আইএসকে হারাতেই হবে by রজার কোহেন
ইসলামিক
স্টেট প্যারিসে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের দায় স্বীকার করেছে, যেটাকে ফ্রান্সের
প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ‘যুদ্ধ’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে নর্থ
আটলান্টিক ট্রিটির ৫ নম্বর ধারা অনুসারে ন্যাটোর সব সদস্যদেশকেই এখন
একযোগে মাঠে নামতে হবে, ‘ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কোনো সদস্যদেশের ওপর
হামলা হলে সেটা সবার ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।’
জোটের নেতারা ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন, কীভাবে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানানো যায়। ওলাঁদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কথা বলেছেন। জার্মানিসহ অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত দেশ সংহতি প্রকাশ করেছে, ক্ষোভ ও নিষ্ঠুরতা কখনো যৌক্তিক হলেও তা যথেষ্ট নয়।
প্যারিসে এই ১২৯ জন মানুষকে হত্যা করার পরিপ্রেক্ষিতে একমাত্র যথাযথ পদক্ষেপ হচ্ছে সামরিক আক্রমণ। বিদ্যমান হুমকির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে আইএসকে ধ্বংস করে দেওয়া, সিরিয়া ও ইরাকে অবস্থিত আইএসের শক্তিশালী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া। এই বর্বর সন্ত্রাসীরা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে রক্তপাত নিয়ে উল্লাস করছে, ফলে তাদের আর ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া যাবে না, যেখানে বসে তারা হামলার পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করতে পারে, বর্বরতা চালাতে পারে।
ওলাঁদের মনে সেই সন্দেহ নেই যে এই হামলার পরিকল্পনা ‘বিদেশের মাটিতে হয়েছে, হামলাকারীরা সংগঠিতও হয়েছে সেখানে, তবে এই হামলার সঙ্গে দেশের ভেতরের কোনো গোষ্ঠী জড়িত।’ আইএস বা তার কোনো সহযোগী সংগঠন সম্প্রতি রুশ যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করার দায় স্বীকার করেছে, যে দুর্ঘটনায় ২২৪ জন মানুষ মারা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বিশ্বাস করে, এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা আছে।
আইএসকে আঞ্চলিক হুমকি হিসেবে খারিজ করে দেওয়াটা ভুল হবে, তার হুমকি বৈশ্বিক প্রকৃতির। যথেষ্ট হয়েছে। একটি অশুভ গোষ্ঠীকে ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া যায় না, যেখানে তারা বংশবিস্তার করতে পারে। পোপ ফ্রান্সিস ঘোষণা দিয়েছেন, প্যারিস হামলা ‘মানুষের কাজ নয়’, এক অর্থে পোপ ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, মানুষ অপরিমেয় অশুভ কাজ করতে পারে। সামাল না দিলে সে আরও বড় হয়।
ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করতে হলে ন্যাটোর সেনাদের ভূমিতে আক্রমণ চালাতে হবে। ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘ ও অনিশ্চায়ক হস্তক্ষেপের পর এই প্রশ্ন করা সংগত, সেটা ভুল হবে কি না। আবার সামরিক আক্রমণ চালানো হলে আইএসের সদস্যসংখ্যা আরও বেড়ে যাবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। কারণ, সামরিক আক্রমণ চালানো হলে বহু মানুষ মারা যাবে, বহু সম্পদ বিনষ্ট হবে। আর সন্ত্রাসবাদকে আসলে পুরোপুরি পরাজিত করা যাবে না।
এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে হলো, যখন সিরিয়ার হাজার হাজার মুসলিম শরণার্থী স্রোতের মতো ইউরোপে ঢুকছে। এখন তাদের ওপর হামলে পড়া যাবে না, বরং তাদের সহায়তা করতে হবে। এমনকি তার জন্য যদি চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাহলেও সেটা করতে হবে। তারাও তো আইএসের কারণেই নিজেদের ভূখণ্ড থেকে পালাচ্ছে এমন যুক্তি-তর্ক প্রলুব্ধকর, কিন্তু সেটাকে প্রতিহত করতে হবে। আইএসের বিরুদ্ধে বিমান যুদ্ধ পরিচালনা করা হলে কাজ শেষ হয়ে যাবে না। কারণ, প্যারিস হামলাটা এমন এক সময়ে হলো, যখন সিরিয়ায় ভালোভাবেই এক বোমা হামলা চলছিল, যার কোনো মাথামুণ্ডু আমরা বুঝি না। চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো প্যারিস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে যদি সিরিয়া ও ইরাক থেকে আইএস হটাতে সামরিক হামলা চালানোর প্রস্তাব পেশ হয়, তাহলে তাদের সেটার বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত হবে না। আঞ্চলিক শক্তি, বিশেষ করে সৌদি আরবও এই দানবকে শেষ করতে চায়, যদিও এদের উত্থানে তাদের ভূমিকা ছিল। আইএস যে খিলাফতের স্বপ্ন দেখে, সেই খিলাফত তাদের ধ্বংস করে দেবে।
আইএস খুব দক্ষ ও কার্যকর। এদের সুনিয়ন্ত্রিত প্রচারণাযন্ত্র রয়েছে আর মোহভঙ্গ মুসলিম যুবকদের তাড়িত করার মতো আদর্শ রয়েছে, যাদের মনে এই প্রত্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে যে পশ্চিম বিশ্বাসঘাতক। একদিকে মধ্যযুগের সাহিত্য, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত শক্তি—এ দুইয়ে মিলে এক সীমানাবিহীন অতি গোঁড়া সেনাবাহিনী তৈরি হয়েছে। কিন্তু আইএস সামরিক শক্তিতে অত্যন্ত বলীয়ান, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন তাদের নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করছে।
ওবামা প্রশাসন এত দিন বলে এসেছে যে আইএস পরাজিত হবে, কিন্তু সেটা বলাটা যথেষ্ট নয়। সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা ছাড়া এই শব্দের মানে হয় না। সময়ের চাপ রয়েছে, কারণ নতুন হামলা চালানোর জন্য খুব নিপুণভাবে সময় ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি হামলার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত ইউরোপীয় সমাজে ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত সহিংসতার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বাড়ছে বলেই মনে হয়। যে লা বাতাক্লঁ কনসার্ট হলে হামলা হলো, সেখানে নাকি বিভিন্ন ইহুদি সংগঠন প্রতিনিয়তই বসত, ফরাসি ম্যাগাজিন লা পয়েন্ট এ তথ্য দিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে হলো, যখন সিরিয়ার হাজার হাজার মুসলিম শরণার্থী স্রোতের মতো ইউরোপে ঢুকছে। এখন তাদের ওপর হামলে পড়া যাবে না, বরং তাদের সহায়তা করতে হবে। এমনকি তার জন্য যদি চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাহলেও সেটা করতে হবে। তারাও তো আইএসের কারণেই নিজেদের ভূখণ্ড থেকে পালাচ্ছে, আবার বাশার আল-আসাদের নির্বিচার সহিংসতার কারণেও তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। সিরিয়াতে হস্তক্ষেপ না করার ফল হিসেবে আমরা দেখছি, ইউরোপ রক্তপাতে ডুবতে বসেছে, বিপদে জেরবার হচ্ছে।
লড়াইটা দীর্ঘই হবে। ইসলাম এক আবেগের সংকটে পড়েছে, শিয়া ও সুন্নিদের (পড়ুন ইরান ও সৌদি আরব) মধ্যকার আঞ্চলিক সংঘাতে সে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, পশ্চিমবিরোধী আদর্শ ও ওয়াহাবি মৌলবাদে পীড়িত হচ্ছে। এটা মহাবিপদ, যাকে ইসলামের ভেতর থেকেই মোকাবিলা করা উচিত। কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মুসলমানের, যারা প্যারিসের এই হামলায় অন্য যেকোনো মানুষের মতো ব্যথিত হয়েছে, এই কাজটা করতে হবে। তাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে একত্র হয়ে কণ্ঠ ছাড়তে হবে, এই একতা বহু দিন টিকিয়ে রাখতে হবে।
সিরিয়া ও ইরাকে আইএসকে শেষ করে দিলেই জিহাদি সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটবে না। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলে তো ব্যর্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। সময় এসেছে, মানবতার খাতিরে প্রত্যয় নিয়ে ইসলামিক স্টেটের মতো দুষ্টক্ষতের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। একতার অভাব ও বিভ্রান্তির কারণে অতীতে জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই সফল হয়নি। এখন একত্র হওয়া সম্ভব, সেই সঙ্গে সম্ভব বিজয়লাভ।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
