সাবধান! রাজধানীতে তৎপর অজ্ঞান পার্টি
রমজান
ও ঈদকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে অজ্ঞান পার্টি। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ
করে এক হচ্ছে এ চক্রের মৌসুমি সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে
এসে জড়ো হচ্ছে কেউ কেউ। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের পর কারামুক্ত সদস্যরাও
ফিরে যাচ্ছেন নতুন ও পুরনো কৌশলে। তারা ৫ থেকে ৬ জনের দলে ভাগ হয়ে রাজধানীর
বিভিন্ন এলাকায় তৎপর। অভিনব কায়দায় অজ্ঞান করে শিকারের সর্বস্ব হাতানোর
ফাঁদ পাতছে। রমজান ও আগামী ঈদ উপলক্ষে সৃষ্ট কয়েকগুণ বাড়তি অর্থপ্রবাহে
লুটের ভাগ বসাতে তারা এভাবে মরিয়া হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দাসূত্র।
সম্প্রতি সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার প্রাক্কালে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকটি অজ্ঞান পার্টি
চক্রের সদস্যদের স্বীকারোক্তিতেও বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
রমজানের তিন দিন আগে গত সোমবার রাজধানীর হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে অজ্ঞান পার্টি চক্রের ৮ সদস্য। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তৎপরতা শুরু করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব বিভাগের একটি টিম তাদেরকে ওই দিন শেষ রাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- শাহআলম (৫২), টুকু (৩৮), হাফিজ (৩৫), আসলাম মোল্লা (৪৪), নয়ন মোল্লা (৪০), হারুন বেপারী (৪৫), শিপলু সিকদার (৩০) ও রুহুল আমিন (২৪)। ওই সময় তাদের কাছ থেকে ১২০টি চেতনানাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। রমনা থানায় দায়ের করা এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতা শুরু করে বলে জানিয়েছেন ডিবি পূর্ব বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) খন্দকার নুরুন্নবী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আসাদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, গত বছর পুলিশের ব্যাপক অভিযানের কারণে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা কমেছিল। সম্প্রতি ধরাপড়া চক্রগুলোর তথ্যে জানা গেছে তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় হচ্ছে। সম্প্রতি অন্তত ৮ থেকে ১০টি চক্র সক্রিয় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। এক অভিযানে ৮ জন গ্রেপ্তার হলেও পলাতকসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ২৪শে এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাঁশপট্টিতে অজ্ঞান পার্টি চক্র সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেদিনও ৫২টি চেতনানাশক ট্যাবলেটসহ চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাগর, আনাস, সাইফুল ইসলাম সোহাগ, আলমগীর হোসেন, রুবেল মিয়া, আব্দুর রহিম মুন্সী ও শুভ। যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তারাও তাদের ভয়াবহ তৎপরতার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রমজান ও ঈদে বাজারে অর্থপ্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ে। তাতে লুটের কালো থাবা বসাতে রাজধানীতে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে মৌসুমি অজ্ঞান পার্টি চক্র। ৫ থেকে ৬ জনের দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছে। এ ছাড়া বছরজুড়ে তো তাদের ‘বিচ্ছিন্ন অপারেশন’ রয়েছেই। রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড ও ব্যস্ততম এলাকায় নানা ছদ্মবেশে ওঁৎ পেতে আছে ওরা। নানা ছদ্মবেশী পরিচয়ের আড়ালে বিস্তার করে আছে কালো থাবা। নানা অভিনব কায়দায় শিকার ধরছে। রাস্তার ধারে ডাব, কোমল পানীয়, ইফতারি বিক্রির আড়ালে চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন ভূমিকায় শিকার ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোমল পানীয় বা বোতলের পানির সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে তা তুলে দেয়া হচ্ছে তৃষ্ণার্তের মুখে। তা খেয়ে অজ্ঞান হলেই চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে বাঁচানোর নাম করে নিরাপদে নিয়ে সব কিছু কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে চলে যাচ্ছে। গণপরিবহনের আসনে ক্লোরোফোম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও অজ্ঞান করা হচ্ছে। ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, চটপটি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদি খাবারের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে চেতনানাশক। সিএনজি অটোরিকশার চালক সেজেও ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। বাসের যাত্রী সেজে পাশে বসে খোশগল্পে ঘনিষ্ঠ হয়ে গন্ধ শুঁকিয়ে বা নাকে মুখে মলম লাগিয়ে অজ্ঞান করা হচ্ছে। অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে যাত্রী হিসেবে গাড়িতে তুলে কাজ সারা হচ্ছে। সব হাতিয়ে নেয়ার পর অচেতন যাত্রীকে গাড়ি থেকে রাস্তার ধারে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়ে পগারপার। