বৈধ অস্ত্রের বাজার ক্রেতা কারা by মোহাম্মদ ওমর ফারুক
ব্যবসায়ীদের
হিসেব মতে বছরে বৈধ অস্ত্র বিক্রি হয় ৩০০-৪০০টির মতো। আর বর্তমানে সারা
দেশে বৈধ অস্ত্রের পরিমাণ প্রায় দুই লাখেরও বেশি। কারা কিনছেন বা ব্যবহার
করছেন বৈধ অস্ত্র? অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং বৈধ অস্ত্র রাখছেন এমন ব্যক্তিদের
সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ
বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বৈধ অস্ত্রের
লাইসেন্স নিয়ে থাকেন। অনেকে এলাকায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেও কৌশলে
নিজেদের নামে বৈধ অস্ত্র নিয়ে থাকেন।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, চকবাজার, ইসলামপুর, মতিঝিলে ২৫টি দোকানে বিক্রি হয় বৈধ অস্ত্র। সারা দেশে এমন দোকান আছে ৮৪টি। এসব দোকানগুলোতে বছরে সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ অস্ত্র বেচাকেনা হয় বছরে। তবে বিক্রির পরিমাণ রাজধানীতেই বেশি।
বাংলাদেশ আর্মস ডিলার এন্ড ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি নাসির আহমেদ জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটা অনেকটা পারিবারিক ঐহিত্য। তিনি বলেন ৩০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা মূল্যের অস্ত্র তারা বিক্রি করেন। এ ছাড়া পুরাতন অস্ত্রও পাওয়া যায় সাত থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে। তারা সাধারণত পিস্তল, বন্দুক, রিভলবার, রাইফেল বিক্রি করেন। তবে এসব বিক্রির নির্ধারিত নীতিমালা আছে। চাইলেই কেউ যে কোনো মডেলের অস্ত্র এনে বিক্রি করতে পারবে না।
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার ব্যবসায়ী জিএম আখতারুজ্জামান। প্রায় ১৯ বছর ধরে তিনি বৈধ অস্ত্র বহন করছেন। উপজেলা সদর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব ছিল প্রায় ২৩ কিলোমিটার। এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। যার কারণে এলাকায় প্রচুর ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। ফলে নিরাপত্তার জন্য বৈধ অস্ত্র নিয়েছিলেন।
একই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কাসেদ আলী। ১৯৭৬ সাল থেকে বৈধ অস্ত্র বহন করেন তিনি। এর আগে অস্ত্রটি তার বাবা ব্যবহার করতেন। কেন এই বৈধ অস্ত্র রাখছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একসময়ে আমাদের অনেক জমিজমা ছিল, ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে চোর ডাকাত লেগেই থাকতো। এই কারণেই বৈধ অস্ত্র নিয়েছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই অস্ত্র কোনো কাজে লাগেনি।
বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করছেন ২৫ বছর বয়সী কক্সবাজার মহেশখালীর একজন নাগরিক। পরিবারের অন্য কয়েকজনের নামে আছে বৈধ অস্ত্র। তিনি জানান, নব্বই দশকের শুরু থেকে তার দাদা জড়িত ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে, বাবা এলাকার বড় ব্যবসায়ী সব মিলিয়ে নিরাপত্তার কারণেই বৈধ অস্ত্র সঙ্গে রাখতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
রাজধানীতে অস্ত্র বিক্রি হয় এমন দোকান ঘুরে দেখা গেছে সাধারণ দোকানের মতোই প্রতিদিন খোলা হয় দোকান। তবে ক্রেতা কোনো দিন আসেন আবার কখনো এক সপ্তাহেও দেখা মিলে না। বাংলাদেশের অস্ত্র বিক্রির ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, বৃটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতের গোটা বাংলায় বৈধ অস্ত্রের খোলা বাণিজ্য ছিল মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক, বৃটিশ কোম্পানি পরিচালিত। সামসুদ্দিন আহম্মেদ নামে ঢাকার চকবাজারের এক ব্যক্তি কলকাতায় বৃটিশ ম্যান্টন এন্ড কোম্পানির আগ্নোয়াস্ত্র তৈরির কারখানায় অস্ত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ করতেন। এমন কর্মীদের কারখানায় বলা হয় গানস্মিথ। ১শ’ ৬ বছর আগে, ১৯১২ সালে সামসুদ্দিন আহম্মেদ চকবাজারে দেশের প্রথম বৈধ অস্ত্রের খোলা বাণিজ্য শুরু করেন। শুরুতে কলকাতা থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের বন্দুক এখানে বিক্রি হতো। আবার অস্ত্র মেরামতের কাজও করতো। ১৯৪২ সালে ঢাকার বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেট জেমস লিউএন বাংলাদেশের ফসলের নিরাপত্তার জন্য কৃষকদের বন্দুকের লাইসেন্স প্রদানের নির্দেশ দিলে এই জনপদে ব্যক্তিগত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। ১৯৫২ সালে চকবাজারে দেশের প্রথম অস্ত্রের দোকানটি জার্মানি, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র এনে বিক্রির মাধ্যমে প্রসারিত করেন এ বাণিজ্য।
ভারত ভাগের পর পরই বৈধ অস্ত্রের দ্বিতীয় দোকান হয়, ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে। সেটি এখনো টিকে আছে। স্বাধীনতার আগে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে এমন আরো কয়েকটি অস্ত্রের দোকান হলেও তার বেশ কয়েকটি বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে, স্বাধীনতার পর বৈধ অস্ত্রের খোলা দোকানের সংখ্যা একটু একটু করে বেড়েছে। জানা যায়, অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য। তাই এইসব অস্ত্র নিজের আত্মরক্ষা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশে চলমান ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট ও ১৯২৪ সালের আর্মস রোলের এর আওতায় সামরিক, বেসামরিক, অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে অনিষিদ্ধ বোরের আগ্নেয়াস্ত্রসমূহের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে যেকোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীর বয়স শর্ত ব্যারেল আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩০ (ত্রিশ) বছর এবং লং ব্যারেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ (পঁচিশ) বছর হতে হয়। আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হবে। শিল্পপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বছরে ন্যূনতম দুই লাখ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে। আর পিস্তলের জন্য পর পর তিনবছর ৯ লাখ টাকা কর গুনতে হবে। শুধু তাই নয় সবমিলিয়ে আবেদনকারীর অনুকূলে থাকতে হবে পুলিশ প্রতিবেদন। এরকম আরো প্রায় ২৫টি ধাপের পর মিলতে পারে অস্ত্রের লাইসেন্স। এ ছাড়াও বিভিন্ন অস্ত্রের জন্য নির্দিষ্ট ফি তো আছেই।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, চকবাজার, ইসলামপুর, মতিঝিলে ২৫টি দোকানে বিক্রি হয় বৈধ অস্ত্র। সারা দেশে এমন দোকান আছে ৮৪টি। এসব দোকানগুলোতে বছরে সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ অস্ত্র বেচাকেনা হয় বছরে। তবে বিক্রির পরিমাণ রাজধানীতেই বেশি।
বাংলাদেশ আর্মস ডিলার এন্ড ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি নাসির আহমেদ জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটা অনেকটা পারিবারিক ঐহিত্য। তিনি বলেন ৩০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা মূল্যের অস্ত্র তারা বিক্রি করেন। এ ছাড়া পুরাতন অস্ত্রও পাওয়া যায় সাত থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে। তারা সাধারণত পিস্তল, বন্দুক, রিভলবার, রাইফেল বিক্রি করেন। তবে এসব বিক্রির নির্ধারিত নীতিমালা আছে। চাইলেই কেউ যে কোনো মডেলের অস্ত্র এনে বিক্রি করতে পারবে না।
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার ব্যবসায়ী জিএম আখতারুজ্জামান। প্রায় ১৯ বছর ধরে তিনি বৈধ অস্ত্র বহন করছেন। উপজেলা সদর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব ছিল প্রায় ২৩ কিলোমিটার। এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। যার কারণে এলাকায় প্রচুর ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। ফলে নিরাপত্তার জন্য বৈধ অস্ত্র নিয়েছিলেন।
