বড্ড দুঃসময়ে ডেভিড বেকহ্যাম by মাহমুদুন্নবী চঞ্চল

ইংল্যান্ডের হয়ে তিনি অংশ নিয়েছেন টানা তিন বিশ্বকাপ ফুটবলে। দাপটের সাথে খেলেছেন ১৯৯৮, ২০০২ এবং ২০০৬-এর বিশ্বকাপ। শেষ দুই বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্বও ছিল তার কাছে।
এমন সাফল্যে তিনি ধরে ফেলেছিলেন ইংলিশ তারকা ববি মুরের তিন বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড। টার্গেট ছিল টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ববি চার্লটনের রেকর্ডে ভাগ বসানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে বেকহ্যামের। ভয়ঙ্কর ইনজুরি এখন বেকহ্যামের সামনে। যা রীতিমতো ধস নামাচ্ছে বেকহ্যামের দৃঢ়তাকে। এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে কয়েকদিন আগে ইতালির সিরিএ লীগের এক ম্যাচে। দুর্বল চিয়েভার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেই যত বিপত্তি। সারা ম্যাচ বেশ দাপটের সাথেই খেললেন। কিন্তু শেষের দিকে যে ভয়ঙ্কর পরিণতি তা আঁচ করতে পারেননি বেকহ্যাম। ম্যাচ তখন শেষের দিকে। বাকি ৭ থেকে ৮ মিনিট। চিয়েভার ডি বক্সে শট নিতে প্রস্তুত তিনি। কিন্তু পারলেন না। ব্যথায় পড়ে গেলেন মাটিতে। ইশারায় ডাকলেন সাইড লাইনে বসে থাকা মেডিক্যাল টিমের সদস্যদের। ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হলো বাইরে। তাৎ‌ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানা গেল বেকহ্যামরে ডান পায়ের গোড়ালির ঠিক উপরের অংশের একটি শিরা পুরোপুরি ছিড়ে গেছে। করতে হবে অস্ত্রোপচার। রাজ্যের হতাশা তখন বেকহ্যামের চোখে মুখে। চিয়েভার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে এসি মিলান জিতলেও পরাজিত শুধুই বেকহ্যাম। এক টার্নিং সময়ে এমন ইনজুরি খাদের কিনার ফেলে দিল তাকে। গত সোমবার ফিনল্যান্ডের তুরকু প্রদেশের মেহিলেইনেন ক্লিনিবক সফল অস্ত্রোপচারও হয়ে গেল তার। এখন পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত তিনি। কিন্তু এপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বেকহ্যামের অস্ত্রোপচার করা সেই ডাক্তার সাকারি ওরাভা যা বলেছেন তা এই ইংলিশ তারকার জন্য মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো। জানিয়েছেন ন্যুনতম ছয়মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে বেকহ্যামকে। যদি পুরোপুরি ইনজুরি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা থাকে বেকহ্যামের। ওরাভা বলেন 'অস্ত্রোপচার করতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে। বেকহ্যাম এখন ভাল আছেন। তবে তাকে দুই তিন সপ্তাহ বা এক মাস পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে চলাফেরা করতে হবে তাকে। দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত গোড়ালিতে কোন প্রকার চাপ দেয়া যাবে না। চারমাস পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে। এবং পরের দুই মাস নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে খেলার জন্য উপযোগী করতে। বেকহ্যামের মনের পরিস্থিতি সম্পর্কে এই ডাক্তার জানান সে কিছুটা বিচলিত। তবে সেটা খুবই স্বাভাবিক। পায়ের ব্যথা ছিল খুব বেশি। ফলে অস্ত্রোপচারের আগের রাতে একদম ঘুমাতেই পারেনি সে। তবে সে