১২শ’ বছর আগের তীব্র বিকিরণ রহস্য
আজ থেকে ১২শ’ বছরেরও আগে এক বড় ধরনের
তেজস্ক্রিয়তার অতি সুতীব্র ঝাপটা এই পৃথিবীর বুকে আঘাত হেনেছিল। বিজ্ঞানীরা
আজ তথ্যপ্রমাণ উদ্ঘাটন করে দেখিয়েছেন যে,
কাছাকাছি জায়গায় গামা রশ্মির ক্ষণিকের বিস্ফোরণ থেকে ওই তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ হয়েছিল এবং তারই ঝাপ্টায় স্নাত হয়েছিল এই পৃথিবী।
দুই জার্মান বিজ্ঞানী ভ্যালেরি হ্যাম্বারিয়ান এবং রালফ নিউহাউসার তাদের গবেষণার ফলাফল ‘মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়াল এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র সাময়িকীতে প্রকাশ করে সেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কার্যকারণ দেখিয়েছেন।
এর আগে ২০১২ সালে বিজ্ঞানী ফুসা মিয়াকে ঘোষণা করেন যে, ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে গাছের গুঁড়ির ভেতরে যে বৃত্তাকার রেখা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে তিনি উচ্চামাত্রার আইসোটোপ কার্বন-১৪ এবং বেরিলিয়াম-১০ এর অস্তিত্ব নির্ণয় করেছেন। তা থেকে তিনি ধারণা করেন যে , ৭৭৪ কি ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের এক সুতীব্র ঝাপ্টা পৃথিবীর গায়ে এসে লেগেছিল। মহাকাশ থেকে আসা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সঙ্গে নাইট্রোজেনের অণু বা এটমের সংঘর্ষ হলে নাইট্রোজেন এটমগুলো এসব ভারি আকারের কার্বন ও বেরিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। আগের গবেষণায় পৃথিবীর কাছাকাছি অতিকায় কোন নক্ষত্রের বিস্ফোরণের (সুপারনোভা) সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া হয়েছিল। কেননা সে সময় এ জাতীয় কিছু পর্যবেক্ষণের কথা কোথাও নথিভুক্ত ছিল না এবং কোন অবশেষও কোথাও পাওয়া যায়নি।
সৌর ঝলক থেকে কার্বন-১৪ ও বেরিলিয়াম-১০-এর সৃষ্টি হয়েছিল কিনা অধ্যাপক মিয়াকে সে সম্ভাবনাও বিবেচনা করে দেখেছিলেন। তবে সে সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া হয়। কারণ সৌরঝলক যত তীব্রই হোক না কেন গাছের গুঁড়ির ভেতর কার্বন-১৪ এর যে আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে সেটা সৌরঝলকের কারণে হবার কথা নয়। বড় ধরনের সৌরঝলকের সঙ্গে সূর্যের ছটাম-ল থেকে কোটি কোটি টন পদার্থ কণিকা উৎক্ষিপ্ত হয় যার পরিণতিতে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর আকাশে দেখা দেয় বিস্ময়কর আলোর খেলা যাকে বলে অরোরা বা মেরুজ্যোতি। কিন্তু এ রকম কিছু যে সে বছর ঘটেছিল তারও কোন ঐতিহাসিক রেকর্ড নেই।
কিন্তু দুই জার্মান গবেষক এ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকলে লিপিবদ্ধ একটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। সেখানে সূর্যাস্তের পর দেখতে পাওয়া ক্রুশবিদ্ধ যিশুর লাল মূর্তির বর্ণনা দেয়া আছে। এ থেকে গবেষকদ্বয় ধারণা করেন যে, ব্যাপারটা সুপারনোভা হতেও পারে। তবে ওটা তো ৭৭৬ সালের ঘটনা। অত আগে কার্বন-১৪ এর উপাত্তের কোন হিসাব বা বিবরণ রাখার উপায় ছিল না। তাছাড়া কোন অবশেষের সন্ধান নির্ণয় করা যায়নি কেন তারও কোন ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ড. হ্যাম্বারিয়ান ও ড. নিউহাউসার কার্বন-১৪ ও বেরিলিয়াম-১০ এর উপস্থিতির আরেকটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যা কার্বন-১৪ এর পরিমাণ এবং মহাকাশে কোন রেকর্ডভুক্ত ঘটনার অনুপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সেটা হলো নক্ষত্রের দুই ঘনসংবদ্ধ অবশেষের পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল এবং তারপর তারা একত্রে মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। সেটা হতে পারে দুই কৃষ্ণ বিবর অথবা দুই নিউট্রন তারা কিংবা দুই শ্বেত বামন। যখন এদের সংঘর্ষ হয় তখন গামারের আকারে কিছুটা এনার্জি বা শক্তির বেরিয়ে আসে। এই গামা রশ্মি হলো তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালীর সবচেয়ে তেজোময় অংশ। এই বর্ণালীর মধ্যে দৃশ্যমান আলোও অন্তর্গত। এরা উভয়ে সাংঘর্ষিক রূপ ধরে মিলিত হবার সময় গামা-রশ্মির বিচ্ছুরণ অতি তীব্র অথচ ক্ষণস্থায়ী রূপ ধারণ করে। এমনকি তা দুই সেকেন্ডেরও কম সময় স্থায়ী হয়। প্রতিবছর অন্যান্য নীহারিকায় এমন দৃশ্য বহুবার দেখা যায়। তবে বিস্ফোরণ দীর্ঘস্থায়ী