তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের তিন বছর আজ। হত্যাকারীরা চিহ্নিতঃ বিচার অনিশ্চিত |
আজ
৬ই মার্চ। ২০১৩ সালের এই দিন বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হাতে
নির্মমভাবে খুন হয় নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী।
দুদিন পর ৮ই মার্চ বাসার ৫০০ গজ দূরে শীতলক্ষ্যা নদীর চারারগোপ খালের তীর
থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ এই ৩ বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার শুরু
হওয়া তো দূরের কথা, চার্জশিটও (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়নি। কবে নাগাদ সেই
চার্জশিট দেয়া হবে তা অনিশ্চিত। উচ্চ আদালতের আদেশে র্যাপিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ত্বকী হত্যা মামলাটি তদন্ত করলেও তদন্ত প্রতিবেদন এ
পর্যন্ত আলো মুখ না দেখায় হতাশ নারায়ণগঞ্জবাসী। সেই সঙ্গে হতাশা প্রকাশ
করেছেন জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
তবে গতকাল শনিবার দুপুরে র্যাব-১১-এর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সংবাদকর্মীদের ডেকে বলেন, ত্বকী হত্যার তদন্ত চলমান। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা এর খুঁটিনাটি সবকিছু বিশ্লেষণ করছি। চেষ্টা করছি যাতে সুন্দর, গ্রহণযোগ্য একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। সেই সঙ্গে কবে নাগাদ ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হবে সেই বিষয়েও তিনি সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি।
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী খুন হবার আগেও দেশে এত শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেনি। ত্বকী হত্যার পর যদি বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতো, তাহলেও হয়তো দেশের এত শিশুকে খুনের শিকার হতে হতো না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশকে আজ কোথায় টেনে নিয়ে গেছে? এখন যে কোনো তুচ্ছ ঘটনার বলি হচ্ছে অবুঝ শিশুরা। রফিউর রাব্বি প্রশ্ন রেখে বলেন, খুনিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে রাষ্ট্রের এত ভয় কেন? খুনিরা কী এতটাই শক্তিশালী।
র্যাবের তদন্তে উঠে আসে ত্বকী হত্যায় প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন অংশ নিয়েছিল। তবে হত্যায় শামীম ওসমান বা ছেলে অয়ন ওসমানের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ পায়নি র্যাব। হত্যায় সম্পৃক্তদের মধ্যে ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওই ৩ জনের মধ্যে ভ্রমর জামিন নিয়ে এখন ফেরারি। তায়েব উদ্দিন আহমেদ জ্যাকি জামিন পেলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। গত বছরের শেষদিকে আজমেরী ওসমানের শহরের খানপুরের আস্তানায় পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালালেও সেখানে উপস্থিত আজমেরী ওসমানকে পুলিশ বা র্যাব গ্রেপ্তার করেনি। ফলে শহরে এখনও প্রকাশ্যেই অবস্থান করছে আজমেরী ওসমান।
জেলার সুশীল সমাজের দাবি
জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, র্যাবের তদন্তে ত্বকী হত্যাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। চার্জশিটও প্রায় প্রস্তুত ছিল বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু কেন তা আদালতে জমা দেয়া হয়নি সে উত্তর এখনো মেলেনি। আমরা জানি হত্যার রহস্য উদঘাটনের কারণে চার্জশিট দিতে দেরি হয়। কিন্তু ত্বকীর বিষয়ে হয়েছে তার উল্টো।
জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস বলেন, সরকার যদি চায় তাহলে যে কোনো ঘটনার বিচার কাজ দ্রুত হয়। যার প্রমাণ রাজন ও রাবিক হত্যার ঘটনা। কিন্তু ত্বকীর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো আন্তরিকতা নেই। কারণ, ত্বকী হত্যায় সরকার সমর্থিতরা জড়িত। এ কারণেই ত্বকী হত্যার বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, গত ৩ বছরেও আমরা ত্বকী হত্যার কোনো বিচার পাইনি। দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন দেশের সব শিশু হত্যার বিচার হবে। তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না কেন?
জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বলেন, গত ৩ বছরে ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় খুনি ও সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশে আরও অনেক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আমরা ত্বকীসহ সারাদেশে সব শিশু হত্যার বিচার দাবি করি। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেদিনও বলেছেন তিনি শিশু হত্যাকারীদের ঘৃণা করেন। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের প্রত্যাশা, তিনি ত্বকীসহ দেশের সব শিশু হত্যার বিচার করবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ই মার্চ অপহৃত হয় ত্বকী। ৮ই মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহতের বাবা রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন, যেখানে অজ্ঞাতজনদের আসামি করা হয়। পরে ১৮ই মার্চ রফিউর রাব্বি পুলিশকে অবগতিপত্রে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রাজীব দাস, জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম পারভেজসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করেন।
উচ্চ আদালতের আদেশে পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত শুরু করেন র্যাব। তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ত্বকী হত্যার জন্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমীর ওসমানের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে ভ্রমর জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে সে পলাতক।
তবে গতকাল শনিবার দুপুরে র্যাব-১১-এর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সংবাদকর্মীদের ডেকে বলেন, ত্বকী হত্যার তদন্ত চলমান। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা এর খুঁটিনাটি সবকিছু বিশ্লেষণ করছি। চেষ্টা করছি যাতে সুন্দর, গ্রহণযোগ্য একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। সেই সঙ্গে কবে নাগাদ ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হবে সেই বিষয়েও তিনি সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি।
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী খুন হবার আগেও দেশে এত শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেনি। ত্বকী হত্যার পর যদি বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতো, তাহলেও হয়তো দেশের এত শিশুকে খুনের শিকার হতে হতো না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশকে আজ কোথায় টেনে নিয়ে গেছে? এখন যে কোনো তুচ্ছ ঘটনার বলি হচ্ছে অবুঝ শিশুরা। রফিউর রাব্বি প্রশ্ন রেখে বলেন, খুনিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে রাষ্ট্রের এত ভয় কেন? খুনিরা কী এতটাই শক্তিশালী।
র্যাবের তদন্তে উঠে আসে ত্বকী হত্যায় প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন অংশ নিয়েছিল। তবে হত্যায় শামীম ওসমান বা ছেলে অয়ন ওসমানের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ পায়নি র্যাব। হত্যায় সম্পৃক্তদের মধ্যে ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওই ৩ জনের মধ্যে ভ্রমর জামিন নিয়ে এখন ফেরারি। তায়েব উদ্দিন আহমেদ জ্যাকি জামিন পেলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। গত বছরের শেষদিকে আজমেরী ওসমানের শহরের খানপুরের আস্তানায় পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালালেও সেখানে উপস্থিত আজমেরী ওসমানকে পুলিশ বা র্যাব গ্রেপ্তার করেনি। ফলে শহরে এখনও প্রকাশ্যেই অবস্থান করছে আজমেরী ওসমান।
জেলার সুশীল সমাজের দাবি
জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, র্যাবের তদন্তে ত্বকী হত্যাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। চার্জশিটও প্রায় প্রস্তুত ছিল বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু কেন তা আদালতে জমা দেয়া হয়নি সে উত্তর এখনো মেলেনি। আমরা জানি হত্যার রহস্য উদঘাটনের কারণে চার্জশিট দিতে দেরি হয়। কিন্তু ত্বকীর বিষয়ে হয়েছে তার উল্টো।
জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস বলেন, সরকার যদি চায় তাহলে যে কোনো ঘটনার বিচার কাজ দ্রুত হয়। যার প্রমাণ রাজন ও রাবিক হত্যার ঘটনা। কিন্তু ত্বকীর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো আন্তরিকতা নেই। কারণ, ত্বকী হত্যায় সরকার সমর্থিতরা জড়িত। এ কারণেই ত্বকী হত্যার বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, গত ৩ বছরেও আমরা ত্বকী হত্যার কোনো বিচার পাইনি। দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন দেশের সব শিশু হত্যার বিচার হবে। তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না কেন?
জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বলেন, গত ৩ বছরে ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় খুনি ও সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশে আরও অনেক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আমরা ত্বকীসহ সারাদেশে সব শিশু হত্যার বিচার দাবি করি। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেদিনও বলেছেন তিনি শিশু হত্যাকারীদের ঘৃণা করেন। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের প্রত্যাশা, তিনি ত্বকীসহ দেশের সব শিশু হত্যার বিচার করবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ই মার্চ অপহৃত হয় ত্বকী। ৮ই মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহতের বাবা রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন, যেখানে অজ্ঞাতজনদের আসামি করা হয়। পরে ১৮ই মার্চ রফিউর রাব্বি পুলিশকে অবগতিপত্রে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রাজীব দাস, জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম পারভেজসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করেন।
উচ্চ আদালতের আদেশে পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত শুরু করেন র্যাব। তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ত্বকী হত্যার জন্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমীর ওসমানের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে ভ্রমর জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে সে পলাতক।
No comments