ঈদের পর মাঠের রাজনীতি কতটা তপ্ত হবে? by বিভুরঞ্জন সরকার
ঈদের পর রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠবে
বলে মনে হচ্ছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং
ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি ঈদের পর মাঠে নামার ঘোষণা রোজার আগেই দিয়ে রেখেছে।
এখন প্রতিদিনের ইফতার পার্টিতে এ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আওয়ামী লীগ,
বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম ঈদের পর মাঠে নামবে বলে
জানিয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিও
ঈদের পর মহাজোটে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত ঈদের পর জানাবে বলে এরশাদ সাহেব
তার একাধিক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। জোট-মহাজোটের পরিধি বাড়ানোর রাজনৈতিক
উদ্যোগ-প্রচেষ্টাও ঈদের পর বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ঈদের পর
মাঠে নামবে জনমত নিজেদের অনুকূলে এনে হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্য
নিয়ে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং বিরোধী দল
সরকারের বিরুদ্ধে যেসব ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ‘উপযুক্ত’ জবাব
দেয়ার প্রস্তুতি সরকারি দল নিচ্ছে বলে শোনা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এখন দেশে আছেন। তিনি নির্বাচন পর্যন্ত দেশে থেকেই
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় সাহায্য-সহযোগিতা করবেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি যুবলীগের এক ইফতার পার্টিতে জয় বলেছেন, তার কাছে তথ্য আছে আগামী
নির্বাচনে আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসবে। তার কাছে এ সংক্রান্ত কী তথ্য
আসলে আছে, সেটা তিনি বিস্তারিত বলেননি। তবে তার এই আশাবাদ নিয়ে রাজনৈতিক
অঙ্গনে তেমন চাঞ্চল্য দেখা যায়নি।
অন্যদিকে বিএনপির মাঠে নামার লক্ষ্য হচ্ছে, আন্দোলন জোরদার করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা। বিএনপি ১৮ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ১৮ দলভুক্ত অন্য দলগুলোর পক্ষে আন্দোলনে বাড়তি শক্তি জোগানোর ক্ষমতা নেই। তারা কেবল জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখছে। তবে বিএনপি নতুন মিত্র হিসেবে সঙ্গে পাবে হেফাজতে ইসলামকে। হেফাজতের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, তারাও ঈদের পর আবার মাঠে নামবে এবং ১৩ দফা দাবি মানতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ৫ মে শাপলা চত্বর থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর হেফাজত আবার সংগঠিত হয়ে তাদের শক্তি দেখাতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
মাঠে নামার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গী-সাথী আছে বলে মনে হচ্ছে না। ১৪ দলকে সক্রিয় করা এবং তাদের মাঠে নামানোর পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৪ দলভুক্ত একটি ছোট দলের একজন নেতা জানিয়েছেন, ১৪ দলের ঐক্য সুসংহত ও তা সারাদেশে সম্প্রসারণের ব্যাপারে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ যখন মনে করে, কেবল তখনই ১৪ দলের বৈঠক আহ্বান করা হয়। তবে ১৪ দলীয় জোটকে সম্প্রসারিত করার জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। গত ২৪ জুলাই ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। ১৪ দলের বাইরে থাকা বাম বলয়ের দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য-আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ফলাফল কী দাঁড়াবে সেটা এখনই বলা যায় না। আবার জাতীয় পার্টি এখন মহাজোটে আছে নামেমাত্র। এ দলের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের আর সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বেশ কিছুদিন ধরেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে মহাজোট ছাড়ার কথা বলে আসছেন। ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের পর এরশাদ মহাজোট ছাড়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করেছেন বলেই মনে হয়। ঈদের পর এবং এ সরকারের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই এরশাদ মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন, জাতীয় পার্টি ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে এককভাবেই অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। অবশ্য মহাজোটে থাকা না থাকা নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যেও মতভিন্নতা আছে। দলের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই মহাজোট ছাড়ার পক্ষে হলেও মহাজোটের সঙ্গে থাকার পক্ষেও প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা আছেন। মহাজোটে থাকা না থাকার ইস্যুতে জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন দেখা দিতে পারে বলেও কোনো কোনো পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই খবরের সূত্র ধরে এরশাদ বলেছেন, কারও যদি ‘রাজনৈতিক এতিম’ হওয়ার বাসনা থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি ত্যাগ করতে পারেন। ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, ঈদের পর মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ যে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে পাবে না এটা প্রায় নিশ্চিত। তাহলে এটা বলা যায়, ঈদের পর বিরোধী দলের যে আন্দোলন পরিকল্পনা তা মোকাবেলা করতে হবে আওয়ামী লীগকে একাই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ঈদের পর সত্যি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে কি-না? দেশের মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছে কি-না? এখন আন্দোলনের নামে যে ধরনের সহিংসতা চলে, মানুষ তা পছন্দ করে না। গত কমপক্ষে দুটি ঈদের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঈদের পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ঈদের পর ‘সর্বশক্তি’ নিয়ে মাঠে নামার কথা গত দুই ঈদের আগেও বিএনপি বলেছিল। সরকারকে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে না দেয়ার ঘোষণাও বিএনপি দিয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর বিএনপি আন্দোলনের এমন কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি যার জন্য সরকার চাপের মুখে পড়ে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই এটা মনে করছেন যে, এবারও ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন জমাতে পারবে না বিএনপি। সরকারের মেয়াদ শেষে এসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আগ্রহী হয়ে ওঠার বাস্তবসম্মত কারণ দেখা যায় না।
এসব কিছু বিবেচনায় রেখেই ‘নির্দলীয়’ সরকারের দাবি অব্যাহত রেখে বিএনপি বর্তমান সরকারকে চাপের মধ্যে রাখার কৌশল নিলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও পুরোপুরিভাবেই রাখছে। আন্দোলন করে যদি নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা যায় তো ভালো, আর যদি তা শেষ পর্যন্ত না-ই হয়, তাহলেও তারা নির্বাচনের মাঠ আওয়ামী লীগকে ফাঁকা ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ তথা সরকার বিএনপির দাবি মেনে নির্দলীয় কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করবে না- আওয়ামী লীগের বক্তৃতা-বিবৃতি পর্যালোচনা করলে সেটাই মনে হয়। বিএনপি যদিও বলছে, তাদের দাবি না মানলে তারা নির্বাচনে যাবে না, তবে তাদের কথার মধ্যে এখন যথেষ্ট ফাঁক থাকছে বলে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন। গত ২২ জুলাই এক ইফতার পার্টিতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার অধীনে নয়।’ স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে। এখন তারা নির্দলীয় সরকার নিয়েই দরকষাকষি চালাবে। এই নির্দলীয় সরকার বলতে বিএনপি প্রকৃতপক্ষে কী বোঝাচ্ছে, কিভাবে এই সরকার গঠিত হবে, নির্দলীয় ব্যক্তিদের কোন মাপকাঠিতে এবং কিভাবে চিহ্নিত করা হবে- এসব কিছু পরিষ্কারভাবে জাতির কাছে বিএনপিকেই তুলে ধরতে হবে।
আওয়ামী লীগ যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে, স্বাভাবিকভাবেই সে সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে বিএনপির প্রবল আপত্তি। তাহলে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আর কোনো উপায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হতে পারে কি-না, সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর তাগিদ বিভিন্ন মহল থেকে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আগে বিএনপিকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তাদের ঝেড়ে কাশতে হবে। কারণ কেউ কেউ এমনও মনে করছেন যে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা যাই হোক না কেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিশেষ করে ৫ সিটি নির্বাচনে জয়ের পর নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির মধ্যে যে দোদুল্যমানতা ছিল, এখন তা অনেকটাই দূর হয়েছে। তাদের এখন আস্থা ফিরে এসেছে। বিএনপি গত ৪ বছর সরকারবিরোধী আন্দোলন করে বস্তুত কিছুই অর্জন করতে পারেনি। অথচ ৫ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং জয়লাভ করে তারা যে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করেছে, তা এককথায় তুলনাহীন। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই এখন এটা মনে করছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক গত ২২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে হারবে। এটা যদি তার কথার কথা না হয়, তাহলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারবে জেনে বিএনপি সে নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে কেন? আর বিএনপি যদি দূরেই থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ হারবে কার কাছে?
