ঢাবিতে সৌহার্দের বন্ধনে প্রাণের মেলা
‘সৌহার্দ
ও স্মৃতির বন্ধনে আবদ্ধ আমরা, এসো মিলি প্রাণের আনন্দে’ এই স্লোগানকে ধারন
করে দশম পুনর্মিলনী উদযাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) দর্শন বিভাগ
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুপডা)। আজ শুক্রবার সকালে অ্যালামনাইদের
দিনব্যাপী এ প্রাণের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক
ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পেশাগত ও
পারিবারিক জীবনের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের সেই চেনাজানা পরিবেশে
প্রিয়জনদের সাথে সময় উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন তারা। একাত্ম হয়েছেন
ভালবাসার মেলবন্ধনে। সৌহার্দের বন্ধন এবং প্রাণের টানেই তারা ছুটে এসেছেন
দূর-দূরান্ত থেকে। স্মৃতির ফ্রেমে গাঁথা সেই দুরন্ত অতীতে ফিরে গেছেন তারা
প্রিয়জনদের সান্যিধ্যে এসে। স্মৃতি, সৌহার্দের বন্ধনই তাদেরকে ভালবাসার এই
মিলনমেলায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এ যেন সৌহার্দের বন্ধনে আবদ্ধ এক প্রাণের
মিলনমেলা। সকাল থেকে শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান ছিলো অ্যালামনাইদের
পদচারণায় মুখরিত। দর্শন পরিবারের মিলনমেলায় পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
টিএসসি প্রাঙ্গন। যেখানে নিজেদের শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত
করেছেন অ্যালামনাইগণ। অনুষ্ঠানে তারা নিজেদের প্রিয় মানুষ, শিক্ষক,
বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা-গল্পে সময় পার করছেন।
কেউ আবার মোবাইলে এই বিশেষ
মুহূর্তটিকে ধারণ করছেন। পছন্দের শিক্ষক ও বন্ধ-বান্ধবদের সাথে ছবি তুলছেন
অনেকেই। এ সময় তাদের মধ্যে প্রাণোচ্ছলতা বিরাজমান ছিলো। পুনর্মিলনীর
অনুভূতি জানতে কথা হয়েছিল সুদূর চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা মোঃ আতিউর রহমানের
সাথে। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে কলেজে অধ্যাপনা
করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরেই কাটিয়েছেন তার উচ্চ শিক্ষার
দিনগুলো। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই স্মৃতিময় অতীতের কথা স্মরণ করে, প্রিয়
অগ্রজ, অনুজ এবং সহপাঠীদের সাথে একাত্ম হতে এসেছেন পুনর্মিলনীতে। নিজের
অনুভূতি জানতে চাইলে আতিউর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের
যেকোনো অনুষ্ঠানে আসতেই ভালো লাগে। আর নিজের বিভাগের কোনো অনুষ্ঠান হলে সে
আনন্দ আরো বেড়ে যায়। বন্ধু-বান্ধব, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং বিভাগের অন্যান্য
প্রিয় লোকদের সাথে যখন বহুদিন পরে দেখা হয়, কথা হয়, তখন অন্যরকম এক ভাললাগা
কাজ করে আমার মধ্যে। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। যা বলবো মনে হচ্ছে যেন
অনকে কম হয়ে যাবে। কর্মব্যস্ত থাকার অনেকদিন হলো সবার সাথে খুব একটা মেশা
হয়ে ওঠেনি। তাদের থেকে দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এ অনুষ্ঠান তাদের
সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দিল। কথা হয়েছে ১৯৭১ সালে পাশ করা অ্যালামনাই
ফেরদাইস জাহানের সাথে। শিক্ষকতা ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এর
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ২২ বছর কাজ করে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন।
ষাটোর্ধ্ব এ অ্যলামনাই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, সেদিন পাকিস্তানীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী হত্যাসহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনেক কিছুই নষ্ট করে দিয়েছে, কিন্তু এই টিএসসিকে ধ্বংস করতে পারেনি। এখানে
অনেক অনেক স্মৃতি। এখানে এলে সেই তরুণ বয়সের শিক্ষাজীবনে ফিরে যাই। তাইতো
বারবার এ অনুষ্ঠানে আসা। নবীন-প্রবীনদের এ মিলনমেলা সত্যিই এক অসাধারণ
অনুভূতি সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেল পেয়ে সদ্য
গ্রাজুয়েশন শেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন
সাজিয়া আফরিন। প্রথমবারের মতো অ্যালামনাই হিসেবে অনুষ্ঠানে আসতে পেরে
নিজেকে সৌভাগবান মনে করছেন তিনি। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে সাজিয়া আফরিন
বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন পেরে খুব আনন্দিত বোধ করছি। আমার
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও অন্যান্যদের একসাথে পাবার মুহূর্তটা সত্যিই অন্যরকম। এই
আয়োজন স্বার্থক হবে যখন অ্যালামনাইয়ের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে
দেশের জন্য কাজ করে যেতে পারেন। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাণের বন্ধন আরো
সুদৃঢ় হয় মন্তব্য করে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম
হারুনার রশীদ বলেন, বর্তমানে অনুষ্ঠানের কলেবর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এর
মাধ্যমে আমাদের প্রাণের বন্ধন আরো সুগভীর, সুদৃঢ় হয়েছে।
আমরা প্রতি বছর
এভাবে মিলিত হই আমাদের প্রাণের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করি। এর আগে সকালে পবিত্র
ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ডুপডা’র সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজাহান মিয়ার
সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের
এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনেরর সভাপিত এ কে আজাদ এবং ডুপডার
সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সাত্তার মিয়াজি। এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক
ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম হারুনার রশীদ। দিনব্যাপী এই আয়োজনের
মধ্যে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান র্যাফল ড্রসহ নানা আয়োজন। পুনর্মিলনীকে
ঘিরে টিএসসিকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। বিভিন্ন নজর কাড়া সাজে সজ্জিত
হয়েছেন অ্যালামনাইরাও। পুরুষের সুট-বুটের সাথ নারীদের বাহারি রঙের শাড়ি
ছিলো নজর কাড়া সৌন্দর্যের মূলে। বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টিএসসির মাঠে
তৈরি করা হয়েছিল আকর্ষণীয় বিলবোর্ড। ছবি তোলার জন্য যেখানে এক সময়ের
সহপাঠীদের সাথে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী হতে দেখা যায় আগতদের অনেককে। দিনে
সহপাঠী, শিক্ষকদের সাথে অফুরন্ত আনন্দ উপভোগ শেষে সন্ধ্যায় গন্তব্যের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তারা। সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রতি অফুরন্ত আকর্ষণ,
বন্ধুদের প্রতি অগাধ ভালবাসা। আবারো কোনো এক মধুক্ষণে প্রাণের আনন্দে মিলিত
হওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে গন্তব্যে যাত্র করেন অ্যালামনাইরা।
No comments