পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে নিহত ৪

ব্যাংককে পুলিশের একটি ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ওপর থাইল্যান্ডের
জাতীয় পতাকা হাতে একজন বিক্ষোভকারী। সরকারবিরোধীরা
সংঘর্ষের সময় পুলিশের এই গাড়িটি ভাঙচুর করে উল্টে ফেলে। ছবি: রয়টার্স
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সরকারি ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের হটাতে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পুলিশসহ অন্তত চারজন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছেন। জরুরি অবস্থা অমান্য করার অভিযোগে রাজধানী ব্যাংককসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যাংকক পুলিশের প্রধান আদুল সিয়াংসিকাও বলেন, সংঘর্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশের আরও ১৪ জন কর্মকর্তা আহত হন। বিক্ষোভকারীদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেন। দ্য এরাওয়ান মেডিকেল সেন্টারের ওয়েবসাইটে বলা হয়, পুলিশের অভিযানকালে গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন এবং ৬৪ জন আহত হয়েছেন। এদিকে ধানের খামারে ভর্তুকি প্রকল্পে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হচ্ছে থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে। এতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদও হারাতে পারেন। দুর্নীতিবিরোধী একটি প্যানেল গতকাল এ ঘোষণা দেয়। তবে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কমিশন এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধানমন্ত্রী ইংলাক তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিযোগের ওপর একটি শুনানিতে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে। ওই ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে ধান বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়। এতে সরকারি অর্থ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইংলাকের বিরোধীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। ব্যাংককের উপকণ্ঠে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার অস্থায়ী কার্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি ভবনকে ঘিরে কৃষকেরা গত সোমবার থেকে অবস্থান করছেন। ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনী গতকাল অভিযান চালায়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
এ সময় গুলি ও বিস্ফোরকের শব্দ পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকা ছেড়ে যেতে বিক্ষোভকারীদের এক ঘণ্টা সময় দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল। সরকারবিরোধীদের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সরকার এখানে আর কাজ করতে পারবে না। আমাদের গ্রেপ্তার করে দমিয়ে রাখা যাবে না। জনগণের ইচ্ছা এখনো অনেক শক্তিশালী। সরকার ফাঁদে পড়েছে। তাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’ ইংলাক সিনাওয়াত্রা সরকারের বিরুদ্ধে তিন মাস আগে গণ-আন্দোলন শুরুর পর এবারই প্রথম এত বেশি (প্রায় ১০০) জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। বিরোধীদের দাবি, ইংলাককে পদত্যাগ করে অনির্বাচিত ‘পিপলস কাউন্সিলের’ কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কাউন্সিল নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের আগে চলমান দুর্নীতি ও জনগণের অর্থের অপব্যবহার রোধে বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। ইংলাকের ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ২০০৬ সালে এক বিতর্কিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে থাইল্যান্ডে প্রায় নিয়মিত বিরতিতে গণবিক্ষোভ চলছে। সর্বশেষ বিক্ষোভ-আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ১২ জন প্রাণ হারান এবং শতাধিক মানুষ আহত হন। রাজধানী ব্যাংককের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা একধরনের অচলাবস্থা তৈরি করেছেন। এএফপি, রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.