বিচার বিভাগ পৃথক্করণ
রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আংশিক পৃথক করার নিস্তরঙ্গ তিন বছর পার হলো। চুয়ান্নর ঐতিহাসিক ২১ দফার অন্যতম ছিল এ দাবি। তারও আগে ব্রিটিশ-ভারতের প্রাদেশিক পরিষদে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক বিচার বিভাগ পৃথক করার দাবি তুলেছিলেন। সাতান্নতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে এ বিষয়ে আইন হলেও তা শুধু প্রজ্ঞাপন জারির অভাবে কার্যকর হয়নি। আমলারা ঠেকিয়ে রাখেন। বাহাত্তরের সংবিধানে শেষ মুহূর্তে ‘আমলাতান্ত্রিক’ চাপেই ২২ অনুচ্ছেদের জন্ম নেয়। এতে বলা হলো, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হবে। এত কাণ্ডের পরও সেই পৃথক্করণ আজও বারো আনার বেশি অধরা।
বহু টালবাহানার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ক্ষেত্রে একটা বড় অগ্রগতি হলো। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিচারিক হাকিমের দায়িত্ব পালনে ক্ষান্ত দিলেন। বিচারকদের বদলি, কর্মস্থল নির্ধারণ, শৃঙ্খলাবিধানে সরকারি খবরদারি খর্ব হলো। কিন্তু সাংবিধানিক অর্থে বিচার বিভাগ পৃথক হলো না। সে কারণে ১০ বিচারকের মামলায় আপিল বিভাগ বললেন, সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদকে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের (চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীতে এ দুটো অনুচ্ছেদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়) আদলে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত একটা ‘ক্রন্দন’ হয়ে থাকবে। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়েও আপিল বিভাগ আবার ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ এ দুটো অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচার বিভাগ পৃথক্করণ সার্থক করতে নির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দেন। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে নীরবতা চলছে।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি যে, বিচারিক ক্ষমতায় ভাগ বসাতে প্রশাসন ক্যাডারের অনভিপ্রেত বাসনা নানা অজুহাতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। মোবাইল কোর্ট আইনে নির্বাহী হাকিমদের বিচারিক ক্ষমতার সম্প্রসারণ ঘটছে। প্রশাসন ক্যাডার এতেও সন্তুষ্ট নয়। আমরা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সপক্ষে গীত গাইব, আবার একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে প্রশাসন ক্যাডারের হাতে বিচারিক ক্ষমতা তুলে দেব, এটি স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্রের বিচারিক ক্ষমতা ভাগাভাগি হয় না।
বিচার বিভাগ পৃথক্করণের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাকে সার্থক করে তুলতে সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিচারকদের কর্মস্থলের মেয়াদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বদলিসর্বস্ব পুলিশি প্রশাসন আমরা বিচারাঙ্গনে চাই না। পৃথক করার ফলে প্রাপ্ত সুফল জনগণের কাছে এখনো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
আমরা অবিলম্বে বিচারকদের জন্য করা পে-কমিশনের বাস্তবায়ন চাই। আর সেই সঙ্গে বিচারকদের কর্মস্থলসংক্রান্ত একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা আশা করি। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ে সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে আশা করব, এটা নিছক উপলক্ষকেন্দ্রিক হবে না। বিচারকদের খোলামেলা মতামতের আলোকে বিচার বিভাগ পৃথক্করণের বাস্তব বাধাগুলো অপসারণ করা হবে।
বহু টালবাহানার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ক্ষেত্রে একটা বড় অগ্রগতি হলো। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিচারিক হাকিমের দায়িত্ব পালনে ক্ষান্ত দিলেন। বিচারকদের বদলি, কর্মস্থল নির্ধারণ, শৃঙ্খলাবিধানে সরকারি খবরদারি খর্ব হলো। কিন্তু সাংবিধানিক অর্থে বিচার বিভাগ পৃথক হলো না। সে কারণে ১০ বিচারকের মামলায় আপিল বিভাগ বললেন, সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদকে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের (চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীতে এ দুটো অনুচ্ছেদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়) আদলে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত একটা ‘ক্রন্দন’ হয়ে থাকবে। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়েও আপিল বিভাগ আবার ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ এ দুটো অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচার বিভাগ পৃথক্করণ সার্থক করতে নির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দেন। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে নীরবতা চলছে।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি যে, বিচারিক ক্ষমতায় ভাগ বসাতে প্রশাসন ক্যাডারের অনভিপ্রেত বাসনা নানা অজুহাতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। মোবাইল কোর্ট আইনে নির্বাহী হাকিমদের বিচারিক ক্ষমতার সম্প্রসারণ ঘটছে। প্রশাসন ক্যাডার এতেও সন্তুষ্ট নয়। আমরা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সপক্ষে গীত গাইব, আবার একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে প্রশাসন ক্যাডারের হাতে বিচারিক ক্ষমতা তুলে দেব, এটি স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্রের বিচারিক ক্ষমতা ভাগাভাগি হয় না।
বিচার বিভাগ পৃথক্করণের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাকে সার্থক করে তুলতে সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিচারকদের কর্মস্থলের মেয়াদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বদলিসর্বস্ব পুলিশি প্রশাসন আমরা বিচারাঙ্গনে চাই না। পৃথক করার ফলে প্রাপ্ত সুফল জনগণের কাছে এখনো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
আমরা অবিলম্বে বিচারকদের জন্য করা পে-কমিশনের বাস্তবায়ন চাই। আর সেই সঙ্গে বিচারকদের কর্মস্থলসংক্রান্ত একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা আশা করি। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ে সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে আশা করব, এটা নিছক উপলক্ষকেন্দ্রিক হবে না। বিচারকদের খোলামেলা মতামতের আলোকে বিচার বিভাগ পৃথক্করণের বাস্তব বাধাগুলো অপসারণ করা হবে।
No comments