বাড়ছে অপরাধ, কমছে সহনশীলতা by তৌহিদুল হক
একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী দেশের সামাজিক পরিস্থিতি একটি আতঙ্কের
মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। এসব অপরাধ
আচরণগত বিচ্যুতির সর্বোচ্চ প্রদর্শন। নির্বাচনের পরে নোয়াখালীতে গণধর্ষণের
ঘটনা ঘটেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, হত্যা, ধর্ষণ পরবর্তী
হত্যা প্রভৃতি অপরাধগুলো চলতি বছরের প্রথম মাসের প্রথমার্ধেই যে পরিমাণে
ঘটেছে তা সমাজ ও রাষ্ট্রিক কাঠামোর মানব সম্পর্ক তৈরির প্রক্রিয়াকে
প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সংঘটিত অপরাধের পশ্চাতে বিদ্যমান কারণ ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, অপরাধগুলো সামাজিক চিত্রপটে বিশ্লেষিত হলেও ভিন্নমাত্রা রয়েছে। এই মাত্রাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রথমত, আমাদের দেশে অপরাধ ও অপরাধীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা দাপট অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দাপটের চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠনকে অপরাধী নিজের বলয়ে কাজ করার শক্তি প্রয়োগ করে। ফলশ্রুতিতে সমাজের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা দর্শন সম্পর্কে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর একটি কার্যকর ঘোষণা দেশের অপরাধের চিত্র পরিবর্তন করার সুযোগ রাখে। ঘোষণাটি হলো- অপরাধীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই। নোয়াখালীসহ অন্যান্য ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটি প্রশংসিত। তবে বিচারের কাজটি সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ করতে হবে। অন্যথায় ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে এবং সমাজের নিকট সরকার ও রাষ্ট্রের সামাজিক জবাবদিহিতা এককেন্দ্রিক ভূমিকা সৃষ্টি করবে। এর ফলে সম্পর্ক ও বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান সময়ে মানুষের সামাজিক ও আচরণগত সুস্থতার বিষয়টি সর্বাধিক আলোচিত। যে সমস্ত দেশ সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তারা সামাজিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে। কারণ সামাজিক সুস্থতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সামাজিক উদ্যোগ তথা মানুষের মধ্যে সমষ্টিগত চেতনা জাগ্রত করা অপরিহার্য। এই সমষ্টিগত চেতনায় মানুষ পরস্পর আলিঙ্গনবদ্ধ হবে এবং সমষ্টি সম্প্রীতি বাড়াবে।
চলমান রাজনীতিবেষ্টিত অপরাধ ও আচরণগত বৈকল্যকেন্দ্রিক অন্যান্য সামাজিক অপরাধ নিরসনে তথা নিয়ন্ত্রণে তিনটি কৌশলের প্রয়োগ অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। প্রথমত, দেশীয় সংস্কৃতি ও সামাজিকীকরণের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সংশোধনের সুযোগ রেখে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত প্রয়োগ করা, দ্বিতীয়, নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মধ্যদিয়ে সমাজে রুচিশীল আচরণকে স্বাগত জানানো যা পরস্পর সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে। তৃতীয়ত, সমাজের সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ক্রিয়াশীল করা যাতে প্রতিটি নির্দিষ্ট সমষ্টিতে বা এলাকায় পরস্পর উপলব্ধি ও সমঝোতামূলক সংস্কৃতির জয়যাত্রা শুরু হয়। এ উদ্যোগ মানুষকে মানুষে পরিণত করবে, অপরাধী হিসেবে নয়।
লেখক
কবি এবং
সহকারী অধ্যাপক
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: tawohid@gmail.com
সংঘটিত অপরাধের পশ্চাতে বিদ্যমান কারণ ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, অপরাধগুলো সামাজিক চিত্রপটে বিশ্লেষিত হলেও ভিন্নমাত্রা রয়েছে। এই মাত্রাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রথমত, আমাদের দেশে অপরাধ ও অপরাধীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা দাপট অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দাপটের চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠনকে অপরাধী নিজের বলয়ে কাজ করার শক্তি প্রয়োগ করে। ফলশ্রুতিতে সমাজের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা দর্শন সম্পর্কে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর একটি কার্যকর ঘোষণা দেশের অপরাধের চিত্র পরিবর্তন করার সুযোগ রাখে। ঘোষণাটি হলো- অপরাধীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই। নোয়াখালীসহ অন্যান্য ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটি প্রশংসিত। তবে বিচারের কাজটি সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ করতে হবে। অন্যথায় ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে এবং সমাজের নিকট সরকার ও রাষ্ট্রের সামাজিক জবাবদিহিতা এককেন্দ্রিক ভূমিকা সৃষ্টি করবে। এর ফলে সম্পর্ক ও বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান সময়ে মানুষের সামাজিক ও আচরণগত সুস্থতার বিষয়টি সর্বাধিক আলোচিত। যে সমস্ত দেশ সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তারা সামাজিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে। কারণ সামাজিক সুস্থতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সামাজিক উদ্যোগ তথা মানুষের মধ্যে সমষ্টিগত চেতনা জাগ্রত করা অপরিহার্য। এই সমষ্টিগত চেতনায় মানুষ পরস্পর আলিঙ্গনবদ্ধ হবে এবং সমষ্টি সম্প্রীতি বাড়াবে।
চলমান রাজনীতিবেষ্টিত অপরাধ ও আচরণগত বৈকল্যকেন্দ্রিক অন্যান্য সামাজিক অপরাধ নিরসনে তথা নিয়ন্ত্রণে তিনটি কৌশলের প্রয়োগ অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। প্রথমত, দেশীয় সংস্কৃতি ও সামাজিকীকরণের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সংশোধনের সুযোগ রেখে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত প্রয়োগ করা, দ্বিতীয়, নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মধ্যদিয়ে সমাজে রুচিশীল আচরণকে স্বাগত জানানো যা পরস্পর সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে। তৃতীয়ত, সমাজের সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ক্রিয়াশীল করা যাতে প্রতিটি নির্দিষ্ট সমষ্টিতে বা এলাকায় পরস্পর উপলব্ধি ও সমঝোতামূলক সংস্কৃতির জয়যাত্রা শুরু হয়। এ উদ্যোগ মানুষকে মানুষে পরিণত করবে, অপরাধী হিসেবে নয়।
লেখক
কবি এবং
সহকারী অধ্যাপক
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: tawohid@gmail.com
No comments