ভাড়ায় ভগ্নি মিলছে যেখানে
জাপান
মানেই সুসজ্জিত ভবনে ভরা আলো–ঝলমল নগর আর কর্মব্যস্ত সবার ছুটে চলা। অথচ
এই নগরেই গড়ে উঠেছে বিচিত্র পেশা—‘ভাড়াটে বোন’ সরবরাহ। অর্থের বিনিময়ে বোন
হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। চাকচিক্যের দেশে কী এমন হলো যে ‘ভাড়াটে বোন’
সরবরাহের পেশা গড়ে উঠল?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা বেরিয়ে এল, তা বেশ ভয়াবহ। অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকারের মতো ঘটনা। জানা গেল, হিকিকোমোরি নামের একটি সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে জাপানের তরুণ প্রজন্ম। এতে আক্রান্ত তরুণ-তরুণী সমাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। তাঁরা ঘরবন্দী হয়ে যান। মা-বাবা বা আপনজনদের সঙ্গ এড়িয়ে চলেন। বরং কিছু জানতে চাইলে বিরক্ত হন, কখনোবা সহিংস আচরণ করেন। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাঁরা এভাবেই থাকেন। টিভি দেখেন, গেম খেলেন। আর কিছুতে তাঁদের মন থাকে না।
হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত হতে পারেন যে–কেউ। তবে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বয়সী অল্প কিছু মেয়ের মধ্যেও এমনটা দেখা যায়। হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত সন্তান থাকাটা সমাজের চোখে লজ্জাজনক। তাই পরিবার তাদের কথা গোপন রাখে। কীভাবে এ থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তায় অস্থির থাকে। জাপানে তরুণ প্রজন্মের প্রায় পাঁচ লাখ এই সমস্যায় আক্রান্ত। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
বিবিসির সাংবাদিক কথা বলেন কেনতা নামের হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত এক তরুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আমি মেয়েদের সঙ্গে বেশি মিশতাম। এ জন্য সবাই আমাকে খ্যাপাত। বলত, তুমি ছেলে না মেয়ে? আমার ভীষণ খারাপ লাগত। আমি খুবই অসুখী বোধ করতাম। নিঃসঙ্গ বোধ করতাম। সারাক্ষণ কাঁদতাম। মা-বাবাকে দোষারোপ করতাম। নিজের ওপর রাগ হতো, সমাজের ওপর রাগ হতো। মনে হতো আমার কিছু করার নেই। এমন পরিস্থিতি পর্যন্ত হয়েছে যে, বাবা-মাকে পুলিশ ডেকেছে। মুক্তি পেতে আমি ওষুধ খাচ্ছিলাম। তবে কিছুতেই আমার কিছু হয়নি। আমি সারা রাত ভিডিও গেম খেলে, সারা দিন ঘুমাতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমাতাম। আবার সারা রাত খেলতাম, সারা দিন ঘুমাতাম।’
কেনতার মতো মানুষকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এসেছে নিউ স্টার্ট নামের একটি সংগঠন। তারাই ভাড়ায় বোন সরবরাহ করার ধারণা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের এই উদ্যোগ যে কাজে লাগছে, সেই প্রমাণও মিলেছে।
নিউ স্টার্টের হয়ে ভাড়ায় কাজ করেন—এমন এক বোন আয়াকো। এই বিশেষায়িত দলে আছেন তাঁর মতো আরও অনেক নারী। হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত তরুণদের সহায়তা করার জন্য এই তরুণীদের ভাড়ায় নেওয়া হয়। তাঁদের মূল কাজ ওই তরুণদের নিজের ঘরের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া। সমাজে আবার মিশে যেতে সহায়তা করা।