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যেসব মলম বা ওষুধ ব্যবহার করছে তা মারাত্মক বিপজ্জনক। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেও দীর্ঘ সময় নিচ্ছে কেউ কেউ। রাজধানীতে প্রবেশ ও বাইরের বাসস্ট্যান্ডসহ নগরীর ব্যস্ততম সড়ক, মার্কেট, পার্কে এদের উৎপাত বাড়তে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর ব্যস্ত যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, সায়েদাবাদ, আরামবাগ, গাবতলী, মিরপুর, গুলিস্থান, ফার্মগেট, চিড়িয়াখানা, পল্টন, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, চানখাঁরপুল ইত্যাদি অন্তত দুই ডজন স্পটে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তৎপতা চালাচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে তাদের তৎপতরা রয়েছে। সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরে সক্রিয় একাধিক দল। এসব চক্রের অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক সদস্য রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দা পুলিশের। প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও দু’একজন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ছে। হারাচ্ছে সর্বস্ব। অনেক সময় বিপন্ন হচ্ছে নিরীহ মানুষের জীবন।
প্রথমে যাত্রাপথে কোনো পথিককে টার্গেট করছে চক্রের সদস্যরা। তারপর দায়িত্ব ভাগ করে তার পিছু নিচ্ছে। পিছু নেয়ার পর্যায়ে তাকে কোনোভাবে চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। অথবা মলম লাগিয়ে দেয়া হয় চোখে-মুখে। এতে অচেতন হলেই সুযোগ বুঝে পকেট কাটা হচ্ছে। মানুষের ভিড়ে সে সুযোগ পাওয়া না গেলে তার আত্মীয় বা সহকর্মী বা পরিচিত সেজে হাসপাতালে নেয়ার নামে রওনা হচ্ছে। সিএনজি বা অন্য যানবাহনে নিরাপদ স্থানে গিয়ে হাতিয়ে দিয়ে অচেতন অবস্থায় ফেলে দেয়া হয়। অজ্ঞান হয়ে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে পথচারী বা যাত্রীরা। শুধু বাস স্টেশন নয়। রাজধানীর রেল ও লঞ্চ স্টেশনগুলোতে তৎপর এই চক্র। কিন্তু এই মৌসুমি চক্রগুলো অনেকক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক স্বীকারোক্তিকে রাজধানীতে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তৎপরতা শুরুর কথা স্বীকার করেছে। সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির বা যাত্রীদের কৌশলে পানি, চা, জুস ও শরবতসহ অন্যান্য তরল জাতীয় খাদ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে তাদের খাইয়ে দেয়। অজ্ঞান হলেই সুযোগমতো টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে সরে পড়ে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, ঈদের আগে মানুষের ঘরমুখো যাওয়া-আসার ভিড়ে অজ্ঞান ও মলমপার্টির তৎপরতা বাড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও তারা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তবে পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রমজানের তিন দিন আগে গত সোমবার রাজধানীর হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে অজ্ঞান পার্টি চক্রের ৮ সদস্য। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তৎপরতা শুরু করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব বিভাগের একটি টিম তাদেরকে ওই দিন শেষ রাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- শাহআলম (৫২), টুকু (৩৮), হাফিজ (৩৫), আসলাম মোল্লা (৪৪), নয়ন মোল্লা (৪০), হারুন বেপারী (৪৫), শিপলু সিকদার (৩০) ও রুহুল আমিন (২৪)। ওই সময় তাদের কাছ থেকে ১২০টি চেতনানাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। রমনা থানায় দায়ের করা এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতা শুরু করে বলে জানিয়েছেন ডিবি পূর্ব বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) খন্দকার নুরুন্নবী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আসাদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, গত বছর পুলিশের ব্যাপক অভিযানের কারণে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা কমেছিল। সম্প্রতি ধরাপড়া চক্রগুলোর তথ্যে জানা গেছে তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় হচ্ছে। সম্প্রতি অন্তত ৮ থেকে ১০টি চক্র সক্রিয় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। এক অভিযানে ৮ জন গ্রেপ্তার হলেও পলাতকসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ২৪শে এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাঁশপট্টিতে অজ্ঞান পার্টি চক্র সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেদিনও ৫২টি চেতনানাশক ট্যাবলেটসহ চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাগর, আনাস, সাইফুল ইসলাম সোহাগ, আলমগীর হোসেন, রুবেল মিয়া, আব্দুর রহিম মুন্সী ও শুভ। যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তারাও তাদের ভয়াবহ তৎপরতার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রমজান