ভাল খবর ॥ অনেক কোম্পানি বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে চায় by ড. আর এম দেবনাথ
বহু দিন পর অর্থনীতির ওপর একটা ভাল খবর
পড়লাম। খববটা সত্যি হলে তা শিল্পায়নের জন্য ভাল, ব্যাংকিং খাতের জন্য ভাল,
ভাল অর্থনীতির জন্য। সর্বোপরি বড় স্বস্তির খবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের
জন্য, মাননীয় অর্থমন্ত্রীর জন্য।
খবরটি কী? খরবটি শেয়ার
বাজারের। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি ৫০টির মতো কোম্পানি বাজার
থেকে পুঁজি তোলার জন্য ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটি এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে?
প্রসপেকটাস জমা দিয়েছে। উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পুঁজি বাবদ টাকা
সংগ্রহ করতে হলে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বাবদ টাকা সংগ্রহ
করতে হলে অনুমতি লাগে। এই অনুমতির জন্য কোম্পানির যাবতীয় খবর সংবলিত
‘প্রসপেকটাস’ অনুমোদিত হতে হয় যা পরে কাগজে বিজ্ঞাপন আকারে দিয়ে সম্ভাব্য
বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করা হবে শেয়ার ক্রয়ের জন্য। এর নাম ‘ইনিশিয়েল পাবলিক
অফারিং (আইপিও)। এই কাজটি করতে যাচ্ছে ৫০টি কোম্পানি। তারা পুঁজি তোলার
জন্য ‘বিএসইসি’তে যাবতীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। এই ৫০টি কোম্পানির মধ্যে
১৫টি কোম্পানি বস্ত্র খাতে। তারা পুঁজি হিসেবে বাজার থেকে তুলতে চায় ১,৬৭০
কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে কোন কোন কোম্পানি না কি এক টাকার শেয়ার
৩-৪ টাকায় বিক্রি করার অনুমতি চেয়েছে। বলা হয়েছে। ব্যাংকের উচ্চ সুদের ভার
বহন করতে অপারগ কোম্পানিগুলো মূলধন বাজার থেকে তুলতে চায়। যে কয়টি
কোম্পানি ‘বিএসইসি’ থেকে অনুমোদন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সেগুলো হচ্ছে:
‘ফারইস্ট নিটিং এ্যান্ড ডাইং’, কেয়া কটন মিলস, প্যারাসাউট টেক্সটাইলস,
হামিদ ফ্যাব্রিকস, এমপি স্পিনিং মিলস, মতিন স্পিনিং মিলস, কেয়া স্পিনিং
মিলস, ড্রাগন সুয়েটার এ্যান্ড স্পিনিং, মোজাফর হোসেন স্পিনিং মিলস, টুন হাই
নিটিং এ্যান্ড ডাইং, ফাইবার সাইন, হোয়া ওয়েল টেক্সটাইলস, রয়েল ডেনিস, শামা
ডেনিমস এবং আমন কন্টন ফাইবারস। মোট ১৫টি কোম্পানি। যে প্রতিবেদনটির কথা
উল্লেখ করছি তার তথ্য সঠিক হলে ২০১৩ সালে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার বাজারে
আসবে। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগ যা পোর্টফলিও
ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে বিবেচিত তার পরিমাণ বাড়ছে। বিদেশীরা সর্বনিম্ন শেয়ার
দরের একটা সুবিধা নিচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। বলা হচ্ছে এখনই শেয়ারে বিনিয়োগের
সময়। শেয়ারের সূচক এর চেয়ে নিচে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
