শেবাচিমে লোক নিয়োগে শত কোটি টাকার বাণিজ্য by আকতার ফারুক শাহিন
শেরেবাংলা
চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ১৭২টি শূন্য পদে নিয়োগকে
কেন্দ্র করে শত কোটি টাকা বাণিজ্যের গুঞ্জন এখন বরিশালের আকাশে-বাতাসে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে মোটামুটি মাথা তোলা
নেতা, হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়ন, এমনকি খোদ পরিচালককে নিয়ে পর্যন্ত চলছে
আলোচনা। সেই সঙ্গে চলছে তদবির। শোনা যাচ্ছে, বরিশাল এবং আশপাশের ৩ জেলার
প্রভাবশালী ৪ নেতার দেয়া তালিকা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হবে এই নিয়োগ।
এক্ষেত্রে লিখিত আর মৌখিক পরীক্ষা হবে কেবলই লোক দেখানো।
তবে এসব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন শেবাচিমের পরিচালক স্বাচিপ নেতা ডা. কামরুল ইসলাম সেলিম। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন তিনি। আর বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘একটা আলোচনা যখন উঠেছে তখন সরকারের উচিৎ লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার সব পর্যায়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো প্রতিনিধি দল পাঠানো। যারা স্বাধীনভাবে দিতে পারবে যোগ্যতার মাপকাঠি বিচারের সিদ্ধান্ত।’
২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে প্রথম এই হাসপাতাল এবং সংলগ্ন মেডিকেল কলেজে শুরু হয় প্রায় আড়াইশ’ শূন্য পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা করেন এক প্রার্থী। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন আদালত। পরে গত বছরের জানুয়ারি মাসে মেলে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ। আদালতের রায় পাওয়ার পর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর ১৭২টি শূন্য পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী প্রায় সাড়ে ১২ হাজার প্রার্থী তাদের আবেদন জমা দিয়েছেন এসব পদের বিপরীতে। ২৯ মে নির্ধারণ হয়েছে ৪র্থ শ্রেণীর এবং ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় শ্রেণীর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষাও নেবে নিয়োগ কমিটি। কেবল ঝাড়ুদার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে হবে না কোনো লিখিত পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষাতেই চূড়ান্ত হবে নিয়োগ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া কাগজে কলমে দারুণ স্বচ্ছ আর নির্ভরযোগ্য মনে হলেও এর মধ্যেই পুকুরচুরির প্রস্তুতি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। লবিং তদবিরে অসহায় হয়ে পড়ার কথাও জানিয়েছেন নিয়োগ কমিটির-ই দু’একজন। হাসপাতালের এক সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রশ্নে একদিকে যেমন চাপ দিচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন তেমনি প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি রয়েছে তাদের স্ত্রী, ছেলে, শালা, ভাগ্নে, ভাই এমনকি দূরসম্পর্কের আত্মীয়রাও। এখন পর্যন্ত মিঠে কড়া সুরে চলছে অনুনয় অনুরোধ। তবে দিন যত গড়াচ্ছে ততই পাল্টাচ্ছে সুর।
পরিচালক নিজে স্বাচিপ’র একজন প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চাপ উপেক্ষা করতে পারলেও যখন প্রশ্ন আসে মন্ত্রী-এমপিদের তখন তিনি নিজেও হয়ে পড়েন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আবার তার নিজস্ব লোকজনের চাপের কথাও শোনা যাচ্ছে। বাড়ি ভোলায় হওয়ায় সেখানকার মন্ত্রী-এমপিদের চাপও রয়েছে তার ওপর।
চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির দাবি, নিয়োগ প্রশ্নে আদালতে যে মামলা ছিল টাকা দিয়ে চালিয়েছে তারা। মামলা চালাতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়েছে উল্লেখ করে তারাও চাইছেন নিয়োগের নির্দিষ্ট কোটা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায় থেকেও হরহামেশা আসছে তদবিরের ফোন। জনশ্র“তি রয়েছে স্থানীয় কয়েকজন এমপি এবং দুই মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিয়োগ কমিটির কাছে যাবে আলাদা আলাদা তালিকা। ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে নিয়োগ কমিটিকে। প্রশ্ন হচ্ছে ১৭২টি পদের মধ্যে এরা একেকজন কতজন করে প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠাবেন। যদি ওইসব তালিকা প্রার্থিত পদের তুলনায় বেশি হয়ে যায় তাহলে বাধতে পারে নতুন গোলমাল।
১৭২টি পদের প্রায় সবকটি’র বিপরীতে লাখ লাখ টাকার চুক্তি হচ্ছে বলে আলোচনা নগরীর সর্বত্র।
একজন চাকরি প্রার্থী যুগান্তরকে বলেন, ‘এমএলএসএস’র একেকটি পদের বিপরীতে নেয়া হচ্ছে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অন্য পদগুলোর ক্ষেত্রেও চলছে একই ঘটনা। বিভিন্ন মাধ্যমে এসব টাকা নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী নেতার নাম। যদিও চাকরি পাওয়ার আশায় এদের নাম বলতে রাজি হচ্ছে না কেউ।’
এসব বিষয়ে নিয়োগ কমিটির প্রধান শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘প্রভাবশালীদের লবিং তদবিরের কথা সঠিক নয়। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। স্বাধীনভাবে কাজ করছি আমরা। কর্মচারী পর্যায়ে কিছু অনুরোধ রয়েছে ঠিক কিন্তু কেউ আমাদেরকে কোনো কিছুতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে না।’
