রোহিঙ্গা ও বর্মি বৌদ্ধ মৌলবাদ by সৈয়দ আবুল মকসুদ
আমি,
আমার এই লেখাটি যিনি কম্পিউটারে লিখেছেন তিনি, যিনি সম্পাদনা করেছেন তিনি,
এর কোনো একজন পাঠক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন বন্ধু—আমাদের
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বেড়াতে যাওয়ার শখ। ওই দুই দেশের ভিসা শুধু নয়,
বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছাড়াই রওনা দিই। কক্সবাজার ঘাট থেকে একটি
ইঞ্জিনচালিত সাম্পানে যাত্রা শুরু করি। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উপকূলের
কথা বাদই দিই। বাংলাদেশের উপকূল থেকে বিনা বাধায় যেতে পারব কি না? আমাদের
জিজ্ঞাসাবাদ করা বা বাধা দেওয়ার কেউ ডাঙায় ও বঙ্গোপসাগরের পানিতে আছেন কি
না?
অথবা এর বিপরীতটি। যে ঘাট থেকে নৌকা যায়, সে ঘাটে নৌকা আসেও। অন্য কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশের জনগণের কোনো বন্ধু ১০টি নৌকাবোঝাই অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড নিয়ে আমাদের পানিসীমায় প্রবেশ করলেন। এবং নির্বিঘ্নে ফাইভ-ফিফটি-ফাইভ সিগারেট বলে অমূল্য মালামাল খালাস করলেন। তখন কক্সবাজার কর্তৃপক্ষের ভূমিকাটা কী হবে?
এসব হলো কথার কথা বা অনুমানের কথা। শতভাগ বাস্তবতা হলো, আমাদের ঘাট থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ তাদের জন্মভূমিকে হাত নেড়ে টা টা বলে কোনো এক অজানা গন্তব্যে রওনা দিচ্ছে। রাষ্ট্রের বেতন–ভাতা পাওয়া কর্মচারীদের কেউই তাঁদের ছায়াটাও দেখলেন না। এর অর্থ হলো, আমাদের সমুদ্রসীমানা অতি সুরক্ষিত। আমাদের দুটো পেট্রোলবোটও নেই।
সমুদ্রতীরবর্তী জেলা কর্তৃপক্ষ বলবে, সমুদ্রজয়ের পরে আমরা যে ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ পেয়েছি, ওসব দেখাশোনার দায়িত্ব সেখানকার কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেখানে উত্তাল ঢেউ বলে এখনো কোনো পোস্টিং হয়নি। সেখানে যা হচ্ছে তা হলো বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাসক্ষেত্র ইজারা দেওয়ার কাজ। সুতরাং দ্বিতীয় বাংলাদেশে কে কী করে বা কে কোথায় যায়-আসে, তা দেখার দায়িত্ব জেলা কর্তৃপক্ষের বা দেশের অন্য কারও নয়।
সত্য ও বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্রের চোখে ছানি পড়লেও সে ঝাপসা দেখতে পেত। রাষ্ট্র অন্ধ হয়ে গেছে, তার দুই চোখ কানা।
মধ্য বঙ্গোপসাগরে বা আন্দামান সাগরে যা ঘটছে তা কোনো ছেলেখেলা নয়। ছোট ব্যাপার নয়। বিরাট ব্যাপার। আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের ব্যাপার। তাই এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের চোখে ঘুম নেই। বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থার কর্মকর্তারা ফাইল বগলে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।
বাংলাদেশ বহুদিন আগে একবার বিশ্বগণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিল ১৯৭১ সালে, আর একবার এখন ২০১৫-র রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীর মাসে। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা বিশ্বগণমাধ্যমে যতটা না প্রচার পেয়েছে তার চেয়ে বেশি বিশ্ববাসীর মনোযোগ ছিল যে লাখ লাখ উদ্বাস্তু বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি। বৈধ বা অবৈধ অভিবাসী বা উদ্বাস্তুদের বেদনা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। দেশ-বিদেশের নেতাদের বিচলিত না করলেও।
বর্তমানে সাগরের মৌসুমি উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে নৌকায় যে ট্র্যাজেডি, তার জন্য বাংলাদেশ সরকার একা দায়ী নয়। তা যে নয়, সে কথা আন্তর্জাতিক মহল জানে। বাংলাদেশের দুই নিকটতম প্রতিবেশীর একটি মিয়ানমার। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিয়ানমারের মানুষের সম্পর্ক হাজার হাজার বছরের। সে সম্পর্ক অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক। সে দেশের মানুষ বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেছেন, চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যও করেছেন। ব্রিটিশ আমলে বাঙালিরাও সেখানে গিয়ে চাকরিবাকরি করেছেন। অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুনে অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কেরানি ছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সেখানকার জেলে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গান্ধীজি বাঙালিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে রেঙ্গুন গেছেন। আমি পুরোনো কাগজপত্রে দেখেছি, ১৯৪৭-এর আগস্টে যখন পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন আরাকান পূর্ব পাকিস্তানে আসবে কি না, তা নিয়ে কথাবার্তা ও আন্দোলন হয়েছিল। বিখ্যাত নেত্রী সু চির বাবা তখনকার খ্যাতনামা নেতা অং সানের সঙ্গে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টির ফয়সালা হয়। সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি আজও কোনো ইতিহাসের বইতে স্থান পায়নি।
