ক্ষমার আবেদন নিয়ে ধূম্রজাল
বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি
নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষমার আবেদন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল দুপুরের পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করেছেন। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের পক্ষ থেকে তা সরাসরি অস্বীকার করা হয়।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বলেন, ক্ষমার আবেদন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক এবং বিভ্রান্তিকর।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরীও বলেন, বাবা ক্ষমার আবেদন করবেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর তারা যখন তার সাথে দেখা করতে যান তখন তিনি তাদের জানিয়েছেন তিনি ক্ষমার আবেদন করবেন না। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী এবং আরেক ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও জানিয়েছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
এ দিকে গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে ক্ষমার আবেদনবিষয়ক খবর প্রচার করা হলেও কারাকর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ ধরনের খবর প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। ক্ষমার আবেদন নিয়ে আইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যও গণমাধ্যমে ভিন্নভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
এ দিকে গতকাল দিনের বেলায় আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা কারাগারে তাদের সাথে দেখা করতে চেয়ে অনুমতি পাননি। বিশেষ করে ক্ষমার আবেদনবিষয়ক খবর প্রচারের পর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দেখা করার চেষ্টা করা হয়।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল একটি চিঠি নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে। কিন্তু তাদের চিঠি গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার নিয়ে যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো তুলে ধরে এবং জমা দেয়া ডকুমেন্ট বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন তারা।
ক্ষমার আবেদন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য : গতকাল সাড়ে বেলা ৩টার দিকে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ক্ষমার আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য। সূত্রটি জানায়, আবেদন দুইটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া হয়েছে।
সেখান থেকে আবেদন দুইটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, আবেদন দুইটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে এলে আজই (শনিবার) তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। ‘এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে’।
বিকেল সাড়ে ৫টায় বিবিসির আরেক খবরে বলা হয় ক্ষমার আবেদন প্রাথমিক যাচাই বাছাই শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অপর দিকে দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইনে গতকাল দুপুরের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্ধৃত করে বলা হয় ‘আমি জেনেছি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ক্ষমার আবেদন করেছেন। তবে এখনো তা আমার কাছে আসেনি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেলা ৩টার দিকে বলেন, ‘আমিও বিষয়টি শুনেছি। যেহেতু আমি বাসায়, এ ব্যাপারটা এখনো নিশ্চিত নই।’
এরপর বেলা পৌনে ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ক্ষমার আবেদন তার হাতে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন এটি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আরেকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় বেলা আড়াইটার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমার আবেদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। কারাকর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
ক্ষমার আবেদন অস্বীকার পরিবারের : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেছেন, ক্ষমার আবেদন বিষয়ে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক, উদ্দেশ্যমূলক ও দুঃখজনক। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। আমাদের সাথে ও আইনজীবীর সাথে কথা না বলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানাবেন নাÑ এটিই আমরা জানি।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘হুম্মাম কাদের চৌধুরী (আরেক ছেলে) আজ শনিবার রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কার্যালয় সেটি গ্রহণ করেনি। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার বাবা মার্সি পিটিশন করেছেন। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। আমাদের এটি বিশ্বাস হয় না। আমরা যখন দুই দিন আগে তার সাথে দেখা করেছিলাম, তখন তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন আইনজীবীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু আইনজীবীদের তার সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তাই আমরা দেখা করে তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী সেটি জানতে এসেছি।’
তবে দেখা করার অনুমতি না পেয়ে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ফিরে যান তারা। ৫টা ১০ মিনিটের দিকে একটি গাড়িতে করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী, মেয়ে ও অন্যরা আসেন। আরেকটি গাড়িতে করে চৌধুরীর দুই ছেলে ও মেয়ের জামাই জাফর খান আসেন।
চৌধুরীর স্ত্রী ও সন্তানেরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
জামায়াতের অস্বীকার : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ক্ষমা চাননি বলে দাবি করেছে তার দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানান দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে কারা অধিদফতরের বরাত দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করেছেন। প্রচারিত এ খবরটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকালে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তিনি পরিবারের কাছে ক্ষমার আবেদন বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যেও জানানো হয়েছে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আইনজীবীদের সাথে পরবর্তী আইনি বিষয়ে পরামর্শ করতে চান।’
