গোড়ায় গলদ -বুড়িগঙ্গা ধোলাই প্রকল্পটি আগে ধোলাই করুন
বলা হয়, ঢাকার সৌভাগ্য যে তার তিন দিকে নদী। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে নদীগুলো মানুষের অপরিণামদর্শী ও স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যুদস্ত। শিল্প ও মনুষ্যবর্জ্যে ওগুলো এতই দূষিত যে সেখানে মাছ পর্যন্ত বাঁচে না। দূষণমুক্ত করার অনেক আন্দোলনের পর সরকার বুড়িগঙ্গার তিন কিলোমিটার ও তুরাগের দেড় কিলোমিটার এলাকার বর্জ্য অপসারণের কর্মসূচি নিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নদী ধোলাই শুরুর দুই দিন পরই প্রথম আলোর প্রথম পাতায় সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা গেল, কেরানীগঞ্জের আগানগর খেয়াঘাটে একটি রঙের কারখানার দূষিত রাসায়নিকযুক্ত পদার্থ সেই বুড়িগঙ্গাতেই ধোলাই করা হচ্ছে। একদিকে ধোলাই, অন্যদিকে দূষণ যদি একই সঙ্গে চলে, তাহলে দিনশেষে অর্জন বলতে তো কিছু থাকবেই না, বরং অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে ফিরতে হবে।
একেই বলে গোড়ায় গলদ। জনসচেতনতা সৃষ্টি, প্রচার, ঢাকঢোল পেটানোসহ কোনো কিছুই বাদ রাখা হয়নি। শুধু বাদ থেকে গেল নদীদূষণের প্রাত্যহিক ক্রিয়াকর্ম বন্ধের ব্যবস্থা। ফলে দূষণক্রিয়ার নায়কেরা ধরে নিয়েছে যে সরকারের কাজ সরকার করবে, কষ্ট করে নদীর তলদেশের ময়লা তুলে পাড়ে রাখবে; আর ওদের কাজ ওরা করবে, প্রতিদিনের মতো নদীতে আবর্জনা ও বর্জ্য নিক্ষেপ করে নদীদূষণ চালিয়ে যাবে!
নদীর বর্জ্য পরিষ্কারের পাশাপাশি নদীদূষণের সব দুষ্কর্ম বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ফুটো কলসে পানি ঢালার মতো ব্যাপার হবে। তাই এদিকে প্রথম নজর দিতে হবে। নদীতীরে যতগুলো কারখানা আছে, তাদের বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সরকার যে এ ব্যাপারে শিল্পমালিকদের সহজ শর্তে ঋণনীতি নিয়েছে, সেটা সুফল দেবে যদি মালিকেরা ঋণ গ্রহণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারখানার বর্জ্য শোধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার নিজস্ব উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শোধনাগার স্থাপন করে ছোট ছোট শিল্পকে সহযোগিতা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাও উত্সাহজনক। কিন্তু সবই যদি কেবল কাগজে-কলমে থেকে যায়, তাহলে লাভ কী?
