তিন মিয়া কোথায় নানা প্রশ্ন by শামীমুল হক ও নূরুল ইসলাম মনি
বাহুবল
ট্র্যাজেডির আলোচিত নাম সিএনজিচালক বাচ্চু মিয়া। লাশ উদ্ধারের পর থেকে
তিনি নিখোঁজ। একদিন পর থেকে নিখোঁজ তার দুই ভাই বাবুল ও উস্তার মিয়াও।
পরিবার বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বলছে-এমন ঘটনা তাদের জানা নেই। একসঙ্গে তিন ভাইয়ের নিখোঁজ নিয়ে নানা প্রশ্ন
সর্বত্র। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা রহস্যও। এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের
ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেছেন, বাচ্চু বা তার দুই ভাই আমাদের
কাছে নেই। তাদের ধরতে গতরাতেও অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত
রয়েছে। ডিআইজি বলেন, এক্ষেত্রে বাচ্চুর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আমাদের কাজে
দিতো। বাহুবল মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন পিপিএম বলেছেন, তাদের খুঁজতে
আমরা কাজ করছি। এব্যাপারে প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছি। আবার কেউ কেউ বলছেন,
তারা র্যাবের কাছে রয়েছে। আসলে তারা কোথায়? নিজেরাই আত্মগোপনে রয়েছেন নাকি
এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের নিয়ে খেলছে? এ প্রশ্নও গ্রামের কেউ কেউ
তুলেছেন। বাচ্চু মিয়ার সিএনজি অটোরিকশাতেই ওই চার শিশুকে অপহরণ করা হয়। এ
ঘটনার নির্দেশদাতা আবদুল আলী বাগালের ডান হাত বলে পরিচিত এই বাচ্চু।
বাগালের দুই পুত্র রুবেল ও জুয়েল আদালতে দেয়া তাদের জবানবন্দিতে অপহরণ ও
হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতার কথা অকপটে বলেছে। বাচ্চুর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহারের
কথাও বলেছে। কিন্তু কোথায় সে বাচ্চু ও তার দু’ভাই। পরিবার থেকে বলা হয়েছে,
তারা আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তাদের কোনো খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে
না। মোবাইল ফোনও বন্ধ। গ্রামবাসী বলেছেন, এই বাচ্চুকে পেলেই পাওয়া যেত আসল
রহস্য।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু জাকারিয়া শুভ, ইসমাঈল, তাজেল ও মনিরদের বাড়ি থেকে দেখা যায় বাচ্চুদের বাড়ি। বাচ্চুর বাড়ি পেরিয়েই যেতে হয় তাদের বাড়িতে। সরজমিন সুন্দ্রাটিকি গ্রামে গেলে তালুকদার পঞ্চায়েতের প্রধান আবদুল খালেক তালুকদার বলেন, গত ৪ঠা জানুয়ারি রশিদপুর বাজারে আমার ভাতিজা কাজলের ওপর হামলা করে আবদুল আলী বাগালের লোকজন। বরই গাছের ডাল কাটার জের ধরেই এ হামলা হয়। পরে গ্রামবাসী এক হয়ে বলেন, বাজারে হামলা এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা অন্যায়। এর প্রতিবাদ করতে হবে। পরদিন ৫ই জানুয়ারি গ্রামের লোকজন বাজারে গেলে আবদুল আলী বাগালের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বাচ্চুর ভাই উস্তার মিয়া আহত হন। এরপর থেকে বাচ্চু মিয়ারা আমাদের ‘দেখে নেবে’ বলে হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু আমাদের এতবড় ক্ষতি করবে কখনো ভাবিনি। আবদুল আলী বাগালের সঙ্গে মিশে ওরা আমার বংশ নির্বংশ করতে শিশুদের হত্যা করেছে। ওদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু জাকারিয়া শুভর পিতা ওয়াহিদ মিয়া বলেন, প্রকাশ্যে বাচ্চুর সিএনজিতে করে ওদের চার জনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনা গ্রামের আহাদ দেখেছে। এ কথা তাকে জিজ্ঞেস করার পর জানায়, এই শিশুদের নয়, অন্য শিশুদের সে এনেছিল। শুক্রবার অপহরণের পর থেকে সে বাড়িতেই ছিল। কোথাও তেমন একটা যেতে দেখা যায়নি। বুধবার লাশ উদ্ধারের পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এটা