কে বলে ফুটবল ‘মরে’ গেছে এ দেশে!
বাফুফে নির্বাচন ঘিরে এখন দারুণ সরগরম বাফুফে অফিস। নামা সমীকরণের সামনে সালাউদ্দিন |
বাফুফে অফিসে যেন এখন বিয়েবাড়ির ধুম। শোরগোল, উত্তেজনা, গুঞ্জন, গুঞ্জরণও! বাফুফের নির্বাচন ঘিরে ঘটতে থাকা নানা ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন মাসুদ আলম সিলেট থেকে বিমানে ওঠার আগে তাঁর সঙ্গে বিশাল ব্যাগপত্তর দেখে নাকি অনেকে অবাক। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, কই যান! এত বড় লাগেজ সঙ্গে!’ মহিউদ্দিন সেলিমের সহাস্য উত্তর, ‘ঢাকায় যাচ্ছি। ১১ দিন থাকব তো। অনেক কাপড়চোপড় লাগবে। ব্যাগটা বড়ই হয়ে গেছে।’ সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রণী মুখ সেলিম স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, জেলা ফুটবল সংস্থার সভাপতিও। ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে ১৩৪ ভোটারের একজন এবং কাজী সালাউদ্দিনের পরিষদের সদস্য প্রার্থী। গতকাল বাফুফে ভবনে বসে নির্বাচন নিয়ে নানা কথার ফাঁকে মজা করে বলছিলেন, ‘সিলেট থেকে সাধারণত ঢাকায় সকালে এসে বিকেলে ফিরে যাই। এত দিন এভাবেই অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এবার সিলেটে বসে থাকলে চলছে না। তাই লম্বা সময়ের জন্য ঢাকায় একটানা থাকতে চলে এলাম।’ এভাবে ‘ঢাকায় চলে এলাম’ গল্প এখন অনেক জেলা সংগঠকের মুখেই। ঢাকায় ঘাঁটি গাড়ছেন নির্বাচনের উত্তাপে গা ভাসাতে। বাফুফের বারান্দায় দেখা হয়ে যাচ্ছে অন্য অনেকের সঙ্গে। সেই ভিড়ে অচেনা এক দৃশ্য। সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর অন্যতম কামরুল আশরাফ খান বাফুফে ভবনেই প্রথম এসেছেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন! এর আগে ফুটবল অঙ্গনে তাঁকে দেখা যায়নি। নামটাও শোনা গেছে এই প্রথম। তাঁর মনোনয়নপত্র কেনার খবরে ফুটবল অঙ্গনে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, ‘কামরুল আশরাফ কে? ওনাকে চেনেন?’
নরসিংদী-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতে আসা এই সাংসদ প্রথম দেখায় খুব একটা মনোযোগ কাড়তে পারেনি। বাফুফে ভবনে তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বোঝা গেল, ফুটবল নিয়ে কথা বলায় অভ্যস্ত নন। যেহেতু তিনি সার ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ সার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, তাই সারের প্রসঙ্গ টেনে বলছিলেন, সারা দেশে তাঁর সার ব্যবসার বড় একটা ভিত্তি আছে। ফুটবল উন্নয়নে সেটি কাজে লাগাতে পারবেন। সার দিয়ে অনুর্বর ফুটবলের যদি এবার গতি হয়! অনেকের মুখেই রসিকতার সুর। তাঁকে সামনে নিয়ে আসা ফুটবল বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোক্তারা অবশ্য বলেন, ‘ওনাকে দিয়ে দেখেন না এক-দুই বছর। না পারলে তখন বলা যাবে। সারের উপকারিতা পাবেন তো সার ছিটালে তবেই।’ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের ভেবেছেন, ‘সালাউদ্দিন হটাও’ স্লোগান নিয়ে তিনিই মূলত নিয়ে এসেছেন কামরুল আশরাফকে। অথচ সালাউদ্দিন-কাদের অনেক দিনের বন্ধু, কয়ে কমাস ধরে সম্পর্কটা অবশ্য দা-কুমড়া। সেটারই ফল এই নির্বাচনী লড়াই। তবে এ লড়াইয়ে বন্ধু যেন শত্রু হয়েছে, নির্বাচন ঘিরে শক্র বন্ধুও হচ্ছে। সালাউদ্দিনের সঙ্গে এত দিন পুরোনো সংগঠক হারুনুর রশিদ, বাদল রায়দের সম্পর্ক ভালো ছিল না। কিন্তু নির্বাচনে তাঁরা এক হয়ে গেলেন। নির্বাচনে আসলেই শেষ কথা বলে কিছু নেই। নির্বাচনের মূল রঙ্গমঞ্চটা অবশ্য মতিঝিল বাফুফে ভবন। সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক ও সংবাদমাধ্যমের ত্রিমুখী প্রয়াসে ওই চত্বরটা এখন গমগম করছে। প্রধান ফটকে স্বতন্ত্র এক সহসভাপতি প্রার্থীর ছবিসহ বিশাল বিলবোর্ড। একটু ভেতরে ঢুকলেই ভবনের প্রতিটি কক্ষে একটাই আলোচনা—নির্বাচন। সালাউদ্দিনের কক্ষ ভিড়ে ঠাসা থাকে সারাক্ষণ। সাংবাদিকদের জটলা, টুকরা টুকরা ভাগ হয়ে নানা আলোচনা। যে আলোচনায় নির্বাচিত হলে কে কী করবেন, সেটা নেই। বরং আলোচনার বিষয় কে কত টাকা খরচ করবেন, টাকা না ছিটালে জিততে পারবেন না...ইত্যাদিই জায়গা পাচ্ছে বেশি। টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে গতবার, এবারও টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচার কথা শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে ভোটারদের নাকি পোয়াবারো। দুই পক্ষের লড়াইয়ে নির্বাচনটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে; যা ছড়িয়ে গেছে সারা দেশের ফুটবলে। এসব দেখে মনে হয়, ইশ্, সারা বছর ফুটবল নিয়ে যদি বাফুফে ভবন এভাবে সরগরম থাকত! আফসোস হয়, বাফুফে ভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়ে এই ‘নির্বাচনী খেলোয়াড়দের’ ৯৯ ভাগই খেলা দেখেন না, অথচ নির্বাচন নিয়ে কী আগ্রহ সবার! আশ্চর্য এক ব্যাপার। নির্বাচনী প্রোপাগান্ডায় কে বলবে কদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয় দল ৮ গোল খেয়েছে জর্ডানের কাছে! এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৮ ম্যাচে বাংলাদেশ রেকর্ড ৩২টি গোল হজম করেছে! নির্বাচনী উৎসাহ দেখে মনে হতে পারে, ফুটবলে উন্নতির নহর বইল বুঝি। সবার মুখেই প্রতিশ্রুতির বন্যা। সবাই অভিন্ন সুরে বলছেন, ফুটবল উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। মনে হচ্ছে, আগামীকালই ইউরোপের কোনো ফুটবল শক্তিতে রূপান্তরিত হবে বাংলাদেশ! হলে তো ভালোই!
