কালের কণ্ঠকে সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান
পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম আলো সম্পাদকের করা তিনটি পৃথক মামলার রায়
দিয়েছেন। প্রথম আলো ও এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে লাগাতার মিথ্যা, ভিত্তিহীন,
কুৎসাপূর্ণ ও মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য এসব মামলা করেন প্রথম আলোর
সম্পাদক।
গত ২২ এপ্রিল দেওয়া রায়ে সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশে ভবিষ্যতে ওই পত্রিকাগুলোকে আরও সতর্ক হতে এবং সাংবাদিকতার সাধারণ নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেন প্রেস কাউন্সিল। রায়ে বলা হয়, মামলাগুলোর শুনানিকালে প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা ওই সব প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
ওই সব প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পত্রিকা তিনটি সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে স্বীকার করে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনজীবীরা। আজ প্রকাশিত হলো কালের কণ্ঠ-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায়ের হুবহু বিবরণ।
প্রেস কাউন্সিলে প্রথম আলোর দায়েরকৃত মামলার রায়
কালের কণ্ঠকে সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ
রায়ের হুবহু বিবরণ
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল
মামলা নং-১/২০১
গত ২২ এপ্রিল দেওয়া রায়ে সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশে ভবিষ্যতে ওই পত্রিকাগুলোকে আরও সতর্ক হতে এবং সাংবাদিকতার সাধারণ নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেন প্রেস কাউন্সিল। রায়ে বলা হয়, মামলাগুলোর শুনানিকালে প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা ওই সব প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
ওই সব প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পত্রিকা তিনটি সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে স্বীকার করে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনজীবীরা। আজ প্রকাশিত হলো কালের কণ্ঠ-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায়ের হুবহু বিবরণ।
প্রেস কাউন্সিলে প্রথম আলোর দায়েরকৃত মামলার রায়
কালের কণ্ঠকে সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ
রায়ের হুবহু বিবরণ
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল
মামলা নং-১/২০১
ফরিয়াদী
জনাব মতিউর রহমান
সম্পাদক, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা
বনাম
প্রতিপক্ষ
১. জনাব ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক
২. জনাব মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন, প্রকাশক
৩. নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ঢাকা
জুডিশিয়াল কমিটির উপস্থিত সদস্যবৃন্দ
১. বিচারপতি বি. কে. দাস, চেয়ারম্যান
২. জনাব শামসুজ্জামান খান, সদস্য
৩. জনাব আকরাম হোসেন খান, সদস্য
৪. জনাব মনজুরুল আহসান বুলবুল, সদস্য
ফরিয়াদীপক্ষের পক্ষে
জনাব মো. খায়রুল ইসলাম
এডভোকেট
জনাব আফতাব উদ্দিন সিদ্দিকী
এডভোকেট
প্রতিপক্ষের পক্ষে
ব্যারিস্টার ইউসুফ খান রাজীব
শুনানির তারিখ: ৫/৯/১২, ১৯/১১/১২ ও ০৩/১২/২০১২
রায়ের তারিখ: ২২/০৪/২০১৩
রায়
‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জনাব মতিউর রহমান এই মর্মে প্রেস কাউন্সিলে একটি মামলা দায়ের করে বলেন যে, ১নং প্রতিপক্ষ জনাব ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় লাগাতার অব্যাহত ও বিরামহীনভাবে ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুৎসাপূর্ণ মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে পারিবারিক পরিমণ্ডলে, কর্মস্থলে এবং দেশে-বিদেশে আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষী এবং হিতৈষী মহলে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কূটকৌশল হিসেবে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার সম্মানহানি করেছেন। ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় ‘মতিউর রহমান ও প্রথম আলোর সেইসব ভূমিকা’; ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রথম আলো নেমেছে মিথ্যাচারে’; ১৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘নামাজকে বিদ্রূপ করছে প্রথম আলো’; ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘প্রথম আলোর অফিসে গিয়ে দেখি, এমন গুনাহর কাজ বিধর্মীরাও করে না’ ও ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’ প্রকাশ করে ফরিয়াদীকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর প্রথম পাতায় শীর্ষ সংবাদ হিসাবে- (ক) মহানবীর নাম নিয়ে আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করে নাকে খত দিয়েও শিক্ষা হয়নি প্রথম আলোর। (খ) নিজেদের অপকর্মের জন্য প্রথম আলো ও এর সম্পাদক মতিউর রহমান নাকে খত দিয়েছেন বারবার।...