ফ্রান্সে গণগ্রেফতার : ঘরে ঘরে তল্লাশি
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ব্যাপক ধরপাকড় ও তল্লাশি তৎপরতা শুরু করেছে ফ্রান্সের পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। সন্দেহভাজনদের ধরতে সোমবার কয়েকটি শহরে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। এতে মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার ও অনেক অস্ত্রশস্ত্র আটক করা হয়েছে। রোববার রাত থেকে ১৬৮টি পৃথক স্থানে তল্লাশির পাশাপাশি মোট ১৯৮ জনকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। ববিনি, গ্রিনবেল, তুলুজ, লিয়ঁসহ কয়েকটি শহরে পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড চেজান জানান, তল্লাশিতে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কালাসনিকভ রাইফেল ও রকেট উৎক্ষেপকসহ অনেক অস্ত্র আটক করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামেও প্যারিস হামলার জন্য দায়ী অপরাধীদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।
মঙ্গলবার ব্রাসেলস পুলিশ প্যারিসের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য শনাক্ত হওয়া একজনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে, প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) গুঁড়িয়ে দেয়ার শপথ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ। সোমবার রাতে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, আইএসকে ধ্বংস করতে ফ্রান্স প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আইএসের বিরুদ্ধে ইরাক এবং সিরিয়ায় বিমান হামলা আরও জোরদার করার ঘোষণা দেন তিনি। মঙ্গলবারও আইএস ঘাঁটি লক্ষ করে দ্বিতীয় দফা বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটি। শুক্রবার রাতে প্যারিসের রেস্টুরেন্ট, বার, কনসার্ট হল ও একটি স্টেডিয়ামে হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৩২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। ওলান্দ বলেন, জরুরি অবস্থা জারি ছাড়া দেশে আইন-শৃংখলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় উপায়ের জন্য সংবিধানের সংশোধন করা প্রয়োজন। আইএসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তুরস্কে অনুষ্ঠিত জি-২০-এর বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এরই মধ্যে আইএসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা করেছেন। প্যারিসে হামলার পর সিরিয়ায় আইএসকে লক্ষ্য করে বিশাল আকারের বিমান হামলা রোববার থেকে শুরু করেছে ফ্রান্স। দেশজুড়ে চালানো বিশেষ অভিযানে অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শতাধিক ব্যক্তিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
১,১৫,০০০ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন : ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১,১৫,০০০ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নাড বার্নার্ড চেজান। শুক্রবারের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি পুলিশের সরঞ্জাম খাতে ব্যয় বাড়ানোরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, যা ২০০৭-২০১২ সময়কালে ১৭ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছিল। বিবিসি, এএফপি। প্যারিস হামলাকারীর পাসপোর্ট নিয়ে সার্বিয়ায় একজন আটক : প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলাকারীর পাসপোর্টের সঙ্গে মিল পাওয়ার এক সিরীয় শরণার্থীকে আটক করেছে সার্বিয়ার পুলিশ। প্যারিসে হামলার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া পাসপোর্টের সঙ্গে এই পাসপোর্টের সব তথ্যের হুবহু মিল রয়েছে। তবে ছবি আলাদা। মঙ্গলবার গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সার্বিয়ার পুলিশ জানায়, প্যারিস হামলাকারীর সঙ্গে পাসপোর্টের মিল হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশের ধারণা এই পাসপোর্টটি নকল হতে পারে। গত শুক্রবার প্যারিসে হামলার পর ফরাসি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহমাদ আল মোহাম্মদ (২৫) নামের এক ব্যক্তির পাসপোর্ট উদ্ধার করে। গত ৭ অক্টোবর এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে গ্রিক দ্বীপ লেসবসে শরণার্থী হিসেবে নাম নিবন্ধন করা হয়। পরবর্তীতে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়া হয়ে ফ্রান্সে প্রবেশ করে হামলাকারী। সার্বিয়ার পুলিশের মতে এ ধরনের ভুয়া পাসপোর্ট তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করছে শরণার্থীরা। ফরাসি পুলিশ সার্বিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। সার্বিয়া তার সীমান্ত এলাকা দিয়ে গমন করা প্রত্যেক শরণার্থীর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করছে।
No comments