তিনি বলেন, ‘আইনজীবীরা মুজাহিদের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কারা কর্তৃপক্ষ মুজাহিদের ইচ্ছানুযায়ী এখনো আইনজীবীদের সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার যে খবর প্রচারিত হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে মুজাহিদের সাথে আইনজীবীদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। সেই সাথে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’
দেখা পাননি আইনজীবী : সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে তাদের আইনজীবীকে গতকালও দেখা করার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মুজাহিদের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, গণমাধ্যমে মুজাহিদের ক্ষমার আবেদনের খবর পেয়েছেন তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি সঠিক কি না, তা জানতে তাকে মুজাহিদের সাথে দেখা করতে বলেছেন। তাই তিনি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ সদস্যের আইনজীবীর একটি প্রতিনিধিদলের দেখা করার আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। এর আগে গত শুক্রবারও তারা দেখা করার অনুমতি পাননি।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আল ফেসানীও গতকাল কারাগারে যান দেখা করার জন্য। বেলা দেড়টার দিকে গণমাধ্যমে ক্ষমার আবেদনের খবর পেয়ে তার পরিবার তাকে ও আরেক আইনজীবীকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দেখা করার আবেদন করতে পাঠান। তারা নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের দেখা করার অনুমতি চেয়ে দু’টি আবেদন করেন।
এ ছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ বিকেল ৫টায় কারাগারের সামনে আসেন। তিনি বলেন, ‘মার্সি পিটিশন নিয়ে একটি কনফিউশন সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা কী, তা জানতে আমাদের আইনজীবীরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। এ জন্য এসেছি।’
আবেদন গ্রহণ করেনি বঙ্গভবন : ত্রুটিপূর্ণ বিচার (মিস ট্রায়েল) বিবেচনার আবেদন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে গেলেও আবেদনপত্র জমা দিতে পারেননি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
বঙ্গভবন থেকে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান তিনি।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, এখান থেকে আমাকে বলা হয়েছে সরাসরি কোনো চিঠি জমা নেয়া হয় না। তাই এটি মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে সেখান থেকে তা ফরওয়ার্ড হবে। আমার ধারণা, এটি আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।
চিঠি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে ডকুমেন্টগুলো জমা দিয়েছিলেন, সেগুলো ভেরিফাই করে বিচার করার জন্য আমরা একটা আবেদন করেছি। সেই কপিটাই এখানে দিতে এসেছিলাম।’
বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে গাড়ি নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছান তিনি। গাড়িটি বাইরে রেখে হেঁটেই ৪টা ২৮ মিনিটে বঙ্গভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরীকে গাড়িতে বসে থাকতে দেখা যায়।
বঙ্গভবনে ঢোকার সময় হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এটি একটি মিস ট্রায়ালের আবেদন। রাষ্ট্রপতি যেহেতু সংবিধানের অভিভাবক এ জন্য আমরা তার কাছে পুনর্বিচারের আবেদন করছি।’
গতকাল দুপুরের পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করেছেন। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের পক্ষ থেকে তা সরাসরি অস্বীকার করা হয়।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বলেন, ক্ষমার আবেদন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক এবং বিভ্রান্তিকর।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরীও বলেন, বাবা ক্ষমার আবেদন করবেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর তারা যখন তার সাথে দেখা করতে যান তখন তিনি তাদের জানিয়েছেন তিনি ক্ষমার আবেদন করবেন না। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী এবং আরেক ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও জানিয়েছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
এ দিকে গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে ক্ষমার আবেদনবিষয়ক খবর প্রচার করা হলেও কারাকর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ ধরনের খবর প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। ক্ষমার আবেদন নিয়ে আইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যও গণমাধ্যমে ভিন্নভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
এ দিকে গতকাল দিনের বেলায় আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা কারাগারে তাদের সাথে দেখা করতে চেয়ে অনুমতি পাননি। বিশেষ করে ক্ষমার আবেদনবিষয়ক খবর প্রচারের পর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দেখা করার চেষ্টা করা হয়।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল একটি চিঠি নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে। কিন্তু তাদের চিঠি গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার নিয়ে যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো তুলে ধরে এবং জমা দেয়া ডকুমেন্ট বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন তারা।
ক্ষমার আবেদন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য : গতকাল সাড়ে বেলা ৩টার দিকে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ক্ষমার আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য। সূত্রটি জানায়, আবেদন দুইটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া হয়েছে।
সেখান থেকে আবেদন দুইটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, আবেদন দুইটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে এলে আজই (শনিবার) তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। ‘এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে’।
বিকেল সাড়ে ৫টায় বিবিসির আরেক খবরে বলা হয় ক্ষমার আবেদন প্রাথমিক যাচাই বাছাই শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অপর দিকে দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইনে গতকাল দুপুরের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্ধৃত করে বলা হয় ‘আমি জেনেছি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ক্ষমার আবেদন করেছেন। তবে এখনো তা আমার কাছে আসেনি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেলা ৩টার দিকে বলেন, ‘আমিও বিষয়টি শুনেছি। যেহেতু আমি বাসায়, এ ব্যাপারটা এখনো নিশ্চিত নই।’
