জামায়াত নিষিদ্ধ করার আইন খতিয়ে দেখা হচ্ছে ॥ তথ্যমন্ত্রী- রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, গণতন্ত্রের জন্য অনুপযুক্ত সংবাদ সম্মেলন
দেশের গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে
জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী
হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা
থাকায় বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে প্রচলিত আইনের বিধি-বিধান
খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জামায়াতের সাম্প্রতিক কর্মকা-কে
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ উল্লেখ করে হাসানুল হক ইনু বলেছেন,
যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো সাম্প্রতিক কর্মকা-ের জন্য তাদের কঠোর শাস্তি
নিশ্চিত করা হবে। সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গণতন্ত্রের জন্য অনুপযুক্ত দল
হিসেবে জামায়াত নিজেদের প্রমাণ করেছে। তার পরিণতি জামায়াতকেই ভোগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের
জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, একাত্তরে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন করেছিল, এখন একইভাবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ ঘোষণা করে পুলিশসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য যে ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার শুরু করেছি, পুনর্বার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য জামায়াত-শিবির ও উগ্রপন্থীদের একই পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জামায়াত কোনভাবেই ইসলামী দল নয়। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। একাত্তরেও তারা ইসলামের কথা বলে রাজনীতি করে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা, দুই লাখ নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন, কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে- যাদের ৯৫ শতাংশই মুসলমান। তারা ধর্মীয় আচার নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং জামায়াতকে কোনভাবেই ইসলামের সমার্থক বলে দাবি করা যায় না।
জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জামায়াত একটি অগণতান্ত্রিক, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। এ ধরনের শক্তি কোনভাবেই গণতন্ত্রে অঙ্গীভূত হতে পারে না। গণতন্ত্রের বিকাশের স্বার্থেই জামায়াতকে গণতন্ত্রের মাঠ থেকে বিতাড়ন করতে হবে। তারা শুধু দেশের জন্যই নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বিপদ ও ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। জামায়াতকে সশস্ত্র জঙ্গীবাদী সংগঠন উল্লেখ করে গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্য মন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক দলকে জামায়াতকে বর্জনের আহ্বান জানান।
জামায়াতের সঙ্গে সরকারের কোন সমঝোতা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মহাজোট বা মহাজোটের শরিক কোন দলের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা বা আঁতাত করা হয়নি, এর প্রশ্নই ওঠে না।
জামায়াত একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হলেও কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। সামরিক শাসনের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে প্রমাণ হলো, তারা অতীতের অপকর্ম রক্ষা করতে চায়। তারা অতীতের মতো সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী, সাম্প্রদায়িক দল। তাদের রাজনৈতিকভাবে বর্জন করা উচিত। এর বিরুদ্ধে বিচারিক উদ্যোগ নেয়া উচিত। বর্তমানে প্রচলতি আইনে যেসব বিধান আছে, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছি। নির্বাচন কমিশনের আইন, সংবিধান, দেশের আইন সব কিছু দেখে পরবর্তীতে উদ্যোগ সম্পর্কে জানবেন।
তিনি বলেন, তাদের সশস্ত্র হামলার মামলা দায়ের শুরু হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য অনুপযুক্ত দল হিসেবে জামায়াত নিজেদের প্রমাণ করেছে। তার পরিণতি জামায়াতকে ভোগ করতে হবে।
গত কয়েকদিনের জামায়াতের সশস্ত্র ঘটনা দেখার পরে সরকার সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কাদের মোল্লার রায়ের পর শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের সমাবেশ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের যে ইশতেহার নিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই অনুযায়ী বিচার চলছে। শুধু বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলেই হবে না, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধেও সজাগ থাকতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে ইনু বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি মামলার দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় দেয়া শুরু করেছে, তখন দেশে সুপরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা-অশান্তি তৈরির অপচেষ্টা জোরদার হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মিথ্যাচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াসও জোরদার হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে মিথ্যাচার ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, যে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে-তারা দেশের ধর্মীয় নেতা! গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল আলীম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবুল কালাম আজাদ কেউই ধর্ম শিক্ষক বা ধর্ম প্রচারক নন। তারা রাজনীতিক। রাজনৈতিক স্বার্থে তারা ধর্মকে ব্যবহার করেন। ধর্মকেও রাজনৈতিক স্বার্থ-সুবিধা-অসুবিধা-লাভ-ক্ষতির হিসাব করে অপব্যাখ্যা দেয় তারা। বরং তারা ধর্মের নামে রাজনৈতিক হানাহানি-সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী মানেই ইসলাম না। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ (জামায়াতের আদি সংগঠন) গঠিত হবার কয়েক শ’ বছর আগে থেকেই ভারতবর্ষ বা আমাদের দেশে ইসলাম ধর্ম হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মানুষ জন্মগতভাবে মুসলিম। এ দেশের মানুষ জামায়াতে ইসলামী বা এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী বা গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কথায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। বরং এরা ইসলামকে অপব্যবহার করে রাজনীতি করতে গিয়ে এ দেশের মুসলমানদের মধ্যেই বিভেদ, বিভক্তি, হানাহানি, খুনাখুনি করেছে। এরা পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়ে রাজাকার-আলবদর-আল শামস্ বাহিনী গঠন করে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছে, কোটি কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে-যার ৯৫ ভাগই মুসলমান। সুতরাং জামায়াতে ইসলামীকে কোন বিচারেই ইসলামের সমার্থক করা যায় না।
ইনু বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধীরা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছে যে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের ৯০ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলিম। বর্তমান সরকার বা বাংলাদেশের কোন সরকারই কখনই ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। বর্তমান সরকার ইসলাম ধর্মসহ সকল ধর্মের মানুষের ধর্মপালন ও তা প্রচার করার অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। বরং জামায়াতসহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী-জঙ্গীবাদী দল ধর্মের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি- রেষারেষি-রক্তারক্তি করছে। তিনি বলেন, আমাদের আশঙ্কা জামায়াত বা উগ্রপন্থী জঙ্গীবাদী মৌলবাদী এ সকল রাজনৈতিক দলকে এখনই দমন ও নির্মূল করা না গেলে এরা পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরাকের মতো মুসলমানদের মধ্যে সুন্নী-শিয়া, হানাফী-আহলে হাদিস ইত্যাদি বিরোধ-বিভক্তি বিভেদ সৃষ্টি করে দেশে রক্তারক্তি-খুনোখুনি পরিস্থিতি তৈরি করবে। এরা ইতোমধ্যেই এ দেশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক সুফী-পীরদের মাজারে হামলা, হযরত মোহাম্মদ (স)-এর জন্মদিন ঈদে মীলাদুন্নবী পালন-মিলাদ পড়ানো-দরুদপড়া-ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করা ইত্যাদি নিয়ে বিভেদ বিভক্তি তৈরি করেছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার জন্য জামায়াতে ইসলামী যে সুসংগঠিতভাবে সশস্ত্র কর্মকা- পরিচালনা করছে তা নতুন ঘটনা নয়। জামাতের জন্মলগ্ন থেকেই জামায়াত সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী দল। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী ৫০-এর দশকে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা পরিচালনা করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন করেছিল। ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস গঠন করে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল, ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছে, কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর এরা আত্মগোপন করে লুকিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুশতাক-জিয়া-এরশাদ সামরিক শাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক আঁতাত করে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসে।
তিনি বলেন, একাত্তরে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন করেছিল, এখন একইভাবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ ঘোষণা করে পুলিশসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য যে ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার শুরু করেছি, পুনর্বার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য জামায়াত-শিবির ও উগ্রপন্থীদের একই পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জামায়াত কোনভাবেই ইসলামী দল নয়। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। একাত্তরেও তারা ইসলামের কথা বলে রাজনীতি করে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা, দুই লাখ নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন, কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে- যাদের ৯৫ শতাংশই মুসলমান। তারা ধর্মীয় আচার নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং জামায়াতকে কোনভাবেই ইসলামের সমার্থক বলে দাবি করা যায় না।
জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জামায়াত একটি অগণতান্ত্রিক, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। এ ধরনের শক্তি কোনভাবেই গণতন্ত্রে অঙ্গীভূত হতে পারে না। গণতন্ত্রের বিকাশের স্বার্থেই জামায়াতকে গণতন্ত্রের মাঠ থেকে বিতাড়ন করতে হবে। তারা শুধু দেশের জন্যই নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বিপদ ও ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। জামায়াতকে সশস্ত্র জঙ্গীবাদী সংগঠন উল্লেখ করে গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্য মন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক দলকে জামায়াতকে বর্জনের আহ্বান জানান।
জামায়াতের সঙ্গে সরকারের কোন সমঝোতা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মহাজোট বা মহাজোটের শরিক কোন দলের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা বা আঁতাত করা হয়নি, এর প্রশ্নই ওঠে না।
