রাজধানীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন -নগরজীবন by ধরিত্রী সরকার
২৭ জুলাই রাতে ঢাকা শহরে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল। গোটা রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছিল ব্যাপক জলাবদ্ধতা। রাজধানীবাসীকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। জলাবদ্ধতার ভয়াবহতার কারণে নীতিনির্ধারক পর্যায়ও তৎপর হয়ে উঠেছিল। প্রশ্ন হলো, একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলে রাজধানীতে যে এমন জলাবদ্ধতা হবে, তা কি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর খুবই অজানা ছিল?
এটা সত্য, ২৭ তারিখে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগর কি এর চেয়ে অনেক কম মাত্রার বৃষ্টিপাত সহ্য করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেনি? বর্ষাকালে দুই দিন ভালোমতো বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের বেশ কিছু অংশে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। বর্ষাকালে ঢাকা মহানগরে এ দৃশ্য কিন্তু নতুন কিছু নয়। ঢাকার নিকটবর্তী ডিএনডি বাঁধের ভেতরের জলাবদ্ধতা আজ এক বিশাল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। খালগুলো হারিয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপর্যাপ্ত ও অরক্ষিত পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা আজ রাজধানীকে জলাবদ্ধতার নগরে পরিণত করেছে।
মনে রাখা দরকার, ঢাকা নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ কোনো সহজসাধ্য ও স্বল্প দিনের কাজ নয়। এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক সমন্বয় ও পরিকল্পিত কার্যক্রম। শুধু আমাদের দেশেই নয়, উন্নত দেশগুলোতেও ভারী বৃষ্টিপাতে রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তাত্ক্ষণিকভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে সেসব দেশের শহরের সঙ্গে আমাদের ঢাকার অনেক পার্থক্য রয়েছে। সেসব শহরে বৃষ্টিপাতের কিছুক্ষণের মধ্যে পানি সরে যায়, কারণ সেখানে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা। আমাদের ঢাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা হয়, কারণ সরে যাওয়ার রাস্তা পায় না। ফলে অনেক সময় অনেক এলাকায় পানি দুই-তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত জমে থাকে।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা কয়েক বছর ধরে ক্রমেই প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এর মূল কারণই হলে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা। দিনে দিনে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, অবকাঠামো বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে উঠছে। বরং জলাশয় ভরাট হতে হতে নিষ্কাশনের সুযোগ কমছে। এক সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৪৬টি ছোট-বড় খাল প্রবাহিত হতো, যা এই শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দারুণভাবে সহায়ক ছিল। কিন্তু এখন ৪৬টির মধ্যে কোনোরকমে ২৬টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ওয়াসার পুরোপুরি দখলে আছে মাত্র ১৩টি। এসব খালের গভীরতাও নেই, প্রশস্ততাও নেই। মাঝে মাঝে ওয়াসা এগুলো দখলমুক্ত করার প্রকল্প হাতে নেয়। এবারও বেশ কয়েকটি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুই পাশ থেকে অবৈধ ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে আসে ওয়াসা। কিন্তু এগুলো স্থায়ীভাবে রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা আর নেওয়া হয় না। ফলে বছরের পর বছর উচ্ছেদ আর নতুনভাবে তৈরির খেলাই চলে। আবার খালগুলোর গভীরতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। কিন্তু গভীরতা না বাড়লে বৃষ্টির পানি পরিবহন ক্ষমতা বাড়বে কীভাবে? আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পুরোনো খালগুলো উদ্ধার করা এবং এখনো যে কটি খাল স্রোতহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো সংস্কার করে পানিপ্রবাহের উপযুক্ত করা এবং আর কোনো খাল যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা।
একসময় ঢাকা শহরে ছিল অনেকগুলো পুকুর, জলাশয়, ডোবা, নালা ইত্যাদি। কিন্তু নগর উন্নয়নের চাপে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাতের সময় পানি আগে সেসব নিচু জমিতে জমা হতো। তারপর ধীরে ধীরে সে পানি নেমে যেত খাল বা নদীতে। কিন্তু সেসব পুকুর, জলাশয়, নিচু ভূমি ভরাট হয়ে তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে রাস্তাঘাট অথবা সুরম্য অট্টালিকা। বিকল্প হিসেবে পানি বের হওয়ার পথ তৈরি হয়নি। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধিমাফিক যেসব পরিকল্পনা হয়েছে, সেখানে পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনা সঠিকভাবে হয়নি। বরং পরিকল্পনাবিহীন বিভিন্ন কার্যক্রম এসব জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। ডিএনডি বাঁধ দিয়ে শহরে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নগরের বৃষ্টির পানি বের হওয়ার পথ তৈরি হয়নি।
বৃষ্টিপাতের পানি সর্বপ্রথম সিটি করপোরেশনের পাইপ লাইন এবং ওয়াসার স্টর্ম ওয়াটার লাইনের মধ্য দিয়ে খাল বা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু রাজধানীর অনেক এলাকায় এখনো ওয়াসার স্টর্ম ওয়াটার লাইন স্থাপন করাই হয়নি। যেসব জায়গায় আছে তার অধিকাংশই আবর্জনা এবং পলিথিনে ভর্তি হয়ে আছে। ওয়াসা কয়েকটি সরু খালকে রূপান্তরিত করে তৈরি করেছিল বক্স-কালভার্ট। ঢাকার সেগুনবাগিচা, ফকিরেরপুল, আরামবাগসহ আরও কিছু এলাকায় রাজউকের রাস্তার নিচে নির্মিত এসব বক্স কালভার্ট পলিথিন বর্জ্যসহ নগরের অন্য বর্জ্য পদার্থে অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে আছে। ওয়াসার বক্স কালভার্ট এবং পানি নামার গোলাকার পাইপগুলো আবর্জনায় ভর্তি থাকায় অনেক স্থানেই সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। এখন জানা যাচ্ছে, এগুলো পরিষ্কার করার মতো যন্ত্রপাতিই ওয়াসার হাতে নেই। ওয়াসার বর্তমান চেয়ারম্যান বলেছেন, তাঁরা জাপান থেকে এসব যন্ত্রপাতি আনার চিন্তাভাবনা করছেন। আশ্চর্য, এত দিন ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কি একেবারেই অজানা ছিল যে এসব পানি নির্গমন পাইপের আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে?