প্রকাশ করে ফরিয়াদীকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখের প্রথম আলোর ম্যাগাজিন ‘আলপিন’ এ (বর্তমানে বিলুপ্ত) পত্রিকা সম্পাদক, প্রকাশক ও মালিকের অগোচরে-অজ্ঞাতে, নিতান্তই অসাবধানতা ও ভুলবশতঃ একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। ঐ কার্টুনটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে, সেই অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে, ওই ভুলের সমস্ত দায়দায়িত্ব স্বীকার কর ফরিয়াদী পর পর দুদিন (১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭) প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ফলাও করে প্রকাশিত দুটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কার্টুনের জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে আবারও দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়ে ‘ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করেন। ঐ একই দিন সরকারি উদ্যোগে সরকার ও আলেম সমাজের নেতৃবর্গের সমন্বয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফরিয়াদী ওই ঘটনার জন্য আলেম সমাজের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তৎকালীন তথ্য ও আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এ এস এম মতিউর রহমান, বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, শীর্ষস্থানীয় তিন পত্রিকার সম্পাদকসহ দেশের নেতৃস্থানীয় আলেম ওলামাগণ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ওই বৈঠকেই কার্টুন সমস্যার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে পুনরায় ফরিয়াদী ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় প্রথম পাতায় ‘আমরা দুঃখিত ক্ষমা প্রার্থী’ শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি ‘আলপিন’ ম্যাগাজিন বন্ধ করে দেন ও চাকুরীচ্যুত করেন ‘আলপিন’ সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত সাংবাদিককে। ওই বৈঠকে ‘আলপিন’ সম্পর্কীয় সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে ফরিয়াদীর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের যবনিকা ঘটে উপদেষ্টাবৃন্দসহ খতিব ও বিশিষ্ট ওলামাদের সম্মুখে। উক্তরূপ সন্তোষজনক নিষ্পত্তিকৃত ইস্যুকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মৌলবাদকে উস্কে দেওয়ার হীন ষযড়ন্ত্রে ১৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় ‘নামাজকেও বিদ্রূপ করছে প্রথম আলো’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়, ‘প্রথম আলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন-কাহিনী প্রকাশ করে পরে...নাকে খত দিয়েও নিবৃত্ত হয়নি।’ ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার ৩য় বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যায় বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম সূত্রের বরাতে ১ ও ২নং প্রতিপক্ষ দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে গুরুতর মানহানিকর প্রতিবেদন দেওয়া হয় ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’। ঐ প্রতিবেদনের শিরোনামের উপরে কার্টুনিস্ট আরিফের ছবিও ছাপানো হয় এবং উল্লেখ, হয়- ‘(ক) কিন্তু বেচারা আরিফ ৬ (ছয়) মাস রাষ্ট্রদ্রোহ ও ধর্ম অবমাননার দায়ে জেল খাটতে হয় তাকে। (খ) আরিফের মায়ের কান্নাও স্পর্শ করেনি নির্দয় মতিউর রহমানকে। (গ) আমি জেলে যাওয়ার পরদিন প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা আমাকে চিনে না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। প্রথম আলো আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নিজেদের গা বাঁচিয়ে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে। (ঘ) যে পত্রিকায় কাজ করতাম আমি বিপদে পড়ায় সে পত্রিকা বলছে আমাকে নাকি তারা চিনে না।’ ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে ফরিয়াদীর অবমাননাকর ছবিসহ ‘মতিউর রহমান ও প্রথম আলোর সেইসব ভূমিকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। ওই প্রতিবেদনে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয় যে ‘মাইনাস টু ফর্মুলার’ প্রবর্তক হিসাবে ফরিদয়াদীকে আখ্যা দেয়া হয়। ইতিপূর্বে দায়েরকৃত ফরিয়াদীর মামলা নং-৩/২০১০ এর রায়ে বিজ্ঞ প্রেস কাউন্সিল উল্লেখ করেন যে, ‘দেশে রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন “দৈনিক প্রথম আলো”র সম্পাদক, এরও কোন তথ্য বা প্রমাণ দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার আইনজীবী কাউন্সিলের সামনে পেশ করতে পারেন নাই।’ উক্ত মামলায় ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’-এর সম্পাদক ও প্রকাশককে দোষী সাব্যস্ত করে যথারীতি দণ্ডিত করেন। তর্কিত প্রতিবেদনসমূহে মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেন। কিন্তু এরপর ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষগণ মিথ্যা ও মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছেন। ফরিয়াদী আরও কিছু বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, যা আমরা মামলার সিদ্ধান্তের সময়ে উল্লেখ করার চেষ্টা করব।
প্রতিপক্ষগণ যথাসময়ে জবাব দাখিল করে উল্লেখ করেন যে, ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রথম আলোতে ছাপানো প্রতিবেদন ও ফরিয়াদী জনাব মতিউর রহমানের বিভিন্ন লেখা থেকে অংশবিশেষ ছাপা হয় এবং ঐ প্রতিবেদনে কোন মিথ্যা বক্তব্য ছাপা হয়নি। ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রথম আলো নেমেছে মিথ্যাচারে’-প্রতিবেদনটি ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার নিজস্ব কোনো কল্পকাহিনী নয়, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত ফান ম্যাগাজিন ‘আলপিনে’ মহানবীকে (স.) ব্যঙ্গ করে একটি কার্টুন ছাপা হয়। যা নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বাংলাদেশের মুসলমানরা প্রথম আলোর ওই কার্টুনকে চরম ধর্মীয় অবমাননা বলে মনে করেন। ‘দৈনিক কালের কণ্ঠের’ ওই প্রতিবেদনে গত ওয়ান-ইলেভেনে মতিউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে লেখা হয় যা সত্য ঘটনা। এ নিয়ে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করার কোনো ভিত্তি নেই। গত ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিল। আরিফুর রহমান এই প্রতিবেদনের কোন প্রতিবাদ করেননি। সুতরাং আরিফের বক্তব্য সঠিক প্রতীয়মান হয়। এছাড়া এই প্রতিবেদনটি নিউজ এজেন্সি, ‘বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম’ থেকে সংগৃহীত। এটি কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদন নয়। বাংলানিউজের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। কাজেই ‘কালের কণ্ঠের’ বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক। ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘প্রথম আলোর’ সম্পাদকীয়তে লেখা হয়- ‘আমরা সেনাবাহিনীর এই অবস্থানকে স্বাগত জানাই’। ২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে- ‘প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারেনি। বরং রাজনৈতিক চরম দেউলিয়াত্ব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে’। ২০০৭ সালের ১১ জুন তারিখে প্রথম আলোর মন্তব্য প্রতিবেদনে ফরিয়াদী বলেন, ‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’। একই বছরের ১১ জুলাই আবারো দুই নেত্রী সম্পর্কে প্রথম আলোর উপ-সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘সম্মানজনক প্রস্থানের সুযোগ থাকা উচিত’। ২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘১১ জানুয়ারির পরিবর্তনকে এ দেশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে’। ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর করতে প্রথম আলোর সম্পাদক অত্র মামলার ফরিয়াদী জনাব মতিউর রহমান এ রকম অসংখ্য লেখা লিখেছেন। এসব প্রতিবেদন কালের কণ্ঠে ছাপানো কোন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। সুতরাং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলা চলতে পারে না।
উক্ত জবাবের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী বিগত ১২/৮/১২ তারিখে প্রতিউত্তর দাখিল করেছেন। ওই প্রতিউত্তরে মোটামুটি ফরিয়াদীর মামলা সম্পর্কিত তথ্যগুলি পুনরায় ব্যক্ত করেন এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ আমরা যথাসময়ে উল্লেখ করার ইচ্ছা রাখি।
বিগত ৫/০৯/২০১২ তারিখে মামলাটি উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। ফরিয়াদী পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করা হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন জানালে আবেদনটি মঞ্জুর হয় এবং পরবর্তীকালে ০৩/১২/২০১২ তারিখে প্রতিপক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করা হয়। ওই দিন ফরিয়াদীপক্ষও তাদের বক্তব্য পুনরায় পেশ করেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য আমরা শ্রবণ করেছি এবং নথিতে রক্ষিত কাগজাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। লিখিত বক্তব্য ও জবাব ছাড়া কোনপক্ষই তাদের বক্তব্যের সপক্ষে কোনো রকম