এবং হরতালের ক্ষয়ক্ষতি
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কারণে হরতাল আহ্বানের নজির খুব কম হলেও এর পুরো চাপটা বহন করতে হয় অর্থনীতিকেই। হরতালে বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি অর্থনীতির চাকাও হয়ে পড়ে স্থবির। গবেষকদের মতে, এক দিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পোশাক খাতেই ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার ওপরে। যে বছর নির্বাচন থাকে, সে বছর বেশি হরতালও থাকে, এতে সে বছরটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালে। গত চার বছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বেশি থাকলেও এবার ৬-এর নিচে নামারই আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি। সিপিডির হিসাবে, হরতালে ১ শতাংশ পুঁজি নষ্ট হলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এফবিসিসিআইয়ের দাবি, এক দিনের হরতালে দেশের জিডিপির দশমিক ১২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর যে ক্ষতি হয়েছে,
তা বাংলাদেশের জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের সমান। এই আর্থিক ক্ষতির বাইরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার বিষয়টি যোগ করলে হরতালে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। একদিকে হরতাল দেশের জনগোষ্ঠীকে করে তোলে কর্মবিমুখ ও অলস, অন্যদিকে ধ্বংস করে মানবিক মূল্যবোধ। হরতালের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিই শুধু বিনষ্ট হচ্ছে না, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটকেরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলো, গত দুই দশকে গণতান্ত্রিক শাসনামলে যত হরতাল হয়েছে, তার এক-দশমাংশও হয়নি সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। আরও হতাশার কারণ হলো, পালা করে দেশ শাসনকারী দুটি প্রধান দলই ক্ষমতায় থাকতে হরতালের বিরুদ্ধে বুলন্দ আওয়াজ তুললেও বিরোধী দলে গিয়ে ফের হরতালকেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে। বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হরতালের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। হরতালে জনজীবন ও অর্থনীতি বিপন্ন হলেও সরকারের পতন হয় না। তাই, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করবেন না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করুন।
No comments