আজ কি আর কাজে মন টেকে? by মানসুরা হোসাইন
ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে । কিন্তু আজও রাজধানী ঢাকা ছিল অনেকটা ফাঁকা। প্রধান সড়কগুলোতেও গাড়ির চলাচল ছিল কম। ছবিটি আজ দুপুরে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম |
আজ
সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীতে কখনো ইলশে গুঁড়ি, আবার কখনো মুষলধারে
বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে চলা বৃষ্টির ফলে রাস্তাঘাটে ধুলোবালি নেই।
ঈদের পর আজ ছিল প্রথম কর্মদিবস। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে ঈদের পর ঢাকা
প্রায় ফাঁকাই বলা যায়। তাই যাদের ছুটি শেষ, তাঁরা অনেকটা বাধ্য হয়ে
অফিসমুখী হয়েছেন। তবে আজ কি আর অফিসে মন টেকে? পুরো রাজধানীতে চলছে ছুটির
আমেজ।
সরকারি, বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী
জানালেন, আজ অফিসে হাজিরা দিয়ে ঈদের কোলাকুলি, জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি নিয়ে
আলোচনা আর কার বাসায় কয় পদের রান্না হয়েছিল; তা বলতে বলতেই বাড়ি চলে
গেছেন।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চলছে লেনদেন। ছবি: মনিরুল আলম |
বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম
আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে পুরো অফিসেই লোকজন কম ছিল। যেসব বিভাগের বসেরা
ছুটিতে, তাঁদের আজ আর পায় কে? হাজিরা দিয়ে কিছুক্ষণ অফিসে কাটিয়ে দুপুরের
মধ্যে অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। যাঁরা
ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছেন, শুধু তাঁদের চেয়ারগুলো ফাঁকা। এবার ঈদের ছুটি
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় সরকারি কর্মজীবীদের মন খারাপ।
আবার, বৃহস্পতিবার যাঁরা ছুটি নিয়েছেন তাঁদের আজ অফিসে হাজিরা দেওয়া ছিল
বাধ্যতামূলক।
চলছে ঈদের কুশলবিনিময়। ছবিটি আজ সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: মনিরুল আলম |
ঈদের
ছুটির পর রাজধানী আস্তে আস্তে চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে। রাস্তায়
গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন সিগন্যালে আজ একটু বেশিক্ষণ করেই থামতে হচ্ছে
ঢাকাবাসীকে। তবে সিগন্যালগুলো বলতে গেলে ছিল অনেকাংশে ভিক্ষুকশূন্য।
দু-একজন বৃষ্টিতে ভিজে ভিক্ষা করছেন। যেসব রাস্তায় অন্য সময় রিকশা চলাচলে
নিষেধাজ্ঞা থাকে, সেসব রাস্তায় ঈদের ছুটিতে রিকশা চলেছে।
দুপুরে মোহাম্মদপুর, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, ব্যাংক পাড়া, গুলিস্তান,
নয়াপল্টন, প্রেসক্লাব, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এসব জায়গার
চেহারা এখনো খানিকটা অচেনাই ঠেকেছে । ফুটপাতের খোলা দোকানগুলো পলিথিনে
মোড়ানো। বেশির ভাগ বিপণিবিতানে বড় বড় তালা ঝুলছে। দুই-একটি বিপণিবিতান
খোলা আছে। তবে ক্রেতার অভাবে দোকানিরা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। রাস্তার
পাশে বসা ফলের দোকানে ফল আছে, কিন্তু ক্রেতা নেই। দোকানি ছাতা মাথায় দিয়ে
ক্রেতার অপেক্ষায়।
ঈদের ছবি দেখতে সিনেমা হলে যান অনেকে। ছবিটি মিরপুরের সনি সিনেমা হল থেকে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম |
দুপুর
সাড়ে তিনটার দিকে মতিঝিলে অফিস থেকে বের হওয়া কয়েকজনকে দেখা গেল পলিথিনে
করে ফল, শসা বা অন্যান্য সবজি কিনে বাড়ি ফিরতে। এই ক্রেতারাই আজ
বিক্রেতাদের ভরসা।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের কাঁচা বাজারের দোকানিরা মাছ, মাংস, শাক-সবজি নিয়ে বসেছেন। তবে বাজারে ক্রেতা হাতেগোনা।
চন্দ্রিমা উদ্যান, শিশু পার্ক, সিনেমা হলসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সামনে
মানুষের জটলা আছে। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে এসব জায়গায় এসেছেন। চন্দ্রিমা
উদ্যানে ছাতা মাথায় এবং বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা প্রেমিক যুগলের সংখ্যাই বেশি
দেখা গেল আজ।
এখনো বন্ধ রয়েছে অনেক দোকান। ছবিটি মিরপুর ১ এলাকা থেকে তোলা। আশরাফুল আলম |
জীবিকার
তাগিদে ঢাকায় না ফিরে গতি নেই। গুলিস্তানে ঈদ শেষে ঢাকা ফেরা এক মা ও
মেয়েকে বড় একটি ব্যাগ হাতে করে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেল। সিএনজি,
রিকশাওয়ালা সুযোগ বুঝে আজ দাম হাঁকাচ্ছেন দ্বিগুণ, তিনগুণ। তাঁদের যুক্তি,
ঈদের সময় বেশি না দিলে আর কবে দেবেন।
ঈদে যাঁরা ঢাকায় ছিলেন বা বাড়িতে গেলেও ঢাকায় ফিরে এসেছেন তাঁদের অনেকেই
আজ ঢাকায় থাকা বিভিন্ন আত্মীয় বা বন্ধুদের বাড়িতে ঢুঁ দিচ্ছেন।
দু-একটি দোকান আজ খুলেছে। ছবি: আশরাফুল আলম |
মিরপুরের
গৃহিণী নাজমা আখতার জানালেন, ঈদের পরে নিজের বোন, দেবরের পরিবারসহ অনেকেই
বেড়াতে এসেছেন। তবে বৃষ্টির কারণে যাঁরা এসেছেন তাঁদের ফিরতে বিভিন্ন
ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ঢাকার যানজট, গাড়ির হর্ন, মানুষের অবিরাম ছুটে চলার যান্ত্রিক শহরটিতে
থাকতে থাকতে অনেকেই বিরক্ত। ঈদের ছুটিতে আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে গিয়ে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন অনেকে। তবে জীবন চালানোর জন্য আয়েশি আড়মোড়া
ভেঙে অপছন্দের ঢাকায় ফিরতেই হবে। তাই আজ বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় জমছে
বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে। অন্যদিকে যেসব বাসিন্দা ঈদে ঢাকাতেই
ছিলেন তারাও এই কয়দিন ফাঁকা ঢাকায় স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু স্বস্তির দিন
শেষ হতে চলেছে। কর্মক্ষেত্রে একদিন, দুই দিন কিছুটা ফাঁকি দেওয়া গেলেও কাজে
ব্যস্ত হতেই হবে। দুই একদিনের মধ্যেই ঢাকা ফিরবে তার আপন চেহারায়।
No comments