দীর্ঘ সামরিক স্বৈরশাসনে মিয়ানমারের মানুষ নিষ্পেষিত। পৃথিবীতে তার প্রধান বন্ধু চীন। বাংলাদেশও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রপন্থী সু চি বহুদিন সামরিক শাসকদের দ্বারা গৃহবন্দী ছিলেন। তাঁর প্রতি পশ্চিমাদের অনুকম্পার সৃষ্টি হয়। তাঁর যতটা না প্রচার প্রাপ্য, তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম তাঁকে মাথায় তুলেছে। তাঁকে তারা তদবির করে ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার’ পাইয়ে দেয়। ‘শান্তিতে’ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কতটা যোগ্য তিনি তা নিয়ে সুইডিশ একাডেমির কোনো সন্দেহ না থাকলেও তাঁর প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের গভীর সন্দেহ রয়েছে। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতন্ত্রের বুলি আওড়ান। রোহিঙ্গা ইস্যুর পরে সুইডিশ একাডেমি ভেবে দেখবে, তাদের নির্বাচন কতটা উপযুক্ত ছিল। তাঁর মধ্যে গণতন্ত্রের চেতনা হয়তো প্রবল, কিন্তু মানবতাবাদী চেতনা কতটা, সে পরিচয় আমরা পাইনি।
‘মিয়ানমার’ নাম ধারণের আগে এর নাম ছিল বার্মা, ছোটবেলায় আমরা বলতাম ব্রহ্মদেশ। আশির দশকেও এর সরকারি নাম ছিল ‘সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব বার্মা’। অতি গালভরা নাম। চীনের পাশে বলে ‘সোশ্যালিস্ট’ কথাটা যোগ করা হয়ে থাকবে। মার্ক্সবাদী দর্শনের লেশমাত্র সে দেশে ছিল না। যা হোক, আমেরিকা-ইউরোপের চাপে সামরিক জান্তা এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের আয়োজন করেছে। সামনে নির্বাচন। শান্তিবাদী(!) সু চির চোখ সেদিকে। কে কোথায় অত্যাচারিত হলো, মরল বা বাঁচল অথবা নির্যাতিত হয়ে দেশ ত্যাগ করল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ কোথায় তাঁর।
নৃতাত্ত্বিকভাবে মিয়ানমারের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ তিব্বতীয় বর্মি, কারেন ও শান বংশোদ্ভূত বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান আছে ১০-১৫ শতাংশ। মুসলমানদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। তারা হাজার বছর ধরে বাস করে আরাকান প্রদেশে। আরাকানের সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে। সরকারি ভাষা বার্মিজ, রোহিঙ্গারা বাংলায় কথা বলেন। এককালে, মধ্যযুগে আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা হয়েছে। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ আলাওল (১৬০৭-১৬৮০) আরাকান রাজদরবারের কবি ছিলেন। তাঁর অমর কীর্তি পদ্মাবতী, সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল, সিকান্দারনামা প্রভৃতি আরাকান রাজদরবারেই রচিত। আরাকান রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় দৌলত কাজী রচনা করেন সতী ময়না ও লোর চন্দ্রাণী।
পৃথিবীর কোনো আধুনিক রাষ্ট্রই একটিমাত্র ভাষাভাষী ও একটিমাত্র ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে গঠিত নয়। প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই বহুজাতিক ও বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের। কয়েক দশক যাবৎ মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে। যাকে পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৌদ্ধ মৌলবাদ, যা কিছুকাল যাবৎ ফ্যাসিবাদী রূপ নিয়েছে। তার প্রধান শিকার আরাকানি রোহিঙ্গারা। তাদের অপরাধ দুটি, এক. তারা বাংলায় কথা বলে, দুই. তারা মুসলমান—বৌদ্ধ নয়। অথচ মহামতি বুদ্ধ ছিলেন শান্তি ও করুণার অবতার।
