৬ই নভেম্বর জাসদের গোপন বৈঠকে বলা হয়েছিল, জিয়াকে হত্যা করা উচিত
সবার
পরামর্শক্রমে ৬ নভেম্বর বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য ফিরে গেলাম ফ্লায়িং
ক্লাবে একটি এয়ারক্রাফট নিয়ে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি রণাঙ্গনে এই ১০ম
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন করি এবং রণাঙ্গনে এই ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা
অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলাম। তাই আমি যদি ঐ রাতে খালেদ, হুদা, হায়দারের সাথে
১০ম ইস্ট বেঙ্গলে থাকতাম, তাদেরকে হয়তো বাঁচাতে পারতাম, না হয় ওদের সাথে
আমারও এই পরিণতি হতো। জাসদের সাথে জিয়ার সমঝোতার নাটকের অবসানের পর জিয়া
কিন্তু ব্যস্ত ছিলেন সিভিল প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, কূটনেতিক
সম্পর্ক স্থাপন এবং সর্বোপরি অফিসারদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরিয়ে এনে
সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করা অর্থাৎ সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোয়। তার
অত্যন্ত বিশ্বস্ত জেনারেল মঞ্জুরকে সিজিএস করলেন। ব্রিগেরিয়ার মহসীনকে
ডিএমও এর দায়িত্ব দিলেন, ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হককে ৪৬ ব্রিগেডের দায়িত্ব
দিলেন। মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম (শিশু) কে এজি এর দায়িত্ব ও মেজর জেনারেল
মীর শওকত আলীকে ৯ পদাতিক ডিভিশন এর জিওসি নিয়োগ দিলেন। জে: এরশাদ ডেপুটি
চিফ অব আর্মি। এমনি করে তার পক্ষের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসালেন
এবং কিছু সময়ের মধ্যে ঢেলে সাজানোর কাজ সম্পাদন করে নিজেই ডেপুটি চিফ
মার্শাল ‘ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর থেকে চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এর
দায়িত্ব নিলেন। যদিও পরবর্তীতে জাসদের কিছু করার ছিল না। তবুও তীক্ষœ
বুদ্ধির জিয়া জাসদের ওপর কড়া নজরই শুধু রাখেননি, কি করে জাসদকে শিক্ষা দেয়া
যায় সে ব্যাপারেও সজাগ ছিলেন। তিনি জানতেন তার ব্যাপারে জাসদের
মন-মানসিকতা। ৬ নভেম্বর গুলশানের এক বাড়িতে জাসদের এক গোপনীয় বৈঠকে বলা
হয়েছিল যে ‘জিয়াকে বিশ্বাস করা যায় না, তিনি কালসাপ, জিয়াকে হত্যা করা
উচিত’।
জাফর ইমাম, বীর বিক্রম ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। ঐতিহ্য থেকে সদ্য প্রকাশিত এ বইয়ে আরও লেখা হয়েছে, যদিও অনেকে সেই বৈঠকে এর আপত্তি করেছিল কিন্তু সেটা ছিল পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে (ইনুর সাক্ষাৎকার ৬ নভেম্বর ভোরের কাগজ ৯৮) । অনেকের ধারণা, সেই মুহূর্তগুলোকে জিয়ার সাথে সিরাজুল আলম খানের হয়তো যোগাযোগ ছিল। সিরাজুল আলম খানকে কিন্তু তাহের, ইনুর সাথে শেষ পর্যায়ে আর কোনো বৈঠকে দেখা যাচ্ছিল না। জিয়া তাহের ইনুকে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টে ৭ নভেম্বর জিজ্ঞেসও করেছিলে. সিরাজুল আলম খান কোথায়?
জিয়া সেনাবাহিনীতেও সৈনিক সংস্থার সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদেরকে কী করে দমানো যায়, সে ব্যাপারে গোপনীয় তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে ছোটখাটো অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছিল। অনেককে এসব ঘটনায় প্রাণও দিতে হয়েছিল। সেনানিবাসের বাইরে জাসদের পরবর্তী কার্যকলাপের ওপর চলছিল গোয়েন্দার কড়া নজর। ইতোমধ্যে ধরপাকড়ও শুরু হয়ে যায়। ২২ নাভেম্বর তাহেরে ভাই ইউসুফকে ও ২৩ নভেম্বর তাহেরকে বন্দী করা হয় । ২৬ নভেম্বর ভারতীয় দূতাবাসে হামলার প্রচেষ্টা চালায় গণবাহিনী, যদিও তাহেরের ভাই আবু ইউসুফ ( ৫ নভেম্বর ৯৮ ভোরের কাগজ) এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল মতিঝিল আদমজী কোর্টে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করা। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত করা হয়নি।
ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ষড়যন্ত্র ও অব্যাহত জাসদের গোপন বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের খবরের সূত্র ধরেই কিন্তু ২২ ও ২৩ নভেম্বর আবু ইউসুফ ও তাহেরকে বন্দী করা হয়েছিল। ভারতীয় দূতাবাসে হামলার রহস্য অনেকের আজো অজানা। জাসদ এই হামলার মাধ্যমে দেশবাসীকে হয়তো ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছিল যে, বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ে যে খেলা, এর পেছনে ভারত রয়েছে। অথবা জাসদ ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করে রাষ্ট্রদূতসহ সবাইকে যদি হত্যা করতে পারত, সে ক্ষেত্রে জসদ হয়তো মনে করেছিল যে, ভারত মৈত্রী চুক্তি মোতবেক আমাদের দেশে সৈন্য পাঠাতে বাধ্য হবে। অথবা ঐ হামলার (যদি সফল হতো) ধারাবাহিকতায় অন্যান্য গুরুত্বপূণ টার্গেটে হামলা অব্যাহত রেখে পুরো দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তথা চুড়ান্ত লক্ষ্য একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করা। অবশ্যই জাসদের একটি উদ্দেশ্য ছিল, না হলে এ ধরনের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হঠাৎ ঘটত না।
