চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই প্রধানমন্ত্রীর বেজিং সফর- শত শত ট্রিলিয়ন অলস অর্থ পাওয়ার সবুজ সঙ্কেত মিলেছে by জাফর আহমে

 বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের জাতীয় কোষাগারে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত অর্থ জমা হচ্ছে ২ ট্রিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। দেশটি বর্তমানে এই বিপুল অর্থের একটা অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিনিয়োগ করলেও অধিকাংশ অর্থই পড়ে থাকছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।
পুঞ্জীভূত এই অর্থ জমা হয়ে এখন শত শত ট্রিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। চীন সরকার এই অর্থকে বোঝা হিসেবে ধরে না রেখে এখন তাদের সুবিধামতো দেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বিনিয়োগের একটা অংশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এবার চীন সফরে যাচ্ছেন। প্রধানত এই উদ্দেশ্যে আগামীকাল ১৭ মার্চ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি দল চীন সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে চীন সরকারের উর্ধতন কর্তৃপৰের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে সবুজ সঙ্কেতও পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও পুরনো ঋণ মওকুফ, বাংলাদেশের অগ্রাধিকার খাতের জন্য নতুন ঋণ অনুমোদনের আহ্বান জানানো হবে। আর অনুদান হিসেবে ৭ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, এক্সিবিশন সেন্টার স্থাপন, দু'টি স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণ এবং যোগাযোগসহ বেশ কয়েকটি খাতে অবকাঠামো উন্নয়নে চুক্তিসই হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফর মূলত বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আহ্বানের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, সম্প্রতি চীন সরকারের একটি প্রতিনিধি দল চীনা প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা তখন চীন সরকারকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানালে চীনা প্রতিনিধি দল তা চীনা প্রেসিডেন্টের কাছে পেঁৗছে দেয়। পরবর্তীতে চীন সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যোগাযোগের মাধ্যমে এদেশে বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে চীনা বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনে প্রতিবছর ২ ট্রিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ উদ্বৃত্ত হিসেবে কোষাগারে জমা হচ্ছে। দেশটি এই বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে বিনিয়োগ করছে। এর পরও দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগারে শত শত ট্রিলিয়ন অর্থ উদ্বৃত্ত হিসেবে পড়ে আছে। এই অর্থ তারা তাদের বিশ্বসত্ম দেশে বিনিয়োগ করতে চায়।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে চীন সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, চীন মনে করে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় উদীয়মান দেশ। এ দেশের রয়েছে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাজার। তাছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়াতে এদেশটি সব সময় তাদের নজরে ছিল। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় সম্প্রতি বাংলাদেশ বিভিন্ন কারণে চীনের কাছে গুরম্নত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই, চীন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার উদ্দেশে বিনিয়োগ করার সবুজ সঙ্কেত দেখানোর পর প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফর বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি ।
চীন বাংলাদেশের কোন্ খাতে বিনিয়োগ করবে তা নির্দিষ্ট করা না হলেও সফরের বিভিন্ন বৈঠকে তা নির্ধারণ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, তথ প্রযুক্তি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিনিয়োগের ৰেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, এবারের সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা এবং উন্নয়ন চুক্তি স্বাৰর হতে পারে। সেগুলো _ মুন্সীগঞ্জের কাজিরটেকে ৭ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মাণ, ঢাকায় একটি আনত্মর্জাতিক এক্সিবিশন সেন্টার স্থাপন এবং চট্টগ্রাম ও নাটোরে দু'টি স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণ। এ সকল প্রকল্প সম্পূর্ণ অনুদানের ভিত্তিতে চীন বাংলাদেশে সম্পন্ন করবে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরের অন্যতম গুরম্নত্বপূর্ণ এজেন্ডা হচ্ছে পুরনো ঋণ মওকুফ এবং দেশের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন। তিনি বলেন, চীন সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ অতীতে যেসব ঋণ গ্রহণ করেছিল তার পুঞ্জীভূত সুদ এবং আসল মিলে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ চীনের কাছে ফেরত দিতে হয়। এবারের সফরে সে সব ঋণ মওকুফের আহ্বান জানানো হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে অগ্রাধিকারভিত্তিতে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে সে সব প্রকল্পের জন্য চীন সরকারের কাছ থেকে ঋণ চাওয়া হতে পারে। বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি, যোগাযোগ খাত এবং বিদু্যত খাতের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। সেসব খাতে চীনের প্রকল্প সহায়তা চাওয়াও এবারে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। এবারের সফর থেকে সরকার চীন থেকে বিভিন্নভাবে লাভবান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।

No comments

Powered by Blogger.