নরসিংদী-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতে আসা এই সাংসদ প্রথম দেখায় খুব একটা মনোযোগ কাড়তে পারেনি। বাফুফে ভবনে তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বোঝা গেল, ফুটবল নিয়ে কথা বলায় অভ্যস্ত নন। যেহেতু তিনি সার ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ সার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, তাই সারের প্রসঙ্গ টেনে বলছিলেন, সারা দেশে তাঁর সার ব্যবসার বড় একটা ভিত্তি আছে। ফুটবল উন্নয়নে সেটি কাজে লাগাতে পারবেন। সার দিয়ে অনুর্বর ফুটবলের যদি এবার গতি হয়! অনেকের মুখেই রসিকতার সুর। তাঁকে সামনে নিয়ে আসা ফুটবল বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোক্তারা অবশ্য বলেন, ‘ওনাকে দিয়ে দেখেন না এক-দুই বছর। না পারলে তখন বলা যাবে। সারের উপকারিতা পাবেন তো সার ছিটালে তবেই।’ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের ভেবেছেন, ‘সালাউদ্দিন হটাও’ স্লোগান নিয়ে তিনিই মূলত নিয়ে এসেছেন কামরুল আশরাফকে। অথচ সালাউদ্দিন-কাদের অনেক দিনের বন্ধু, কয়ে কমাস ধরে সম্পর্কটা অবশ্য দা-কুমড়া। সেটারই ফল এই নির্বাচনী লড়াই। তবে এ লড়াইয়ে বন্ধু যেন শত্রু হয়েছে, নির্বাচন ঘিরে শক্র বন্ধুও হচ্ছে। সালাউদ্দিনের সঙ্গে এত দিন পুরোনো সংগঠক হারুনুর রশিদ, বাদল রায়দের সম্পর্ক ভালো ছিল না। কিন্তু নির্বাচনে তাঁরা এক হয়ে গেলেন। নির্বাচনে আসলেই শেষ কথা বলে কিছু নেই। নির্বাচনের মূল রঙ্গমঞ্চটা অবশ্য মতিঝিল বাফুফে ভবন। সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক ও সংবাদমাধ্যমের ত্রিমুখী প্রয়াসে ওই চত্বরটা এখন গমগম করছে। প্রধান ফটকে স্বতন্ত্র এক সহসভাপতি প্রার্থীর ছবিসহ বিশাল বিলবোর্ড। একটু ভেতরে ঢুকলেই ভবনের প্রতিটি কক্ষে একটাই আলোচনা—নির্বাচন। সালাউদ্দিনের কক্ষ ভিড়ে ঠাসা থাকে সারাক্ষণ। সাংবাদিকদের জটলা, টুকরা টুকরা ভাগ হয়ে নানা আলোচনা। যে আলোচনায় নির্বাচিত হলে কে কী করবেন, সেটা নেই। বরং আলোচনার বিষয় কে কত টাকা খরচ করবেন, টাকা না ছিটালে জিততে পারবেন না...ইত্যাদিই জায়গা পাচ্ছে বেশি। টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে গতবার, এবারও টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচার কথা শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে ভোটারদের নাকি পোয়াবারো। দুই পক্ষের লড়াইয়ে নির্বাচনটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে; যা ছড়িয়ে গেছে সারা দেশের ফুটবলে। এসব দেখে মনে হয়, ইশ্, সারা বছর ফুটবল নিয়ে যদি বাফুফে ভবন এভাবে সরগরম থাকত! আফসোস হয়, বাফুফে ভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়ে এই ‘নির্বাচনী খেলোয়াড়দের’ ৯৯ ভাগই খেলা দেখেন না, অথচ নির্বাচন নিয়ে কী আগ্রহ সবার! আশ্চর্য এক ব্যাপার। নির্বাচনী প্রোপাগান্ডায় কে বলবে কদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয় দল ৮ গোল খেয়েছে জর্ডানের কাছে! এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৮ ম্যাচে বাংলাদেশ রেকর্ড ৩২টি গোল হজম করেছে! নির্বাচনী উৎসাহ দেখে মনে হতে পারে, ফুটবলে উন্নতির নহর বইল বুঝি। সবার মুখেই প্রতিশ্রুতির বন্যা। সবাই অভিন্ন সুরে বলছেন, ফুটবল উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। মনে হচ্ছে, আগামীকালই ইউরোপের কোনো ফুটবল শক্তিতে রূপান্তরিত হবে বাংলাদেশ! হলে তো ভালোই!
No comments