জাসদের ভিতরে লুকিয়ে থাকা কোনো মহল হয়তো দেশের পরিস্থিতি অন্য ধারায় প্রবাহিত করার জন্য ভারতীয় হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছিল। বিধায় এই হামলা পরিকল্পনার ঘটনার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে ছিলেন, তারা হয়তো ভরতপন্থী ছিলেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হয়তো ঘালা পানিতে মাছ শিকার করা । তখন কিন্তু জাসদের ভিতরে নের্তৃত্বের সমন্বয়ের সংকটও ছিল । এছাড়া ভারতও কিন্তু মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পুরো পরিস্থিতি খুব সতর্কথার সাথে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং বাংলাদেশের তখনকার বিরাজমান অবস্থায় নিজেদের উদ্বেগও প্রকাশ করেছিল। কর্নেল তাহেরের ভাই আবু ইউসিফ খান বীর বিক্রমের ৫ নভেম্বর ৯৮ সালে ভোরের কাগজে এক সাক্ষাৎকারে উপরের উল্লিখিত কথাগুলোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
জাফর ইমাম, বীর বিক্রম ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। ঐতিহ্য থেকে সদ্য প্রকাশিত এ বইয়ে আরও লেখা হয়েছে, যদিও অনেকে সেই বৈঠকে এর আপত্তি করেছিল কিন্তু সেটা ছিল পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে (ইনুর সাক্ষাৎকার ৬ নভেম্বর ভোরের কাগজ ৯৮) । অনেকের ধারণা, সেই মুহূর্তগুলোকে জিয়ার সাথে সিরাজুল আলম খানের হয়তো যোগাযোগ ছিল। সিরাজুল আলম খানকে কিন্তু তাহের, ইনুর সাথে শেষ পর্যায়ে আর কোনো বৈঠকে দেখা যাচ্ছিল না। জিয়া তাহের ইনুকে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টে ৭ নভেম্বর জিজ্ঞেসও করেছিলে. সিরাজুল আলম খান কোথায়?
জিয়া সেনাবাহিনীতেও সৈনিক সংস্থার সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদেরকে কী করে দমানো যায়, সে ব্যাপারে গোপনীয় তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে ছোটখাটো অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছিল। অনেককে এসব ঘটনায় প্রাণও দিতে হয়েছিল। সেনানিবাসের বাইরে জাসদের পরবর্তী কার্যকলাপের ওপর চলছিল গোয়েন্দার কড়া নজর। ইতোমধ্যে ধরপাকড়ও শুরু হয়ে যায়। ২২ নাভেম্বর তাহেরে ভাই ইউসুফকে ও ২৩ নভেম্বর তাহেরকে বন্দী করা হয় । ২৬ নভেম্বর ভারতীয় দূতাবাসে হামলার প্রচেষ্টা চালায় গণবাহিনী, যদিও তাহেরের ভাই আবু ইউসুফ ( ৫ নভেম্বর ৯৮ ভোরের কাগজ) এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল মতিঝিল আদমজী কোর্টে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করা। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত করা হয়নি।
ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ষড়যন্ত্র ও অব্যাহত জাসদের গোপন বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের খবরের সূত্র ধরেই কিন্তু ২২ ও ২৩ নভেম্বর আবু ইউসুফ ও তাহেরকে বন্দী করা হয়েছিল। ভারতীয় দূতাবাসে হামলার রহস্য অনেকের আজো অজানা। জাসদ এই হামলার মাধ্যমে দেশবাসীকে হয়তো ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছিল যে, বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ে যে খেলা, এর পেছনে ভারত রয়েছে। অথবা জাসদ ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করে রাষ্ট্রদূতসহ সবাইকে যদি হত্যা করতে পারত, সে ক্ষেত্রে জসদ হয়তো মনে করেছিল যে, ভারত মৈত্রী চুক্তি মোতবেক আমাদের দেশে সৈন্য পাঠাতে বাধ্য হবে। অথবা ঐ হামলার (যদি সফল হতো) ধারাবাহিকতায় অন্যান্য গুরুত্বপূণ টার্গেটে হামলা অব্যাহত রেখে পুরো দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তথা চুড়ান্ত লক্ষ্য একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করা। অবশ্যই জাসদের একটি উদ্দেশ্য ছিল, না হলে এ ধরনের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হঠাৎ ঘটত না।
জাসদের ভিতরে লুকিয়ে থাকা কোনো মহল হয়তো দেশের পরিস্থিতি অন্য ধারায় প্রবাহিত করার জন্য ভারতীয় হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছিল। বিধায় এই হামলা পরিকল্পনার ঘটনার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে ছিলেন, তারা হয়তো ভরতপন্থী ছিলেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হয়তো ঘালা পানিতে মাছ শিকার করা । তখন কিন্তু জাসদের ভিতরে নের্তৃত্বের সমন্বয়ের সংকটও ছিল । এছাড়া ভারতও কিন্তু মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পুরো পরিস্থিতি খুব সতর্কথার সাথে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং বাংলাদেশের তখনকার বিরাজমান অবস্থায় নিজেদের উদ্বেগও প্রকাশ করেছিল। কর্নেল তাহেরের ভাই আবু ইউসিফ খান বীর বিক্রমের ৫ নভেম্বর ৯৮ সালে ভোরের কাগজে এক সাক্ষাৎকারে উপরের উল্লিখিত কথাগুলোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
No comments