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে রাজপথে থাকার কৌশল বিএনপি সম্ভবত এই কারণেই নিচ্ছে যে, যদি তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে সরকার হয়তো দাবি মানতে বাধ্য হলেও হতে পারে। সরকার আন্দোলনের মুখে দাবি মেনে নিলে বিএনপি নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক খেলায় জিতে যাবে। আর মানুষ যদি বিএনপির আন্দোলনের ডাকে সেভাবে সাড়া না দেয়, তাহলেও বিএনপির কোনো ক্ষতি নেই। আন্দোলনের নামে একের পর এক হরতালের কর্মসূচি দিয়ে তারা জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। এতে মানুষ সরকারের ওপরই ক্ষিপ্ত হবে। সরকার জনপ্রিয়তা হারাবে। ঈদের পর বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন কতটুকু জোরালো করে তুলতে পারবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের মানুষের আগ্রহ কম। তাছাড়া আন্দোলনের কোনো অটোসিস্টেম নেই। সুইচ টিপে দিলেই আন্দোলন হয় না। দেশের মানুষের মধ্যে যে আন্দোলনের মনোভাব তীব্র হয়ে উঠেছে, কোনো কিছু থেকেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। আন্দোলন মানেই এখন ধ্বংস, মৃত্যু, রক্তপাত, সংঘাত, হানাহানি। মানুষ এসব চায় না। মানুষ শান্তি চায়। আর সে জন্যই ভোট দিয়ে তারা সরকার পরিবর্তন করতে চায়। সরকারের প্রতি মানুষের অনাস্থা থাকলেও বিরোধী দলের প্রতি আস্থা আছে- বিষয়টি তেমনও নয়। তারপরও মানুষ নিরুপায় হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিরোধী দলকে ভোট দিয়ে থাকেন। এটা বিরোধী দলের সাফল্য নয়, সরকারের ব্যর্থতা। তবে এবার ঈদের পর আন্দোলনে নামলে বিএনপির জন্য কিছু বোনাস পরিস্থিতি থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েক দিনে একাধিকবার বলেছেন, এ সরকারের মেয়াদকালেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কয়েকটি রায় কার্যকর করা হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার যাতে কোনো রায় কার্যকর করতে না পারে সে জন্য তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবিরের প্রতিরোধ কতটা হিংস্র ও ভয়াবহ হয়, সেটা গত কয়েক মাসে দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। জামায়াত-শিবিরের প্রস্তুতির পাশাপাশি ঈদের পর মাঠে নামার কথা জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের আমীর মাওলানা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ‘দেশের আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার যে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে, যে রক্ত ঝরানো হয়েছে, ঈদের পর এর জবাব দেয়া হবে।’ তাদের এই জবাবদান প্রক্রিয়া ৫ মে’র সহিংসতাকে ছাড়িয়ে যাবে কি-না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে আসছে।
দেশের পরিস্থিতি চরম অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে সরকার কী করবে, কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে, সেটা নিয়েও মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের মেয়াদ শেষে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রক্তপাত ঘটালে সেটাও সরকারের জন্য সুখকর হবে না। তবে আওয়ামী লীগ একটি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল। অনেক চড়াই-উতরাই, পতন-অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এই দলে এখনও অসংখ্য পোড় খাওয়া নেতাকর্মী আছেন, যারা বিপদ-আপদে দলের জন্য বুক পেতে দেবেন, কিন্তু পিঠ দেখাবেন না। সিটি নির্বাচনের পরাজয়ের গ্লানিতে ধুঁকছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মুখে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিতে হলে ভোটের আগেই তাদের আরেকটি পরাজয় ঘটবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ ও সরকার ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে কী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে, দেশের মানুষ এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায়।
বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক
অন্যদিকে বিএনপির মাঠে নামার লক্ষ্য হচ্ছে, আন্দোলন জোরদার করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা। বিএনপি ১৮ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ১৮ দলভুক্ত অন্য দলগুলোর পক্ষে আন্দোলনে বাড়তি শক্তি জোগানোর ক্ষমতা নেই। তারা কেবল জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখছে। তবে বিএনপি নতুন মিত্র হিসেবে সঙ্গে পাবে হেফাজতে ইসলামকে। হেফাজতের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, তারাও ঈদের পর আবার মাঠে নামবে এবং ১৩ দফা দাবি মানতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ৫ মে শাপলা চত্বর থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর হেফাজত আবার সংগঠিত হয়ে তাদের শক্তি দেখাতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
মাঠে নামার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গী-সাথী আছে বলে মনে হচ্ছে না। ১৪ দলকে সক্রিয় করা এবং তাদের মাঠে নামানোর পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৪ দলভুক্ত একটি ছোট দলের একজন নেতা জানিয়েছেন, ১৪ দলের ঐক্য সুসংহত ও তা সারাদেশে সম্প্রসারণের ব্যাপারে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ যখন মনে করে, কেবল তখনই ১৪ দলের বৈঠক আহ্বান করা হয়। তবে ১৪ দলীয় জোটকে সম্প্রসারিত করার জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। গত ২৪ জুলাই ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। ১৪ দলের বাইরে থাকা বাম বলয়ের দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য-আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ফলাফল কী দাঁড়াবে সেটা এখনই বলা যায় না। আবার জাতীয় পার্টি এখন মহাজোটে আছে নামেমাত্র। এ দলের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের আর সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বেশ কিছুদিন ধরেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে মহাজোট ছাড়ার কথা বলে আসছেন। ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের পর এরশাদ মহাজোট ছাড়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করেছেন বলেই মনে হয়। ঈদের পর এবং এ সরকারের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই এরশাদ মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন, জাতীয় পার্টি ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে এককভাবেই অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। অবশ্য মহাজোটে থাকা না থাকা নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যেও মতভিন্নতা আছে। দলের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই মহাজোট ছাড়ার পক্ষে হলেও মহাজোটের সঙ্গে থাকার পক্ষেও প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা আছেন। মহাজোটে থাকা না থাকার ইস্যুতে জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন দেখা দিতে পারে বলেও কোনো কোনো পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই খবরের সূত্র ধরে এরশাদ বলেছেন, কারও যদি ‘রাজনৈতিক এতিম’ হওয়ার বাসনা থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি ত্যাগ করতে পারেন। ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, ঈদের পর মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ যে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে পাবে না এটা প্রায় নিশ্চিত। তাহলে এটা বলা যায়, ঈদের পর বিরোধী দলের যে আন্দোলন পরিকল্পনা তা মোকাবেলা করতে হবে আওয়ামী লীগকে একাই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ঈদের পর সত্যি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে কি-না? দেশের মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছে কি-না? এখন আন্দোলনের নামে যে ধরনের সহিংসতা চলে, মানুষ তা পছন্দ করে না। গত কমপক্ষে দুটি ঈদের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঈদের পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ঈদের পর ‘সর্বশক্তি’ নিয়ে মাঠে নামার কথা গত দুই ঈদের আগেও বিএনপি বলেছিল। সরকারকে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে না দেয়ার ঘোষণাও বিএনপি দিয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর বিএনপি আন্দোলনের এমন কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি যার জন্য সরকার চাপের মুখে পড়ে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই এটা মনে করছেন যে, এবারও ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন জমাতে পারবে না বিএনপি। সরকারের মেয়াদ শেষে এসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আগ্রহী হয়ে ওঠার বাস্তবসম্মত কারণ দেখা যায় না।
এসব কিছু বিবেচনায় রেখেই ‘নির্দলীয়’ সরকারের দাবি অব্যাহত রেখে বিএনপি বর্তমান সরকারকে চাপের মধ্যে রাখার কৌশল নিলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও পুরোপুরিভাবেই রাখছে। আন্দোলন করে যদি নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা যায় তো ভালো, আর যদি তা শেষ পর্যন্ত না-ই হয়, তাহলেও তারা নির্বাচনের মাঠ আওয়ামী লীগকে ফাঁকা ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ তথা সরকার বিএনপির দাবি মেনে নির্দলীয় কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করবে না- আওয়ামী লীগের বক্তৃতা-বিবৃতি পর্যালোচনা করলে সেটাই মনে হয়। বিএনপি যদিও বলছে, তাদের দাবি না মানলে তারা নির্বাচনে যাবে না, তবে তাদের কথার মধ্যে এখন যথেষ্ট ফাঁক থাকছে বলে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন। গত ২২ জুলাই এক ইফতার পার্টিতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার অধীনে নয়।’ স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে। এখন তারা নির্দলীয় সরকার নিয়েই দরকষাকষি চালাবে। এই নির্দলীয় সরকার বলতে বিএনপি প্রকৃতপক্ষে কী বোঝাচ্ছে, কিভাবে এই সরকার গঠিত হবে, নির্দলীয় ব্যক্তিদের কোন মাপকাঠিতে এবং কিভাবে চিহ্নিত করা হবে- এসব কিছু পরিষ্কারভাবে জাতির কাছে বিএনপিকেই তুলে ধরতে হবে।
আওয়ামী লীগ যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে, স্বাভাবিকভাবেই সে সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে বিএনপির প্রবল আপত্তি। তাহলে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আর কোনো উপায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হতে পারে কি-না, সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর তাগিদ বিভিন্ন মহল থেকে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আগে বিএনপিকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তাদের ঝেড়ে কাশতে হবে। কারণ কেউ কেউ এমনও মনে করছেন যে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা যাই হোক না কেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিশেষ করে ৫ সিটি নির্বাচনে জয়ের পর নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির মধ্যে যে দোদুল্যমানতা ছিল, এখন তা অনেকটাই দূর হয়েছে। তাদের এখন আস্থা ফিরে এসেছে। বিএনপি গত ৪ বছর সরকারবিরোধী আন্দোলন করে বস্তুত কিছুই অর্জন করতে পারেনি। অথচ ৫ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং জয়লাভ করে তারা যে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করেছে, তা এককথায় তুলনাহীন। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই এখন এটা মনে করছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক গত ২২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে হারবে। এটা যদি তার কথার কথা না হয়, তাহলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারবে জেনে বিএনপি সে নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে কেন? আর বিএনপি যদি দূরেই থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ হারবে কার কাছে?
