মঞ্জুরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে
‘আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বিচারের জন্যও তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়নি। আমি চাই সত্য বেরিয়ে আসুক। ইতিহাসের এসব শূন্যস্থান বা ক্ষতগুলো সম্পর্কে সত্যি কথা দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে।’ ১৯৯৫ সালের মার্চে ভোরের কাগজ-এর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলেছেন ব্যারিস্টার আবুল মনসুর। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সামরিক বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে নিহত মেজর জেনারেল এম আবুল মঞ্জুরের বড় ভাই তিনি। ভাইকে হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। ওই সময় রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় ব্যারিস্টার মনসুরের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন ভোরের কাগজ-এর তৎকালীন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ। ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি পাঠক চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রথম আলোতে ছাপা হলো।
ভোরের কাগজ মেজর জেনারেল এম আবুল মঞ্জুর নিহত হয়েছিলেন ১৯৮১ সালের ১ জুন। প্রায় ১৪ বছর পর মামলা করলেন কেন?
আবুল মনসুর আসলে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি মামলা করার জন্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, তথ্য-প্রমাণাদি আমার কাছে ছিল না। এমনকি জেনারেল মঞ্জুরের ময়নাতদন্ত রিপোর্টও খুঁজে পাইনি। গত মাসে ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি পাওয়ার পরপরই আমি পাঁচলাইশ থানায় এফআইআর করেছি। আমি চাই সত্য বেরিয়ে আসুক। আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। আইন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক।
কাগজ কিন্তু এ রকম একটা কথা শোনা যাচ্ছে যে, আপনি মামলা করেছেন সরকারের পরামর্শে বা অন্য কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে?
মনসুর এটা সত্যি নয়। আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বিচারের জন্যও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়নি। জেনারেল মঞ্জুর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু এত বছরেও তাঁর হত্যার মতো একটি জঘন্য ঘটনার তদন্ত বা বিচার হয়নি। আমি বা আমাদের পরিবার সব সময়ই এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছি। এ নিয়ে আমার নিজের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বা লক্ষ্য নেই।
কাগজ কিন্তু এ রকম একটি ধারণা সহজেই করা যায় যে, মঞ্জুর হত্যার বিচার জিয়া হত্যার বিচারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
মনসুর দেখুন, আমি বা আমাদের পরিবারও চায় জিয়া হত্যারও সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার হোক। মঞ্জুর হত্যার বিচার হলে অনেক সত্যি কথা বেরিয়ে আসবে। জিয়া হত্যার জন্য আমার ভাইকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এটাও সত্যি কি না সেটা বের হয়ে আসবে। কারণ সে সময় বিচারের কোনো সুযোগ না দিয়ে জেনারেল মঞ্জুর এবং আরও কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল। তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরে জেনারেল কোর্ট মার্শালে গোপন বিচার করে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসি হয়েছিল। সে সময় সরকার যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল আজ তথ্য-প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, সেটি সত্যি কথা বলেনি। তাই আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে আসুক। ইতিহাসের এসব শূন্যস্থান বা ক্ষতগুলো সম্পর্কে সত্যি কথা দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে।
কাগজ কিন্তু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড তো আরও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা, হায়দার...
মনসুর খালেদ মোশাররফ ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধু ছিল। সে সত্যিকার অর্থে একজন দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান ছিল সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তার হত্যার বিচার আজও হয়নি। বিচার হয়নি কর্নেল হুদা, হায়দার এদের হত্যার। হুদা মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল মঞ্জুরের একজন সঙ্গী ছিলেন। তাঁদের সবার অবদান, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর হত্যার ব্যাপারে জেনারেল কোর্ট মার্শালে যে গোপন বিচার হয়েছিল, সে সম্পর্কে এখনো দেশবাসী সন্দেহমুক্ত নন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারবর্গের হত্যার ব্যাপারেও কোনো সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার আজও হলো না। আসলে সব হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হওয়া উচিত। জাতি হিসেবে আমাদের এর জন্য দাবি করা উচিত, ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ বিচার না হওয়ায় অনেকেই হত্যা করে পার পেয়ে গেছে। যা পরবর্তী সময়ে অন্যদেরও এ ধরনের অপকর্মে উৎসাহিত করেছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এবং প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসার জন্য এসব ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন।
কাগজ এ মামলার ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকার লেখালেখি হচ্ছে। নানা কথা শোনা যাচ্ছে।
মনসুর হ্যাঁ, পত্রপত্রিকায় অনেক কথাই বলা হচ্ছে। কোনোটা সত্য, কোনোটা মিথ্যা। নানা রকম তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। আমি মিডিয়ার কাছে অনুরোধ জানাব, তারা যাতে এমন কিছু না করে যাতে মামলার কোনো ক্ষতি হয়। আমাদের সবার চেষ্টা করা প্রয়োজন যাতে সত্য প্রকাশিত হয়। প্রকৃত দোষীদের বিচার হয়।
ভোরের কাগজ মেজর জেনারেল এম আবুল মঞ্জুর নিহত হয়েছিলেন ১৯৮১ সালের ১ জুন। প্রায় ১৪ বছর পর মামলা করলেন কেন?
