কোরিয়ার উন্নয়নযাত্রা: কী শিখতে পারে বাংলাদেশ?
গত
৬০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি যেভাবে একটি উদ্ভাবননির্ভর অর্থনীতিতে
পরিণত হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটি রীতিমতো বিস্ময়কর। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে তারা
অনেক পিছিয়ে ছিল। আবার ভূমির পরিমাণও উন্নত কৃষিনির্ভর কাজের জন্য খুব
অনুকূল ছিল না।
নিজের দেশের মাটিতে তৈরি করা পণ্য বহির্বিশ্বে রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান দেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এদিকে কৃষিকাজ দিয়ে অর্থনীতির চাকা ঘোরানো সম্ভব নয়। এমনই একটি নিরেট নির্মম অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কোরিয়া ১৯৬০ সালে একটি সিদ্ধান্ত নিল। পরিকল্পনাটি ছিল, তারা পণ্য রপ্তানির জন্য মূল কাঁচামাল অন্য দেশ থেকে আমদানি করে সেই কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কারখানা তৈরি করবে।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম সফলতা পেয়েছিল কাপড়, জামা ও ঘড়ি তৈরির ক্ষেত্রে। ধীরে ধীরে বাজার বড় হতে লাগল। সময়ের প্রয়োজনে তারা পণ্যের মধ্যে ভিন্নতা নিয়ে এল। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে কাঁচামাল হিসেবে আনা চেড়া কাঠ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্লাইউড হিসেবে রপ্তানি করা শুরু হলো। আমদানি করা চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করে তা বিক্রি করা হতো আমেরিকা ও কানাডায়। জাপান ও আমেরিকা থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে সেগুলো ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরি করে রপ্তানি করা হতো বিভিন্ন দেশে।
সরকার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া শুরু করল। যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের জন্য কর ছাড় ছাড়াও বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া শুরু হলো। কৃষি খাত থেকে অর্থনীতি রপ্তানির বাজারে ধীরে ধীরে ইলেকট্রনিকের দিকে ঝুঁকে পড়ল। রপ্তানির এই পরিবর্তন কোরীয় সরকারের বিশেষ পরিকল্পনায় ছিল। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতকে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। ২০১৮ এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই বিষয়গুলো অনেক স্বাভাবিক আর সহজ মনে হলেও ১৯৬১ সালের সেই সময়ে এমন সিদ্ধান্তগুলো অনেক বেশি বিতর্ক তৈরি করেছিল।
জামা ও জুতা তৈরির যাত্রা ১৯৭০-এ এসে থেমেছিল স্টিল, ভারী যন্ত্রপাতি, জাহাজ নির্মাণ এবং পেট্রো কেমিক্যালে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে তারা ইলেকট্রনিক ও অটোমোবাইলের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই পুরো অগ্রযাত্রায় উদ্যোক্তাদের একটা বড় ভূমিকা আছে।
প্রথমত, টেক্সটাইল–নির্ভর উৎপাদনকে ধীরে ধীরে ইলেকট্রনিক পণ্যে নিয়ে আসার পেছনে উদ্যোক্তা এবং তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের বিশাল প্রভাব ছিল। আর কোরিয়ার সরকার এই বিষয়কে দূরদৃষ্টির কারণে বুঝতে পেরেছিল। যার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটকে তখন খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওইসিডি ২০১২ পিসা টেস্টের ফল অনুসারে গণিত, রিডিং ও বিজ্ঞানে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান পঞ্চম, সমস্যা সমাধানে দ্বিতীয়।
বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষণীয় এবং বিবেচ্য। কেননা শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর পেছনে যখন অর্থনৈতিক পরিবর্তনটাই মূল লক্ষ্য, তখন কোন ধরনের শিক্ষার উন্নয়ন প্রয়োজন, সেটি বুঝতে পারা জরুরি। কোরিয়া এ জায়গাতেই সবচেয়ে বড় যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। নতুন ধরনের রপ্তানির জন্য তারা সৃজনশীল মানুষকে বের করে আনতে পেরেছে।
দ্বিতীয়ত, ২০১৩ থেকে কোরিয়ার অর্থনীতিকে পৃথিবীতে ‘ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার স্টার্টআপের জন্য ১৭৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্মল এবং মিডিয়াম বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৯ সালে স্টার্টআপের সংখ্যা ছিল ২ হাজার, যা ২০১৫ সালে ৩০ হাজার হয়েছে!