একই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কাসেদ আলী। ১৯৭৬ সাল থেকে বৈধ অস্ত্র বহন করেন তিনি। এর আগে অস্ত্রটি তার বাবা ব্যবহার করতেন। কেন এই বৈধ অস্ত্র রাখছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একসময়ে আমাদের অনেক জমিজমা ছিল, ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে চোর ডাকাত লেগেই থাকতো। এই কারণেই বৈধ অস্ত্র নিয়েছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই অস্ত্র কোনো কাজে লাগেনি।
বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করছেন ২৫ বছর বয়সী কক্সবাজার মহেশখালীর একজন নাগরিক। পরিবারের অন্য কয়েকজনের নামে আছে বৈধ অস্ত্র। তিনি জানান, নব্বই দশকের শুরু থেকে তার দাদা জড়িত ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে, বাবা এলাকার বড় ব্যবসায়ী সব মিলিয়ে নিরাপত্তার কারণেই বৈধ অস্ত্র সঙ্গে রাখতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
রাজধানীতে অস্ত্র বিক্রি হয় এমন দোকান ঘুরে দেখা গেছে সাধারণ দোকানের মতোই প্রতিদিন খোলা হয় দোকান। তবে ক্রেতা কোনো দিন আসেন আবার কখনো এক সপ্তাহেও দেখা মিলে না। বাংলাদেশের অস্ত্র বিক্রির ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, বৃটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতের গোটা বাংলায় বৈধ অস্ত্রের খোলা বাণিজ্য ছিল মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক, বৃটিশ কোম্পানি পরিচালিত। সামসুদ্দিন আহম্মেদ নামে ঢাকার চকবাজারের এক ব্যক্তি কলকাতায় বৃটিশ ম্যান্টন এন্ড কোম্পানির আগ্নোয়াস্ত্র তৈরির কারখানায় অস্ত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ করতেন। এমন কর্মীদের কারখানায় বলা হয় গানস্মিথ। ১শ’ ৬ বছর আগে, ১৯১২ সালে সামসুদ্দিন আহম্মেদ চকবাজারে দেশের প্রথম বৈধ অস্ত্রের খোলা বাণিজ্য শুরু করেন। শুরুতে কলকাতা থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের বন্দুক এখানে বিক্রি হতো। আবার অস্ত্র মেরামতের কাজও করতো। ১৯৪২ সালে ঢাকার বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেট জেমস লিউএন বাংলাদেশের ফসলের নিরাপত্তার জন্য কৃষকদের বন্দুকের লাইসেন্স প্রদানের নির্দেশ দিলে এই জনপদে ব্যক্তিগত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। ১৯৫২ সালে চকবাজারে দেশের প্রথম অস্ত্রের দোকানটি জার্মানি, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র এনে বিক্রির মাধ্যমে প্রসারিত করেন এ বাণিজ্য।
ভারত ভাগের পর পরই বৈধ অস্ত্রের দ্বিতীয় দোকান হয়, ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে। সেটি এখনো টিকে আছে। স্বাধীনতার আগে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে এমন আরো কয়েকটি অস্ত্রের দোকান হলেও তার বেশ কয়েকটি বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে, স্বাধীনতার পর বৈধ অস্ত্রের খোলা দোকানের সংখ্যা একটু একটু করে বেড়েছে। জানা যায়, অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য। তাই এইসব অস্ত্র নিজের আত্মরক্ষা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশে চলমান ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট ও ১৯২৪ সালের আর্মস রোলের এর আওতায় সামরিক, বেসামরিক, অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে অনিষিদ্ধ বোরের আগ্নেয়াস্ত্রসমূহের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে যেকোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীর বয়স শর্ত ব্যারেল আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩০ (ত্রিশ) বছর এবং লং ব্যারেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ (পঁচিশ) বছর হতে হয়। আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হবে। শিল্পপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বছরে ন্যূনতম দুই লাখ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে। আর পিস্তলের জন্য পর পর তিনবছর ৯ লাখ টাকা কর গুনতে হবে। শুধু তাই নয় সবমিলিয়ে আবেদনকারীর অনুকূলে থাকতে হবে পুলিশ প্রতিবেদন। এরকম আরো প্রায় ২৫টি ধাপের পর মিলতে পারে অস্ত্রের লাইসেন্স। এ ছাড়াও বিভিন্ন অস্ত্রের জন্য নির্দিষ্ট ফি তো আছেই।
No comments