কিবরিয়া হত্যার কথা জানতেন তারেক ও হারিছ চৌধুরী- বাবর বললেন মিঠুকে চেনেন না ॥ রিমোট কন্ট্রোল ছিল হাওয়া ভবনে by শংকর কুমার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকা-ের ব্যাপারে জানতেন।
বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশেই কিবরিয়া হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। হাওয়া ভবনের হাতে ছিল তদন্তের রিমোট কন্ট্রোল। রবিবার সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে হবিগঞ্জ আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর ঢাকায় সিআইডির সদর দফতরে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এই ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
সিআইডি সদর দফতরে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড নিৰেপকারী হুজির জঙ্গী মিজানুর রহমান মিঠুর মুখোমুখি করা হয়েছে। বাবর বলেছেন, মিঠুকে তিনি কখনও দেখেননি, চেনেনও না। কিবরিয়া হত্যা মামলার ব্যাপারে তার করার কিছু ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ঘটনা শুনেছেন। কিবরিয়া হত্যাকান্ডের পর তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। বেগম জিয়া এই ব্যাপারে হঁযা কিংবা না কোন কিছুই বলেননি। কিবরিয়া হত্যা মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ব্যাপারে তার কিছুই করার ছিল না।
কিবরিয়া হত্যাকা-ের ঘটনায় হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) জড়িত থাকার পরও তাদেরকে গ্রেফতার না করে সাজানো তদনত্ম করে বিএনপি নেতা কাইউমসহ ১০ জনের বিরম্নদ্ধে চার্জশীট দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বাবরকে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশ দেয়া হতো সিআইডির কর্মকর্তাদের। কিবরিয়া হত্যা মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ব্যাপারে তার কোন ভূমিকা নেই বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বাবর।
কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড নিৰেপকারী হুজির জঙ্গী মিজানুর রহমান মিঠু জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন ও হুজির প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের নির্দেশমতো তারা ৪ জনে গ্রেনেড নিৰেপ করেছে। গ্রেনেড নিৰেপ করে তারা মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে। যে মোটরসাইকেলযোগে তারা পালিয়েছে সেটা ছিল আরেক জঙ্গী বদরম্নজ্জামানের ভগি্নপতির। গ্রেনেড নিৰেপ করার পর তারা সেই রাতে হবিগঞ্জেই ছিল। পরে তারা ঢাকায় চলে আসে। কিবরিয়াসহ অন্যরা নিহত হওয়ার পর তাদেরকে আশ্বাস দেয়া হয় যে, তাদের কিছুই হবে না।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনার ৫ বছর পর হুজি জঙ্গী মিজানুর রহমান মিঠু গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে রিমান্ডে এনে সিআইডির সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতায় থাকতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রতিপৰ স্থানীয় বিএনপির আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে আসামি করে সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান চার্জশীট দাখিল করেন। কিবরিয়া পরিবারের পৰ থেকে বার বার এই তদনত্ম মেনে না নিয়ে আদালতে না রাজি পিটিশন দেয়া হলেও কিবরিয়া হত্যা মামলার তদনত্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাইজউদ্দিনকে পাকিসত্মানে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে। সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বাবর নিজের ইচ্ছায় কিছুই করতেন না বলে জানিয়েছেন। হাওয়া ভবনের নির্দেশেই তখন সব কিছু পরিচালিত হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও হুজি জঙ্গী কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড নিৰেপকারী মিজানুর রহমান মিঠুকে সিআইডির সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা স্বীকার করেন। কিবরিয়া হত্যার ব্যাপারে কি ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদনত্মে অগ্রগতি হচ্ছে।
কিবরিয়া হত্যা মামলার তদনত্মকারী অফিসার সিআইডির এএসপি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে রবিবার হবিগঞ্জ আদালতে হাজির করার পর আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রবিবার রাতেই বাবরকে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.