রতিরোধও আছে। সাধারণ মানুষই সম্মিলিতভাবে অনেক অপরাধ ঠেকিয়ে দেন। মানুষের ভূমিকার কারণে অপরাধীদের বিরত থাকার অনেক নজিরও আছে। কিন্তু পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা কম থাকায় এ-সংক্রান্ত অপরাধ ঠেকাতে সামাজিক এমন প্রতিরোধ জোরালোভাবে কাজ করে না। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকর উপায় হবে এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা।
-খলিলউল্লাহ্ প্রথম আলোর জলবায়ু প্রকল্প ব্যবস্থাপক
![]() |
বায়ুদূষণ। অলংকরণ: আরাফাত করিম |
No comments