ঢাকা নগরের পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণে সবচেয়ে বেশি অভাব সমন্বয়ের। ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও রাজপথের নিচের ড্রেনগুলোর দায়িত্ব ওয়াসার, রাস্তাগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ ও মহল্লার মধ্যের ড্রেনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, বাঁধগুলো এবং পাম্পস্টেশনের দায়িত্ব হলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের, প্রাকৃতিক খালগুলো দেখার দায়িত্ব ওয়াসা ও জেলা প্রশাসনের। এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন হলো স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনার। বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশন, ওয়াসা বা রাজউক বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নিজেদের মতো করে। তাতে একটি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে তুরাগ, বুড়িগঙ্গার পানি যাতে মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্যই টঙ্গী, আশুলিয়া, গাবতলীর পাশ দিয়ে তৈরি হয়েছিল বেড়িবাঁধ। আজ মোহাম্মদপুর, মিরপুরে বন্যার পানি ঢোকে না ঠিকই, কিন্তু বের হওয়ারও পথ খুঁজে পায় না, যার অবধারিত পরিণতি জলাবদ্ধতা।
রাজধানীবাসীকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে একটি সিটি গভর্নমেন্ট গঠন নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। সিটি গভর্নমেন্ট হোক, শক্তিশালী পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেই হোক বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এনে হোক অর্থাত্ যেভাবেই হোক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় অতীব জরুরি।
ধরিত্রী সরকার সবুজ: বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ের লেখক।
এটা সত্য, ২৭ তারিখে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগর কি এর চেয়ে অনেক কম মাত্রার বৃষ্টিপাত সহ্য করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেনি? বর্ষাকালে দুই দিন ভালোমতো বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের বেশ কিছু অংশে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। বর্ষাকালে ঢাকা মহানগরে এ দৃশ্য কিন্তু নতুন কিছু নয়। ঢাকার নিকটবর্তী ডিএনডি বাঁধের ভেতরের জলাবদ্ধতা আজ এক বিশাল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। খালগুলো হারিয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপর্যাপ্ত ও অরক্ষিত পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা আজ রাজধানীকে জলাবদ্ধতার নগরে পরিণত করেছে।
মনে রাখা দরকার, ঢাকা নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ কোনো সহজসাধ্য ও স্বল্প দিনের কাজ নয়। এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক সমন্বয় ও পরিকল্পিত কার্যক্রম। শুধু আমাদের দেশেই নয়, উন্নত দেশগুলোতেও ভারী বৃষ্টিপাতে রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তাত্ক্ষণিকভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে সেসব দেশের শহরের সঙ্গে আমাদের ঢাকার অনেক পার্থক্য রয়েছে। সেসব শহরে বৃষ্টিপাতের কিছুক্ষণের মধ্যে পানি সরে যায়, কারণ সেখানে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা। আমাদের ঢাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা হয়, কারণ সরে যাওয়ার রাস্তা পায় না। ফলে অনেক সময় অনেক এলাকায় পানি দুই-তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত জমে থাকে।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা কয়েক বছর ধরে ক্রমেই প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এর মূল কারণই হলে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা। দিনে দিনে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, অবকাঠামো বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে উঠছে। বরং জলাশয় ভরাট হতে হতে নিষ্কাশনের সুযোগ কমছে। এক সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৪৬টি ছোট-বড় খাল প্রবাহিত হতো, যা এই শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দারুণভাবে সহায়ক ছিল। কিন্তু এখন ৪৬টির মধ্যে কোনোরকমে ২৬টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ওয়াসার পুরোপুরি দখলে আছে মাত্র ১৩টি। এসব খালের গভীরতাও নেই, প্রশস্ততাও নেই। মাঝে মাঝে ওয়াসা এগুলো দখলমুক্ত করার প্রকল্প হাতে নেয়। এবারও বেশ কয়েকটি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুই পাশ থেকে অবৈধ ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে আসে ওয়াসা। কিন্তু এগুলো স্থায়ীভাবে রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা আর নেওয়া হয় না। ফলে বছরের পর বছর উচ্ছেদ আর নতুনভাবে তৈরির খেলাই চলে। আবার খালগুলোর গভীরতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। কিন্তু গভীরতা না বাড়লে বৃষ্টির পানি পরিবহন ক্ষমতা বাড়বে কীভাবে? আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পুরোনো খালগুলো উদ্ধার করা এবং এখনো যে কটি খাল স্রোতহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো সংস্কার করে পানিপ্রবাহের উপযুক্ত করা এবং আর কোনো খাল যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা।