পশ্চিমারা এখন বলছেন রোহিঙ্গাস আর ওয়ান অব দ্য মোস্ট পারসেকিউটেড গ্রুপস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড—রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর একটি। সে জন্যই ভাগ্যক্রমে উপকূলে পৌঁছে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা এক নারী বলেছেন: সমুদ্রের মধ্যে নৌকায় মরতে গেছিলাম, সেই বিপৎসংকুল সমুদ্র কি আমাদের দেশটার চেয়ে খারাপ? প্রথম আলোর প্রতিনিধি টিপু সুলতানের কাছে থাইল্যান্ডের এক ক্যাম্পে এক আরাকানি রোহিঙ্গা নারী বলেছেন: ‘আঁরার দেশইত তো কোনো জোয়ান পোলা নাই। সবটি তো পালাইয়ে। আরাকানে অবিবাহিয়্যা মাইয়্যা পোলার অনেক বিপদ।’ অবিবাহিত বা বিবাহিত নয়, কোনো রোহিঙ্গা মুসলমান যুবতীই নিরাপদ নয়, তাদের ‘অনেক বিপদ’। অর্থাৎ তারা দিনদুপুরে যেখানে-সেখানে ধর্ষণের শিকার হতে পারে। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী শান্তিবাদী সু চির তাতে করুণার উদ্রেক করে না। তিনি দিল্লি সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বলেছেন। এখনো তিনি নীরব। তিনি বৌদ্ধ মৌলবাদী। তাঁর দরকার ভোট—তাতে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের বর্বরতাকে সমর্থন দিতে হয়, তাতেও তাঁর দ্বিধা নেই।
আজকে বঙ্গোপসাগরে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ও রোহিঙ্গাদের যে ট্র্যাজেডি, তার মূলে মিয়ানমার সরকারের মুসলিমবিরোধী ফ্যাসিবাদী নীতি। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন তা জেনে গেছে এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। তারা মেরে-কেটে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য করেছে। এখানে এসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ও সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বেঁচে থাকার জন্য তারা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটছে।
তাহলে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা দালাল ও মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে কেন? অভাব ও বেকারত্ব। তাদের কাজ নেই, পেটে ক্ষুধা। বাড়িতেও না খেয়ে মরবে, সমুদ্রে গিয়ে মরছে। তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই স্থায়ী চাকরিজীবীর সংখ্যা মাত্র এক-চতুর্থাংশ। চার ভাগের তিন ভাগই হয় বেকার অথবা অস্থায়ী শ্রমিক। ভাসমান মানুষেরাই জীবিকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যেতে চায়।
টিভির পর্দা থেকে ধ্বনিত হচ্ছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিন্দুক ভরে গেছে বৈদেশিক মুদ্রায়। ২২ বিলিয়ন ডলার বিদেশ থেকে এসেছে। তথ্য অসত্য নয়। কৃষক ও সরকারের গোলাঘরভর্তি ধান-চাল। তারপরও লাখ লাখ যুবক দেশত্যাগ করে কেন? সমুদ্রে গিয়ে প্রস্রাব খেয়ে তেষ্টা মেটাতে হয় কেন?
অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের বহু আইন আছে, আইএলও সনদ আছে, অনেক রকম আন্তর্জাতিক আইন আছে। জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধেও আইনকানুন প্রচুর। অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের প্রশ্নে একযোগে কাজ করতে হয় তিনটি দেশকে: সে যে দেশের নাগরিক, যে দেশ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং যে দেশটি তার গন্তব্য। তাকে নিরাপত্তা দেওয়া তিন দেশেরই দায়িত্ব। অভিবাসী অবৈধ হলেও তাকে আশ্রয় দিতে হবে, না খাইয়ে মারা আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ।
আমরা আর দেশে দেশে গণকবরে বাংলাদেশিদের কঙ্কাল দেখতে চাই না। অবৈধ শ্রমিক পাচারে, তাদের থেকে মুক্তিপণ বাণিজ্যে, তাদের হত্যা-নির্যাতনে শুধু বাংলাদেশি নয়, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মানুষেরাও জড়িত। বিশ্বজনমত এখন মিয়ানমারের প্রতিকূলে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে বাংলাদেশ। কয়েকটি ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক সম্পর্কে সাফল্য দেখেছি। অভিবাসী শ্রমিক বিষয়টি গোঁজামিল দিয়ে সাময়িক সমাধান নয়। সরকারের আশু কর্তব্য, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে এবং দেশ থেকে মানব পাচার রোধে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য নিয়ে স্থায়ীভাবে মীমাংসা করা। বিদেশগামীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে অমানবিক। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং সমুদ্রে ভাসমান বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা জরুরি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷
অথবা এর বিপরীতটি। যে ঘাট থেকে নৌকা যায়, সে ঘাটে নৌকা আসেও। অন্য কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশের জনগণের কোনো বন্ধু ১০টি নৌকাবোঝাই অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড নিয়ে আমাদের পানিসীমায় প্রবেশ করলেন। এবং নির্বিঘ্নে ফাইভ-ফিফটি-ফাইভ সিগারেট বলে অমূল্য মালামাল খালাস করলেন। তখন কক্সবাজার কর্তৃপক্ষের ভূমিকাটা কী হবে?
