২১০ বিদ্যালয় বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা @প্রথম আলো
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকেরা আজ শনিবার মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে বেলা ১১টার দিকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিমন্ত্রীকে শিক্ষকেরা তুলে দেন সাড়ে ছয় ভরি ওজনের রুপার নৌকা। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে।
>>খুলনার ডুমুরিয়ায় উপজেলা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে রুপার নৌকা উপহার দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
আয়োজক শিক্ষকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সমন্বয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও মন্ত্রীর কয়েকজন আস্থাভাজন শিক্ষকনেতার উদ্যোগে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান সফল করতে উপজেলার ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষকদের সেখানে যেতে বলা হয়। ওই অনুষ্ঠানের আগে ডুমুরিয়া সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুটুদিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, 'শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে আমার ছেলে জানিয়েছে। এর আগেও গত ২৬ এপ্রিল স্কুল বন্ধ ছিল। ওই সময় পরীক্ষা চলছিল।' ওই অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে সাজিয়াড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র। এ প্রসঙ্গে মিকশিমিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ গাজী বলেন, 'বছরে প্রধান শিক্ষকের তিন দিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সেভাবে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠানে এসেছি।' পূর্ব শোভনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আনিছুর রহমান বলেন, 'উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের পরামর্শে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়েছি।' স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া সদরের মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, 'সংরক্ষিত ছুটি দেওয়া হয়েছে।' তবে ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, 'স্কুলে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর এক ভাতিজার উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রীর এ অনুষ্ঠানে যোগ না দিলে বিপদে পড়তে হতো বলে তাঁরা দাবি করেন। জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, 'শনিবার স্কুলের দিন হলেও প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি থেকে বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষক সমিতি থাকলেও কতিপয় প্রভাবশালী নেতার উদ্যোগে সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।' তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর বিদ্যালয় বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এটি ছুটির দিন বা বিকেলে হতে পারত। একে তো বিভিন্ন কারণে বছরের ছয় মাসের বেশি স্কুল বন্ধ থাকে; সেখানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে স্কুল বন্ধ রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি করায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হবে।'
>>প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, 'শিক্ষক নেতারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। যেহেতু শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি পক্ষ রয়েছে, সে কারণে আমাকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক নেতারা।' অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষকদের হাজিরা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেওয়া হয়েছে।' রুপার নৌকা দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, 'শিক্ষকেরা নিজেরা অর্থ দিয়ে সাড়ে ছয় ভরি রুপা দিয়ে এটি তৈরি করেছেন।' ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামছুদ্দৌজা বলেন, 'বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে এ ধরনের আয়োজন করা ঠিক হয়নি। তবে আমি জানতে চাইলে, তাঁরা জানান তাঁদের ঐচ্ছিক ছুটি থেকে এই ছুটি নিয়েছেন। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।'
>>খুলনার ডুমুরিয়ায় উপজেলা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে রুপার নৌকা উপহার দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
আয়োজক শিক্ষকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সমন্বয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও মন্ত্রীর কয়েকজন আস্থাভাজন শিক্ষকনেতার উদ্যোগে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান সফল করতে উপজেলার ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষকদের সেখানে যেতে বলা হয়। ওই অনুষ্ঠানের আগে ডুমুরিয়া সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুটুদিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, 'শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে আমার ছেলে জানিয়েছে। এর আগেও গত ২৬ এপ্রিল স্কুল বন্ধ ছিল। ওই সময় পরীক্ষা চলছিল।' ওই অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে সাজিয়াড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র। এ প্রসঙ্গে মিকশিমিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ গাজী বলেন, 'বছরে প্রধান শিক্ষকের তিন দিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সেভাবে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠানে এসেছি।' পূর্ব শোভনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আনিছুর রহমান বলেন, 'উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের পরামর্শে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়েছি।' স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া সদরের মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, 'সংরক্ষিত ছুটি দেওয়া হয়েছে।' তবে ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, 'স্কুলে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর এক ভাতিজার উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রীর এ অনুষ্ঠানে যোগ না দিলে বিপদে পড়তে হতো বলে তাঁরা দাবি করেন। জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, 'শনিবার স্কুলের দিন হলেও প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি থেকে বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষক সমিতি থাকলেও কতিপয় প্রভাবশালী নেতার উদ্যোগে সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।' তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর বিদ্যালয় বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এটি ছুটির দিন বা বিকেলে হতে পারত। একে তো বিভিন্ন কারণে বছরের ছয় মাসের বেশি স্কুল বন্ধ থাকে; সেখানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে স্কুল বন্ধ রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি করায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হবে।'
>>প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, 'শিক্ষক নেতারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। যেহেতু শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি পক্ষ রয়েছে, সে কারণে আমাকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক নেতারা।' অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষকদের হাজিরা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেওয়া হয়েছে।' রুপার নৌকা দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, 'শিক্ষকেরা নিজেরা অর্থ দিয়ে সাড়ে ছয় ভরি রুপা দিয়ে এটি তৈরি করেছেন।' ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামছুদ্দৌজা বলেন, 'বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে এ ধরনের আয়োজন করা ঠিক হয়নি। তবে আমি জানতে চাইলে, তাঁরা জানান তাঁদের ঐচ্ছিক ছুটি থেকে এই ছুটি নিয়েছেন। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।'
No comments