পশ্চিমাদের শ্যেন দৃষ্টি ড. ইউনূসের চীন সফরে: মোদির সঙ্গে দেখা হতে পারে ব্যাংককে
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ২রা থেকে ৪ঠা এপ্রিল এই সম্মেলনের ফাঁকে প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারপ্রধানের একান্ত বৈঠক হবে কিনা? তা নিয়ে অন্তহীন কৌতূহল কূটনৈতিক অঙ্গনে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অবশ্য দুই সরকার প্রধানের বৈঠকের সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করে দিয়েছে। তবে কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে বলেছে, শেষ মুহূর্তে বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে সোফা সেট ফর্মে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের একটি সম্ভাবনা এখনো সমুজ্জ্বল। নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের জন্য ঢাকা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন ও থাইল্যান্ড সফর প্রস্তুতির আপডেট জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা বলতে পারি যে, এই বৈঠকের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। ভারতের দিক থেকে একটা ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
তিনি বলেন, যেকোনো দেশের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক, সেই বৈঠক আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠকটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং আমরা আশা করছি- এই বৈঠকটি যদি অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে সৃষ্ট স্থবিরতা, সেটি কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। স্মরণ করা যায়, বঙ্গোপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক চেয়ে গত সপ্তাহে কূটনৈতিক পত্র পাঠায় বাংলাদেশ। তবে এখনো দিল্লির কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি ঢাকা। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর নয়াদিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের একটি বৈঠকে চলতি সপ্তাহে বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক আয়োজনে বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে।
চীন সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ:
সব কিছু ঠিক থাকলে ২৬শে মার্চ ঐতিহাসিক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানাদি সেরে চীনের একটি স্পেশাল ফ্লাইটে দেশটির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনুষ্ঠেয় প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য চীনকে পছন্দ করা বা চীনের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনার গত সাড়ে ১৫ বছর একতরফাভাবে নয়াদিল্লির দিকেই ঝুঁকে ছিল বাংলাদেশ। বিদ্যমান পরবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কতোটা চীনের দিকে হেলে পড়ে তা নিয়ে চিন্তিত ভারত এবং পশ্চিমা বন্ধুরা। ওই সফরকে সামনে রেখে বাংলাদেশের তরফে সামগ্রিক রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে। চীন সফরটি সম্পর্কের জন্য মাইলফলক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ’৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় চীন। সে হিসেবে এ বছর দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হবে। সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছরে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্বের সফরে অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোই অগ্রাধিকার থাকছে বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা।
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা শেষে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পাশাপাশি সহযোগিতার কয়েকটি বিষয়ে ঘোষণা আসার কথা রয়েছে।
ওই বৈঠকে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ভূরাজনীতিসহ সামগ্রিক নানা প্রসঙ্গ গুরুত্ব পেতে পারে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিক্ষা খাতে সহযোগিতা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিল্পকারখানা স্থানান্তর, আকাশপথে সংযুক্তি, অতীতে ঘোষিত প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় ত্বরান্বিত করার বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার থাকতে পারে। একই সঙ্গে সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকের পর একই দিনে চীনের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী সংলাপে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর আলাদা তিনটি ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
No comments