একসময় ঢাকা শহরে ছিল অনেকগুলো পুকুর, জলাশয়, ডোবা, নালা ইত্যাদি। কিন্তু নগর উন্নয়নের চাপে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাতের সময় পানি আগে সেসব নিচু জমিতে জমা হতো। তারপর ধীরে ধীরে সে পানি নেমে যেত খাল বা নদীতে। কিন্তু সেসব পুকুর, জলাশয়, নিচু ভূমি ভরাট হয়ে তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে রাস্তাঘাট অথবা সুরম্য অট্টালিকা। বিকল্প হিসেবে পানি বের হওয়ার পথ তৈরি হয়নি। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধিমাফিক যেসব পরিকল্পনা হয়েছে, সেখানে পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনা সঠিকভাবে হয়নি। বরং পরিকল্পনাবিহীন বিভিন্ন কার্যক্রম এসব জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। ডিএনডি বাঁধ দিয়ে শহরে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নগরের বৃষ্টির পানি বের হওয়ার পথ তৈরি হয়নি।
বৃষ্টিপাতের পানি সর্বপ্রথম সিটি করপোরেশনের পাইপ লাইন এবং ওয়াসার স্টর্ম ওয়াটার লাইনের মধ্য দিয়ে খাল বা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু রাজধানীর অনেক এলাকায় এখনো ওয়াসার স্টর্ম ওয়াটার লাইন স্থাপন করাই হয়নি। যেসব জায়গায় আছে তার অধিকাংশই আবর্জনা এবং পলিথিনে ভর্তি হয়ে আছে। ওয়াসা কয়েকটি সরু খালকে রূপান্তরিত করে তৈরি করেছিল বক্স-কালভার্ট। ঢাকার সেগুনবাগিচা, ফকিরেরপুল, আরামবাগসহ আরও কিছু এলাকায় রাজউকের রাস্তার নিচে নির্মিত এসব বক্স কালভার্ট পলিথিন বর্জ্যসহ নগরের অন্য বর্জ্য পদার্থে অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে আছে। ওয়াসার বক্স কালভার্ট এবং পানি নামার গোলাকার পাইপগুলো আবর্জনায় ভর্তি থাকায় অনেক স্থানেই সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। এখন জানা যাচ্ছে, এগুলো পরিষ্কার করার মতো যন্ত্রপাতিই ওয়াসার হাতে নেই। ওয়াসার বর্তমান চেয়ারম্যান বলেছেন, তাঁরা জাপান থেকে এসব যন্ত্রপাতি আনার চিন্তাভাবনা করছেন। আশ্চর্য, এত দিন ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কি একেবারেই অজানা ছিল যে এসব পানি নির্গমন পাইপের আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে?
ঢাকা নগরের পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণে সবচেয়ে বেশি অভাব সমন্বয়ের। ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও রাজপথের নিচের ড্রেনগুলোর দায়িত্ব ওয়াসার, রাস্তাগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ ও মহল্লার মধ্যের ড্রেনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, বাঁধগুলো এবং পাম্পস্টেশনের দায়িত্ব হলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের, প্রাকৃতিক খালগুলো দেখার দায়িত্ব ওয়াসা ও জেলা প্রশাসনের। এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন হলো স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনার। বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশন, ওয়াসা বা রাজউক বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নিজেদের মতো করে। তাতে একটি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে তুরাগ, বুড়িগঙ্গার পানি যাতে মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্যই টঙ্গী, আশুলিয়া, গাবতলীর পাশ দিয়ে তৈরি হয়েছিল বেড়িবাঁধ। আজ মোহাম্মদপুর, মিরপুরে বন্যার পানি ঢোকে না ঠিকই, কিন্তু বের হওয়ারও পথ খুঁজে পায় না, যার অবধারিত পরিণতি জলাবদ্ধতা।
রাজধানীবাসীকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে একটি সিটি গভর্নমেন্ট গঠন নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। সিটি গভর্নমেন্ট হোক, শক্তিশালী পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেই হোক বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এনে হোক অর্থাত্ যেভাবেই হোক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় অতীব জরুরি।
ধরিত্রী সরকার সবুজ: বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ের লেখক।
No comments