তরুণেরা কেন হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, এর কোনো কারণ জানা যায়নি। এর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই। সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাও নেই। তবে নিঃসঙ্গতা থেকে এমনটা হতে পারে ধরে নিয়েই কাজ শুরু করে নিউ স্টার্ট। চেষ্টা করে তরুণদের নতুন পথে নিয়ে যেতে, তাদের সামনে নতুন জগৎ মেলে ধরতে।
যে তরুণীরা হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সারাতে কাজ করেন, তাঁরা কেউই চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী নন। একেবারেই সাধারণ যোগ্যতার। তবে তাঁদের আয় শুনলে কপালে চোখ উঠে যেতে বাধ্য। মাসে এক লাখ ইয়েনের বেশি আয় তাঁদের। আয়াকো নামের ভাড়াটে বোন বললেন, ‘আমি কোনো কৌশল জানি না। আমি শুধু তাদের সঙ্গে তাদের মতো করে মেশার চেষ্টা করি।’ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি এ পেশায় আছেন।
আয়াকোর সাহচর্যে বদলে যেতে শুরু করে কেনতা। ছয় মাস ধরে কেনতার ভাড়াটে বোন হিসেবে কাজ করছেন তিনি। কেনতা এখন বাড়ির বাইরে বের হন। কেনতা বলেন, ‘আমি আমার ভাড়ায় আনা বোনকে দেখে খুশি হই। গল্পগুজব করি। দুজনে মিলে বাইরে খাওয়াদাওয়া করতে যাই। তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেন। আমার নিজেকে আর একা মনে হয় না। ভালো লাগতে শুরু করে। তিনি আমাকে প্রেরণা দেন। নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে আসছে আমার।’
এভাবে ভাইবোনের মতো থাকতে থাকতে অনেক সময় উভয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সেটা সব সময় নয়। আয়াকোর ভাষ্য, তাঁদের সাহচর্য পেয়ে সবাই যে খুব খুশি হয় বা তাদের সঙ্গে প্রাণ খুলে মজা করে, এমনটা সব সময় হয় না। তবে কেনতার মতো অনেকেই তাঁদের ভালোভাবে মেনে নেন। কেনতাও বললেন, ‘আমি যখন আর তাঁকে দেখব না, তখন খুব খারাপ লাগবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আনন্দও আমার মধ্যে তখন প্রবলভাবে কাজ করবে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’ আয়াকো জানালেন, তিনি রোগীদের সঙ্গে ভণিতা করেন না। কারণ, সেটা তারা বুঝে ফেলে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি যা, যেমন, সেটাই তাদের সামনে তুলে ধরি। সেভাবেই কাজ করি।’ তবে এ পেশায় টিকতে হলে ধৈর্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য তাঁর।
আয়াকোর এই মন্তব্য কেন ঠিক, তা স্পষ্ট হলো এক বাবার কথায়। হারুতো নামের ছদ্মনামধারী এক বাবা বলেন, কিশোর বয়সে তাঁর ছেলে নিজেকে ঘরে বন্দী করে ফেলে। একবার ঘুষি মেরে জানালার সব কাচ ভেঙে ফেলল। নিজের মাকে এমন জোরে ঘুষি দিল যে তাঁর পাঁজর ভেঙে গেল। ছেলের এমন অবস্থার দুই দশক পেরিয়ে গেছে। এখনো সে নিজের ঘরেই নিজেকে আটকে রাখে। কীভাবে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, তা তিনি জানেন না। ছেলে তার মায়ের মৃত্যুর পরও আগের মতোই আছে। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
এই বাবা তখন নিউ স্টার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে আৎসুকো নামের এক তরুণী তাঁর ছেলের বোন হওয়ার জন্য যান। আৎসুকো বললেন, ‘ওই বাড়িতে গিয়ে আমি ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়ি। ওই তরুণ ঘর থেকে বের হতে চাননি। উল্টো আমাকে মারধর করেন। আমি আর সেখানে যাইনি।’
ঠিক কী কারণে হিকিকোমোরি হয়, তার কারণ বেশ জটিল। কেনতার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে হাসিঠাট্টার শিকার হওয়ার বিষয়টি কাজ করেছে। বিষণ্নতা, মাত্রাতিরিক্ত চাপ থেকেও এমনটা হতে পারে। তবে একেকজনের লক্ষণ একেক রকম হয়।