নিজের দেশের মাটিতে তৈরি করা পণ্য বহির্বিশ্বে রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান দেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এদিকে কৃষিকাজ দিয়ে অর্থনীতির চাকা ঘোরানো সম্ভব নয়। এমনই একটি নিরেট নির্মম অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কোরিয়া ১৯৬০ সালে একটি সিদ্ধান্ত নিল। পরিকল্পনাটি ছিল, তারা পণ্য রপ্তানির জন্য মূল কাঁচামাল অন্য দেশ থেকে আমদানি করে সেই কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কারখানা তৈরি করবে।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম সফলতা পেয়েছিল কাপড়, জামা ও ঘড়ি তৈরির ক্ষেত্রে। ধীরে ধীরে বাজার বড় হতে লাগল। সময়ের প্রয়োজনে তারা পণ্যের মধ্যে ভিন্নতা নিয়ে এল। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে কাঁচামাল হিসেবে আনা চেড়া কাঠ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্লাইউড হিসেবে রপ্তানি করা শুরু হলো। আমদানি করা চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করে তা বিক্রি করা হতো আমেরিকা ও কানাডায়। জাপান ও আমেরিকা থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে সেগুলো ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরি করে রপ্তানি করা হতো বিভিন্ন দেশে।
সরকার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া শুরু করল। যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের জন্য কর ছাড় ছাড়াও বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া শুরু হলো। কৃষি খাত থেকে অর্থনীতি রপ্তানির বাজারে ধীরে ধীরে ইলেকট্রনিকের দিকে ঝুঁকে পড়ল। রপ্তানির এই পরিবর্তন কোরীয় সরকারের বিশেষ পরিকল্পনায় ছিল। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতকে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। ২০১৮ এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই বিষয়গুলো অনেক স্বাভাবিক আর সহজ মনে হলেও ১৯৬১ সালের সেই সময়ে এমন সিদ্ধান্তগুলো অনেক বেশি বিতর্ক তৈরি করেছিল।
জামা ও জুতা তৈরির যাত্রা ১৯৭০-এ এসে থেমেছিল স্টিল, ভারী যন্ত্রপাতি, জাহাজ নির্মাণ এবং পেট্রো কেমিক্যালে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে তারা ইলেকট্রনিক ও অটোমোবাইলের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই পুরো অগ্রযাত্রায় উদ্যোক্তাদের একটা বড় ভূমিকা আছে।
প্রথমত, টেক্সটাইল–নির্ভর উৎপাদনকে ধীরে ধীরে ইলেকট্রনিক পণ্যে নিয়ে আসার পেছনে উদ্যোক্তা এবং তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের বিশাল প্রভাব ছিল। আর কোরিয়ার সরকার এই বিষয়কে দূরদৃষ্টির কারণে বুঝতে পেরেছিল। যার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটকে তখন খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওইসিডি ২০১২ পিসা টেস্টের ফল অনুসারে গণিত, রিডিং ও বিজ্ঞানে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান পঞ্চম, সমস্যা সমাধানে দ্বিতীয়।
বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষণীয় এবং বিবেচ্য। কেননা শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর পেছনে যখন অর্থনৈতিক পরিবর্তনটাই মূল লক্ষ্য, তখন কোন ধরনের শিক্ষার উন্নয়ন প্রয়োজন, সেটি বুঝতে পারা জরুরি। কোরিয়া এ জায়গাতেই সবচেয়ে বড় যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। নতুন ধরনের রপ্তানির জন্য তারা সৃজনশীল মানুষকে বের করে আনতে পেরেছে।
দ্বিতীয়ত, ২০১৩ থেকে কোরিয়ার অর্থনীতিকে পৃথিবীতে ‘ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার স্টার্টআপের জন্য ১৭৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্মল এবং মিডিয়াম বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৯ সালে স্টার্টআপের সংখ্যা ছিল ২ হাজার, যা ২০১৫ সালে ৩০ হাজার হয়েছে!
No comments