খুব খুশি দ্রুত তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সকলের আন্তরিকতার জন্য সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে'। ডেভিড বেকহ্যামের এক মুখপাত্র সিমন অলিভেইরা জানিয়েছেন 'গোড়ালির যে শিরা পুরোপুরি ছিড়ে গিয়েছিল তা পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। সে এখন সুস্থ। মুখপাত্রের ভাষ্যানুযায়ী বেকহ্যামের আশা তিনি দ্রুত খেলায় ফিরতে আশাবাদী। কিন্তু ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তিনি আদৌ তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। সবচেয়ে বড় কথা দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র মাস তিনেক বাকি। এর মধ্যে বেকহ্যামের প্রত্যাবর্তন কতটা আশাব্যঞ্জক তা নিয়ে রয়েছে হাজারো প্রশ্ন। অস্ত্রোপচারে পর ইংল্যান্ডের কোচ ফ্যাবিও কাপেলো এবং তার সহকারী ফ্রানকো বালডিনি ফোনে বেকহ্যামের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা সাহস যুগিয়েছে বেকহ্যামকে। সান্ত্বনা দিয়েছেন তাড়াতাড়িই তিনি খেলায় ফিরবেন। কাপেলোর ফোন এই মুহূর্তে বেকহ্যামের কাছে কিছুটা স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিলেও তা মনটা বিচলিত থাকবে সারাক্ষণই। বিশ্বকাপের আগে এমন ইনজুরি বেকহ্যামকে সত্যিই আশাহত করল। স্বপ্ন পূরণ হলো না ববি চার্লটনের রেকর্ডে ভাগ বসানো। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার জন্য কি না করছেন এই ইংলিশ ফুটবলার। গায়ের ঘাম ঝরাচ্ছেন কোচ কাপেলোর মন যোগাতে। রিয়াল ছেড়ে বেকহ্যাম যখন আমেরিকা লা গ্যালাক্সি কাবে যান মোটা অঙ্কের ডলারের বিনিময়ে। তখন থেকে কোচের বাম চোখে পড়েন বেকহ্যাম। বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনের রেখে কোচ কাপেলোর দাবি আমেরিকায় থেকে বেকহ্যাম তাঁর পারফরমেন্সের প্রমাণ দিতে পারবেন না। তাঁকে প্রমাণ দিতে হলে ইংলিশ কোন কাবে খেলে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে হবে। কোচের দাবি অনুযায়ী আমেরিকার লস এ্যাঞ্জেলসের লা গ্যালাক্সি কাব ছেড়ে বর্তমানে ইতালির এসি মিলানে ধারে খেলছেন বেকহ্যাম। প্রত্যাশা অনুযায়ী গোলের দেখা না পেলেও ভালই খেলছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তের এমন ইনজুরিতে বড্ড দুঃসময়ের মুখোমুখি এখন বেকহ্যাম। ক্যারিয়ারের শুরুতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে মাঠ মাতিয়েছেন লাল জার্সি গায়ে ম্যানচেস্টারের হয়ে। সাদা জার্সি গায়ে বার্নাবুতেও চমক দেখিয়েছেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। মোটা অঙ্কের টাকায় লা গ্যালাক্সির হয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন লস এ্যাঞ্জেলসে। সর্বশেষ এসি মিলানের হয়ে সান সিরোতে। এখানেই সব অঘটন, যা বেকহ্যামের শেষ স্বপ্নকে ধূলিস্যাত করে দিল। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্কোয়াড এখনও ঘোষণা করেননি কোচ কাপেলো। বেকহ্যামের অন্তর্ভুক্তি কতটা নিশ্চিত ছিল তাও বলা যায়নি আগ থেকে। তবে আশা করা হচ্ছিল মূল স্কোয়াডে জায়গা পেতেও পারেন বেকহ্যাম। ফিফটি-ফিফটি এমন আশা নিরাশার দোলাচলে গোড়ালির ইনজুরি সবকিছুই মাটি করে দিল ডেভিড বেকহ্যামকে।

No comments

Powered by Blogger.