দেশে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এমনটি ঘটল by আকমল হোসেন
বর্তমানে
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে জনগণের কোনো অংশের
পক্ষে স্বস্তিকর জীবনযাপন সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা
নিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিয়ে
জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কাজকর্ম মিলে গিয়ে বর্তমানে মাত্রাহীন সংকটের
সূত্রপাত ঘটিয়েছে। বিশেষ করে গত তিন সপ্তাহ ধরে সন্ত্রাসী কাজের ফলে
বিরাটসংখ্যক নিরীহ মানুষের জীবনহানি এবং দেশের অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ হামলা
মানুষকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন
নিয়ে সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে মতপার্থক্যের শুরু পঞ্চদশ
সংশোধনী গৃহীত হওয়ার পর থেকে। পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা এত তীব্র যে, এ দল
দুটি কেউ কারও সমাধান নিয়ে আগ্রহী হয়নি। যার দরুন বিএনপি ও তার জোটবদ্ধ
দলগুলো নানা সময়ে হরতাল-বিক্ষোভ সমাবেশ করে সরকারকে চাপ দিতে চেষ্টা করেছে।
তবে এ বছরের শুরুতে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট
অভিযোগে বিচারের রায় ঘোষণা শুরু হলে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন আসন্ন হয়ে পড়ায় দেশের মানুষের ভেতর রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আকাক্সক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের দূতিয়ালির সঙ্গে এবার মার্কিন সরকারের সর্বোচ্চ মহল ও জাতিসংঘের মহাসচিবও বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। বিদেশীদের এভাবে আমদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু অতীতের মতো আমাদের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ক্ষমতালিপ্সার কারণে একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়টিতেও তারা কোনো সমাধান বের করতে না পারায় বিদেশী হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে বিদেশীদের পরামর্শের দুটি মূল দিক ফুটে উঠেছে। এক. তারা চায় উভয় দলের মধ্যে সংলাপ থেকে সমাধান বের হয়ে আসুক, দুই. জাতীয় সংসদের নির্বাচন যাতে সবার (ইনক্লুসিভ) অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য হয়। অন্যদিক যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়টি সরকারের শক্তিশালী লবিংয়ে ব্যর্থতার জন্য স্পষ্ট না হওয়ায় কোনো কোনো দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের অভিযোগ তুলেছে এবং মৃত্যুদণ্ড না দিতে আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, একমাত্র সরকারদলীয় জোটের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা এবং শেষ পর্যন্ত ১৫৪ জন প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া পুরো নির্বাচনকে একতরফা ও হাস্যকর করে তুলেছে। দু’দলের সংলাপও আর কোনো মূল্য বহন করছে না বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে।
এবারের বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রদূতদের অনুপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করছে। রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজ নিজ দেশ বা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে কোনো দেশে নিযুক্ত থাকাকালে সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এটি তাদের রুটিন দায়িত্ব। তাদের অনুপস্থিতি তাদের নিজ সরকার বা সংস্থার অনুমোদন ছাড়া হয়েছে বলে ধারণা করা যায় না। বর্তমানে একপক্ষীয় ও প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় সংসদের নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়ন পছন্দ করছে বলে মনে হয় না। তাই কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করেও তারা বিজয় দিবসের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকল।
ড. আকমল হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এদিকে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন আসন্ন হয়ে পড়ায় দেশের মানুষের ভেতর রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আকাক্সক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের দূতিয়ালির সঙ্গে এবার মার্কিন সরকারের সর্বোচ্চ মহল ও জাতিসংঘের মহাসচিবও বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। বিদেশীদের এভাবে আমদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু অতীতের মতো আমাদের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ক্ষমতালিপ্সার কারণে একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়টিতেও তারা কোনো সমাধান বের করতে না পারায় বিদেশী হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে বিদেশীদের পরামর্শের দুটি মূল দিক ফুটে উঠেছে। এক. তারা চায় উভয় দলের মধ্যে সংলাপ থেকে সমাধান বের হয়ে আসুক, দুই. জাতীয় সংসদের নির্বাচন যাতে সবার (ইনক্লুসিভ) অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য হয়। অন্যদিক যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়টি সরকারের শক্তিশালী লবিংয়ে ব্যর্থতার জন্য স্পষ্ট না হওয়ায় কোনো কোনো দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের অভিযোগ তুলেছে এবং মৃত্যুদণ্ড না দিতে আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, একমাত্র সরকারদলীয় জোটের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা এবং শেষ পর্যন্ত ১৫৪ জন প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া পুরো নির্বাচনকে একতরফা ও হাস্যকর করে তুলেছে। দু’দলের সংলাপও আর কোনো মূল্য বহন করছে না বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে।
এবারের বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রদূতদের অনুপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করছে। রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজ নিজ দেশ বা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে কোনো দেশে নিযুক্ত থাকাকালে সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এটি তাদের রুটিন দায়িত্ব। তাদের অনুপস্থিতি তাদের নিজ সরকার বা সংস্থার অনুমোদন ছাড়া হয়েছে বলে ধারণা করা যায় না। বর্তমানে একপক্ষীয় ও প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় সংসদের নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়ন পছন্দ করছে বলে মনে হয় না। তাই কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করেও তারা বিজয় দিবসের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকল।
ড. আকমল হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments