মার্কিন সমুদ্রসীমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইরানি যুদ্ধজাহাজ

যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরানি নৌবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় বহর ও চতুর্থ নৌ-জোনের অধিনায়ক অ্যাডমিরাল আফশিন রেজায়ি হাদ্দাদ শনিবার এ ঘোষণা দিয়েছে। ইরানি বার্তাসংস্থা ফরাসের বরাতে রোববার বার্তাসংস্থা আলজাজিরা ও বিবিসিতে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ জাহাজের অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অ্যাডমিরাল আফশিন রেজায়ি হাদ্দাদ বলেছেন, ‘ইরানি সামরিক নৌবহর যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই পদক্ষেপের মধ্যে একটি বার্তা আছে। তাহল ‘সতর্ক বার্তা’। ফারস্ বলেছে, ‘পারস্য উপসাগরে ওয়াশিংটনের নৌ-শক্তির উপস্থিতির ইরানি প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে রওনা হওয়া যুদ্ধ জাহজগুলো কী ধরনের বা তাদের ক্ষমতা কেমন, তা ফারসের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমার দিকে ইরানি যুদ্ধজাহাজ এগিয়ে আসছে, এমন খবরে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তবে মন্তব্যে বলেছেন, ‘যে কোনো জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমায় মুক্তভাবে চালচল করতে পারে।’ পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো নিয়মিত নৌ-মহড়ার আয়োজন করে থাকে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বিশ্বের তেল সম্পদের ৪০ শতাংশ যে জলসীমা দিযে রফতানি করা হয়, তার অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতেই এসব নৌমহড়া চালানো হয়। পারস্য উপসাগরের দ্বীপদেশ বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহরের ঘাঁটি আছে।
ঘাঁটি ৫০০০ মার্কিন নৌ সেনা রয়েছে। আক্রান্ত হলে পারস্য উপসাগর থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া হবে বলে ইরানি কর্মকর্তারা প্রায়ই বলে থাকেন। পশ্চিমা নৌ-মহড়াগুলো ইরানি এই হুমকি থেকে হরমুজ প্রণালীকে মুক্ত রাখার প্রত্যয়েই আয়োজন করা হয়। ফারস জানিয়েছে, ২০১০ থেকেই ইরানি যুদ্ধ জাহাজগুলো আন্তর্জাতিক নৌ-সীমায় টহল দিয়ে আসছে। ইরানের সরকার উৎখাতের ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনী বলেছেন, ‘তার দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করার ক্ষমতা আমেরিকার নেই। আমেরিকার কর্মকর্তারা বলে থাকেন, তারা ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন চান না- এটা ডাহা মিথ্যা। কারণ, ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করার সুযোগ পেলে তারা এক মুহূর্ত দেরি করবে না।’ ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের ৩৫তম বার্ষিকীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদযাপিত হচ্ছে। শনিবার ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর প্রতি ইরানের বিমান বাহিনীর আনুগত্য ঘোষণার বার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি ইসলামি বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় হলেও ৮ ফেব্র“য়ারি বিমান বাহিনী বিপ্লবের আদর্শের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছিল। এ উপলক্ষে ইরানের বিমান বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কমান্ডাররা তেহরানে সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিমান বাহিনীর কমান্ডারদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরতা এবং ইরানি জনগণের ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা টিকে থাকবে বহুকাল। তিনি বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট এসে সরকারের কৌশল পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু ইসলামি শাসন ব্যবস্থার মূলনীতিগুলো অটুট ও অপরিবর্তিত থাকবে।
একটি পরমাণু কেন্দ্রও বন্ধ করা হবে না : এইওআই
ইরানের কোনো পরমাণু কেন্দ্রই বন্ধ করা হবে না। এ তথ্য জানিয়েছেন ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার (এইওআই) উপ-মহাপরিচালক আসগার যারেয়ান। তিনি আরও বলেছেন, একটি পরমাণু স্থাপনাও বন্ধ হবে না। বিদেশী গণমাধ্যমের অপপ্রচারে প্রভাবিত না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ইরানের আরাক পরমাণু কেন্দ্রে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে শত্র“দের বিদ্বেষের কোনো শেষ নেই। শত্র“দের হতাশ করতে আমাদের ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে।’ এর আগে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হাসান আসফারি বলেছেন, পরমাণু কেন্দ্র থেকে কোনো সেন্ট্রিফিউজই সরানো হবে না।

No comments

Powered by Blogger.