ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের পাশে থাকার
ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রয়াত
নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়ে যায়নি। অনেক
ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া
হবে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য, কোন পরিবারকে ধ্বংস করার জন্যে
যে প্রচেষ্টা এ বিষয়ে জাতিকে সজাগ থাকতে হবে। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের
প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য-এ পরিবারটি বারবার আঘাতের শিকার
হয়েছে। আইয়ুব-ইয়াহিয়ার শাসনামলে ও মুক্তিযুদ্ধের সময়, পঁচাত্তর পরবর্তীতে এ
পরিবারের ওপর আঘাত হয়েছে। যখন যে সরকার এসেছে কখনও না কখনও এ পরিবারের ওপর
হামলা-নির্যাতন করেছে।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি শামসুজ্জোহার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন অসহায় অবস্থায়, আমরা যখন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিই। ’৭৮ সালে জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে জোহা কাকা কাকীকে আর পরিবারের সদস্যকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন। অল্প যে কয়েকজন আমাদের খবর নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জোহা কাকা একজন। ’৭১-এর স্মৃতি টেনে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে চলে এসেছিলেন ১৮ নম্বরের ওই বাড়িতে, যে বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল। জোহা কাকাসহ কয়েকজন ১৮ নম্বর রোডে যান। বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। জোহা কাকা গুলিতে আহত হন। ১৫ই আগস্টের আগের দিন নাসিম ওসমানের বিয়ে হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, নবপরিণীতা বধূকে ফেলে রেখে এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে নাসিম চলে যান। কোন টান তাকে আটকাতে পারে নাই। তিনি জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে এই ওসমান পরিবারে। এখানে দল গঠন থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হয়েছে। রাজনীতির নীতি আদর্শ নিয়ে চলতেন জোহা কাকা। এই পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল সব সময়। যদি তাদের প্রয়োজন হয় দেখাশোনা করবো।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনি মোশ্তাক ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। আর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক ও রশিদ বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছে, এই হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রের কথা তারা জিয়াকে জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রে জিয়ার পূর্ণ সমর্থন পাওয়ার কথা ফারুক-রশিদরা নিজেরাই বলে গেছে। তিনি বলেন, সেই ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়ে যায়নি। দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে এখনও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
গতকাল দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অর্থাৎ বাজেট অধিবেশনের শুরুর দিনে এই সংসদেরই নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে শোক প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শোক প্রস্তাবের ওপর আরও আলোচনা করেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মশিউর রহমান রাঙ্গা ও প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছোট ভাই সরকারি দলের এমপি শামীম ওসমান। এসময় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ উপস্থিত থাকলেও তারা আলোচনায় অংশ নেননি। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। এরপরে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, পুরো ওসমান পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে আপসহীন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর শামসুজ্জোহা খান আমৃত্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে কাজ করে গেছেন। এখনও তার সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কাজ করে যাচ্ছেন। নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টি করলেও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে প্রতিরোধকারী ছাত্রনেতাদের একজন ছিলেন নাসিম ওসমান। বাংলাদেশে এখন যা চলছে তা কি ওসমান পরিবারের সঙ্গে অন্য কারও দ্বন্দ্ব? বঙ্গবন্ধুর ঐতিহ্য যারা লালন করেছে, ওই পরিবারের সঙ্গে যাদের সাহচর্য ছিল তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র চলছে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আড়াইবারের প্রধানমন্ত্রী বলে মন্তব্য করলে সরকারদলীয় এমপিরা এর প্রতিবাদ জানান। তারা চিৎকার করে বলেন, এ কথার অর্থ কি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় এমপিদের চুপ থাকার নির্দেশ দেন। পরে মন্ত্রী তার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আগে দু’বার। আর এখন কয়েক মাস হয়েছে এ জন্য বলেছি আড়াইবার।
No comments