আমার কলামের পাঠকরা জানেন আমি দীর্ঘদিন যাবত বলে আসছি আমাদের কোম্পানিগুলোর উচিত ব্যাংক ঋণ কমানো। এর যুক্তি অনেক। কয়েকটা যুক্তির মধ্যে একটা হচ্ছে এতে কোম্পানিগুলোর ‘তহবিল ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) অনেক কমে। ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার অনেক বেশি। এতে অনেক কোম্পানির পক্ষে ব্যবসা চালানো কঠিন। তাছাড়া ব্যাংক ঋণ যোগাড় করাও বেশ কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ । আবার ব্যবসায় মন্দা হলে পুনঃতফসিলের জন্য ব্যাংকের কাছে যেতে হয়। কিন্তু শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে পুঁজি তুললে এতে খরচ নেই। কোম্পানির লাভ হলে শেয়ারের মালিকারা লভ্যাংশ পাবেন, না হলে তারা কিছুই পাবেন না। অবশ্য দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দিয়ে কোম্পানি চালালে তাতে কোম্পানরি বদনাম হয় তা মালিক উদ্যোক্তাদের কাম্য নয়। দেখা যায় আমাদের ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা নিজেদের টাকায় ব্যবসা করতে চান না। তারা শুধু ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর পক্ষে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ লাখ টাকা। অথচ এই কোম্পানি ব্যাংকে আসে শত শত কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিতে। তার ‘বিএমআরই’ ঋণ দরকার তার ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল দরকার, তার এলসি লিমিট দরকার। তার টিআর দরকার। এ এক অসম্ভব ব্যাপার। অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানি, বড় বড় আমদানিকারক, বড় বড় শিল্পপতি তেল চিনি চাল ডাল থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসের পাইকারি ব্যবসা করেন, বিদেশ থেকে চার্টার করা জাহাজ দিয়ে মাল আমদানি করেন তাদের রেডিও আছে। টেলিভিশন মালিকানা আছে, পত্রিকার মালিকানা আছে কিন্তু তারা কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড করতে চান না। চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। শনৈ শনৈ উন্নতি করছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনার সব জমি তারা কিনে নিচ্ছেন। কিন্তু কোম্পানির ব্যবসায় তিনি অনুদার। তার কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫-১০ লাখ টাকা। অথচ ব্যবসা করেন শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা। এ এক অসম্ভব, অবিশ্বাস পরিস্থিতি। তারা আবার ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন না। ঘন ঘন সুদ মওকুফ করান, ঘন ঘন ঋণ পুনঃতফসিল করান, ট্রাস্ট রিসিটের বিপরীতে দেয়া ঋণের টাকা ‘ওভারডিউ’ রাখেন। আরও কত কী? তারা বস্তুত ব্যাংকিং খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। তাদের ব্যাংক ঋণের একটা বড় অংশই জমি ও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োজিত বলে সবার ধারণ। অনেকের টাকাই বিদেশে রক্ষিত। অনেকে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোর্মের মালিক।
এমতাবস্থায় যখন দেখি অনেক কোম্পানি, অনেক নয় কিছুসংখ্যক কোম্পানি ব্যাংক ঋণ কমাতে চাইছে, তারা বাজারে যেতে চাইছে পুঁজি উত্তোলনের জন্য তখন আমার কাছে এটা একটা ভাল খবর বলেই মনে হয়। তাঁরা যাচ্ছেন তারা যাচ্ছেন বাধ্য হয়েই। এখন মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে ‘টাইট’ দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতিকে ঠেকাবার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদিও তারা সম্প্রতি রেপোর হার ‘৫০ বেসিস’ পয়েন্ট করিয়েছে।। উদ্দেশ্য ব্যাংকগুলোর তহবিল খরচ কমানো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এতেও তো বাজারে টাকা আসবে না। কারণ সরকারী ব্যাংকের প্রচুর টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার জোর করে আটকে রেখেছে। তাদের যত টাকা তারল্য রাখা (স্টেটুটরি লিক্যুইডিটি) দরকার এর চেয়ে বেশি টাকা তাদের সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে আটকা আছে। এই বন্দী টাকা দিয়ে দিলে সরকারী ব্যাংকে তারল্য সমস্যা থাকে না। ———— খুলতে খরচ করে। এখন রেমিটেন্স বাড়ছে অথচ আমদানি চাহিদা নেই। ডলার নিয়ে কী হবে? বাজারে ডলারের ক্রেতা নেই। কোন ব্যাংক এখন আর ডলার কিনে না। বাজারেও ডলারের ক্রেতা নেই। অতএব, করণীয়? করণীয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা। কিন্তু গ-গোল এখানেই। যারা বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাচ্ছে ব্যাংকগুলোকে তাদের নগদ টাকা দিতে হচ্ছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলারের টাকা নগদে দিচ্ছে না। দিচ্ছে ‘বিল’ ধরিয়ে। ‘ক্যাশ’ মিলবে পরে। বলা হচ্ছে এটা মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর একটা পদক্ষে। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ‘লোনেবল ফান্ড’ কিন্তু বাড়ছে না। অতএব, ব্যাংকগুলো কড়াকড়ি করছে ঋণ প্রদানে। এই ফাঁদে পড়ে মনে হয় ব্যবসায়ীরা পুঁজি তোলার জন্য বাজারে যাচ্ছে। এটা মন্দের ভাল। চাপ পড়েছে ব্যাংক আগের মতো টাকা দেয় না।, অতএব, শেয়ার বিক্রি কর, টাকা তোলা বাজার থেকে আমি মনে করি ব্যবসায়ীদের ওপর এই চাপ অব্যাহত রাখা দরকার। পাঁচ লাখ পুঁজিতে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা কারার প্রবণতা বন্ধ করা দরকার বিশেষ করে ব্যাংক ঋণের টাকা ‘ডাইভাট’ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ফান্ড ডাইভারশনের’ কথা জানে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটা অব্যাহত থাক। প্রাইভেট সেক্টরে ঋণ সম্প্রসারণের যে বাজেট এবার করা হয়েছে। আমি মনে করি তাও ঠিক আছে। ব্যবসায়ীরা চিৎকার করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি চাপ অব্যাহত রাখলে তারা তাদের টাকা পকেট থেকে বের করবেন। করুন না তারা তাদের জমি বিক্রি। আগে অস্বাভাবিকভাবে ক্রীত জমি তারা কিছু বিক্রি করেন। বিদেশে পাচারকৃত টাকা কিছু ফেরত আনুন ব্যবসাতে লাগান। চাপ অব্যাহত না রাখলে তারা নিজের পুঁজির ওপর নির্ভরশীল কোনদিনও হবেন না। আরেকটা কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত সেটা কী?
গত শেয়ার ধসের ঘটনার সময় বহু কোম্পানির মালিক উদ্যোক্তা বাজার থেকে অনেক টাকা অনৈতিকভাবে তুলে নিয়েছেন। অনেক প্রাইভেট প্লেসমেন্ট দ্বারা অনেক টাকা বাজার থেকে তুলেছেন। আমার প্রস্তাব ছিল এদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার । এরা ব্যাংকে ব্যাংকে অনেক টাকা ধারেন তাদের বাধ্য করা হোক টাকা দিতে ব্যাংকের। কারণ তারা অফুরন্ত টাকা বাজার থেকে তুলেছেন। এর হিসাব করা কঠিন কোন কাজ নয়্ ‘বিএসইসি’ একই মিনিটের মধ্যে এই হিসাব দিতে পারবে। এই সমস্ত ব্যবসায়ী এই টাকা কী করলেন? তাদের একথা জিজ্ঞেস করতে অসুবিধে কোথায়? তারা টাকাটা কোথায় রেখেছেন? তারা কী ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিয়েছেন না ঋণ আরও বাড়িয়েছেন। এসব প্রশ্ন ন্যায্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে বেসরকারী খাতের ঋণ চাহিদা অনেক কমে আসবে।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক বিআইবিএম