রহস্যজনক। গতকাল বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা যায় বউ-ঝিরা আতঙ্কিত। বাড়িতে প্রবেশ মুখে ভাঙা একটি ঘর। এ ঘরে কিছু বালি রাখা হয়েছে। এটাকেই গ্যারেজ হিসেবে বলা হচ্ছে। আসলে গ্যারেজ বলতে বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে কিছু নেই। পশ্চিম পাশে একটি একতলা ভবন। ওই ভবনে গেলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন বাচ্চুর মা আয়েশা খাতুন। সত্তরোর্ধ্ব এ বৃদ্ধা বলেন, ‘বাবারে আমার তিন পোলাই নিখোঁজ। তাদের তোমরা খুঁইজ্জা দেও। তিনি বলেন, আমার পুলা এমন কাজ করতে পারে না। বুধবার সন্ধ্যায় বাচ্চু বাড়িতেই ছিল। এ সময় ২ জন লোক আসে বাড়িতে। একজন এসে বাচ্চুকে বলে ‘তোমাকে স্যার ডাকে’। বাচ্চু বেরিয়ে যায়। পেছনে পেছনে আমিও যাই। মসজিদের কাছে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল। ওই মোটরসাইকেলে করে আমার বাচ্চুরে নিয়ে গেছে। আমি চিৎকার করে বলেছি, আমার ছেলেরে তোমরা কোথায় নিয়ে যাও? আমারে বলে যাও। তারা শুধু বলেছে ‘আমরা প্রশাসনের লোক।’ এরপর থেকে আমার ছেলের কোনো সন্ধান নেই। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, বাচ্চু যদি কোনো অন্যায় অপরাধ করে তাহলে তার বিচার হউক, ফাঁসি হউক। কিন্তু এভাবে নিখোঁজ রাখলে তার সন্তানরা বড় হয়ে তাদের বাবা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না। তিনি বলেন, টিভিতে সবাইরে দেখায়, আমার যাদুরে দেখায় না। কই গেলিরে আমার যাদু। মরার আগে বুঝি তর চেহারা আমি দেখতাম না। বাচ্চুর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে নাজমুল মাদরাসায় পড়ে। মেয়ে দুটি ছোট। একজন সাদিয়া বয়স ৪ বছর। অন্যজন নাদিয়া। বয়স ৩ বছর। বাচ্চুর মা আয়েশা বলেন, পরদিন বৃহস্পতিবার আমার অন্য দুই ছেলে বাবুল ও উস্তার আত্মসমর্পণ করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আজ পর্যন্ত তাদেরও কোনো খোঁজ পাইনি। আমি আমার সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই। ওদের শাস্তি দিন। তারপরও আমাদের জানতে দিন আমার সন্তানরা আপনাদের হেফাজতে আছে। বাচ্চুর স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, নিহত শিশু শুভর পিতা যখন শুক্রবার ফোন করে জানতে চান তার সিএনজিতে করে শুভদের আনা হয়েছে কিনা- এরপর থেকে আমার স্বামী বাচ্চু একেবারে মনমরা হয়ে গেছে। শুধু কাঁদতেন। রোববার আবদুল আলী বাগালের ছেলে রুবেল এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে। বলেছে, আব্বা বলেছে, লেপ-তোষক নিয়া প্রয়োজনে জেলখানায় থাকুম। চিন্তা কইরো না। এখন শুনতাছি ওরা জবানবন্দি দিছে তার গাড়ি দিয়া নিহত চার শিশুকে আনা হয়েছে। ওইদিন বাহুবল থেকে আসার পথে আমার ছেলে নাজমুল, ভাগিনা ছায়েদ ও মুহাদ্দেসরে উঠাইয়া আনছে। সিএনজির পেছনে ৪ জন মহিলা ছিল। তাই ওদের সামনে করে নিয়ে এসেছে। গ্রামের ওয়াহিদ ফোন করে এব্যাপারে জানতে চাইলে বাচ্চু বলেছে এসব কথা। তারপরও তারা বিশ্বাস করেনি। এছাড়া সন্ধ্যার পর ওই বাড়ি থেকে ফুলবানু ও আলাবানু এসে আমাদের বাড়িতে দেখে গেছে ছেলেরা আছে কিনা। তারপরও আমাদের কেন সন্দেহ করা হচ্ছে বলতে পারছি না। বাবুলের স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, বুধবার থেকে আমাদের বাড়িতে খাবার বন্ধ। বৃহস্পতিবার বাবুল ও উস্তার ভাই হবিগঞ্জে আত্মসমর্পণ করার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ নেই। কোথায় আছে তারা তাও জানি না। পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। ওদের সব ছবি নিয়ে গেছে। তিনটি সিএনজি গাড়ি নিয়ে গেছে। এছাড়া, রুবেল ও জুয়েল জবানবন্দিতে বলেছে, আমাদের গ্যারেজে এনে রাখা হয়। অথচ নিজ চোখে দেখে যান আমাদের বাড়িতে কোনো গ্যারেজ আছে কিনা? আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলেরা আমার স্বামী ও তার ভাইদের ফাঁসাতে চাইছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আপনাদের কাছে থাকলে প্রকাশ করুন। অন্তত আমরা জানতে পারবো তারা আপনাদের হেফাজতে আছে। দোষী হলে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করুন।