রজার কোহেন: নিউইয়র্ক টাইমসের বিদেশ-বিষয়ক সম্পাদক।
জোটের নেতারা ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন, কীভাবে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানানো যায়। ওলাঁদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কথা বলেছেন। জার্মানিসহ অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত দেশ সংহতি প্রকাশ করেছে, ক্ষোভ ও নিষ্ঠুরতা কখনো যৌক্তিক হলেও তা যথেষ্ট নয়।
প্যারিসে এই ১২৯ জন মানুষকে হত্যা করার পরিপ্রেক্ষিতে একমাত্র যথাযথ পদক্ষেপ হচ্ছে সামরিক আক্রমণ। বিদ্যমান হুমকির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে আইএসকে ধ্বংস করে দেওয়া, সিরিয়া ও ইরাকে অবস্থিত আইএসের শক্তিশালী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া। এই বর্বর সন্ত্রাসীরা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে রক্তপাত নিয়ে উল্লাস করছে, ফলে তাদের আর ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া যাবে না, যেখানে বসে তারা হামলার পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করতে পারে, বর্বরতা চালাতে পারে।
ওলাঁদের মনে সেই সন্দেহ নেই যে এই হামলার পরিকল্পনা ‘বিদেশের মাটিতে হয়েছে, হামলাকারীরা সংগঠিতও হয়েছে সেখানে, তবে এই হামলার সঙ্গে দেশের ভেতরের কোনো গোষ্ঠী জড়িত।’ আইএস বা তার কোনো সহযোগী সংগঠন সম্প্রতি রুশ যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করার দায় স্বীকার করেছে, যে দুর্ঘটনায় ২২৪ জন মানুষ মারা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বিশ্বাস করে, এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা আছে।
আইএসকে আঞ্চলিক হুমকি হিসেবে খারিজ করে দেওয়াটা ভুল হবে, তার হুমকি বৈশ্বিক প্রকৃতির। যথেষ্ট হয়েছে। একটি অশুভ গোষ্ঠীকে ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া যায় না, যেখানে তারা বংশবিস্তার করতে পারে। পোপ ফ্রান্সিস ঘোষণা দিয়েছেন, প্যারিস হামলা ‘মানুষের কাজ নয়’, এক অর্থে পোপ ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, মানুষ অপরিমেয় অশুভ কাজ করতে পারে। সামাল না দিলে সে আরও বড় হয়।
ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করতে হলে ন্যাটোর সেনাদের ভূমিতে আক্রমণ চালাতে হবে। ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘ ও অনিশ্চায়ক হস্তক্ষেপের পর এই প্রশ্ন করা সংগত, সেটা ভুল হবে কি না। আবার সামরিক আক্রমণ চালানো হলে আইএসের সদস্যসংখ্যা আরও বেড়ে যাবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। কারণ, সামরিক আক্রমণ চালানো হলে বহু মানুষ মারা যাবে, বহু সম্পদ বিনষ্ট হবে। আর সন্ত্রাসবাদকে আসলে পুরোপুরি পরাজিত করা যাবে না।
এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে হলো, যখন সিরিয়ার হাজার হাজার মুসলিম শরণার্থী স্রোতের মতো ইউরোপে ঢুকছে। এখন তাদের ওপর হামলে পড়া যাবে না, বরং তাদের সহায়তা করতে হবে। এমনকি তার জন্য যদি চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাহলেও সেটা করতে হবে। তারাও তো আইএসের কারণেই নিজেদের ভূখণ্ড থেকে পালাচ্ছে এমন যুক্তি-তর্ক প্রলুব্ধকর, কিন্তু সেটাকে প্রতিহত করতে হবে। আইএসের বিরুদ্ধে বিমান যুদ্ধ পরিচালনা করা হলে কাজ শেষ হয়ে যাবে না। কারণ, প্যারিস হামলাটা এমন এক সময়ে হলো, যখন সিরিয়ায় ভালোভাবেই এক বোমা হামলা চলছিল, যার কোনো মাথামুণ্ডু আমরা বুঝি না। চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো প্যারিস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে যদি সিরিয়া ও ইরাক থেকে আইএস হটাতে সামরিক হামলা চালানোর প্রস্তাব পেশ হয়, তাহলে তাদের সেটার বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত হবে না। আঞ্চলিক শক্তি, বিশেষ করে সৌদি আরবও এই দানবকে শেষ করতে চায়, যদিও এদের উত্থানে তাদের ভূমিকা ছিল। আইএস যে খিলাফতের স্বপ্ন দেখে, সেই খিলাফত তাদের ধ্বংস করে দেবে।
