এভারেস্ট জয়ের পর চলে গেলেন সজল খালেদ
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে অসীম শূন্যতায়
পাড়ি জমালেন মোহাম্মদ খালেদ হোসেন (৩৫)। বাংলাদেশের এই পর্বতারোহী ও
চলচ্চিত্র নির্মাতা সজল খালেদ নামে পরিচিত ছিলেন। গত সোমবার সকাল সাড়ে
আটটার দিকে তিনি এভারেস্ট চূড়ায় ওঠেন। এরপর সাউথ কোলের ওপরে এসে বিকেলে
আকস্মিকভাবে তিনি মারা যান।
নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাস গতকাল মঙ্গলবার এ খবর নিশ্চিত করেছে।
দূতাবাসের প্রথম সচিব খান মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন জানান, গতকাল খালেদ হোসেন
এভারেস্ট জয় করেন। সেখান থেকে নামার পথে বিকেলে এই পর্বতারোহী মারা যান।
ওই দলে আটজন সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধও আছেন। তিনিও
এভারেস্ট জয় করেছেন।
মাউন্ট এভারেস্টসহ হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ জয়ের অভিযান পরিচালনা
করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও সজল খালেদের মৃত্যু সংবাদ
নিশ্চিত করেছেন। খালেদ এবারের এভারেস্ট অভিযানের অনুমতি সংগ্রহ করেছিলেন
সেভেন সামিট ট্রেকস (প্রা.) লিমিটেড থেকে। আর তাঁর এভারেস্ট অভিযানের
আয়োজন সম্পন্ন করেন শেরপা পেমবা দরজি। কাঠমান্ডুর হিমালয়ান গাইডস প্রা. লিমিটেডের কর্ণধার ঈশ্বরী পাড়োয়াল
গতকাল রাত নয়টার দিকে প্রথম আলোকে জানান, সজল খালেদের সহপর্বতারোহী নেপালি
বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক সুদর্শন গৌতমকে ক্যাম্প থ্রি থেকে সন্ধ্যা
ছয়টার দিকে হেলিকপ্টারে করে সিরিক ট্রাবল মেডিসিন সেন্টারে আনা হয়েছে।
তিনি একজন প্রতিবন্ধী পর্বতারোহী, তাঁর দুহাত নেই। চিকিৎসকেরা তাঁকে গতকাল
রাতে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেননি। পেমবা দরজি এবং সজল খালেদের সঙ্গী শেরপার সঙ্গে কথা বলে ঈশ্বরী
পাড়োয়াল প্রথম আলোকে জানান, ২০ মে সকাল সাড়ে আটটায় ২৯ হাজার ৩৫ ফুট
উচ্চতার এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণ করেন তিনি। খালেদের সহ-পর্বতারোহীরা নয়টার
দিকে এভারেস্টে ওঠেন। সাড়ে নয়টার দিকে সবাই একসঙ্গে নামতে শুরু করেন। ঈশ্বরী বলেন, নামার সময় পূর্ণ অক্সিজেন ছিল খালেদের সঙ্গে। তিনি বেশ
উল্লসিত ছিলেন। সাউথ কোলের ওপরে আনমানিক আট হাজার ৬০০ মিটার (২৮ হাজার ২১৫
ফুট) উচ্চতায় এসে শেরপা সর্দার মিংমাকে জানান তিনি ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম
নিয়ে সজল ঢাকায় তাঁর স্ত্রী তাহমিনা খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। ঈশ্বরী
বলেন, মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে মারা যান খালেদ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিনি
উচ্চতাজনিত অসুস্থতা ও প্রচণ্ড ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ঈশ্বরী আরও জানান, এভারেস্টে কোনো পর্বতারোহী মারা গেলে তাঁর পরিবার
চাইলে সাধারণত মৃতদেহ অভিযান মৌসুম শেষে শেরপারা বহন করে নিয়ে আসেন। তবে
খালেদ যে উচ্চতায় মারা গেছেন সেখান থেকে মৃতদেহ বহন করে আনা বেশ কঠিন।
খালেদ তাঁর এভারেস্ট অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এভারেস্টের নেপাল অংশ
অর্থাৎ দক্ষিণ দিক (সাউথ ফেস) দিয়ে। এর আগে ২০১১ সালে তিনি এভারেস্ট
অভিযানে গিয়েছিলেন তিব্বত অংশ অর্থাৎ উত্তর দিক দিয়ে। সেবার শারীরিকভাবে
অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রায় ২৩ হাজার ফুট উচ্চতার ক্যাম্প ওয়ান থেকে তিনি
নেমে আসেন।
জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছান খালেদ। ২৫ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
২০০৯ সালে খালেদ গণমাধ্যমকর্মী তাহমিনা খানকে বিয়ে করেন। তাঁদের ছেলে সুষ্মিতের বয়স প্রায় দুই বছর।
খালেদ এর আগে সিকিমের ফ্রে পর্বত (২০০৬), নেপালের মাকালু (২০০৯),
হিমালয়ের বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ পিক (২০১০), অন্নপূর্ণা রেঞ্জের
সিংগুচুলি পর্বত (২০১১) জয় করেন।
চলচ্চিত্রকার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন এই তরুণ। মুহম্মদ জাফর
ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে তিনি তৈরি করেন সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
কাজলের দিনরাত্রি। গত জানুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক
চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।
No comments