কোন ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের বিনিময়ে ঠিক কতসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।
হামাস-ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তির লিখিত বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়ের বিভিন্ন অনুপাতের কথা বলা হয়েছে।
অনুপাতের বিষয়টি নির্ভর করছে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন কি না, তার ওপর।
ফিলিস্তিনি বন্দী ও সাবেক বন্দীবিষয়ক কমিশন এবং প্যালেস্টাইন প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্যমতে, বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারে ১০ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গত ১৫ মাসের সংঘাতকালে গাজা থেকে আটক ফিলিস্তিনিরা অন্তর্ভুক্ত নন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হলে আজ রোববার ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয়। তবে এর বাইরে যেসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাঁদের নাম জানা যায়নি।
চুক্তির রূপরেখা অনুসারে, আজ স্থানীয় সময় বিকেল চারটার আগে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে না।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েল প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর একটা বড়সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার আগে ১০ জনের কম ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
প্রথম ধাপ
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি তিন ধাপের। চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে। গাজায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের সংখ্যা আনুমানিক ১০০ জন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, দোহায় উভয় পক্ষের (হামাস-ইসরায়েল) পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী যে অনুপাতের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, সে হিসেবে জিম্মি-বন্দী বিনিময় করা হবে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১১০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে ৯ জন অসুস্থ ও আহত ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে।
এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে ৫০ বছরের বেশি বয়সী ইসরায়েলি জিম্মি পুরুষদের বিনিময়ের অনুপাত হবে ১: ৩। অন্যান্য মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করা ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মিদের অনুপাত হবে ১: ২৭।
আগের বন্দী বিনিময়
অতীতেও বন্দী বিনিময় হয়েছে। যেমন ২০১৩ সালে শান্তি আলোচনা চলাকালে ইসরায়েল ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল আলোচনাকে জোরদার করা।
১৯৮৩ সালে ছয় ইসরায়েলি সেনার বিনিময়ে ৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
একইভাবে ১৯৮৫ সালে ৩ জন ইসরায়েলি সেনার বিনিময়ে প্রায় ১ হাজার ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
বড় মাপের বন্দী
ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, আজ যেসব ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন খালিদা জারার। তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরের সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিনের (পিএফএলপি) নেতা।
ফিলিস্তিনিরা আরও কয়েকজন বড় মাপের বন্দীর মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছেন।। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
তাঁদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি সংগঠন ফাতাহর নেতা মারওয়ান বারগুতি। তাঁর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মুক্তি বারবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আটকে দিয়েছে।
মারওয়ানের প্রতিনিধি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গত শুক্রবার যোগাযোগ করেছিল আল-জাজিরা। তাঁরা বলেন, মারওয়ানের মুক্তির ব্যাপার তাঁরা আশাবাদী। কিন্তু তাঁর সম্ভাব্য মুক্তির বিষয়ে তাঁরা কোনো তথ্য পাননি।
আরেকজন বড় মাপের ফিলিস্তিনি বন্দী হলেন পিএফএলপির প্রধান আহমেদ সাদাত। ২০০১ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন পর্যটনমন্ত্রী রেহাভাম জেইভিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার জন্য তাঁকে ইসরায়েল অভিযুক্ত করেছিল। যদিও ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তাঁকে অভিযুক্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
![]() |
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।.ফাইল ছবি: রয়টার্স |
No comments