আমার কলামের পাঠকরা জানেন আমি দীর্ঘদিন যাবত বলে আসছি আমাদের কোম্পানিগুলোর উচিত ব্যাংক ঋণ কমানো। এর যুক্তি অনেক। কয়েকটা যুক্তির মধ্যে একটা হচ্ছে এতে কোম্পানিগুলোর ‘তহবিল ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) অনেক কমে। ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার অনেক বেশি। এতে অনেক কোম্পানির পক্ষে ব্যবসা চালানো কঠিন। তাছাড়া ব্যাংক ঋণ যোগাড় করাও বেশ কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ । আবার ব্যবসায় মন্দা হলে পুনঃতফসিলের জন্য ব্যাংকের কাছে যেতে হয়। কিন্তু শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে পুঁজি তুললে এতে খরচ নেই। কোম্পানির লাভ হলে শেয়ারের মালিকারা লভ্যাংশ পাবেন, না হলে তারা কিছুই পাবেন না। অবশ্য দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দিয়ে কোম্পানি চালালে তাতে কোম্পানরি বদনাম হয় তা মালিক উদ্যোক্তাদের কাম্য নয়। দেখা যায় আমাদের ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা নিজেদের টাকায় ব্যবসা করতে চান না। তারা শুধু ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর পক্ষে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ লাখ টাকা। অথচ এই কোম্পানি ব্যাংকে আসে শত শত কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিতে। তার ‘বিএমআরই’ ঋণ দরকার তার ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল দরকার, তার এলসি লিমিট দরকার। তার টিআর দরকার। এ এক অসম্ভব ব্যাপার। অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানি, বড় বড় আমদানিকারক, বড় বড় শিল্পপতি তেল চিনি চাল ডাল থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসের পাইকারি ব্যবসা করেন, বিদেশ থেকে চার্টার করা জাহাজ দিয়ে মাল আমদানি করেন তাদের রেডিও আছে। টেলিভিশন মালিকানা আছে, পত্রিকার মালিকানা আছে কিন্তু তারা কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড করতে চান না। চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। শনৈ শনৈ উন্নতি করছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনার সব জমি তারা কিনে নিচ্ছেন। কিন্তু কোম্পানির ব্যবসায় তিনি অনুদার। তার কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫-১০ লাখ টাকা। অথচ ব্যবসা করেন শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা। এ এক অসম্ভব, অবিশ্বাস পরিস্থিতি। তারা আবার ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন না। ঘন ঘন সুদ মওকুফ করান, ঘন ঘন ঋণ পুনঃতফসিল করান, ট্রাস্ট রিসিটের বিপরীতে দেয়া ঋণের টাকা ‘ওভারডিউ’ রাখেন। আরও কত কী? তারা বস্তুত ব্যাংকিং খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। তাদের ব্যাংক ঋণের একটা বড় অংশই জমি ও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োজিত বলে সবার ধারণ। অনেকের টাকাই বিদেশে রক্ষিত। অনেকে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোর্মের মালিক।
এমতাবস্থায় যখন দেখি অনেক কোম্পানি, অনেক নয় কিছুসংখ্যক কোম্পানি ব্যাংক ঋণ কমাতে চাইছে, তারা বাজারে যেতে চাইছে পুঁজি উত্তোলনের জন্য তখন আমার কাছে এটা একটা ভাল খবর বলেই মনে হয়। তাঁরা যাচ্ছেন তারা যাচ্ছেন বাধ্য হয়েই। এখন মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে ‘টাইট’ দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতিকে ঠেকাবার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদিও তারা সম্প্রতি রেপোর হার ‘৫০ বেসিস’ পয়েন্ট করিয়েছে।। উদ্দেশ্য ব্যাংকগুলোর তহবিল খরচ কমানো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এতেও