মনোবিজ্ঞানী তামাকি সাইতো বলেন, জাপানে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের কম। অথচ হিকিকোমোরিতে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক লাখ। অনেকে ভাবেন, হিকিকোমোরিতে আক্রান্তরা অলস। আবার কেউ কেউ ভাবেন, তাঁরা বিপজ্জনক কিংবা তাঁরা ভয়াবহ অপরাধী হতে যাচ্ছে। আসলে বিষয়টা এমন না।
ভাড়ায় বোন সরবরাহের পাশাপাশি ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থাও আছে নিউ স্টার্টের। আছে খণ্ডকালীন কাজের ব্যবস্থাও। তবে সেগুলো জনসেবামূলক কাজ। এখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা ফোন ব্যবহার করতে পারেন না। ভিডিও গেম খেলা নিষিদ্ধ। শুধু টিভি দেখতে পারেন, তাও সবাই মিলে এক জায়গায় বসে। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এখানে প্রায় দুই হাজার লোক থেকেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি এক বছরের মতো এখানে থেকে স্বাভাবিক হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। মিশে গেছেন মূল স্রোতে।
ভাড়ায় নিউ স্টার্টের আবাসনে থেকেছেন ইকো নামের এক তরুণ। তিনি জানালেন, এখানে থেকে থেকে তাঁর জীবন বদলে গেছে। জীবনবোধ ইতিবাচক হয়েছে। হতাশা, একাকিত্বকে পেছনে ফেলে তিনি এখন সাধারণ আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তবে নিজে ভালো থেকেই ক্ষান্ত হননি তিনি। তাঁর মতো যাঁরা হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত, তাঁদের পাশে দাঁড়ান তিনি। বিশেষ করে আক্রান্ত তরুণীদের ভাই হয়ে পাশে দাঁড়ান তিনি। এটা করেন স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে। কারণ, হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত তরুণীদের অবস্থা বেশি খারাপ। গোপনীয়তার সংস্কৃতি এই তরুণীদের জীবনকে আরও খারাপ করে তোলে।
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা বেরিয়ে এল, তা বেশ ভয়াবহ। অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকারের মতো ঘটনা। জানা গেল, হিকিকোমোরি নামের একটি সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে জাপানের তরুণ প্রজন্ম। এতে আক্রান্ত তরুণ-তরুণী সমাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। তাঁরা ঘরবন্দী হয়ে যান। মা-বাবা বা আপনজনদের সঙ্গ এড়িয়ে চলেন। বরং কিছু জানতে চাইলে বিরক্ত হন, কখনোবা সহিংস আচরণ করেন। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাঁরা এভাবেই থাকেন। টিভি দেখেন, গেম খেলেন। আর কিছুতে তাঁদের মন থাকে না।
হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত হতে পারেন যে–কেউ। তবে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বয়সী অল্প কিছু মেয়ের মধ্যেও এমনটা দেখা যায়। হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত সন্তান থাকাটা সমাজের চোখে লজ্জাজনক। তাই পরিবার তাদের কথা গোপন রাখে। কীভাবে এ থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তায় অস্থির থাকে। জাপানে তরুণ প্রজন্মের প্রায় পাঁচ লাখ এই সমস্যায় আক্রান্ত। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