ও ঈদে বাজারে অর্থপ্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ে। তাতে লুটের কালো থাবা বসাতে রাজধানীতে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে মৌসুমি অজ্ঞান পার্টি চক্র। ৫ থেকে ৬ জনের দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছে। এ ছাড়া বছরজুড়ে তো তাদের ‘বিচ্ছিন্ন অপারেশন’ রয়েছেই। রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড ও ব্যস্ততম এলাকায় নানা ছদ্মবেশে ওঁৎ পেতে আছে ওরা। নানা ছদ্মবেশী পরিচয়ের আড়ালে বিস্তার করে আছে কালো থাবা। নানা অভিনব কায়দায় শিকার ধরছে। রাস্তার ধারে ডাব, কোমল পানীয়, ইফতারি বিক্রির আড়ালে চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন ভূমিকায় শিকার ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোমল পানীয় বা বোতলের পানির সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে তা তুলে দেয়া হচ্ছে তৃষ্ণার্তের মুখে। তা খেয়ে অজ্ঞান হলেই চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে বাঁচানোর নাম করে নিরাপদে নিয়ে সব কিছু কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে চলে যাচ্ছে। গণপরিবহনের আসনে ক্লোরোফোম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও অজ্ঞান করা হচ্ছে। ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, চটপটি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদি খাবারের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে চেতনানাশক। সিএনজি অটোরিকশার চালক সেজেও ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। বাসের যাত্রী সেজে পাশে বসে খোশগল্পে ঘনিষ্ঠ হয়ে গন্ধ শুঁকিয়ে বা নাকে মুখে মলম লাগিয়ে অজ্ঞান করা হচ্ছে। অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে যাত্রী হিসেবে গাড়িতে তুলে কাজ সারা হচ্ছে। সব হাতিয়ে নেয়ার পর অচেতন যাত্রীকে গাড়ি থেকে রাস্তার ধারে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়ে পগারপার। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যেসব মলম বা ওষুধ ব্যবহার করছে তা মারাত্মক বিপজ্জনক। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেও দীর্ঘ সময় নিচ্ছে কেউ কেউ। রাজধানীতে প্রবেশ ও বাইরের বাসস্ট্যান্ডসহ নগরীর ব্যস্ততম সড়ক, মার্কেট, পার্কে এদের উৎপাত বাড়তে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর ব্যস্ত যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, সায়েদাবাদ, আরামবাগ, গাবতলী, মিরপুর, গুলিস্থান, ফার্মগেট, চিড়িয়াখানা, পল্টন, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, চানখাঁরপুল ইত্যাদি অন্তত দুই ডজন স্পটে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তৎপতা চালাচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে তাদের তৎপতরা রয়েছে। সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরে সক্রিয় একাধিক দল। এসব চক্রের অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক সদস্য রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দা পুলিশের। প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও দু’একজন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ছে। হারাচ্ছে সর্বস্ব। অনেক সময় বিপন্ন হচ্ছে নিরীহ মানুষের জীবন।
প্রথমে যাত্রাপথে কোনো পথিককে টার্গেট করছে চক্রের সদস্যরা। তারপর দায়িত্ব ভাগ করে তার পিছু নিচ্ছে। পিছু নেয়ার পর্যায়ে তাকে কোনোভাবে চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। অথবা মলম লাগিয়ে দেয়া হয় চোখে-মুখে। এতে অচেতন হলেই সুযোগ বুঝে পকেট কাটা হচ্ছে। মানুষের ভিড়ে সে সুযোগ পাওয়া না গেলে তার আত্মীয় বা সহকর্মী বা পরিচিত সেজে হাসপাতালে নেয়ার নামে রওনা হচ্ছে। সিএনজি বা অন্য যানবাহনে নিরাপদ স্থানে গিয়ে হাতিয়ে দিয়ে অচেতন অবস্থায় ফেলে দেয়া হয়। অজ্ঞান হয়ে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে পথচারী বা যাত্রীরা। শুধু বাস স্টেশন নয়। রাজধানীর রেল ও লঞ্চ স্টেশনগুলোতে তৎপর এই চক্র। কিন্তু এই মৌসুমি চক্রগুলো অনেকক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক স্বীকারোক্তিকে রাজধানীতে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তৎপরতা শুরুর কথা স্বীকার করেছে। সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির বা যাত্রীদের কৌশলে পানি, চা, জুস ও শরবতসহ অন্যান্য তরল জাতীয় খাদ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে তাদের খাইয়ে দেয়। অজ্ঞান হলেই সুযোগমতো টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে সরে পড়ে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, ঈদের আগে মানুষের ঘরমুখো যাওয়া-আসার ভিড়ে অজ্ঞান ও মলমপার্টির তৎপরতা বাড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও তারা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তবে পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
No comments