দলিল বা কাগজপত্রাদি দাখিল করেননি। কোনপক্ষই কোনো মৌখিক সাক্ষ্য প্রদান করেননি। উভয়পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ করার পর আমরা মনে করি যে ফরিয়াদীপক্ষ বা প্রতিপক্ষগণ তাদের বক্তব্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কোনরকম তথ্য বা আইনের বিধান আমাদের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফরিয়াদী জনাব মতিউর রহমান ‘আলপিন’ ম্যাগাজিনে (বর্তমানে বিলুপ্ত) পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনটি প্রকাশের পর ওই কার্টুনের জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে ২০০৭ সালের পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে আলেম সমাজের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তৎকালীন তথ্য ও আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এ এস এম মতিউর রহমান, বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, শীর্ষস্থানীয় তিন পত্রিকার সম্পাদকসহ দেশের নেতৃস্থানীয় আলেম ওলামাগণ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ওই বৈঠকেই কার্টুন সমস্যার আনুষ্ঠানিক যবনিকাপাত ঘটে। ঐ কার্টুনটি প্রকাশের জন্য অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে ‘দৈনিক প্রথম আলো’-এর প্রথম পাতায় ‘আমরা দুঃখিত ক্ষমাপ্রার্থী’ শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন এবং ফরিয়াদী ‘আলপিন’ প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। ইত্যাকার বক্তব্যকে প্রতিপক্ষগণ খণ্ডাতে পারেননি। ২০০৭ সালের ঐ ঘটনা পুনরাবৃত্তি করে ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে প্রতিপক্ষগণের ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা সঙ্গত হয়নি বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করি প্রতিপক্ষগণ ভবিষ্যতে এরূপ অপকর্ম আর করবেন না। ফরিয়াদী ও প্রতিপক্ষের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ কয়েক বছর আগে ‘দৈনিক প্রথম আলোতে’ প্রকাশিত প্রতিবেদন ও কার্টুন সংক্রান্ত বিষয়াদি আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। উপরন্তু প্রতিপক্ষ তাদের জবাবে স্বীকার করছেন: (পৃষ্ঠা-৩) আলপিনে কার্টুন সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদন নয়, প্রতিবেদনটি বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম থেকে সংগৃহীত। কিন্তু সাংবাদিকতার স্বীকৃত সত্য হচ্ছে, যে কোন সূত্র থেকে তথ্য সংগৃহীত হোক না কেন কোন সংবাদপত্রের তা প্রকাশের পর সম্পূর্ণ দায় সেই সম্পাদককেই বহন করতে হবে। পূর্বোক্ত স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠের’ সম্পাদক যেভাবে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন তাকে কোনভাবেই পেশাদারী সম্পাদকসূলভ আচরণ বলা যায় না। অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডমকম [মিডিয়া কম কমপ্লেক্স প্লট # ৩৭১/এ (৩য় তলা), ব্লক # ডি, বসুন্ধরা রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯, বাংলাদেশ, A concern of the East-West Media Group Ltd., banglanews24.com is a most dynamic platform that brings news fast and accurate. For people across the globe, it is also a haunt for refreshing entertainment সূত্র: তাদের ওয়েবসাইট] এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রকাশনাস্থল [৩৭১/এ (৩য় তলা), ব্লক # ডি, বসুন্ধরা রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯] একই ঠিকানায় অবস্থিত। শুধু তাই নয় দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রকাশনা গ্রুপ, ইস্ট-ওয়েস্ট ম�
জনাব মতিউর রহমান
সম্পাদক, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা
বনাম
প্রতিপক্ষ
১. জনাব ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক
২. জনাব মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন, প্রকাশক
৩. নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ঢাকা
জুডিশিয়াল কমিটির উপস্থিত সদস্যবৃন্দ
১. বিচারপতি বি. কে. দাস, চেয়ারম্যান
২. জনাব শামসুজ্জামান খান, সদস্য
৩. জনাব আকরাম হোসেন খান, সদস্য
৪. জনাব মনজুরুল আহসান বুলবুল, সদস্য
ফরিয়াদীপক্ষের পক্ষে
জনাব মো. খায়রুল ইসলাম
এডভোকেট
জনাব আফতাব উদ্দিন সিদ্দিকী
এডভোকেট
প্রতিপক্ষের পক্ষে
ব্যারিস্টার ইউসুফ খান রাজীব
শুনানির তারিখ: ৫/৯/১২, ১৯/১১/১২ ও ০৩/১২/২০১২
রায়ের তারিখ: ২২/০৪/২০১৩
রায়
‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জনাব মতিউর রহমান এই মর্মে প্রেস কাউন্সিলে একটি মামলা দায়ের করে বলেন যে, ১নং প্রতিপক্ষ জনাব ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় লাগাতার অব্যাহত ও বিরামহীনভাবে ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুৎসাপূর্ণ মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে পারিবারিক পরিমণ্ডলে, কর্মস্থলে এবং দেশে-বিদেশে আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষী এবং হিতৈষী মহলে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কূটকৌশল হিসেবে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার সম্মানহানি করেছেন। ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় ‘মতিউর রহমান ও প্রথম আলোর সেইসব ভূমিকা’; ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রথম আলো নেমেছে মিথ্যাচারে’; ১৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘নামাজকে বিদ্রূপ করছে প্রথম আলো’; ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘প্রথম আলোর অফিসে গিয়ে দেখি, এমন গুনাহর কাজ বিধর্মীরাও করে না’ ও ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’ প্রকাশ করে ফরিয়াদীকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর প্রথম পাতায় শীর্ষ সংবাদ হিসাবে- (ক) মহানবীর নাম নিয়ে আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করে নাকে খত দিয়েও শিক্ষা হয়নি প্রথম আলোর। (খ) নিজেদের অপকর্মের জন্য প্রথম আলো ও এর সম্পাদক মতিউর রহমান নাকে খত দিয়েছেন বারবার।...প্রকাশ করে ফরিয়াদীকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখের প্রথম আলোর ম্যাগাজিন ‘আলপিন’ এ (বর্তমানে বিলুপ্ত) পত্রিকা সম্পাদক, প্রকাশক ও মালিকের অগোচরে-অজ্ঞাতে, নিতান্তই অসাবধানতা ও ভুলবশতঃ একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। ঐ কার্টুনটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে, সেই অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে, ওই ভুলের সমস্ত দায়দায়িত্ব স্বীকার কর ফরিয়াদী পর পর দুদিন (১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭) প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ফলাও করে প্রকাশিত দুটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কার্টুনের জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে আবারও দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়ে ‘ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করেন। ঐ একই দিন সরকারি উদ্যোগে সরকার ও আলেম সমাজের নেতৃবর্গের সমন্বয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফরিয়াদী ওই ঘটনার জন্য আলেম সমাজের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তৎকালীন তথ্য ও আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এ এস এম মতিউর রহমান, বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, শীর্ষস্থানীয় তিন পত্রিকার সম্পাদকসহ দেশের নেতৃস্থানীয় আলেম ওলামাগণ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ওই বৈঠকেই কার্টুন সমস্যার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে পুনরায় ফরিয়াদী ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় প্রথম পাতায় ‘আমরা দুঃখিত ক্ষমা প্রার্থী’ শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি ‘আলপিন’ ম্যাগাজিন বন্ধ করে দেন ও চাকুরীচ্যুত করেন ‘আলপিন’ সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত সাংবাদিককে। ওই বৈঠকে ‘আলপিন’ সম্পর্কীয় সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে ফরিয়াদীর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের যবনিকা ঘটে উপদেষ্টাবৃন্দসহ খতিব ও বিশিষ্ট ওলামাদের সম্মুখে। উক্তরূপ সন্তোষজনক নিষ্পত্তিকৃত ইস্যুকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মৌলবাদকে উস্কে দেওয়ার হীন ষযড়ন্ত্রে ১৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় ‘নামাজকেও বিদ্রূপ করছে প্রথম আলো’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়, ‘প্রথম আলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন-কাহিনী প্রকাশ করে পরে...নাকে খত দিয়েও নিবৃত্ত হয়নি।’ ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার ৩য় বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যায় বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম সূত্রের বরাতে ১ ও ২নং প্রতিপক্ষ দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে গুরুতর মানহানিকর প্রতিবেদন দেওয়া হয় ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’। ঐ প্রতিবেদনের শিরোনামের উপরে কার্টুনিস্ট আরিফের ছবিও ছাপানো হয় এবং উল্লেখ, হয়- ‘(ক) কিন্তু বেচারা আরিফ ৬ (ছয়) মাস রাষ্ট্রদ্রোহ ও ধর্ম অবমাননার দায়ে জেল খাটতে হয় তাকে। (খ) আরিফের মায়ের কান্নাও স্পর্শ করেনি নির্দয় মতিউর রহমানকে। (গ) আমি জেলে যাওয়ার পরদিন প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা আমাকে চিনে না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। প্রথম আলো আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নিজেদের গা বাঁচিয়ে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে। (ঘ) যে পত্রিকায় কাজ করতাম আমি বিপদে পড়ায় সে পত্রিকা বলছে আমাকে নাকি তারা চিনে না।’ ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে ফরিয়াদীর অবমাননাকর ছবিসহ ‘মতিউর রহমান ও প্রথম আলোর সেইসব ভূমিকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। ওই প্রতিবেদনে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয় যে ‘মাইনাস টু ফর্মুলার’ প্রবর্তক হিসাবে ফরিদয়াদীকে আখ্যা দেয়া হয়। ইতিপূর্বে দায়েরকৃত ফরিয়াদীর মামলা নং-৩/২০১০ এর রায়ে বিজ্ঞ প্রেস কাউন্সিল উল্লেখ করেন যে, ‘দেশে রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন “দৈনিক প্রথম আলো”র সম্পাদক, এরও কোন তথ্য বা প্রমাণ দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার আইনজীবী কাউন্সিলের সামনে পেশ করতে পারেন নাই।’ উক্ত মামলায় ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’-এর সম্পাদক ও প্রকাশককে দোষী সাব্যস্ত করে যথারীতি দণ্ডিত করেন। তর্কিত প্রতিবেদনসমূহে মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেন। কিন্তু এরপর ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষগণ মিথ্যা ও মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছেন। ফরিয়াদী আরও কিছু বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, যা আমরা মামলার সিদ্ধান্তের সময়ে উল্লেখ করার চেষ্টা করব।
প্রতিপক্ষগণ যথাসময়ে জবাব দাখিল করে উল্লেখ করেন যে, ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রথম আলোতে ছাপানো প্রতিবেদন ও ফরিয়াদী জনাব মতিউর রহমানের বিভিন্ন লেখা থেকে অংশবিশেষ ছাপা হয় এবং ঐ প্রতিবেদনে কোন মিথ্যা বক্তব্য ছাপা হয়নি। ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রথম আলো নেমেছে মিথ্যাচারে’-প্রতিবেদনটি ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার নিজস্ব কোনো কল্পকাহিনী নয়, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত ফান ম্যাগাজিন ‘আলপিনে’ মহানবীকে (স.) ব্যঙ্গ করে একটি কার্টুন ছাপা হয়। যা নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বাংলাদেশের মুসলমানরা প্রথম আলোর ওই কার্টুনকে চরম ধর্মীয় অবমাননা বলে মনে করেন। ‘দৈনিক কালের কণ্ঠের’ ওই প্রতিবেদনে গত ওয়ান-ইলেভেনে মতিউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে লেখা হয় যা সত্য ঘটনা। এ নিয়ে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করার কোনো ভিত্তি নেই। গত ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিল। আরিফুর রহমান এই প্রতিবেদনের কোন প্রতিবাদ করেননি। সুতরাং আরিফের বক্তব্য সঠিক প্রতীয়মান হয়। এছাড়া এই প্রতিবেদনটি নিউজ এজেন্সি, ‘বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম’ থেকে সংগৃহীত। এটি কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদন নয়। বাংলানিউজের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। কাজেই ‘কালের কণ্ঠের’ বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক। ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘প্রথম আলোর’ সম্পাদকীয়তে লেখা হয়- ‘আমরা সেনাবাহিনীর এই অবস্থানকে স্বাগত জানাই’। ২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে- ‘প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারেনি। বরং রাজনৈতিক চরম দেউলিয়াত্ব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে’। ২০০৭ সালের ১১ জুন তারিখে প্রথম আলোর মন্তব্য প্রতিবেদনে ফরিয়াদী বলেন, ‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’। একই বছরের ১১ জুলাই আবারো দুই নেত্রী সম্পর্কে প্রথম আলোর উপ-সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘সম্মানজনক প্রস্থানের সুযোগ থাকা উচিত’। ২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘১১ জানুয়ারির পরিবর্তনকে এ দেশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে’। ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর করতে প্রথম আলোর সম্পাদক অত্র মামলার ফরিয়াদী জনাব মতিউর রহমান এ রকম অসংখ্য লেখা লিখেছেন। এসব প্রতিবেদন কালের কণ্ঠে ছাপানো কোন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। সুতরাং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলা চলতে পারে না।