বিবিসির সাংবাদিক কথা বলেন কেনতা নামের হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত এক তরুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আমি মেয়েদের সঙ্গে বেশি মিশতাম। এ জন্য সবাই আমাকে খ্যাপাত। বলত, তুমি ছেলে না মেয়ে? আমার ভীষণ খারাপ লাগত। আমি খুবই অসুখী বোধ করতাম। নিঃসঙ্গ বোধ করতাম। সারাক্ষণ কাঁদতাম। মা-বাবাকে দোষারোপ করতাম। নিজের ওপর রাগ হতো, সমাজের ওপর রাগ হতো। মনে হতো আমার কিছু করার নেই। এমন পরিস্থিতি পর্যন্ত হয়েছে যে, বাবা-মাকে পুলিশ ডেকেছে। মুক্তি পেতে আমি ওষুধ খাচ্ছিলাম। তবে কিছুতেই আমার কিছু হয়নি। আমি সারা রাত ভিডিও গেম খেলে, সারা দিন ঘুমাতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমাতাম। আবার সারা রাত খেলতাম, সারা দিন ঘুমাতাম।’
কেনতার মতো মানুষকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এসেছে নিউ স্টার্ট নামের একটি সংগঠন। তারাই ভাড়ায় বোন সরবরাহ করার ধারণা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের এই উদ্যোগ যে কাজে লাগছে, সেই প্রমাণও মিলেছে।
নিউ স্টার্টের হয়ে ভাড়ায় কাজ করেন—এমন এক বোন আয়াকো। এই বিশেষায়িত দলে আছেন তাঁর মতো আরও অনেক নারী। হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত তরুণদের সহায়তা করার জন্য এই তরুণীদের ভাড়ায় নেওয়া হয়। তাঁদের মূল কাজ ওই তরুণদের নিজের ঘরের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া। সমাজে আবার মিশে যেতে সহায়তা করা।
তরুণেরা কেন হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, এর কোনো কারণ জানা যায়নি। এর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই। সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাও নেই। তবে নিঃসঙ্গতা থেকে এমনটা হতে পারে ধরে নিয়েই কাজ শুরু করে নিউ স্টার্ট। চেষ্টা করে তরুণদের নতুন পথে নিয়ে যেতে, তাদের সামনে নতুন জগৎ মেলে ধরতে।
যে তরুণীরা হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সারাতে কাজ করেন, তাঁরা কেউই চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী নন। একেবারেই সাধারণ যোগ্যতার। তবে তাঁদের আয় শুনলে কপালে চোখ উঠে যেতে বাধ্য। মাসে এক লাখ ইয়েনের বেশি আয় তাঁদের। আয়াকো নামের ভাড়াটে বোন বললেন, ‘আমি কোনো কৌশল জানি না। আমি শুধু তাদের সঙ্গে তাদের মতো করে মেশার চেষ্টা করি।’ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি এ পেশায় আছেন।
আয়াকোর সাহচর্যে বদলে যেতে শুরু করে কেনতা। ছয় মাস ধরে কেনতার ভাড়াটে বোন হিসেবে কাজ করছেন তিনি। কেনতা এখন বাড়ির বাইরে বের হন। কেনতা বলেন, ‘আমি আমার ভাড়ায় আনা বোনকে দেখে খুশি হই। গল্পগুজব করি। দুজনে মিলে বাইরে খাওয়াদাওয়া করতে যাই। তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেন। আমার নিজেকে আর একা মনে হয় না। ভালো লাগতে শুরু করে। তিনি আমাকে প্রেরণা দেন। নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে আসছে আমার।’
এভাবে ভাইবোনের মতো থাকতে থাকতে অনেক সময় উভয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সেটা সব সময় নয়। আয়াকোর ভাষ্য, তাঁদের সাহচর্য পেয়ে সবাই যে খুব খুশি হয় বা তাদের সঙ্গে প্রাণ খুলে মজা করে, এমনটা সব সময় হয় না। তবে কেনতার মতো অনেকেই তাঁদের ভালোভাবে মেনে নেন। কেনতাও বললেন, ‘আমি যখন আর তাঁকে দেখব না, তখন খুব খারাপ লাগবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আনন্দও আমার মধ্যে তখন প্রবলভাবে কাজ করবে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’ আয়াকো জানালেন, তিনি রোগীদের সঙ্গে ভণিতা করেন না। কারণ, সেটা তারা বুঝে ফেলে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি যা, যেমন, সেটাই তাদের সামনে তুলে ধরি। সেভাবেই কাজ করি।’ তবে এ পেশায় টিকতে হলে ধৈর্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য তাঁর।