সবচেয়ে পীড়াদায়ক ব্যাপার হলো, নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে পরিষ্কার করার কয়েক দিন পরই আবার সেগুলো অবৈধ দখলে চলে যায়, শুরু হয় নদীদখল, নদীদূষণ। দখলবাজ কায়েমি স্বার্থ সমূলে উত্পাটন না করতে পারলে কোনো কাজ হবে না। সমস্যা হলো, যারা রক্ষক, তারাই ভক্ষক! স্থানীয় প্রভাবশালীরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছত্রচ্ছায়ায় দখল ও দূষণ চালায়। অনেক সময় স্থানীয় থানা-পুলিশও তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। তাহলে কে কাকে শায়েস্তা করবে? সরকার অবশ্য তীর সংরক্ষণে খুঁটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে হয়তো পুনরায় দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমানো যাবে।
তবে সাম্প্রতিক উদ্যোগটি ভালো ও প্রতিশ্রুতিশীল এই অর্থে যে, এটি প্রায় দেড় বছর মেয়াদি প্রকল্প। এতে ২৫ কোটি টাকাও ঢালা হবে। তবে তার সবটাই যেন পানিতে না যায়, সে জন্য প্রকল্পটি আগে ধোলাই করা দরকার। নিশ্চিত করতে হবে যে নদী দুটির যে অংশ পরিষ্কার করা হবে, সেখানে আর কোনো দূষণ চলবে না। পাশাপাশি উজান ও ভাটায় এখন থেকেই সব ধরনের দূষণ ও দখল-তত্পরতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাথমিক এসব উদ্যোগ সফল হলে ধীরে ধীরে প্রকল্পের পরিসর বাড়ানো যাবে।
ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর স্বচ্ছ প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু নদীগুলোই মরবে না, মানুষও মরবে।
একেই বলে গোড়ায় গলদ। জনসচেতনতা সৃষ্টি, প্রচার, ঢাকঢোল পেটানোসহ কোনো কিছুই বাদ রাখা হয়নি। শুধু বাদ থেকে গেল নদীদূষণের প্রাত্যহিক ক্রিয়াকর্ম বন্ধের ব্যবস্থা। ফলে দূষণক্রিয়ার নায়কেরা ধরে নিয়েছে যে সরকারের কাজ সরকার করবে, কষ্ট করে নদীর তলদেশের ময়লা তুলে পাড়ে রাখবে; আর ওদের কাজ ওরা করবে, প্রতিদিনের মতো নদীতে আবর্জনা ও বর্জ্য নিক্ষেপ করে নদীদূষণ চালিয়ে যাবে!
নদীর বর্জ্য পরিষ্কারের পাশাপাশি নদীদূষণের সব দুষ্কর্ম বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ফুটো কলসে পানি ঢালার মতো ব্যাপার হবে। তাই এদিকে প্রথম নজর দিতে হবে। নদীতীরে যতগুলো কারখানা আছে, তাদের বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সরকার যে এ ব্যাপারে শিল্পমালিকদের সহজ শর্তে ঋণনীতি নিয়েছে, সেটা সুফল দেবে যদি মালিকেরা ঋণ গ্রহণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারখানার বর্জ্য শোধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার নিজস্ব উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শোধনাগার স্থাপন করে ছোট ছোট শিল্পকে সহযোগিতা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাও উত্সাহজনক। কিন্তু সবই যদি কেবল কাগজে-কলমে থেকে যায়, তাহলে লাভ কী?
সবচেয়ে পীড়াদায়ক ব্যাপার হলো, নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে পরিষ্কার করার কয়েক দিন পরই আবার সেগুলো অবৈধ দখলে চলে যায়, শুরু হয় নদীদখল, নদীদূষণ। দখলবাজ কায়েমি স্বার্থ সমূলে উত্পাটন না করতে পারলে কোনো কাজ হবে না। সমস্যা হলো, যারা রক্ষক, তারাই ভক্ষক! স্থানীয় প্রভাবশালীরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছত্রচ্ছায়ায় দখল ও দূষণ চালায়। অনেক সময় স্থানীয় থানা-পুলিশও তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। তাহলে কে কাকে শায়েস্তা করবে? সরকার অবশ্য তীর সংরক্ষণে খুঁটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে হয়তো পুনরায় দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমানো যাবে।
তবে সাম্প্রতিক উদ্যোগটি ভালো ও প্রতিশ্রুতিশীল এই অর্থে যে, এটি প্রায় দেড় বছর মেয়াদি প্রকল্প। এতে ২৫ কোটি টাকাও ঢালা হবে। তবে তার সবটাই যেন পানিতে না যায়, সে জন্য প্রকল্পটি আগে ধোলাই করা দরকার। নিশ্চিত করতে হবে যে নদী দুটির যে অংশ পরিষ্কার করা হবে, সেখানে আর কোনো দূষণ চলবে না। পাশাপাশি উজান ও ভাটায় এখন থেকেই সব ধরনের দূষণ ও দখল-তত্পরতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাথমিক এসব উদ্যোগ সফল হলে ধীরে ধীরে প্রকল্পের পরিসর বাড়ানো যাবে।
ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর স্বচ্ছ প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু নদীগুলোই মরবে না, মানুষও মরবে।
No comments