এরপর বেলা পৌনে ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ক্ষমার আবেদন তার হাতে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন এটি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আরেকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় বেলা আড়াইটার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমার আবেদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। কারাকর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
ক্ষমার আবেদন অস্বীকার পরিবারের : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেছেন, ক্ষমার আবেদন বিষয়ে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক, উদ্দেশ্যমূলক ও দুঃখজনক। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। আমাদের সাথে ও আইনজীবীর সাথে কথা না বলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানাবেন নাÑ এটিই আমরা জানি।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘হুম্মাম কাদের চৌধুরী (আরেক ছেলে) আজ শনিবার রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কার্যালয় সেটি গ্রহণ করেনি। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার বাবা মার্সি পিটিশন করেছেন। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। আমাদের এটি বিশ্বাস হয় না। আমরা যখন দুই দিন আগে তার সাথে দেখা করেছিলাম, তখন তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন আইনজীবীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু আইনজীবীদের তার সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তাই আমরা দেখা করে তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী সেটি জানতে এসেছি।’
তবে দেখা করার অনুমতি না পেয়ে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ফিরে যান তারা। ৫টা ১০ মিনিটের দিকে একটি গাড়িতে করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী, মেয়ে ও অন্যরা আসেন। আরেকটি গাড়িতে করে চৌধুরীর দুই ছেলে ও মেয়ের জামাই জাফর খান আসেন।
চৌধুরীর স্ত্রী ও সন্তানেরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
জামায়াতের অস্বীকার : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ক্ষমা চাননি বলে দাবি করেছে তার দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানান দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে কারা অধিদফতরের বরাত দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করেছেন। প্রচারিত এ খবরটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকালে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তিনি পরিবারের কাছে ক্ষমার আবেদন বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যেও জানানো হয়েছে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আইনজীবীদের সাথে পরবর্তী আইনি বিষয়ে পরামর্শ করতে চান।’
তিনি বলেন, ‘আইনজীবীরা মুজাহিদের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কারা কর্তৃপক্ষ মুজাহিদের ইচ্ছানুযায়ী এখনো আইনজীবীদের সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার যে খবর প্রচারিত হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে মুজাহিদের সাথে আইনজীবীদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। সেই সাথে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’
দেখা পাননি আইনজীবী : সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে তাদের আইনজীবীকে গতকালও দেখা করার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মুজাহিদের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, গণমাধ্যমে মুজাহিদের ক্ষমার আবেদনের খবর পেয়েছেন তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি সঠিক কি না, তা জানতে তাকে মুজাহিদের সাথে দেখা করতে বলেছেন। তাই তিনি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ সদস্যের আইনজীবীর একটি প্রতিনিধিদলের দেখা করার আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। এর আগে গত শুক্রবারও তারা দেখা করার অনুমতি পাননি।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আল ফেসানীও গতকাল কারাগারে যান দেখা করার জন্য। বেলা দেড়টার দিকে গণমাধ্যমে ক্ষমার আবেদনের খবর পেয়ে তার পরিবার তাকে ও আরেক আইনজীবীকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দেখা করার আবেদন করতে পাঠান। তারা নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের দেখা করার অনুমতি চেয়ে দু’টি আবেদন করেন।
এ ছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ বিকেল ৫টায় কারাগারের সামনে আসেন। তিনি বলেন, ‘মার্সি পিটিশন নিয়ে একটি কনফিউশন সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা কী, তা জানতে আমাদের আইনজীবীরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। এ জন্য এসেছি।’
আবেদন গ্রহণ করেনি বঙ্গভবন : ত্রুটিপূর্ণ বিচার (মিস ট্রায়েল) বিবেচনার আবেদন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে গেলেও আবেদনপত্র জমা দিতে পারেননি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
বঙ্গভবন থেকে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান তিনি।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, এখান থেকে আমাকে বলা হয়েছে সরাসরি কোনো চিঠি জমা নেয়া হয় না। তাই এটি মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে সেখান থেকে তা ফরওয়ার্ড হবে। আমার ধারণা, এটি আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।
চিঠি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে ডকুমেন্টগুলো জমা দিয়েছিলেন, সেগুলো ভেরিফাই করে বিচার করার জন্য আমরা একটা আবেদন করেছি। সেই কপিটাই এখানে দিতে এসেছিলাম।’
বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে গাড়ি নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছান তিনি। গাড়িটি বাইরে রেখে হেঁটেই ৪টা ২৮ মিনিটে বঙ্গভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরীকে গাড়িতে বসে থাকতে দেখা যায়।
বঙ্গভবনে ঢোকার সময় হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এটি একটি মিস ট্রায়ালের আবেদন। রাষ্ট্রপতি যেহেতু সংবিধানের অভিভাবক এ জন্য আমরা তার কাছে পুনর্বিচারের আবেদন করছি।’
No comments