ওদিকে নিহত মনিরের পিতা আবদাল মিয়া বলেছেন, আমাদের বাড়ির সবাই কোথাও যেতে হলে বাচ্চুর সিএনজি অটোরিকশায় যেতো। আমাদের ছেলেমেয়েরাও বাচ্চুর সঙ্গে পরিচিত। তাই রাস্তায় পেয়ে যখন বাচ্চু তাদের ডেকেছে তারা সহজেই ওই সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে গেছে। তারপর সুযোগ বুঝে তাদের কাজ শেষ করেছে। ওরা পাষণ্ড। ওদের ফাঁসি চাই। আজ ঘরে গেলে শুনতে পাই আমার মনির ‘বাবা’ বলে ডাকছে। তিনি বলেন, বাচ্চুকে পেলেই আসল ঘটনা জানা যাবে। কারা কিভাবে অপহরণ করেছে। কোথায়, কখন মারা হয়েছে- সবই বাচ্চু জানে। আমরাও বাচ্চু ও তার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু জাকারিয়া শুভ, ইসমাঈল, তাজেল ও মনিরদের বাড়ি থেকে দেখা যায় বাচ্চুদের বাড়ি। বাচ্চুর বাড়ি পেরিয়েই যেতে হয় তাদের বাড়িতে। সরজমিন সুন্দ্রাটিকি গ্রামে গেলে তালুকদার পঞ্চায়েতের প্রধান আবদুল খালেক তালুকদার বলেন, গত ৪ঠা জানুয়ারি রশিদপুর বাজারে আমার ভাতিজা কাজলের ওপর হামলা করে আবদুল আলী বাগালের লোকজন। বরই গাছের ডাল কাটার জের ধরেই এ হামলা হয়। পরে গ্রামবাসী এক হয়ে বলেন, বাজারে হামলা এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা অন্যায়। এর প্রতিবাদ করতে হবে। পরদিন ৫ই জানুয়ারি গ্রামের লোকজন বাজারে গেলে আবদুল আলী বাগালের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বাচ্চুর ভাই উস্তার মিয়া আহত হন। এরপর থেকে বাচ্চু মিয়ারা আমাদের ‘দেখে নেবে’ বলে হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু আমাদের এতবড় ক্ষতি করবে কখনো ভাবিনি। আবদুল আলী বাগালের সঙ্গে মিশে ওরা আমার বংশ নির্বংশ করতে শিশুদের হত্যা করেছে। ওদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু জাকারিয়া শুভর পিতা ওয়াহিদ মিয়া বলেন, প্রকাশ্যে বাচ্চুর সিএনজিতে করে ওদের চার জনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনা গ্রামের আহাদ দেখেছে। এ কথা তাকে জিজ্ঞেস করার পর জানায়, এই শিশুদের নয়, অন্য শিশুদের সে এনেছিল। শুক্রবার অপহরণের পর থেকে সে বাড়িতেই ছিল। কোথাও তেমন একটা যেতে দেখা যায়নি। বুধবার লাশ উদ্ধারের পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এটা রহস্যজনক। গতকাল বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা যায় বউ-ঝিরা আতঙ্কিত। বাড়িতে প্রবেশ মুখে ভাঙা একটি ঘর। এ ঘরে কিছু বালি রাখা হয়েছে। এটাকেই গ্যারেজ হিসেবে বলা হচ্ছে। আসলে গ্যারেজ বলতে বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে কিছু নেই। পশ্চিম পাশে একটি একতলা ভবন। ওই ভবনে গেলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন বাচ্চুর মা আয়েশা খাতুন। সত্তরোর্ধ্ব এ বৃদ্ধা বলেন, ‘বাবারে আমার তিন পোলাই নিখোঁজ। তাদের তোমরা খুঁইজ্জা দেও। তিনি বলেন, আমার পুলা এমন কাজ করতে পারে না। বুধবার সন্ধ্যায় বাচ্চু বাড়িতেই ছিল। এ সময় ২ জন লোক আসে বাড়িতে। একজন এসে বাচ্চুকে বলে ‘তোমাকে স্যার ডাকে’। বাচ্চু বেরিয়ে যায়। পেছনে পেছনে আমিও যাই। মসজিদের কাছে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল। ওই মোটরসাইকেলে করে আমার বাচ্চুরে নিয়ে গেছে। আমি চিৎকার করে বলেছি, আমার ছেলেরে তোমরা কোথায় নিয়ে যাও? আমারে বলে যাও। তারা শুধু বলেছে ‘আমরা প্রশাসনের লোক।’ এরপর থেকে আমার ছেলের কোনো সন্ধান নেই। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, বাচ্চু যদি কোনো অন্যায় অপরাধ করে তাহলে তার বিচার হউক, ফাঁসি হউক। কিন্তু এভাবে নিখোঁজ রাখলে তার সন্তানরা বড় হয়ে তাদের বাবা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না। তিনি বলেন, টিভিতে সবাইরে দেখায়, আমার যাদুরে দেখায় না। কই গেলিরে আমার যাদু। মরার আগে বুঝি তর চেহারা আমি দেখতাম না। বাচ্চুর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে নাজমুল মাদরাসায় পড়ে। মেয়ে দুটি ছোট। একজন সাদিয়া বয়স ৪ বছর। অন্যজন নাদিয়া। বয়স ৩ বছর। বাচ্চুর মা আয়েশা বলেন, পরদিন বৃহস্পতিবার আমার অন্য দুই ছেলে বাবুল ও উস্তার আত্মসমর্পণ করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আজ পর্যন্ত তাদেরও কোনো খোঁজ পাইনি। আমি আমার সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই। ওদের শাস্তি দিন। তারপরও আমাদের জানতে দিন আমার সন্তানরা আপনাদের হেফাজতে আছে। বাচ্চুর স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, নিহত শিশু শুভর পিতা যখন শুক্রবার ফোন করে জানতে চান তার সিএনজিতে করে শুভদের আনা হয়েছে কিনা- এরপর থেকে আমার স্বামী বাচ্চু একেবারে মনমরা হয়ে গেছে। শুধু কাঁদতেন। রোববার আবদুল আলী বাগালের ছেলে রুবেল এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে। বলেছে, আব্বা বলেছে, লেপ-তোষক নিয়া প্রয়োজনে জেলখানায় থাকুম। চিন্তা কইরো না। এখন শুনতাছি ওরা জবানবন্দি দিছে তার গাড়ি দিয়া নিহত চার শিশুকে আনা হয়েছে। ওইদিন বাহুবল থেকে আসার পথে আমার ছেলে নাজমুল, ভাগিনা ছায়েদ ও মুহাদ্দেসরে উঠাইয়া আনছে। সিএনজির পেছনে ৪ জন মহিলা ছিল। তাই ওদের সামনে করে নিয়ে এসেছে। গ্রামের ওয়াহিদ ফোন করে এব্যাপারে জানতে চাইলে বাচ্চু বলেছে এসব কথা। তারপরও তারা বিশ্বাস করেনি। এছাড়া সন্ধ্যার পর ওই বাড়ি থেকে ফুলবানু ও আলাবানু এসে আমাদের বাড়িতে দেখে গেছে ছেলেরা আছে কিনা। তারপরও আমাদের কেন সন্দেহ করা হচ্ছে বলতে পারছি না। বাবুলের স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, বুধবার থেকে আমাদের বাড়িতে খাবার বন্ধ। বৃহস্পতিবার বাবুল ও উস্তার ভাই হবিগঞ্জে আত্মসমর্পণ করার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ নেই। কোথায় আছে তারা তাও জানি না। পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। ওদের সব ছবি নিয়ে গেছে। তিনটি সিএনজি গাড়ি নিয়ে গেছে। এছাড়া, রুবেল ও জুয়েল জবানবন্দিতে বলেছে, আমাদের গ্যারেজে এনে রাখা হয়। অথচ নিজ চোখে দেখে যান আমাদের বাড়িতে কোনো গ্যারেজ আছে কিনা? আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলেরা আমার স্বামী ও তার ভাইদের ফাঁসাতে চাইছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আপনাদের কাছে থাকলে প্রকাশ করুন। অন্তত আমরা জানতে পারবো তারা আপনাদের হেফাজতে আছে। দোষী হলে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করুন।
ওদিকে নিহত মনিরের পিতা আবদাল মিয়া বলেছেন, আমাদের বাড়ির সবাই কোথাও যেতে হলে বাচ্চুর সিএনজি অটোরিকশায় যেতো। আমাদের ছেলেমেয়েরাও বাচ্চুর সঙ্গে পরিচিত। তাই রাস্তায় পেয়ে যখন বাচ্চু তাদের ডেকেছে তারা সহজেই ওই সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে গেছে। তারপর সুযোগ বুঝে তাদের কাজ শেষ করেছে। ওরা পাষণ্ড। ওদের ফাঁসি চাই। আজ ঘরে গেলে শুনতে পাই আমার মনির ‘বাবা’ বলে ডাকছে। তিনি বলেন, বাচ্চুকে পেলেই আসল ঘটনা জানা যাবে। কারা কিভাবে অপহরণ করেছে। কোথায়, কখন মারা হয়েছে- সবই বাচ্চু জানে। আমরাও বাচ্চু ও তার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।
No comments