হলে দৃশ্যমান কোন আলো চোখে পড়ে না। ৭৭৪/৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের সুতীব্র তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের এই যদি ব্যাখ্যা হয় তাহলে একীভূত হওয়া নক্ষত্রগুলো প্রায় ৩ হাজার আলোকবর্ষের চেয়ে কাছাকাছি না হয়ে পারেনি। কারণ তার চেয়ে বেশি কাছাকাছি হলে পৃথিবীর কিছু কিছু প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটত। কার্বন-১৪ এর পরিমাপের ভিত্তিতে হ্যাম্বেরিয়ান ও নিউহাউসার মনে করেন যে, সূর্য থেকে ৩ হাজার হতে ১২ হাজার আলোকবর্ষের মাঝামাঝি কোন এক জায়গান গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
তাদের ধারণা সঠিক হলে সুপারনোভা অথবা অরোরার দেখা পাওয়ার কেন কোন রেকর্ড নেই তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। অন্যান্য গবেষণা থেকে বুঝা যায় যে, গামা রশ্মির ক্ষণিকের বিস্ফোরণের সময় কিছু দৃশ্যমান আলো নির্গত হয় যা অপেক্ষাকৃত কাছের ঘটনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও সেই একীভূত বস্তুটির সন্ধান করতে পারেন যা হলো ১২শ’ বছরের পুরনো এক কৃষ্ণ বিবর অথবা নিউট্রন তারা যা কিনা সূর্য থেকে ৩০০০-১২০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে সুপারনোভার অবশেষ হিসাবে যে গ্যাস ও ধূলিকণা থেকে যাওয়ার কথা এক্ষেত্রে তা ছিল না।
ড. নিউহাউসারের মন্তব্য হলো, ‘গামা রশ্মির বিস্ফোরণ যদি পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি হতো তাহলে এর বায়োস্ফিয়ারের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হতো। তবে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকলেও আজ একই ধরনের ঘটনায় ল-ভ- হয়ে যেত স্পর্শকাতর ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার যার ওপর আমাদের উন্নত সমাজগুলো এত বেশি নির্ভরশীল। প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীর গায়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের এমন ঝাপ্টা কত ঘন ঘন আঘাত হানে? এর জবাব হলো গত ৩ হাজার বছরে এমন ঘটনা একটাই মাত্র সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হয়। আজ সর্বোচ্চ বয়সের যেসব গাছ বেঁচে রয়েছে সেগুলোই এর প্রমাণ ধারণ করে আছে।
প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ডেস্ক
সূত্র : ডেইলি মেইল
দুই জার্মান বিজ্ঞানী ভ্যালেরি হ্যাম্বারিয়ান এবং রালফ নিউহাউসার তাদের গবেষণার ফলাফল ‘মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়াল এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র সাময়িকীতে প্রকাশ করে সেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কার্যকারণ দেখিয়েছেন।
এর আগে ২০১২ সালে বিজ্ঞানী ফুসা মিয়াকে ঘোষণা করেন যে, ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে গাছের গুঁড়ির ভেতরে যে বৃত্তাকার রেখা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে তিনি উচ্চামাত্রার আইসোটোপ কার্বন-১৪ এবং বেরিলিয়াম-১০ এর অস্তিত্ব নির্ণয় করেছেন। তা থেকে তিনি ধারণা করেন যে , ৭৭৪ কি ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের এক সুতীব্র ঝাপ্টা পৃথিবীর গায়ে এসে লেগেছিল। মহাকাশ থেকে আসা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সঙ্গে নাইট্রোজেনের অণু বা এটমের সংঘর্ষ হলে নাইট্রোজেন এটমগুলো এসব ভারি আকারের কার্বন ও বেরিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। আগের গবেষণায় পৃথিবীর কাছাকাছি অতিকায় কোন নক্ষত্রের বিস্ফোরণের (সুপারনোভা) সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া হয়েছিল। কেননা সে সময় এ জাতীয় কিছু পর্যবেক্ষণের কথা কোথাও নথিভুক্ত ছিল না এবং কোন অবশেষও কোথাও পাওয়া যায়নি।
সৌর ঝলক থেকে কার্বন-১৪ ও বেরিলিয়াম-১০-এর সৃষ্টি হয়েছিল কিনা অধ্যাপক মিয়াকে সে সম্ভাবনাও বিবেচনা করে দেখেছিলেন। তবে সে সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া হয়। কারণ সৌরঝলক যত তীব্রই হোক না কেন গাছের গুঁড়ির ভেতর কার্বন-১৪ এর যে আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে সেটা সৌরঝলকের কারণে হবার কথা নয়। বড় ধরনের সৌরঝলকের সঙ্গে সূর্যের ছটাম-ল থেকে কোটি কোটি টন পদার্থ কণিকা উৎক্ষিপ্ত হয় যার পরিণতিতে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর আকাশে দেখা দেয় বিস্ময়কর আলোর খেলা যাকে বলে অরোরা বা মেরুজ্যোতি। কিন্তু এ রকম কিছু যে সে বছর ঘটেছিল তারও কোন ঐতিহাসিক রেকর্ড নেই।
