আইএসের বিরুদ্ধে বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ
প্যারিসে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গোটা বিশ্ব। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই-ই প্রধান গুরুত্ব পেয়েছে জি-২০ সম্মেলনে। আইএস ও শরণার্থী সংকট নিয়ে বিশ্বনেতাদের ঘুম হারাম। রোববার তুরস্কে শুরু হওয়া ওই সম্মেলনে যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনসহ বিশ্বনেতারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ সম্মেলনে যোগ দেননি। প্যারিস হামলার জাতীয় শোক পালন করছেন তিনি। শুক্রবার রাতের ওই সিরিজ হামলায় ১২৯ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহত হয়েছে। ৯৯ জন গুরুতর আহত। খবর এএফপি ও গার্ডিয়ানের। প্যারিস হামলাসহ গত মাসে তুরস্কের আÍঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়ে বারাক ওবামা একে ‘বিশ্বসভ্যতার ওপর হামলা’ বলে অভিহিত করেন। এ সময় তিনি আইএসবিরোধী অভিযান দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান। ওবামা বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। হামলাকারীদের আমরা বিচারের মুখোমুখি করবোই।’ এবারের জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে আলোচনা শেষে এসব কথা বলেন তিনি। এরদোগান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অবস্থান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। জি-২০ সম্মেলনে আমরা সন্ত্রাসীদের কঠিন বার্তা দেব।’ তুরস্কের আটলান্টিয়ায় জি-২০ সম্মেলন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে তুরস্কতেও এদিন আÍঘাতী বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চার পুলিশ কর্মী।
তারপর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আটলান্টিয়া রিসর্টে জি-২০ সম্মেলন শুরু হয়। এদিকে ইরাক-সিরিয়ায় শরণার্থী স্রোত ইউরোপের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে শরণার্থী গ্রহণে এখন দোটানায় পড়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে শরণার্থী নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে ইইউ প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার সতর্ক করে বলেন, প্যারিসে হামলাকারীর সঙ্গে শরণার্থীদের গুলিয়ে ফেললে হবে না। শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী ওই হামলায় জড়িত নয়। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানোর দাবি তোলার পাশাপাশি শরণার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জি-২০ সম্মেলন। সেই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর পুনর্বিবেচনা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নতি ও বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে আলোচনাই ছিল এবারের সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য। সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়েও আলোচনা ছিল সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে। কিন্তু ফ্রান্সের রাজধানী শহরে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার কারণে ২০১৫ সালের জি-২০ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ‘সন্ত্রাসবাদ দমন’ বা ‘আইএস’ দমন। এদিকে প্যারিসের ভয়াবহ হামলার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মনে করছেন, জঙ্গি হামলার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তার দেশও। যেসব ব্রিটিশ নাগরিক অবকাশ যাপনে প্যারিসে গেছেন তাদের নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ব্রিটেনের বিমানবন্দর এবং ফেরি টার্মিনালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শও দিয়েছেন ক্যামেরন। শনিবার এই বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্যারিসে ভয়াবহ এই হামলা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যও হামলার ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। ক্যামেরন তার দেশের নাগরিকদের ‘সতর্ক’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে এটিও স্পষ্ট করেছেন, সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, আতংকিত বা হুমকি দেয়া হয়নি। সেই সঙ্গে কথিত ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং এর মতাদর্শকে ধ্বংস করা হবে বলে ঘোষণা দেন। আজ (সোমবার) তুরস্কে জি২০ সামিট সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের সঙ্গে সারাবিশ্বে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, প্যারিস হামলা সত্ত্বেও সিরিয়াতে আইএসবিরোধী অভিযান থেকে পিছু হটবে না ব্রিটেন। উল্লেখ্য, শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জঙ্গি হামলায় শতাধিক লোক প্রাণ হারায়। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এ হামলায় ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে আইএস ফ্রান্সের বাইরে থেকে হামলা চালিয়েছে, নাকি ভেতর থেকে করা হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া যায়নি। এ হামলায় কমপক্ষে আটজন হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি প্যারিস পুলিশের। জঙ্গিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ এবং জনবহুল স্থানগুলো। জার্মানি-ফ্রান্স ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামের খুব কাছেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
No comments