তো বাজারে টাকা আসবে না। কারণ সরকারী ব্যাংকের প্রচুর টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার জোর করে আটকে রেখেছে। তাদের যত টাকা তারল্য রাখা (স্টেটুটরি লিক্যুইডিটি) দরকার এর চেয়ে বেশি টাকা তাদের সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে আটকা আছে। এই বন্দী টাকা দিয়ে দিলে সরকারী ব্যাংকে তারল্য সমস্যা থাকে না। ———— খুলতে খরচ করে। এখন রেমিটেন্স বাড়ছে অথচ আমদানি চাহিদা নেই। ডলার নিয়ে কী হবে? বাজারে ডলারের ক্রেতা নেই। কোন ব্যাংক এখন আর ডলার কিনে না। বাজারেও ডলারের ক্রেতা নেই। অতএব, করণীয়? করণীয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা। কিন্তু গ-গোল এখানেই। যারা বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাচ্ছে ব্যাংকগুলোকে তাদের নগদ টাকা দিতে হচ্ছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলারের টাকা নগদে দিচ্ছে না। দিচ্ছে ‘বিল’ ধরিয়ে। ‘ক্যাশ’ মিলবে পরে। বলা হচ্ছে এটা মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর একটা পদক্ষে। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ‘লোনেবল ফান্ড’ কিন্তু বাড়ছে না। অতএব, ব্যাংকগুলো কড়াকড়ি করছে ঋণ প্রদানে। এই ফাঁদে পড়ে মনে হয় ব্যবসায়ীরা পুঁজি তোলার জন্য বাজারে যাচ্ছে। এটা মন্দের ভাল। চাপ পড়েছে ব্যাংক আগের মতো টাকা দেয় না।, অতএব, শেয়ার বিক্রি কর, টাকা তোলা বাজার থেকে আমি মনে করি ব্যবসায়ীদের ওপর এই চাপ অব্যাহত রাখা দরকার। পাঁচ লাখ পুঁজিতে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা কারার প্রবণতা বন্ধ করা দরকার বিশেষ করে ব্যাংক ঋণের টাকা ‘ডাইভাট’ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ফান্ড ডাইভারশনের’ কথা জানে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটা অব্যাহত থাক। প্রাইভেট সেক্টরে ঋণ সম্প্রসারণের যে বাজেট এবার করা হয়েছে। আমি মনে করি তাও ঠিক আছে। ব্যবসায়ীরা চিৎকার করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি চাপ অব্যাহত রাখলে তারা তাদের টাকা পকেট থেকে বের করবেন। করুন না তারা তাদের জমি বিক্রি। আগে অস্বাভাবিকভাবে ক্রীত জমি তারা কিছু বিক্রি করেন। বিদেশে পাচারকৃত টাকা কিছু ফেরত আনুন ব্যবসাতে লাগান। চাপ অব্যাহত না রাখলে তারা নিজের পুঁজির ওপর নির্ভরশীল কোনদিনও হবেন না। আরেকটা কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত সেটা কী?
গত শেয়ার ধসের ঘটনার সময় বহু কোম্পানির মালিক উদ্যোক্তা বাজার থেকে অনেক টাকা অনৈতিকভাবে তুলে নিয়েছেন। অনেক প্রাইভেট প্লেসমেন্ট দ্বারা অনেক টাকা বাজার থেকে তুলেছেন। আমার প্রস্তাব ছিল এদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার । এরা ব্যাংকে ব্যাংকে অনেক টাকা ধারেন তাদের বাধ্য করা হোক টাকা দিতে ব্যাংকের। কারণ তারা অফুরন্ত টাকা বাজার থেকে তুলেছেন। এর হিসাব করা কঠিন কোন কাজ নয়্ ‘বিএসইসি’ একই মিনিটের মধ্যে এই হিসাব দিতে পারবে। এই সমস্ত ব্যবসায়ী এই টাকা কী করলেন? তাদের একথা জিজ্ঞেস করতে অসুবিধে কোথায়? তারা টাকাটা কোথায় রেখেছেন? তারা কী ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিয়েছেন না ঋণ আরও বাড়িয়েছেন। এসব প্রশ্ন ন্যায্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে বেসরকারী খাতের ঋণ চাহিদা অনেক কমে আসবে।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক বিআইবিএম
No comments