কিন্তু দুই জার্মান গবেষক এ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকলে লিপিবদ্ধ একটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। সেখানে সূর্যাস্তের পর দেখতে পাওয়া ক্রুশবিদ্ধ যিশুর লাল মূর্তির বর্ণনা দেয়া আছে। এ থেকে গবেষকদ্বয় ধারণা করেন যে, ব্যাপারটা সুপারনোভা হতেও পারে। তবে ওটা তো ৭৭৬ সালের ঘটনা। অত আগে কার্বন-১৪ এর উপাত্তের কোন হিসাব বা বিবরণ রাখার উপায় ছিল না। তাছাড়া কোন অবশেষের সন্ধান নির্ণয় করা যায়নি কেন তারও কোন ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ড. হ্যাম্বারিয়ান ও ড. নিউহাউসার কার্বন-১৪ ও বেরিলিয়াম-১০ এর উপস্থিতির আরেকটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যা কার্বন-১৪ এর পরিমাণ এবং মহাকাশে কোন রেকর্ডভুক্ত ঘটনার অনুপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সেটা হলো নক্ষত্রের দুই ঘনসংবদ্ধ অবশেষের পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল এবং তারপর তারা একত্রে মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। সেটা হতে পারে দুই কৃষ্ণ বিবর অথবা দুই নিউট্রন তারা কিংবা দুই শ্বেত বামন। যখন এদের সংঘর্ষ হয় তখন গামারের আকারে কিছুটা এনার্জি বা শক্তির বেরিয়ে আসে। এই গামা রশ্মি হলো তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালীর সবচেয়ে তেজোময় অংশ। এই বর্ণালীর মধ্যে দৃশ্যমান আলোও অন্তর্গত। এরা উভয়ে সাংঘর্ষিক রূপ ধরে মিলিত হবার সময় গামা-রশ্মির বিচ্ছুরণ অতি তীব্র অথচ ক্ষণস্থায়ী রূপ ধারণ করে। এমনকি তা দুই সেকেন্ডেরও কম সময় স্থায়ী হয়। প্রতিবছর অন্যান্য নীহারিকায় এমন দৃশ্য বহুবার দেখা যায়। তবে বিস্ফোরণ দীর্ঘস্থায়ী হলে দৃশ্যমান কোন আলো চোখে পড়ে না। ৭৭৪/৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের সুতীব্র তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের এই যদি ব্যাখ্যা হয় তাহলে একীভূত হওয়া নক্ষত্রগুলো প্রায় ৩ হাজার আলোকবর্ষের চেয়ে কাছাকাছি না হয়ে পারেনি। কারণ তার চেয়ে বেশি কাছাকাছি হলে পৃথিবীর কিছু কিছু প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটত। কার্বন-১৪ এর পরিমাপের ভিত্তিতে হ্যাম্বেরিয়ান ও নিউহাউসার মনে করেন যে, সূর্য থেকে ৩ হাজার হতে ১২ হাজার আলোকবর্ষের মাঝামাঝি কোন এক জায়গান গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
তাদের ধারণা সঠিক হলে সুপারনোভা অথবা অরোরার দেখা পাওয়ার কেন কোন রেকর্ড নেই তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। অন্যান্য গবেষণা থেকে বুঝা যায় যে, গামা রশ্মির ক্ষণিকের বিস্ফোরণের সময় কিছু দৃশ্যমান আলো নির্গত হয় যা অপেক্ষাকৃত কাছের ঘটনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও সেই একীভূত বস্তুটির সন্ধান করতে পারেন যা হলো ১২শ’ বছরের পুরনো এক কৃষ্ণ বিবর অথবা নিউট্রন তারা যা কিনা সূর্য থেকে ৩০০০-১২০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে সুপারনোভার অবশেষ হিসাবে যে গ্যাস ও ধূলিকণা থেকে যাওয়ার কথা এক্ষেত্রে তা ছিল না।
ড. নিউহাউসারের মন্তব্য হলো, ‘গামা রশ্মির বিস্ফোরণ যদি পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি হতো তাহলে এর বায়োস্ফিয়ারের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হতো। তবে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকলেও আজ একই ধরনের ঘটনায় ল-ভ- হয়ে যেত স্পর্শকাতর ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার যার ওপর আমাদের উন্নত সমাজগুলো এত বেশি নির্ভরশীল। প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীর গায়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের এমন ঝাপ্টা কত ঘন ঘন আঘাত হানে? এর জবাব হলো গত ৩ হাজার বছরে এমন ঘটনা একটাই মাত্র সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হয়। আজ সর্বোচ্চ বয়সের যেসব গাছ বেঁচে রয়েছে সেগুলোই এর প্রমাণ ধারণ করে আছে।
প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ডেস্ক
সূত্র : ডেইলি মেইল
No comments