আইএস খুব দক্ষ ও কার্যকর। এদের সুনিয়ন্ত্রিত প্রচারণাযন্ত্র রয়েছে আর মোহভঙ্গ মুসলিম যুবকদের তাড়িত করার মতো আদর্শ রয়েছে, যাদের মনে এই প্রত্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে যে পশ্চিম বিশ্বাসঘাতক। একদিকে মধ্যযুগের সাহিত্য, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত শক্তি—এ দুইয়ে মিলে এক সীমানাবিহীন অতি গোঁড়া সেনাবাহিনী তৈরি হয়েছে। কিন্তু আইএস সামরিক শক্তিতে অত্যন্ত বলীয়ান, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন তাদের নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করছে।
ওবামা প্রশাসন এত দিন বলে এসেছে যে আইএস পরাজিত হবে, কিন্তু সেটা বলাটা যথেষ্ট নয়। সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা ছাড়া এই শব্দের মানে হয় না। সময়ের চাপ রয়েছে, কারণ নতুন হামলা চালানোর জন্য খুব নিপুণভাবে সময় ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি হামলার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত ইউরোপীয় সমাজে ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত সহিংসতার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বাড়ছে বলেই মনে হয়। যে লা বাতাক্লঁ কনসার্ট হলে হামলা হলো, সেখানে নাকি বিভিন্ন ইহুদি সংগঠন প্রতিনিয়তই বসত, ফরাসি ম্যাগাজিন লা পয়েন্ট এ তথ্য দিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে হলো, যখন সিরিয়ার হাজার হাজার মুসলিম শরণার্থী স্রোতের মতো ইউরোপে ঢুকছে। এখন তাদের ওপর হামলে পড়া যাবে না, বরং তাদের সহায়তা করতে হবে। এমনকি তার জন্য যদি চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তাহলেও সেটা করতে হবে। তারাও তো আইএসের কারণেই নিজেদের ভূখণ্ড থেকে পালাচ্ছে, আবার বাশার আল-আসাদের নির্বিচার সহিংসতার কারণেও তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। সিরিয়াতে হস্তক্ষেপ না করার ফল হিসেবে আমরা দেখছি, ইউরোপ রক্তপাতে ডুবতে বসেছে, বিপদে জেরবার হচ্ছে।
লড়াইটা দীর্ঘই হবে। ইসলাম এক আবেগের সংকটে পড়েছে, শিয়া ও সুন্নিদের (পড়ুন ইরান ও সৌদি আরব) মধ্যকার আঞ্চলিক সংঘাতে সে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, পশ্চিমবিরোধী আদর্শ ও ওয়াহাবি মৌলবাদে পীড়িত হচ্ছে। এটা মহাবিপদ, যাকে ইসলামের ভেতর থেকেই মোকাবিলা করা উচিত। কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মুসলমানের, যারা প্যারিসের এই হামলায় অন্য যেকোনো মানুষের মতো ব্যথিত হয়েছে, এই কাজটা করতে হবে। তাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে একত্র হয়ে কণ্ঠ ছাড়তে হবে, এই একতা বহু দিন টিকিয়ে রাখতে হবে।
সিরিয়া ও ইরাকে আইএসকে শেষ করে দিলেই জিহাদি সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটবে না। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলে তো ব্যর্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। সময় এসেছে, মানবতার খাতিরে প্রত্যয় নিয়ে ইসলামিক স্টেটের মতো দুষ্টক্ষতের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। একতার অভাব ও বিভ্রান্তির কারণে অতীতে জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই সফল হয়নি। এখন একত্র হওয়া সম্ভব, সেই সঙ্গে সম্ভব বিজয়লাভ।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
রজার কোহেন: নিউইয়র্ক টাইমসের বিদেশ-বিষয়ক সম্পাদক।
No comments