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নে বদ্ধপরিকর। আগে পরীক্ষা হোক। আপনারা ফল দেখুন। যদি কোনো রকম অনিয়ম হয় তাহলে চ্যালেঞ্জ করবেন। আমরা সেই চ্যালেঞ্জের উত্তর দেব। না পারলে তখন আমাদের নিয়ে যা খুশি লিখবেন। যে কোনো উপায়ে আমরা এই নিয়োগ নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতি মুক্ত করব। এক্ষেত্রে একচুল-ও ছাড় দেয়া হবে না।’
তবে এসব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন শেবাচিমের পরিচালক স্বাচিপ নেতা ডা. কামরুল ইসলাম সেলিম। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন তিনি। আর বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘একটা আলোচনা যখন উঠেছে তখন সরকারের উচিৎ লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার সব পর্যায়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো প্রতিনিধি দল পাঠানো। যারা স্বাধীনভাবে দিতে পারবে যোগ্যতার মাপকাঠি বিচারের সিদ্ধান্ত।’
২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে প্রথম এই হাসপাতাল এবং সংলগ্ন মেডিকেল কলেজে শুরু হয় প্রায় আড়াইশ’ শূন্য পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা করেন এক প্রার্থী। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন আদালত। পরে গত বছরের জানুয়ারি মাসে মেলে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ। আদালতের রায় পাওয়ার পর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর ১৭২টি শূন্য পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী প্রায় সাড়ে ১২ হাজার প্রার্থী তাদের আবেদন জমা দিয়েছেন এসব পদের বিপরীতে। ২৯ মে নির্ধারণ হয়েছে ৪র্থ শ্রেণীর এবং ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় শ্রেণীর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষাও নেবে নিয়োগ কমিটি। কেবল ঝাড়ুদার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে হবে না কোনো লিখিত পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষাতেই চূড়ান্ত হবে নিয়োগ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া কাগজে কলমে দারুণ স্বচ্ছ আর নির্ভরযোগ্য মনে হলেও এর মধ্যেই পুকুরচুরির প্রস্তুতি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। লবিং তদবিরে অসহায় হয়ে পড়ার কথাও জানিয়েছেন নিয়োগ কমিটির-ই দু’একজন। হাসপাতালের এক সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রশ্নে একদিকে যেমন চাপ দিচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন তেমনি প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি রয়েছে তাদের স্ত্রী, ছেলে, শালা, ভাগ্নে, ভাই এমনকি দূরসম্পর্কের আত্মীয়রাও। এখন পর্যন্ত মিঠে কড়া সুরে চলছে অনুনয় অনুরোধ। তবে দিন যত গড়াচ্ছে ততই পাল্টাচ্ছে সুর।
পরিচালক নিজে স্বাচিপ’র একজন প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চাপ উপেক্ষা করতে পারলেও যখন প্রশ্ন আসে মন্ত্রী-এমপিদের তখন তিনি নিজেও হয়ে পড়েন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আবার তার নিজস্ব লোকজনের চাপের কথাও শোনা যাচ্ছে। বাড়ি ভোলায় হওয়ায় সেখানকার মন্ত্রী-এমপিদের চাপও রয়েছে তার ওপর।
চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির দাবি, নিয়োগ প্রশ্নে আদালতে যে মামলা ছিল টাকা দিয়ে চালিয়েছে তারা। মামলা চালাতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়েছে উল্লেখ করে তারাও চাইছেন নিয়োগের নির্দিষ্ট কোটা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায় থেকেও হরহামেশা আসছে তদবিরের ফোন। জনশ্র“তি রয়েছে স্থানীয় কয়েকজন এমপি এবং দুই মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিয়োগ কমিটির কাছে যাবে আলাদা আলাদা তালিকা। ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে নিয়োগ কমিটিকে। প্রশ্ন হচ্ছে ১৭২টি পদের মধ্যে এরা একেকজন কতজন করে প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠাবেন। যদি ওইসব তালিকা প্রার্থিত পদের তুলনায় বেশি হয়ে যায় তাহলে বাধতে পারে নতুন গোলমাল।
১৭২টি পদের প্রায় সবকটি’র বিপরীতে লাখ লাখ টাকার চুক্তি হচ্ছে বলে আলোচনা নগরীর সর্বত্র।
একজন চাকরি প্রার্থী যুগান্তরকে বলেন, ‘এমএলএসএস’র একেকটি পদের বিপরীতে নেয়া হচ্ছে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অন্য পদগুলোর ক্ষেত্রেও চলছে একই ঘটনা। বিভিন্ন মাধ্যমে এসব টাকা নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী নেতার নাম। যদিও চাকরি পাওয়ার আশায় এদের নাম বলতে রাজি হচ্ছে না কেউ।’
এসব বিষয়ে নিয়োগ কমিটির প্রধান শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘প্রভাবশালীদের লবিং তদবিরের কথা সঠিক নয়। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। স্বাধীনভাবে কাজ করছি আমরা। কর্মচারী পর্যায়ে কিছু অনুরোধ রয়েছে ঠিক কিন্তু কেউ আমাদেরকে কোনো কিছুতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে না।’
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নে বদ্ধপরিকর। আগে পরীক্ষা হোক। আপনারা ফল দেখুন। যদি কোনো রকম অনিয়ম হয় তাহলে চ্যালেঞ্জ করবেন। আমরা সেই চ্যালেঞ্জের উত্তর দেব। না পারলে তখন আমাদের নিয়ে যা খুশি লিখবেন। যে কোনো উপায়ে আমরা এই নিয়োগ নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতি মুক্ত করব। এক্ষেত্রে একচুল-ও ছাড় দেয়া হবে না।’
No comments