শিউরে ওঠার মতো হত্যা
১২ বছর বয়সী গৃহকর্মী আল আমিনের ওপর গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী যেভাবে নির্যাতন করেছে, তা কল্পনাকেও হার মানায়। বুধবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গৃহকর্মী আল আমিনের কাজে সামান্য ভুল হলেই নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো তার ওপর। সামান্য ভুলের কারণে যারা শিশুটির ওপর নির্যাতন করত- সেই গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর অমানবিকতার কোনো ক্ষমা হয় না। এক পুলিশ কর্মকর্তার একটি বাক্য থেকেই বোঝা যায় কী নির্মমতার শিকার হয়েছে শিশুটি। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য- তাকে দেখে মনে হয়েছে একটি কঙ্কালের ওপর চামড়া লাগিয়ে দেয়া হয়েছে! রাজধানীর আদাবরে নির্মমতার শিকার আল আমিন গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে। আল আমিনের ওপর যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাতে মনে হয় গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীর অভাব প্রকট। এই বর্বরতার কঠোর শাস্তিই কাম্য। দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। পরিবারের সদস্যদের আদর-যত্নে যে শিশুর বড় হওয়ার কথা সেই শিশুটি গৃহকর্মী হওয়ায় সারাদিনের অমানুষিক পরিশ্রমের পর তার ভাগ্যে জুটত পচা খাবার। এ অখাদ্য খেয়ে বড় হওয়ার সুখও আল আমিনের কপালে সইল না।
হতভাগ্য আল আমিন গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুকে যেভাবে বরণ করেছে, তা যে কোনো মানুষের বিবেককে নাড়া না দিয়ে পারে না। মৃত্যুর আগে শিশুটি মানবিকতা শব্দটির সঙ্গে পরিচিতই হতে পারল না! আল আমিনের মতো শিশুদের যাতে গৃহকর্মী পেশায় নিযুক্ত হওয়ার প্রয়োজন না হয় এজন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। অসহায় শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একসময় তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। পাশাপাশি গৃহকর্মীরা যাতে তাদের অধিকার ও মর্যাদা পায়, এ ব্যাপারে সমাজের সবারই সোচ্চার হওয়া উচিত। ক্রমাগত নির্যাতনের মাধ্যমে আল আমিনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে- এমন পরিণতি যাতে আর কোনো শিশুকে বরণ করতে না হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
No comments