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে রাজপথে থাকার কৌশল বিএনপি সম্ভবত এই কারণেই নিচ্ছে যে, যদি তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে সরকার হয়তো দাবি মানতে বাধ্য হলেও হতে পারে। সরকার আন্দোলনের মুখে দাবি মেনে নিলে বিএনপি নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক খেলায় জিতে যাবে। আর মানুষ যদি বিএনপির আন্দোলনের ডাকে সেভাবে সাড়া না দেয়, তাহলেও বিএনপির কোনো ক্ষতি নেই। আন্দোলনের নামে একের পর এক হরতালের কর্মসূচি দিয়ে তারা জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। এতে মানুষ সরকারের ওপরই ক্ষিপ্ত হবে। সরকার জনপ্রিয়তা হারাবে। ঈদের পর বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন কতটুকু জোরালো করে তুলতে পারবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের মানুষের আগ্রহ কম। তাছাড়া আন্দোলনের কোনো অটোসিস্টেম নেই। সুইচ টিপে দিলেই আন্দোলন হয় না। দেশের মানুষের মধ্যে যে আন্দোলনের মনোভাব তীব্র হয়ে উঠেছে, কোনো কিছু থেকেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। আন্দোলন মানেই এখন ধ্বংস, মৃত্যু, রক্তপাত, সংঘাত, হানাহানি। মানুষ এসব চায় না। মানুষ শান্তি চায়। আর সে জন্যই ভোট দিয়ে তারা সরকার পরিবর্তন করতে চায়। সরকারের প্রতি মানুষের অনাস্থা থাকলেও বিরোধী দলের প্রতি আস্থা আছে- বিষয়টি তেমনও নয়। তারপরও মানুষ নিরুপায় হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিরোধী দলকে ভোট দিয়ে থাকেন। এটা বিরোধী দলের সাফল্য নয়, সরকারের ব্যর্থতা। তবে এবার ঈদের পর আন্দোলনে নামলে বিএনপির জন্য কিছু বোনাস পরিস্থিতি থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েক দিনে একাধিকবার বলেছেন, এ সরকারের মেয়াদকালেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কয়েকটি রায় কার্যকর করা হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার যাতে কোনো রায় কার্যকর করতে না পারে সে জন্য তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবিরের প্রতিরোধ কতটা হিংস্র ও ভয়াবহ হয়, সেটা গত কয়েক মাসে দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। জামায়াত-শিবিরের প্রস্তুতির পাশাপাশি ঈদের পর মাঠে নামার কথা জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের আমীর মাওলানা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ‘দেশের আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার যে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে, যে রক্ত ঝরানো হয়েছে, ঈদের পর এর জবাব দেয়া হবে।’ তাদের এই জবাবদান প্রক্রিয়া ৫ মে’র সহিংসতাকে ছাড়িয়ে যাবে কি-না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে আসছে।
দেশের পরিস্থিতি চরম অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে সরকার কী করবে, কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে, সেটা নিয়েও মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের মেয়াদ শেষে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রক্তপাত ঘটালে সেটাও সরকারের জন্য সুখকর হবে না। তবে আওয়ামী লীগ একটি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল। অনেক চড়াই-উতরাই, পতন-অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এই দলে এখনও অসংখ্য পোড় খাওয়া নেতাকর্মী আছেন, যারা বিপদ-আপদে দলের জন্য বুক পেতে দেবেন, কিন্তু পিঠ দেখাবেন না। সিটি নির্বাচনের পরাজয়ের গ্লানিতে ধুঁকছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মুখে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিতে হলে ভোটের আগেই তাদের আরেকটি পরাজয় ঘটবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ ও সরকার ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে কী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে, দেশের মানুষ এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায়।
বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক
No comments