উক্ত জবাবের বিরুদ্ধে ফরিয়াদী বিগত ১২/৮/১২ তারিখে প্রতিউত্তর দাখিল করেছেন। ওই প্রতিউত্তরে মোটামুটি ফরিয়াদীর মামলা সম্পর্কিত তথ্যগুলি পুনরায় ব্যক্ত করেন এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ আমরা যথাসময়ে উল্লেখ করার ইচ্ছা রাখি।
বিগত ৫/০৯/২০১২ তারিখে মামলাটি উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। ফরিয়াদী পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করা হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন জানালে আবেদনটি মঞ্জুর হয় এবং পরবর্তীকালে ০৩/১২/২০১২ তারিখে প্রতিপক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করা হয়। ওই দিন ফরিয়াদীপক্ষও তাদের বক্তব্য পুনরায় পেশ করেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য আমরা শ্রবণ করেছি এবং নথিতে রক্ষিত কাগজাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। লিখিত বক্তব্য ও জবাব ছাড়া কোনপক্ষই তাদের বক্তব্যের সপক্ষে কোনো রকম দলিল বা কাগজপত্রাদি দাখিল করেননি। কোনপক্ষই কোনো মৌখিক সাক্ষ্য প্রদান করেননি। উভয়পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ করার পর আমরা মনে করি যে ফরিয়াদীপক্ষ বা প্রতিপক্ষগণ তাদের বক্তব্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কোনরকম তথ্য বা আইনের বিধান আমাদের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফরিয়াদী জনাব মতিউর রহমান ‘আলপিন’ ম্যাগাজিনে (বর্তমানে বিলুপ্ত) পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনটি প্রকাশের পর ওই কার্টুনের জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে ২০০৭ সালের পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে আলেম সমাজের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তৎকালীন তথ্য ও আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এ এস এম মতিউর রহমান, বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, শীর্ষস্থানীয় তিন পত্রিকার সম্পাদকসহ দেশের নেতৃস্থানীয় আলেম ওলামাগণ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ওই বৈঠকেই কার্টুন সমস্যার আনুষ্ঠানিক যবনিকাপাত ঘটে। ঐ কার্টুনটি প্রকাশের জন্য অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে ‘দৈনিক প্রথম আলো’-এর প্রথম পাতায় ‘আমরা দুঃখিত ক্ষমাপ্রার্থী’ শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন এবং ফরিয়াদী ‘আলপিন’ প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। ইত্যাকার বক্তব্যকে প্রতিপক্ষগণ খণ্ডাতে পারেননি। ২০০৭ সালের ঐ ঘটনা পুনরাবৃত্তি করে ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে প্রতিপক্ষগণের ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা সঙ্গত হয়নি বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করি প্রতিপক্ষগণ ভবিষ্যতে এরূপ অপকর্ম আর করবেন না। ফরিয়াদী ও প্রতিপক্ষের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ কয়েক বছর আগে ‘দৈনিক প্রথম আলোতে’ প্রকাশিত প্রতিবেদন ও কার্টুন সংক্রান্ত বিষয়াদি আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। উপরন্তু প্রতিপক্ষ তাদের জবাবে স্বীকার করছেন: (পৃষ্ঠা-৩) আলপিনে কার্টুন সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদন নয়, প্রতিবেদনটি বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম থেকে সংগৃহীত। কিন্তু সাংবাদিকতার স্বীকৃত সত্য হচ্ছে, যে কোন সূত্র থেকে তথ্য সংগৃহীত হোক না কেন কোন সংবাদপত্রের তা প্রকাশের পর সম্পূর্ণ দায় সেই সম্পাদককেই বহন করতে হবে। পূর্বোক্ত স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠের’ সম্পাদক যেভাবে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন তাকে কোনভাবেই পেশাদারী সম্পাদকসূলভ আচরণ বলা যায় না। অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডমকম [মিডিয়া কম কমপ্লেক্স প্লট # ৩৭১/এ (৩য় তলা), ব্লক # ডি, বসুন্ধরা রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯, বাংলাদেশ, A concern of the East-West Media Group Ltd., banglanews24.com is a most dynamic platform that brings news fast and accurate. For people across the globe, it is also a haunt for refreshing entertainment সূত্র: তাদের ওয়েবসাইট] এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রকাশনাস্থল [৩৭১/এ (৩য় তলা), ব্লক # ডি, বসুন্ধরা রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯] একই ঠিকানায় অবস্থিত। শুধু তাই নয় দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রকাশনা গ্রুপ, ইস্ট-ওয়েস্ট ম�
No comments