জামায়াত একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হলেও কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। সামরিক শাসনের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে প্রমাণ হলো, তারা অতীতের অপকর্ম রক্ষা করতে চায়। তারা অতীতের মতো সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী, সাম্প্রদায়িক দল। তাদের রাজনৈতিকভাবে বর্জন করা উচিত। এর বিরুদ্ধে বিচারিক উদ্যোগ নেয়া উচিত। বর্তমানে প্রচলতি আইনে যেসব বিধান আছে, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছি। নির্বাচন কমিশনের আইন, সংবিধান, দেশের আইন সব কিছু দেখে পরবর্তীতে উদ্যোগ সম্পর্কে জানবেন।
তিনি বলেন, তাদের সশস্ত্র হামলার মামলা দায়ের শুরু হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য অনুপযুক্ত দল হিসেবে জামায়াত নিজেদের প্রমাণ করেছে। তার পরিণতি জামায়াতকে ভোগ করতে হবে।
গত কয়েকদিনের জামায়াতের সশস্ত্র ঘটনা দেখার পরে সরকার সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কাদের মোল্লার রায়ের পর শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের সমাবেশ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের যে ইশতেহার নিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই অনুযায়ী বিচার চলছে। শুধু বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলেই হবে না, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধেও সজাগ থাকতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে ইনু বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি মামলার দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় দেয়া শুরু করেছে, তখন দেশে সুপরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা-অশান্তি তৈরির অপচেষ্টা জোরদার হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মিথ্যাচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াসও জোরদার হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে মিথ্যাচার ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, যে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে-তারা দেশের ধর্মীয় নেতা! গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল আলীম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবুল কালাম আজাদ কেউই ধর্ম শিক্ষক বা ধর্ম প্রচারক নন। তারা রাজনীতিক। রাজনৈতিক স্বার্থে তারা ধর্মকে ব্যবহার করেন। ধর্মকেও রাজনৈতিক স্বার্থ-সুবিধা-অসুবিধা-লাভ-ক্ষতির হিসাব করে অপব্যাখ্যা দেয় তারা। বরং তারা ধর্মের নামে রাজনৈতিক হানাহানি-সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী মানেই ইসলাম না। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ (জামায়াতের আদি সংগঠন) গঠিত হবার কয়েক শ’ বছর আগে থেকেই ভারতবর্ষ বা আমাদের দেশে ইসলাম ধর্ম হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মানুষ জন্মগতভাবে মুসলিম। এ দেশের মানুষ জামায়াতে ইসলামী বা এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী বা গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কথায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। বরং এরা ইসলামকে অপব্যবহার করে রাজনীতি করতে গিয়ে এ দেশের মুসলমানদের মধ্যেই বিভেদ, বিভক্তি, হানাহানি, খুনাখুনি করেছে। এরা পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়ে রাজাকার-আলবদর-আল শামস্ বাহিনী গঠন করে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছে, কোটি কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে-যার ৯৫ ভাগই মুসলমান। সুতরাং জামায়াতে ইসলামীকে কোন বিচারেই ইসলামের সমার্থক করা যায় না।
ইনু বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধীরা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছে যে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের ৯০ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলিম। বর্তমান সরকার বা বাংলাদেশের কোন সরকারই কখনই ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। বর্তমান সরকার ইসলাম ধর্মসহ সকল ধর্মের মানুষের ধর্মপালন ও তা প্রচার করার অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। বরং জামায়াতসহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী-জঙ্গীবাদী দল ধর্মের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি- রেষারেষি-রক্তারক্তি করছে। তিনি বলেন, আমাদের আশঙ্কা জামায়াত বা উগ্রপন্থী জঙ্গীবাদী মৌলবাদী এ সকল রাজনৈতিক দলকে এখনই দমন ও নির্মূল করা না গেলে এরা পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরাকের মতো মুসলমানদের মধ্যে সুন্নী-শিয়া, হানাফী-আহলে হাদিস ইত্যাদি বিরোধ-বিভক্তি বিভেদ সৃষ্টি করে দেশে রক্তারক্তি-খুনোখুনি পরিস্থিতি তৈরি করবে। এরা ইতোমধ্যেই এ দেশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক সুফী-পীরদের মাজারে হামলা, হযরত মোহাম্মদ (স)-এর জন্মদিন ঈদে মীলাদুন্নবী পালন-মিলাদ পড়ানো-দরুদপড়া-ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করা ইত্যাদি নিয়ে বিভেদ বিভক্তি তৈরি করেছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার জন্য জামায়াতে ইসলামী যে সুসংগঠিতভাবে সশস্ত্র কর্মকা- পরিচালনা করছে তা নতুন ঘটনা নয়। জামাতের জন্মলগ্ন থেকেই জামায়াত সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী দল। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী ৫০-এর দশকে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা পরিচালনা করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন করেছিল। ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস গঠন করে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল, ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছে, কোটি কোটি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর এরা আত্মগোপন করে লুকিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুশতাক-জিয়া-এরশাদ সামরিক শাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক আঁতাত করে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসে।
No comments