আয়াকোর এই মন্তব্য কেন ঠিক, তা স্পষ্ট হলো এক বাবার কথায়। হারুতো নামের ছদ্মনামধারী এক বাবা বলেন, কিশোর বয়সে তাঁর ছেলে নিজেকে ঘরে বন্দী করে ফেলে। একবার ঘুষি মেরে জানালার সব কাচ ভেঙে ফেলল। নিজের মাকে এমন জোরে ঘুষি দিল যে তাঁর পাঁজর ভেঙে গেল। ছেলের এমন অবস্থার দুই দশক পেরিয়ে গেছে। এখনো সে নিজের ঘরেই নিজেকে আটকে রাখে। কীভাবে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, তা তিনি জানেন না। ছেলে তার মায়ের মৃত্যুর পরও আগের মতোই আছে। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
এই বাবা তখন নিউ স্টার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে আৎসুকো নামের এক তরুণী তাঁর ছেলের বোন হওয়ার জন্য যান। আৎসুকো বললেন, ‘ওই বাড়িতে গিয়ে আমি ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়ি। ওই তরুণ ঘর থেকে বের হতে চাননি। উল্টো আমাকে মারধর করেন। আমি আর সেখানে যাইনি।’
ঠিক কী কারণে হিকিকোমোরি হয়, তার কারণ বেশ জটিল। কেনতার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে হাসিঠাট্টার শিকার হওয়ার বিষয়টি কাজ করেছে। বিষণ্নতা, মাত্রাতিরিক্ত চাপ থেকেও এমনটা হতে পারে। তবে একেকজনের লক্ষণ একেক রকম হয়।
মনোবিজ্ঞানী তামাকি সাইতো বলেন, জাপানে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের কম। অথচ হিকিকোমোরিতে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক লাখ। অনেকে ভাবেন, হিকিকোমোরিতে আক্রান্তরা অলস। আবার কেউ কেউ ভাবেন, তাঁরা বিপজ্জনক কিংবা তাঁরা ভয়াবহ অপরাধী হতে যাচ্ছে। আসলে বিষয়টা এমন না।
ভাড়ায় বোন সরবরাহের পাশাপাশি ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থাও আছে নিউ স্টার্টের। আছে খণ্ডকালীন কাজের ব্যবস্থাও। তবে সেগুলো জনসেবামূলক কাজ। এখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা ফোন ব্যবহার করতে পারেন না। ভিডিও গেম খেলা নিষিদ্ধ। শুধু টিভি দেখতে পারেন, তাও সবাই মিলে এক জায়গায় বসে। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এখানে প্রায় দুই হাজার লোক থেকেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি এক বছরের মতো এখানে থেকে স্বাভাবিক হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। মিশে গেছেন মূল স্রোতে।
ভাড়ায় নিউ স্টার্টের আবাসনে থেকেছেন ইকো নামের এক তরুণ। তিনি জানালেন, এখানে থেকে থেকে তাঁর জীবন বদলে গেছে। জীবনবোধ ইতিবাচক হয়েছে। হতাশা, একাকিত্বকে পেছনে ফেলে তিনি এখন সাধারণ আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তবে নিজে ভালো থেকেই ক্ষান্ত হননি তিনি। তাঁর মতো যাঁরা হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত, তাঁদের পাশে দাঁড়ান তিনি। বিশেষ করে আক্রান্ত তরুণীদের ভাই হয়ে পাশে দাঁড়ান তিনি। এটা করেন স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে। কারণ, হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত তরুণীদের অবস্থা বেশি খারাপ। গোপনীয়তার সংস্কৃতি এই তরুণীদের জীবনকে আরও খারাপ করে তোলে।
No comments