সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ মন্ত্রণালয়ের উপেক্ষা by কবির হোসেন
সুপ্রিমকোর্টের
পরামর্শ দফায় দফায় উপেক্ষা করছে আইন মন্ত্রণালয়। বিচারকদের পদায়ন, বদলি,
দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ আদালতের পরামর্শ
যথাসময়ে পালনে শৈথিল্য দেখানো হচ্ছে। এতে বিচার বিভাগের কার্যক্রম
সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মামলার জটসহ প্রশাসনিক
জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিচার প্রার্থীদের ওপর।
সম্প্রতি বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি। এ লক্ষ্যে তিনি সচিবসহ আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিযুক্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য তাদের চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা প্রধান বিচারপতির সেই আহ্বানেও সাড়া দেননি।
জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পাঠানোর জন্য সুপ্রিমকোর্টের কাছে দু’জন বিচারককে নাম চেয়ে চিঠি দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ এবং লক্ষ্মীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফসানা আবেদীনকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পাঠানোর পরামর্শ দেন সুপ্রিমকোর্ট। অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজের চাকরি সুপ্রিমকোর্টের অধীনে ন্যস্ত থাকায় তার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে জিও (সরকারি আদেশ) জারি করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। আর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফসানা আবেদীনের ক্ষেত্রে জিও জারির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টের ওই পরামর্শ বাস্তবায়ন না করে ফেলে রাখে।
এ অবস্থায় সোমবার সকালে বিচার কার্যক্রমের শুরুতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আইন মন্ত্রণালয় জিও (সরকারি আদেশ) জারি না করার বিষয়টি অবহিত করেন। পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে আইন সচিবকে হাজির হওয়ার মৌখিক আদেশ দেন। একই সঙ্গে মাসদার হোসেন (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) মামলা অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক কার্যতালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয় বেঞ্চ অফিসারকে। এ বিষয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় শুনানির জন্য ধার্য করা হয়।
এ অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার আগেই আদালতে হাজির হন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফসানা আবেদীনের দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সরকারি আদেশ জারির একটি কপি সঙ্গে নিয়ে আসেন। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় মাসদার হোসেন মামলার শুনানি। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি চলাবস্থায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জিও’র একটি কপি আদালতে দাখিল করেন।
শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের কাজে গতি বাড়ানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমি তা করব। সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে দেশ চলতে পারে না। আমি চাই না সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হোক। এভাবে সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করে দেশ চলতে পারে না। এরপর বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘না না ও কিছু না। এগুলো আপনাদের কনজাম্পশনের জন্য না। সব খবর ছাপানোর জন্য নয়। আদালতের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের অনেক বিষয় আছে। কোনো আদেশ হয়নি। কেন ডেকে আনা হয়েছিল, এগুলো তো রিপোর্ট হতে পারে না।’ সব ঠিক আছে, আপনার বক্তব্য জানতে চাই- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার কথা হল, এগুলো ছাপানোর কোনো বিষয় নয়।’
প্রধান বিচারপতির আহ্বানে সাড়া দেয়নি মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত বিচারকরা : এদিকে ৭ মে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে এক চিঠিতে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবসহ কর্মরত সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, “বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যাবলি চিহ্নিত করে তা নিরসনকল্পে পন্থা উদ্ভাবনের জন্য বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যক্রমে অধিকতর গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি আগামী ১৫ মে রোজ শুক্রবার বেলা ৩টায় সুাপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং উক্ত বিভাগে কর্মরত সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় ও দিকনির্দেশনা প্রদানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।” সভার আলোচ্যসূচি হচ্ছে- “১. বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ২. ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ৩. গাড়ি, কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, ৪. বিচার বিভাগের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা, ৫. প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন।”
চিঠিতে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ৬৪ জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রকল্প পরিচালকের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে বলা হয়। জানা গেছে, এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে আইন সচিব এসে ১৭ তারিখে ওই মতবিনিময় সভা করার জন্য সময় নেন। কিন্তু ওই ১৭ তারিখেও আইন সচিবসহ অন্যরা মতবিনিময় সভায় হাজির হননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য না করে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের চিফ এক্সিকিউটিভ হচ্ছেন মন্ত্রী। প্রশাসনিক কোনো বিষয়ে জানতে হলে উনার কাছে জানতে হবে- এটাই আমার বক্তব্য।’
সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ উপেক্ষিত : এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ একের পর উপেক্ষিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শগুলো আমলে নেয়া হচ্ছে না- যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের লংঘন। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ২০০৭ সালে তৈরি হয় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৭। এ বিধিমালা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শক্রমে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা।
এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, “উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আইন মন্ত্রণালয়) কার্যকরভাবে পরামর্শ গ্রহণের জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং কোনো ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব ও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শে ভিন্নতা থাকলে, তখন সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে।” তাই সুপ্রিমকোর্টের কোনো পরামর্শ ফেলে রাখার এখতিয়ার আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। কিন্তু হরহামেশাই সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ ফেলে রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের আমলে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন গত বছরের ২৫ মার্চ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুল মজিদকে বদলির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ পাঠায়। তিনি ২০১০ সাল থেকে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। অথচ আইনের বিধান আছে একই স্টেশনে তিন বছরের বেশি থাকা যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে কর্মরত থাকা এবং তার অধীনস্তদের সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে তাকে বদলির ওই পরামর্শ দেয় সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ওই বদলির পরামর্শের ব্যপারে কোনো সাড়া দেয়নি মন্ত্রণালয়। গত বছরের ২৬ মে এ বিষরয় সুপ্রিমকোর্ট থেকে মন্ত্রণালয়কে রিমাইন্ডার (স্মরণ করিয়ে) দিয়ে চিঠি পাটায় সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই জেলা জজকে আর বদলি করা হয়নি। মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গত ডিসেম্বরে অবসরে যান।
এদিকে প্রায় দু’মাস আগে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) পদে নিয়োগের পরামর্শ দেয় সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু এ পরামর্শও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
সূত্র জানায়, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান সরকারকে সিএমএম করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টে প্রস্তাব পাঠায়। ওই প্রস্তাব নাকোচ করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসান অতিরিক্ত জেলা জজ অরুণাভ চক্রবর্তীকে সিএমএম করার পরামর্শ দেন। মন্ত্রণালয় ওই পরামর্শ পুনর্বিবেচনারও আবেদন জানায়। ওই আবেদন শনিবার সুপ্রিমকোর্টের জিএ (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কমিটি নাকোচ করে দেয়। এছাড়াও প্রায় এক মাস আগে ১৫৩ জন সিনিয়র সহকারী জজকে বদলির পরামর্শ দেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। কিন্তু এদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ৮ জনকে বদলি করা হয়নি। তাদের ক্ষেত্রে দেয়া পরামর্শ এখনও মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে কত দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালায়, তা নির্ধারণ করা হয়নি। যে কারণে আইন মন্ত্রণালয় হরহামেশাই সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ দিনের পর দিন ফেলে রাখছে। এজন্য সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না। এভাবে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ পড়ে থাকায় বিচার বিভাগের প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে লংঘন হচ্ছে মাসদার হোসেন মামলার রায়। প্রকারান্তরে সর্বোচ্চ আদালতের অবমাননাও হচ্ছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৯৯ সালে ১২ দফা নির্দেশনাসহ মাসদার হোসেন মামলার রায় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দীর্ঘদিনেও ওই রায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের বিষয়টি বিরোধিতার মুখে পড়েছে। সর্বশেষ ওই রায় অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই ঘোষণাতেই শেষ। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২ দফা নির্দেশনার অধিকাংশই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শৃংখলা বিধানের মূল কাজ এখনও মন্ত্রণালয়ের হাতে। ওই রায় অনুযায়ী এসব বিষয় থাকার কথা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের হাতে। ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছে না জনগণ। বিচার প্রশাসনেও গতি আসছে না। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেয়ার পর মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১৬ মে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, মাসদার হোসেন মামলার ১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে প্রধান বিষয়টি আজও আমরা পায়নি। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিু আদালতের প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকার কথা। সেটা যদি হয় আবার নিু আদালতের বিচারকদের শৃংখলা বিধি ও শৃংখলা ব্যবস্থা গ্রহণ যদি সরকারের হাতে থাকে, তাহলে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তো হাইকোর্টের থাকল না।’
এদিকে দেশের আদালতগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন। একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ লেগে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকায় বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার লংঘিত হচ্ছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেয়ার পর এই জট নিরসনের নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের কর্মঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। নিু আদালতের বিচারকদের সময়মতো এজলাসে ওঠা ও নামার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বিচারক শূন্যতা, এজলাস কক্ষের অভাবসহ নানা অসুবিধা রয়েছে। বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সুপ্রিমকোর্টের হাতে না থাকায় এসব ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আবার পরামর্শ দিলেও তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করছেন না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতার।