আবুল মনসুর আসলে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি মামলা করার জন্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, তথ্য-প্রমাণাদি আমার কাছে ছিল না। এমনকি জেনারেল মঞ্জুরের ময়নাতদন্ত রিপোর্টও খুঁজে পাইনি। গত মাসে ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি পাওয়ার পরপরই আমি পাঁচলাইশ থানায় এফআইআর করেছি। আমি চাই সত্য বেরিয়ে আসুক। আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। আইন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক।
কাগজ কিন্তু এ রকম একটা কথা শোনা যাচ্ছে যে, আপনি মামলা করেছেন সরকারের পরামর্শে বা অন্য কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে?
মনসুর এটা সত্যি নয়। আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বিচারের জন্যও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়নি। জেনারেল মঞ্জুর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু এত বছরেও তাঁর হত্যার মতো একটি জঘন্য ঘটনার তদন্ত বা বিচার হয়নি। আমি বা আমাদের পরিবার সব সময়ই এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছি। এ নিয়ে আমার নিজের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বা লক্ষ্য নেই।
কাগজ কিন্তু এ রকম একটি ধারণা সহজেই করা যায় যে, মঞ্জুর হত্যার বিচার জিয়া হত্যার বিচারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
মনসুর দেখুন, আমি বা আমাদের পরিবারও চায় জিয়া হত্যারও সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার হোক। মঞ্জুর হত্যার বিচার হলে অনেক সত্যি কথা বেরিয়ে আসবে। জিয়া হত্যার জন্য আমার ভাইকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এটাও সত্যি কি না সেটা বের হয়ে আসবে। কারণ সে সময় বিচারের কোনো সুযোগ না দিয়ে জেনারেল মঞ্জুর এবং আরও কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল। তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরে জেনারেল কোর্ট মার্শালে গোপন বিচার করে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসি হয়েছিল। সে সময় সরকার যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল আজ তথ্য-প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, সেটি সত্যি কথা বলেনি। তাই আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে আসুক। ইতিহাসের এসব শূন্যস্থান বা ক্ষতগুলো সম্পর্কে সত্যি কথা দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে।
কাগজ কিন্তু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড তো আরও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা, হায়দার...
মনসুর খালেদ মোশাররফ ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধু ছিল। সে সত্যিকার অর্থে একজন দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান ছিল সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তার হত্যার বিচার আজও হয়নি। বিচার হয়নি কর্নেল হুদা, হায়দার এদের হত্যার। হুদা মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল মঞ্জুরের একজন সঙ্গী ছিলেন। তাঁদের সবার অবদান, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর হত্যার ব্যাপারে জেনারেল কোর্ট মার্শালে যে গোপন বিচার হয়েছিল, সে সম্পর্কে এখনো দেশবাসী সন্দেহমুক্ত নন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারবর্গের হত্যার ব্যাপারেও কোনো সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার আজও হলো না। আসলে সব হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হওয়া উচিত। জাতি হিসেবে আমাদের এর জন্য দাবি করা উচিত, ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ বিচার না হওয়ায় অনেকেই হত্যা করে পার পেয়ে গেছে। যা পরবর্তী সময়ে অন্যদেরও এ ধরনের অপকর্মে উৎসাহিত করেছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এবং প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসার জন্য এসব ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন।
কাগজ এ মামলার ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকার লেখালেখি হচ্ছে। নানা কথা শোনা যাচ্ছে।
মনসুর হ্যাঁ, পত্রপত্রিকায় অনেক কথাই বলা হচ্ছে। কোনোটা সত্য, কোনোটা মিথ্যা। নানা রকম তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। আমি মিডিয়ার কাছে অনুরোধ জানাব, তারা যাতে এমন কিছু না করে যাতে মামলার কোনো ক্ষতি হয়। আমাদের সবার চেষ্টা করা প্রয়োজন যাতে সত্য প্রকাশিত হয়। প্রকৃত দোষীদের বিচার হয়।
No comments