এসব হলো কথার কথা বা অনুমানের কথা। শতভাগ বাস্তবতা হলো, আমাদের ঘাট থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ তাদের জন্মভূমিকে হাত নেড়ে টা টা বলে কোনো এক অজানা গন্তব্যে রওনা দিচ্ছে। রাষ্ট্রের বেতন–ভাতা পাওয়া কর্মচারীদের কেউই তাঁদের ছায়াটাও দেখলেন না। এর অর্থ হলো, আমাদের সমুদ্রসীমানা অতি সুরক্ষিত। আমাদের দুটো পেট্রোলবোটও নেই।
সমুদ্রতীরবর্তী জেলা কর্তৃপক্ষ বলবে, সমুদ্রজয়ের পরে আমরা যে ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ পেয়েছি, ওসব দেখাশোনার দায়িত্ব সেখানকার কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেখানে উত্তাল ঢেউ বলে এখনো কোনো পোস্টিং হয়নি। সেখানে যা হচ্ছে তা হলো বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাসক্ষেত্র ইজারা দেওয়ার কাজ। সুতরাং দ্বিতীয় বাংলাদেশে কে কী করে বা কে কোথায় যায়-আসে, তা দেখার দায়িত্ব জেলা কর্তৃপক্ষের বা দেশের অন্য কারও নয়।
সত্য ও বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্রের চোখে ছানি পড়লেও সে ঝাপসা দেখতে পেত। রাষ্ট্র অন্ধ হয়ে গেছে, তার দুই চোখ কানা।
মধ্য বঙ্গোপসাগরে বা আন্দামান সাগরে যা ঘটছে তা কোনো ছেলেখেলা নয়। ছোট ব্যাপার নয়। বিরাট ব্যাপার। আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের ব্যাপার। তাই এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের চোখে ঘুম নেই। বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থার কর্মকর্তারা ফাইল বগলে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।
বাংলাদেশ বহুদিন আগে একবার বিশ্বগণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিল ১৯৭১ সালে, আর একবার এখন ২০১৫-র রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীর মাসে। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা বিশ্বগণমাধ্যমে যতটা না প্রচার পেয়েছে তার চেয়ে বেশি বিশ্ববাসীর মনোযোগ ছিল যে লাখ লাখ উদ্বাস্তু বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি। বৈধ বা অবৈধ অভিবাসী বা উদ্বাস্তুদের বেদনা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। দেশ-বিদেশের নেতাদের বিচলিত না করলেও।
বর্তমানে সাগরের মৌসুমি উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে নৌকায় যে ট্র্যাজেডি, তার জন্য বাংলাদেশ সরকার একা দায়ী নয়। তা যে নয়, সে কথা আন্তর্জাতিক মহল জানে। বাংলাদেশের দুই নিকটতম প্রতিবেশীর একটি মিয়ানমার। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিয়ানমারের মানুষের সম্পর্ক হাজার হাজার বছরের। সে সম্পর্ক অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক। সে দেশের মানুষ বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেছেন, চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যও করেছেন। ব্রিটিশ আমলে বাঙালিরাও সেখানে গিয়ে চাকরিবাকরি করেছেন। অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুনে অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কেরানি ছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সেখানকার জেলে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গান্ধীজি বাঙালিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে রেঙ্গুন গেছেন। আমি পুরোনো কাগজপত্রে দেখেছি, ১৯৪৭-এর আগস্টে যখন পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন আরাকান পূর্ব পাকিস্তানে আসবে কি না, তা নিয়ে কথাবার্তা ও আন্দোলন হয়েছিল। বিখ্যাত নেত্রী সু চির বাবা তখনকার খ্যাতনামা নেতা অং সানের সঙ্গে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টির ফয়সালা হয়। সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি আজও কোনো ইতিহাসের বইতে স্থান পায়নি।