সম্প্রতি বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি। এ লক্ষ্যে তিনি সচিবসহ আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিযুক্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য তাদের চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা প্রধান বিচারপতির সেই আহ্বানেও সাড়া দেননি।
জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পাঠানোর জন্য সুপ্রিমকোর্টের কাছে দু’জন বিচারককে নাম চেয়ে চিঠি দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ এবং লক্ষ্মীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফসানা আবেদীনকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পাঠানোর পরামর্শ দেন সুপ্রিমকোর্ট। অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজের চাকরি সুপ্রিমকোর্টের অধীনে ন্যস্ত থাকায় তার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে জিও (সরকারি আদেশ) জারি করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। আর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফসানা আবেদীনের ক্ষেত্রে জিও জারির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টের ওই পরামর্শ বাস্তবায়ন না করে ফেলে রাখে।
এ অবস্থায় সোমবার সকালে বিচার কার্যক্রমের শুরুতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আইন মন্ত্রণালয় জিও (সরকারি আদেশ) জারি না করার বিষয়টি অবহিত করেন। পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে আইন সচিবকে হাজির হওয়ার মৌখিক আদেশ দেন। একই সঙ্গে মাসদার হোসেন (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) মামলা অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক কার্যতালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয় বেঞ্চ অফিসারকে। এ বিষয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় শুনানির জন্য ধার্য করা হয়।
এ অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার আগেই আদালতে হাজির হন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফসানা আবেদীনের দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সরকারি আদেশ জারির একটি কপি সঙ্গে নিয়ে আসেন। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় মাসদার হোসেন মামলার শুনানি। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি চলাবস্থায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জিও’র একটি কপি আদালতে দাখিল করেন।
শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের কাজে গতি বাড়ানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমি তা করব। সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে দেশ চলতে পারে না। আমি চাই না সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হোক। এভাবে সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করে দেশ চলতে পারে না। এরপর বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘না না ও কিছু না। এগুলো আপনাদের কনজাম্পশনের জন্য না। সব খবর ছাপানোর জন্য নয়। আদালতের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের অনেক বিষয় আছে। কোনো আদেশ হয়নি। কেন ডেকে আনা হয়েছিল, এগুলো তো রিপোর্ট হতে পারে না।’ সব ঠিক আছে, আপনার বক্তব্য জানতে চাই- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার কথা হল, এগুলো ছাপানোর কোনো বিষয় নয়।’
প্রধান বিচারপতির আহ্বানে সাড়া দেয়নি মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত বিচারকরা : এদিকে ৭ মে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে এক চিঠিতে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবসহ কর্মরত সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, “বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যাবলি চিহ্নিত করে তা নিরসনকল্পে পন্থা উদ্ভাবনের জন্য বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যক্রমে অধিকতর গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি আগামী ১৫ মে রোজ শুক্রবার বেলা ৩টায় সুাপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং উক্ত বিভাগে কর্মরত সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় ও দিকনির্দেশনা প্রদানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।” সভার আলোচ্যসূচি হচ্ছে- “১. বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ২. ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ৩. গাড়ি, কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, ৪. বিচার বিভাগের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা, ৫. প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন।”
চিঠিতে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ৬৪ জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রকল্প পরিচালকের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে বলা হয়। জানা গেছে, এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে আইন সচিব এসে ১৭ তারিখে ওই মতবিনিময় সভা করার জন্য সময় নেন। কিন্তু ওই ১৭ তারিখেও আইন সচিবসহ অন্যরা মতবিনিময় সভায় হাজির হননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য না করে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের চিফ এক্সিকিউটিভ হচ্ছেন মন্ত্রী। প্রশাসনিক কোনো বিষয়ে জানতে হলে উনার কাছে জানতে হবে- এটাই আমার বক্তব্য।’
সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ উপেক্ষিত : এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ একের পর উপেক্ষিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শগুলো আমলে নেয়া হচ্ছে না- যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের লংঘন। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ২০০৭ সালে তৈরি হয় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৭। এ বিধিমালা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শক্রমে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা।
এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, “উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আইন মন্ত্রণালয়) কার্যকরভাবে পরামর্শ গ্রহণের জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং কোনো ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব ও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শে ভিন্নতা থাকলে, তখন সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে।” তাই সুপ্রিমকোর্টের কোনো পরামর্শ ফেলে রাখার এখতিয়ার আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। কিন্তু হরহামেশাই সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ ফেলে রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের আমলে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন গত বছরের ২৫ মার্চ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুল মজিদকে বদলির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ পাঠায়। তিনি ২০১০ সাল থেকে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। অথচ আইনের বিধান আছে একই স্টেশনে তিন বছরের বেশি থাকা যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে কর্মরত থাকা এবং তার অধীনস্তদের সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে তাকে বদলির ওই পরামর্শ দেয় সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ওই বদলির পরামর্শের ব্যপারে কোনো সাড়া দেয়নি মন্ত্রণালয়। গত বছরের ২৬ মে এ বিষরয় সুপ্রিমকোর্ট থেকে মন্ত্রণালয়কে রিমাইন্ডার (স্মরণ করিয়ে) দিয়ে চিঠি পাটায় সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই জেলা জজকে আর বদলি করা হয়নি। মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গত ডিসেম্বরে অবসরে যান।
এদিকে প্রায় দু’মাস আগে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) পদে নিয়োগের পরামর্শ দেয় সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু এ পরামর্শও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
সূত্র জানায়, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান সরকারকে সিএমএম করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টে প্রস্তাব পাঠায়। ওই প্রস্তাব নাকোচ করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসান অতিরিক্ত জেলা জজ অরুণাভ চক্রবর্তীকে সিএমএম করার পরামর্শ দেন। মন্ত্রণালয় ওই পরামর্শ পুনর্বিবেচনারও আবেদন জানায়। ওই আবেদন শনিবার সুপ্রিমকোর্টের জিএ (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কমিটি নাকোচ করে দেয়। এছাড়াও প্রায় এক মাস আগে ১৫৩ জন সিনিয়র সহকারী জজকে বদলির পরামর্শ দেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। কিন্তু এদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ৮ জনকে বদলি করা হয়নি। তাদের ক্ষেত্রে দেয়া পরামর্শ এখনও মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে কত দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালায়, তা নির্ধারণ করা হয়নি। যে কারণে আইন মন্ত্রণালয় হরহামেশাই সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ দিনের পর দিন ফেলে রাখছে। এজন্য সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না। এভাবে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ পড়ে থাকায় বিচার বিভাগের প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে লংঘন হচ্ছে মাসদার হোসেন মামলার রায়। প্রকারান্তরে সর্বোচ্চ আদালতের অবমাননাও হচ্ছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৯৯ সালে ১২ দফা নির্দেশনাসহ মাসদার হোসেন মামলার রায় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দীর্ঘদিনেও ওই রায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের বিষয়টি বিরোধিতার মুখে পড়েছে। সর্বশেষ ওই রায় অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই ঘোষণাতেই শেষ। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২ দফা নির্দেশনার অধিকাংশই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শৃংখলা বিধানের মূল কাজ এখনও মন্ত্রণালয়ের হাতে। ওই রায় অনুযায়ী এসব বিষয় থাকার কথা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের হাতে। ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছে না জনগণ। বিচার প্রশাসনেও গতি আসছে না। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেয়ার পর মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১৬ মে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, মাসদার হোসেন মামলার ১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে প্রধান বিষয়টি আজও আমরা পায়নি। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিু আদালতের প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকার কথা। সেটা যদি হয় আবার নিু আদালতের বিচারকদের শৃংখলা বিধি ও শৃংখলা ব্যবস্থা গ্রহণ যদি সরকারের হাতে থাকে, তাহলে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তো হাইকোর্টের থাকল না।’
এদিকে দেশের আদালতগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন। একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ লেগে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকায় বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার লংঘিত হচ্ছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেয়ার পর এই জট নিরসনের নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের কর্মঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। নিু আদালতের বিচারকদের সময়মতো এজলাসে ওঠা ও নামার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বিচারক শূন্যতা, এজলাস কক্ষের অভাবসহ নানা অসুবিধা রয়েছে। বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সুপ্রিমকোর্টের হাতে না থাকায় এসব ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আবার পরামর্শ দিলেও তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করছেন না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতার।
No comments