দীর্ঘ সামরিক স্বৈরশাসনে মিয়ানমারের মানুষ নিষ্পেষিত। পৃথিবীতে তার প্রধান বন্ধু চীন। বাংলাদেশও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রপন্থী সু চি বহুদিন সামরিক শাসকদের দ্বারা গৃহবন্দী ছিলেন। তাঁর প্রতি পশ্চিমাদের অনুকম্পার সৃষ্টি হয়। তাঁর যতটা না প্রচার প্রাপ্য, তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম তাঁকে মাথায় তুলেছে। তাঁকে তারা তদবির করে ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার’ পাইয়ে দেয়। ‘শান্তিতে’ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কতটা যোগ্য তিনি তা নিয়ে সুইডিশ একাডেমির কোনো সন্দেহ না থাকলেও তাঁর প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের গভীর সন্দেহ রয়েছে। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতন্ত্রের বুলি আওড়ান। রোহিঙ্গা ইস্যুর পরে সুইডিশ একাডেমি ভেবে দেখবে, তাদের নির্বাচন কতটা উপযুক্ত ছিল। তাঁর মধ্যে গণতন্ত্রের চেতনা হয়তো প্রবল, কিন্তু মানবতাবাদী চেতনা কতটা, সে পরিচয় আমরা পাইনি।
‘মিয়ানমার’ নাম ধারণের আগে এর নাম ছিল বার্মা, ছোটবেলায় আমরা বলতাম ব্রহ্মদেশ। আশির দশকেও এর সরকারি নাম ছিল ‘সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব বার্মা’। অতি গালভরা নাম। চীনের পাশে বলে ‘সোশ্যালিস্ট’ কথাটা যোগ করা হয়ে থাকবে। মার্ক্সবাদী দর্শনের লেশমাত্র সে দেশে ছিল না। যা হোক, আমেরিকা-ইউরোপের চাপে সামরিক জান্তা এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের আয়োজন করেছে। সামনে নির্বাচন। শান্তিবাদী(!) সু চির চোখ সেদিকে। কে কোথায় অত্যাচারিত হলো, মরল বা বাঁচল অথবা নির্যাতিত হয়ে দেশ ত্যাগ করল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ কোথায় তাঁর।
নৃতাত্ত্বিকভাবে মিয়ানমারের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ তিব্বতীয় বর্মি, কারেন ও শান বংশোদ্ভূত বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান আছে ১০-১৫ শতাংশ। মুসলমানদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। তারা হাজার বছর ধরে বাস করে আরাকান প্রদেশে। আরাকানের সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে। সরকারি ভাষা বার্মিজ, রোহিঙ্গারা বাংলায় কথা বলেন। এককালে, মধ্যযুগে আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা হয়েছে। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ আলাওল (১৬০৭-১৬৮০) আরাকান রাজদরবারের কবি ছিলেন। তাঁর অমর কীর্তি পদ্মাবতী, সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল, সিকান্দারনামা প্রভৃতি আরাকান রাজদরবারেই রচিত। আরাকান রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় দৌলত কাজী রচনা করেন সতী ময়না ও লোর চন্দ্রাণী।
পৃথিবীর কোনো আধুনিক রাষ্ট্রই একটিমাত্র ভাষাভাষী ও একটিমাত্র ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে গঠিত নয়। প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই বহুজাতিক ও বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের। কয়েক দশক যাবৎ মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে। যাকে পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৌদ্ধ মৌলবাদ, যা কিছুকাল যাবৎ ফ্যাসিবাদী রূপ নিয়েছে। তার প্রধান শিকার আরাকানি রোহিঙ্গারা। তাদের অপরাধ দুটি, এক. তারা বাংলায় কথা বলে, দুই. তারা মুসলমান—বৌদ্ধ নয়। অথচ মহামতি বুদ্ধ ছিলেন শান্তি ও করুণার অবতার।
পশ্চিমারা এখন বলছেন রোহিঙ্গাস আর ওয়ান অব দ্য মোস্ট পারসেকিউটেড গ্রুপস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড—রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর একটি। সে জন্যই ভাগ্যক্রমে উপকূলে পৌঁছে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা এক নারী বলেছেন: সমুদ্রের মধ্যে নৌকায় মরতে গেছিলাম, সেই বিপৎসংকুল সমুদ্র কি আমাদের দেশটার চেয়ে খারাপ? প্রথম আলোর প্রতিনিধি টিপু সুলতানের কাছে থাইল্যান্ডের এক ক্যাম্পে এক আরাকানি রোহিঙ্গা নারী বলেছেন: ‘আঁরার দেশইত তো কোনো জোয়ান পোলা নাই। সবটি তো পালাইয়ে। আরাকানে অবিবাহিয়্যা মাইয়্যা পোলার অনেক বিপদ।’ অবিবাহিত বা বিবাহিত নয়, কোনো রোহিঙ্গা মুসলমান যুবতীই নিরাপদ নয়, তাদের ‘অনেক বিপদ’। অর্থাৎ তারা দিনদুপুরে যেখানে-সেখানে ধর্ষণের শিকার হতে পারে। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী শান্তিবাদী সু চির তাতে করুণার উদ্রেক করে না। তিনি দিল্লি সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বলেছেন। এখনো তিনি নীরব। তিনি বৌদ্ধ মৌলবাদী। তাঁর দরকার ভোট—তাতে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের বর্বরতাকে সমর্থন দিতে হয়, তাতেও তাঁর দ্বিধা নেই।
আজকে বঙ্গোপসাগরে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ও রোহিঙ্গাদের যে ট্র্যাজেডি, তার মূলে মিয়ানমার সরকারের মুসলিমবিরোধী ফ্যাসিবাদী নীতি। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন তা জেনে গেছে এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। তারা মেরে-কেটে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য করেছে। এখানে এসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ও সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বেঁচে থাকার জন্য তারা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটছে।
তাহলে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা দালাল ও মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে কেন? অভাব ও বেকারত্ব। তাদের কাজ নেই, পেটে ক্ষুধা। বাড়িতেও না খেয়ে মরবে, সমুদ্রে গিয়ে মরছে। তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই স্থায়ী চাকরিজীবীর সংখ্যা মাত্র এক-চতুর্থাংশ। চার ভাগের তিন ভাগই হয় বেকার অথবা অস্থায়ী শ্রমিক। ভাসমান মানুষেরাই জীবিকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যেতে চায়।
টিভির পর্দা থেকে ধ্বনিত হচ্ছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিন্দুক ভরে গেছে বৈদেশিক মুদ্রায়। ২২ বিলিয়ন ডলার বিদেশ থেকে এসেছে। তথ্য অসত্য নয়। কৃষক ও সরকারের গোলাঘরভর্তি ধান-চাল। তারপরও লাখ লাখ যুবক দেশত্যাগ করে কেন? সমুদ্রে গিয়ে প্রস্রাব খেয়ে তেষ্টা মেটাতে হয় কেন?
অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের বহু আইন আছে, আইএলও সনদ আছে, অনেক রকম আন্তর্জাতিক আইন আছে। জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধেও আইনকানুন প্রচুর। অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের প্রশ্নে একযোগে কাজ করতে হয় তিনটি দেশকে: সে যে দেশের নাগরিক, যে দেশ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং যে দেশটি তার গন্তব্য। তাকে নিরাপত্তা দেওয়া তিন দেশেরই দায়িত্ব। অভিবাসী অবৈধ হলেও তাকে আশ্রয় দিতে হবে, না খাইয়ে মারা আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ।
আমরা আর দেশে দেশে গণকবরে বাংলাদেশিদের কঙ্কাল দেখতে চাই না। অবৈধ শ্রমিক পাচারে, তাদের থেকে মুক্তিপণ বাণিজ্যে, তাদের হত্যা-নির্যাতনে শুধু বাংলাদেশি নয়, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মানুষেরাও জড়িত। বিশ্বজনমত এখন মিয়ানমারের প্রতিকূলে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে বাংলাদেশ। কয়েকটি ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক সম্পর্কে সাফল্য দেখেছি। অভিবাসী শ্রমিক বিষয়টি গোঁজামিল দিয়ে সাময়িক সমাধান নয়। সরকারের আশু কর্তব্য, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে এবং দেশ থেকে মানব পাচার রোধে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য নিয়ে স্থায়ীভাবে মীমাংসা করা। বিদেশগামীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে অমানবিক। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং সমুদ্রে ভাসমান বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা জরুরি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷
No comments